ঢাকা , সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজব ঠোঁটের পাখি গাঙচষা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের মতে, শীত মৌসুমে নিঝুমদ্বীপ এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি দেশি গাঙচষা দেখা যায়। আর এটাই এদের বৃহৎ বসবাসের জায়গা। তাই জলচর এ সামুদ্রিক পাখিটি দেখতে হলে তোমাকে এখানেই আসতে হবে। আচ্ছা, তোমরা কি জলচর ও সামুদ্রিক কথার অর্থ বুঝতে পেরেছ? আসলে যে পাখি জলে বা সমুদ্রের কাছাকাছি বসবাস করে তাদের নামের আগে জলচর বা সামুদ্রিক কথাটি বসানো হয়। কৃষক যেভাবে খেতে লাঙল চষে, ঠিক তেমনি নদীর পানিতে ঠোঁট চষে এ পাখি।

অর্থাৎ নদীর পানি কেটে কেটে খাবার সংগ্রহ করে এরা। আর নদী বা গাঙ চষে বলেই এর নাম গাঙচষা। পুরো নাম দেশি গাঙচষা। ইংরেজি নাম : indian skimmer। এর নিচের ঠোঁটটি একেবারে ছুরির মতো এবং নিচের ঠোঁটটি উপরের ঠোঁটের চেয়ে কিছুটা বড়। এজন্য অনেকে একে আজব ঠোঁটের পাখিও বলে। এর খাবার সংগ্রহের ধরণও অনেকটা অদ্ভুত।

তোমরা ভাবছ এটা আবার কোন দেশের পাখি? না, অন্য কোনো দেশের নয়, এটা আমাদের দেশেরই পাখি। আর এ পাখিটি পরিযায়ী। ভাবছ পরিযায়ী আবার কী? আসলে যে পাখি সারাবছর দেশে থাকে তাদের বলা হয় আবাসিক। আর যে পাখি বেঁচে থাকার তাগিদে বছরের কিছু সময় অন্যদেশে থাকে, তারপর আবার আমাদের দেশে ফিরে আসে তারা পরিযায়ী।

বাংলাদেশে আবাসিক ও পরিযায়ী মিলে পাখির প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৬৫০। এর মধ্যে আবাসিক ৩৫০ ও পরিযায়ী ৩০০। পরিযায়ী পাখিদের অধিকাংশ শীত মৌসুমে এদেশে দেখা যায়। অবশ্য ১০ বা ১২টি পরিযায়ী গ্রীষ্ম মৌসুমে এদেশে আসে। দেশি-গাঙচষাকেও এদেশে বেশি দেখতে পাবে শীত মৌসুমে।

এখন তোমরা ভাবতে পার, যেহেতু শীত এলেই একে এদেশে দেখা যায়, আর নদীর পানি কেটে কেটে খাবার সংগ্রহ করে, তাহলে তো তোমার বাড়ির আশপাশের যে কোনো নদীতেই একে দেখা সম্ভব, তাই না? আসলে তা নয়। সব নদীতে এরা থাকে না। সে জন্য একে দেখতে হলে তোমাকে যেতে হবে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ এলাকার মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা কাদাচর দমারচরে। কারণ এটাই এদেশে এদের একমাত্র বসবাসের স্থান। অবশ্য তোমরা প্রশ্ন করতে পার, সব নদীতে দেখা যায় না কেন? আসলে এটা পাখিদের অলিখিত নিয়ম। একেক পাখি একেক স্থানে বসবাস করতে পছন্দ করে, হয়তো সে জন্যই।

পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের মতে, শীত মৌসুমে নিঝুমদ্বীপ এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি দেশি গাঙচষা দেখা যায়। আর এটাই এদের বৃহৎ বসবাসের জায়গা। তাই জলচর এ সামুদ্রিক পাখিটি দেখতে হলে তোমাকে এখানেই আসতে হবে। আচ্ছা, তোমরা কি জলচর ও সামুদ্রিক কথার অর্থ বুঝতে পেরেছ? আসলে যে পাখি জলে বা সমুদ্রের কাছাকাছি বসবাস করে তাদের নামের আগে জলচর বা সামুদ্রিক কথাটি বসানো হয়। দেশি গাঙচষাও কিন্তু জলচর এবং সামুদ্রিক। আর নিঝুমদ্বীপের যে জায়গায় এরা থাকে সেই নদীর মোহনাটিও আসলে সমুদ্রের সঙ্গেই মিশে গেছে।

এরা নিচের ঠোঁটটি পানিতে ডুবিয়ে দেয় এবং পানির সামান্য ওপর দিয়ে উড়ে উড়ে চলে আর পানির ওপর ভেসে বেড়ানো ছোট ছোট মাছ ধরে খায়। এ ছোট ছোট মাছের মধ্যে অন্যতম একটি হলো চেউয়া মাছ। যখন এরা নদীর পানিতে খাবার সংগ্রহ করে, তখন ক্যাপ, ক্যাপ শব্দ করে ডাকে। মজার বিষয় হলো, আমরা যেমন সকাল, দুপুর ও রাতে খাবার খাই, এরাও তেমনি খাবার সংগ্রহ করে বেশিরভাগ সময় ভোরবেলা ও সন্ধ্যার আগে আগে। আবার এদের অনেকে পূর্ণিমা রাতেও খাবার সংগ্রহ করে।

ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে এরা পানচিল নামক আরেকটা পাখির দলের সঙ্গে মিশে বড় নদীর বালুতীরে বালি খোদল করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো অনেকটা বাদামি রঙের। ডিমের মাপ ৪.১´৩.০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। একসঙ্গে এরা তিন থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। এদের শরীরের দৈর্ঘ্য ৪০ সেন্টিমিটার, ডানা ৩৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৭.৭ সেন্টিমিটার, পা ২.৫ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০.৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পিঠের রং অনেকটা কালচে ও নিচের দিক জ্বলজ্বলে সাদা রঙের। ঠোঁট কমলা রঙের।

সংখ্যায় খুব বেশি নেই বলে বিশ্বে এ পাখিটি সংকটাপন্ন। বাংলাদেশেও এ পাখিটি বিপন্নের তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ পাখিটি আবাসন ও খাবার সংকট নিয়ে বিপদে আছে।

এর মূল প্রজনন কেন্দ্র ভারতের উত্তরপ্রদেশ-মুম্বাই অঞ্চল। পৃথিবীতে তিন প্রজাতির গাঙচষা রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দেশে দেখা যায় এ এক প্রজাতিই। বাকি দুটি দেখা যায় আমেরিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলে। তোমরা শুনলে  খুশি হবে,পাখিবিদ ইনাম আল হকের নেতৃত্বে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাখিশুমারি বা পাখি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য বা পর্যবেক্ষকরা। তাদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে গাঙচষা পাখির অজানা অনেক তথ্য। এ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এদেশে দিন দিন এর সংখ্যা কমছে।

গত শীত মৌসুমের জানুয়ারিতে জরিপ করে ৬০০ গাঙচষা দেখেছেন পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু আগে আরও বেশি দেখা যেত। ধীরে ধীরে গাঙচষা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পাখিবিদ ইনাম আল হক দাবি করেন, দমারচরে স্থানীয় মানুষদের মহিষ চরানো, দমারচরের আশপাশের নদীগুলোতে জেলেদের মাছধরা ও স্থানীয়দের অসচেতনতাই মূল কারণ।
তবে দমারচরে গেলে যে শুধু গাঙচষা পাখিই দেখবে তা কিন্তু নয়, এখানে আরও অনেক প্রজাতির জলচর সৈকত পাখি আছে। আর এসব দেখতে চাইলে আসছে শীত মৌসুমেই ঘুরে আসতে পার দমারচর থেকে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

