বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আনকাট ও বিটিআর বিডব্লিউআর গ্রেডের কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধের আদেশ দেশের পাটখাতের জন্য অশনিসঙ্কেত মনে করছেন বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)।
জুট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ সমাবেশ করে রপ্তানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই আদেশের কারণে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশব্যাপী কাঁচা পাট সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক, শ্রমিক ও পাটচাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ১৮ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আনকাট ও বিটিআর বিডব্লিউআর গ্রেডের কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধের আদেশ জারী করে। এ আদেশের পর থেকে কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে ব্যবসায়িরা চরম আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক ক্রেতা হারানো এবং দেশের পাটখাতও ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
এর আগে ১৯৮৪, ২০০৯ ও ২০১৫ সালেও কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করা হয়। এছাড়া ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাট রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারই প্রেক্ষিতে ফের কাঁচাপাট রপ্তানি শুরু হয়।
পাট রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর উৎপাদিত পাটের একটি বড় অংশ উচ্চমানের ও একটি অংশ নিম্নমানের। গ্রেডিং করে বিদেশে কাঁচাপাট রপ্তানি করার পর নিম্নমানের পাটের একটি অংশ আনকাট হিসাবে থেকে যায়। এই পাট দেশের সরকারি ও বেসরকারি কোন জুট মিল ক্রয় করে না। সঙ্গত কারণে এই পাট আনকাট ও বিটিআর বিডব্লিউআর হিসাবে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এই পাট রপ্তানি করা না হলে পাটের মূল্য হ্রাস পাবে এবং প্রচুর পরিমানে নিম্নমানের পাট মজুদ থেকে যাবে।এতে পরবর্তী বছরে পাটচাষিরা পাটচাষে নিরুৎসাহী হয়ে পড়বে। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি জুট মিলগুলোতে পাটের গোড়া কাটার ফলে বের হওয়া কাটিং পাট সম্পূর্ণরূপে বিদেশে রপ্তানি করা যায় না। এমনকি দেশের জুট মিলগুলোও কাটিং এর সম্পূর্ণ অংশ ব্যবহার করতে পারে না। এসব কাটিং বিক্রির কোন জায়গা থাকবে না। ফলে কাটিং এর মূল্য হ্রাস পাবে এবং তা অবিক্রিত থাকবে।
এছাড়া এই প্রজ্ঞাপন জারির আগে যে সমস্ত চুক্তিপত্র ও এলসি আছে সেই অনুযায়ী আনকাট ও বিটিআর বিডব্লিউআর রপ্তানী বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বিদেশি ক্রেতাদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কেরও অবনতি হয়েছে।
বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী জানান, কাঁচাপাট রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় সরকারের কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধের কারণে রপ্তানিকারকরা লোকসানের মধ্যে পড়েন। যে কারণে অনেকেই ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েন।
পাট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোঃ আব্দুস সোবাহান শরীফ বলেন, ‘কয়েক লক্ষ বেল বিটিআর রপ্তানির উদ্দেশ্যে পাকা বেল আকারে গোডাউনে রক্ষিত আছে ও বন্দরে অবস্থান করছে। অবিলম্বে আনকাট ও বিটিআর বিডব্লিউআর গ্রেডের কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে কাঁচা পাট রপ্তানিকারকরা চরম আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।এতে ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের পাটখাতও।
পাট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান শরীফ জানান, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৭০-৮০ লাখ বেল কাঁচাপাট উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে ৪০-৪৫ লাখ বেল পাট দেশের পাটকলগুলোতে ব্যবহৃত হয়। অবশিষ্ট পাটের যতটা সম্ভব বিদেশে রপ্তানি করার পরও প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে পাট উদ্বৃত্ত থাকে। সে ক্ষেত্রে কাঁচাপাট রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভবিষ্যতে পাটখাতের চরম ক্ষতি হবে এবং এই খাতের সাথে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বে।