বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এক বছরে খুলনা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে এক হাজার ৬২৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। বিশ্বের ২২টি দেশে পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি ও সাদা মাছ, সুপারিসহ ২০টি পণ্য রপ্তানি করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ব্যাংকঋণ সুবিধা বৃদ্ধি, বন্দরগুলোর সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চল থেকে আরো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সহজ হবে।
খুলনা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যমে খুলনা অঞ্চল থেকে বিশ্বের ২২টি দেশে ২০ ধরনের পণ্য রপ্তানি করা হয়। এতে আয় হয় ২০ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৭০৪ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকার হিসাবে ১ হাজার ৬২৯ কোটি ২৯ লাখ ৬ হাজার ৩২০ টাকা। আমদানিকারক দেশ জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, ইউকে, স্পেন, বেলারুশ, পর্তুগাল, গ্রিস, ডেনমার্ক, সাইপ্রাস, তুর্কি, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, চেক-রিপাবলিক, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, পাকিস্তানসহ এসব দেশ খুলনা থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, মাটির টালি, ম্যান কুইন (প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পুতুলের মাথা), অ্যাঙ্গেল ব্যান্ড, কাঁচা পাট, সুপারি, হস্তশিল্পজাত পণ্য, টাইলস, ট্রাভেলস ব্যাগ, হ্যান্ডিক্রাফট, হিমায়িত চিড়িং ও সাদা মাছসহ ২০টি পণ্য আমদানি করে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সনদপত্র দিয়ে থাকে।
গেল এক বছরে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানিকারকদের ১ হাজার ৮৬৪টি সনদ দিয়েছে। সনদপ্রাপ্তরা জিএসপি, সাপটা, সাফটা, আপটা, চায়না ডিএফটি সিও সনদ এবং চিলি শুল্ক সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক চুক্তির কারণে সনদ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশে পণ্যের ওপর কোনো রকম কাস্টমস বা শুল্ক দিতে হয় না ব্যবসায়ীদের। ফলে এ চুক্তির আওতায় শুল্ক সুবিধা নিয়ে খুলনার পণ্য বিদেশের বাজারে প্রবেশাধিকার করেছে। তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল মাসে ১২টি দেশে পণ্য রপ্তানি করা হয়। এ জন্য ১০১টি সনদ প্রদান করা হয়। এ মাসে আয় হয় ৫১ লাখ ৮০০ টাকা।
মে মাসে ১৭টি দেশে পণ্য রপ্তানিকারকদের ১৮০টি প্রদান করা হয়। এ মাসে আয় হয় ৯৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। জুলাই মাসে ১৩টি দেশে পণ্য রপ্তানি করা হয়। এ জন্য ১৫১টি সনদ প্রদান করা হয়। এ আয় দাঁড়ায় ১১৯ কোটি ৭২২ লাখ ১ হাজার ৬৮০ টাকায়। জুলাই মাসে ১৪টি দেশে রপ্তানিকারকদের ২৬৪টি সনদ প্রদান করা হয়। এ মাসে আয় হয় ৩৫০ কোটি ৪৬৬ লাখ ৬ হাজার ৮৮০ টাকা। একইভাবে আগস্ট মাসে ১৪টি দেশে রপ্তানিকারকদের ২৭২টি সনদ দেওয়া হয়। এ মাসে আয় হয় ৩৪৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬০ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ১২টি দেশে পণ্য রপ্তানি করা হয়। সনদ প্রদান করা হয়েছে ১২৪টি।
এ ছাড়া আয় হয় ১৬৪ কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪০ টাকা। অক্টোবর মাসে ১৪টি দেশে রপ্তানিকারকদের ২০৪টি সনদ দেওয়া হয়। এ মাসে আয় হয় ৪৪১ কোটি ২৭ লাখ ৫৩ হাজার ২৮০ টাকা। নভেম্বর মাসে ১৪টি দেশে পণ্য রপ্তানি করা হয়। এ জন্য শুল্কমুক্ত সনদ প্রদান করা হয় ১৫টি। এ মাসে আয় হয় ১ হাজার ৯৩৭ কোটি ৭৯ লাখ ২ হাজার ২৪০ টাকা ও ডিসেম্বরে ১৬টি দেশে পণ্য রপ্তানিকারকদের ১৩১টি সনদ দেওয়া হয়। এ মাসে আয় হয় ১৬৬ কোটি ৪৭ হাজার ৬০০ টাকা। একাধিক রপ্তানিকারক বলেন, বিদেশে খুলনা অঞ্চলের পণ্যের চাহিদা রয়েছে। রপ্তানিকারকরা সময়মতো ব্যাংক সুবিধা, বন্দর সুবিধা পেলে আরো রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
খুলনা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর নির্বাহী সহকারী এস এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করছি। পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার খোলা হচ্ছে। এ জন্য নতুন পণ্যও রপ্তানি তালিকায় আনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সচেতন হলে আগামী দিনে আরো রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।’
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত এজেন্ট বায়ার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মূলত বিদেশি ক্রেতা সংগ্রহে কাজ করি। আর রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাছে পণ্য রপ্তানি করে। বৈদেশিক আয় বাড়াতে এখন আমাদের উচিত নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি। এ ছাড়া ব্যাংক ও বন্দর সুবিধাও বাড়াতে হবে।’
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী বলেন, ‘রপ্তানি আয় বাড়াতে হলে কাঁচা পাট রপ্তানির পর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেটি প্রত্যাহার করতে হবে। বিশেষ করে বিটিআর, আনকাট, বিডাব্লিউ বন্ধ থাকায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।