আজব ঠোঁটের পাখি গাঙচষা

আপডেট টাইম : ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুন ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের মতে, শীত মৌসুমে নিঝুমদ্বীপ এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি দেশি গাঙচষা দেখা যায়। আর এটাই এদের বৃহৎ বসবাসের জায়গা। তাই জলচর এ সামুদ্রিক পাখিটি দেখতে হলে তোমাকে এখানেই আসতে হবে। আচ্ছা, তোমরা কি জলচর ও সামুদ্রিক কথার অর্থ বুঝতে পেরেছ? আসলে যে পাখি জলে বা সমুদ্রের কাছাকাছি বসবাস করে তাদের নামের আগে জলচর বা সামুদ্রিক কথাটি বসানো হয়। কৃষক যেভাবে খেতে লাঙল চষে, ঠিক তেমনি নদীর পানিতে ঠোঁট চষে এ পাখি।

অর্থাৎ নদীর পানি কেটে কেটে খাবার সংগ্রহ করে এরা। আর নদী বা গাঙ চষে বলেই এর নাম গাঙচষা। পুরো নাম দেশি গাঙচষা। ইংরেজি নাম : indian skimmer। এর নিচের ঠোঁটটি একেবারে ছুরির মতো এবং নিচের ঠোঁটটি উপরের ঠোঁটের চেয়ে কিছুটা বড়। এজন্য অনেকে একে আজব ঠোঁটের পাখিও বলে। এর খাবার সংগ্রহের ধরণও অনেকটা অদ্ভুত।

তোমরা ভাবছ এটা আবার কোন দেশের পাখি? না, অন্য কোনো দেশের নয়, এটা আমাদের দেশেরই পাখি। আর এ পাখিটি পরিযায়ী। ভাবছ পরিযায়ী আবার কী? আসলে যে পাখি সারাবছর দেশে থাকে তাদের বলা হয় আবাসিক। আর যে পাখি বেঁচে থাকার তাগিদে বছরের কিছু সময় অন্যদেশে থাকে, তারপর আবার আমাদের দেশে ফিরে আসে তারা পরিযায়ী।

বাংলাদেশে আবাসিক ও পরিযায়ী মিলে পাখির প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৬৫০। এর মধ্যে আবাসিক ৩৫০ ও পরিযায়ী ৩০০। পরিযায়ী পাখিদের অধিকাংশ শীত মৌসুমে এদেশে দেখা যায়। অবশ্য ১০ বা ১২টি পরিযায়ী গ্রীষ্ম মৌসুমে এদেশে আসে। দেশি-গাঙচষাকেও এদেশে বেশি দেখতে পাবে শীত মৌসুমে।

এখন তোমরা ভাবতে পার, যেহেতু শীত এলেই একে এদেশে দেখা যায়, আর নদীর পানি কেটে কেটে খাবার সংগ্রহ করে, তাহলে তো তোমার বাড়ির আশপাশের যে কোনো নদীতেই একে দেখা সম্ভব, তাই না? আসলে তা নয়। সব নদীতে এরা থাকে না। সে জন্য একে দেখতে হলে তোমাকে যেতে হবে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ এলাকার মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা কাদাচর দমারচরে। কারণ এটাই এদেশে এদের একমাত্র বসবাসের স্থান। অবশ্য তোমরা প্রশ্ন করতে পার, সব নদীতে দেখা যায় না কেন? আসলে এটা পাখিদের অলিখিত নিয়ম। একেক পাখি একেক স্থানে বসবাস করতে পছন্দ করে, হয়তো সে জন্যই।

পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের মতে, শীত মৌসুমে নিঝুমদ্বীপ এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি দেশি গাঙচষা দেখা যায়। আর এটাই এদের বৃহৎ বসবাসের জায়গা। তাই জলচর এ সামুদ্রিক পাখিটি দেখতে হলে তোমাকে এখানেই আসতে হবে। আচ্ছা, তোমরা কি জলচর ও সামুদ্রিক কথার অর্থ বুঝতে পেরেছ? আসলে যে পাখি জলে বা সমুদ্রের কাছাকাছি বসবাস করে তাদের নামের আগে জলচর বা সামুদ্রিক কথাটি বসানো হয়। দেশি গাঙচষাও কিন্তু জলচর এবং সামুদ্রিক। আর নিঝুমদ্বীপের যে জায়গায় এরা থাকে সেই নদীর মোহনাটিও আসলে সমুদ্রের সঙ্গেই মিশে গেছে।

এরা নিচের ঠোঁটটি পানিতে ডুবিয়ে দেয় এবং পানির সামান্য ওপর দিয়ে উড়ে উড়ে চলে আর পানির ওপর ভেসে বেড়ানো ছোট ছোট মাছ ধরে খায়। এ ছোট ছোট মাছের মধ্যে অন্যতম একটি হলো চেউয়া মাছ। যখন এরা নদীর পানিতে খাবার সংগ্রহ করে, তখন ক্যাপ, ক্যাপ শব্দ করে ডাকে। মজার বিষয় হলো, আমরা যেমন সকাল, দুপুর ও রাতে খাবার খাই, এরাও তেমনি খাবার সংগ্রহ করে বেশিরভাগ সময় ভোরবেলা ও সন্ধ্যার আগে আগে। আবার এদের অনেকে পূর্ণিমা রাতেও খাবার সংগ্রহ করে।

ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে এরা পানচিল নামক আরেকটা পাখির দলের সঙ্গে মিশে বড় নদীর বালুতীরে বালি খোদল করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো অনেকটা বাদামি রঙের। ডিমের মাপ ৪.১´৩.০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। একসঙ্গে এরা তিন থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। এদের শরীরের দৈর্ঘ্য ৪০ সেন্টিমিটার, ডানা ৩৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৭.৭ সেন্টিমিটার, পা ২.৫ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০.৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পিঠের রং অনেকটা কালচে ও নিচের দিক জ্বলজ্বলে সাদা রঙের। ঠোঁট কমলা রঙের।

সংখ্যায় খুব বেশি নেই বলে বিশ্বে এ পাখিটি সংকটাপন্ন। বাংলাদেশেও এ পাখিটি বিপন্নের তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ পাখিটি আবাসন ও খাবার সংকট নিয়ে বিপদে আছে।

এর মূল প্রজনন কেন্দ্র ভারতের উত্তরপ্রদেশ-মুম্বাই অঞ্চল। পৃথিবীতে তিন প্রজাতির গাঙচষা রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দেশে দেখা যায় এ এক প্রজাতিই। বাকি দুটি দেখা যায় আমেরিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলে। তোমরা শুনলে  খুশি হবে,পাখিবিদ ইনাম আল হকের নেতৃত্বে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাখিশুমারি বা পাখি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য বা পর্যবেক্ষকরা। তাদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে গাঙচষা পাখির অজানা অনেক তথ্য। এ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এদেশে দিন দিন এর সংখ্যা কমছে।

গত শীত মৌসুমের জানুয়ারিতে জরিপ করে ৬০০ গাঙচষা দেখেছেন পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু আগে আরও বেশি দেখা যেত। ধীরে ধীরে গাঙচষা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পাখিবিদ ইনাম আল হক দাবি করেন, দমারচরে স্থানীয় মানুষদের মহিষ চরানো, দমারচরের আশপাশের নদীগুলোতে জেলেদের মাছধরা ও স্থানীয়দের অসচেতনতাই মূল কারণ।
তবে দমারচরে গেলে যে শুধু গাঙচষা পাখিই দেখবে তা কিন্তু নয়, এখানে আরও অনেক প্রজাতির জলচর সৈকত পাখি আছে। আর এসব দেখতে চাইলে আসছে শীত মৌসুমেই ঘুরে আসতে পার দমারচর থেকে।