ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনীতি যেন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণ না হয়

নিজ নিজ মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রায় সব মানুষই কথা বলতে কিংবা তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে ভালোবাসে। তবে এ ক্ষেত্রে সুচিন্তিত অভিমত বলে একটি কথা আছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানের পরিণতিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটি।

এখানে মনে রাখতে হবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনের মূল প্রেক্ষিতটি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, নীতি-নৈতিকতার বলিষ্ঠ ধারাবাহিকতা কিংবা সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তা বারবার হোঁচট খেতে থাকে। তবে দেড় দশক ধরে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের এক চরম অবক্ষয় পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে কর্তৃত্ববাদ কিংবা স্বৈরাচার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুধু গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকেই বিপর্যস্ত করেনি, সর্বস্তরে দুর্নীতি ও দৃশ্যত একদলীয় শাসনের ফলে ভেঙে পড়েছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের সব পরিকাঠামো বা ভিত্তি।

রাষ্ট্র শাসনে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছাই প্রাধান্য পেতে থাকে সর্বত্র। মূলত সে কারণেই ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এক দফা আন্দোলনের বৃহত্তর পরিসর বা ব্যাপ্তি খুঁজে পায়। এমন একটি অবস্থার জন্য দেশের ছাত্র-জনতা দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিল। তাদের ওপর চালানো দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা এবং নির্যাতন-নিষ্পেষণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সংগত কারণে তাই দেশব্যাপী এবং বিশেষ করে ঢাকার রাজপথে ঝরে পড়েছিল ৫ আগস্ট।

তারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সার্বিক দুরবস্থার অবসান চেয়েছিল। তাই তারা চায় বিপর্যস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং দেশের সংবিধানের একটি অর্থবহ সংস্কার বা পরিবর্তন।

এমন একটি অবস্থায় দেশের কোনো কোনো মহলকে অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে উঠতে দেখা গেছে। তাদের একটিই প্রশ্ন, আর তা হচ্ছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কখন বিদায় নেবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে আসেনি।

বিপর্যস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং সংবিধানের একটি অর্থবহ সংস্কার বা পরিবর্তনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই সরকারকে। এটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসা কোনো সরকার নয়। এটি সংগ্রামী ছাত্র-জনতার আহ্বানে গঠিত হয়েছে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে। কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী কিংবা দলের স্বার্থে নয়। দেশের পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতি, অপশাসন ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ দায়ী নন। দেশের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিপর্যস্ত অবস্থার জন্য কোনো না কোনো রাজনীতিক অবশ্যই দায়ী। সুতরাং এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য রাজনীতিকদেরই দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে এই জাতির জীবনে ৫ আগস্ট বারবার ফিরে না আসে। কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত সংস্কার এবং সংবিধানের পরিবর্তন বারবার যেন ব্যর্থ না হয়। সে কারণে রাষ্ট্রীয় কাঠামো কিংবা সংবিধানের ক্ষেত্রে অর্থবহ পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধন অত্যন্ত আবশ্যক। যে দেশে বড় বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের দলের কাউন্সিল অধিবেশন কিংবা নেতা নির্বাচিত হয় না, তারা কিভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কিংবা আইনের শাসনের কথা বলে? তা ছাড়া স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে কোনো দল থেকে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী কিংবা মাস্তানদের বহিষ্কারের লক্ষ্যে কোনো শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। এ অবস্থার মধ্যেই অর্থাৎ দলীয় অরাজকতার মধ্যে পরিবারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র গড়ে ওঠে বিনা বাধায়।

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) সংবিধানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর জন্য সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কোনো দলের নেতা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এবং অন্যটি হচ্ছে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর নিজ দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। এর ফলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কিংবা দলীয় নেতৃত্ব দখল করে রাখার প্রবণতা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেখা যাক নির্দলীয় সরকার এই সুপারিশগুলো গ্রহণ করে কি না। তবে টিআইবির উপরোক্ত সুপারিশগুলোর পক্ষে জনগণের যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন গণ ও সামাজিক সংগঠনের উচিত হবে রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন অর্থবহ পরিবর্তনের প্রস্তাব আনা, যা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুসংহত ও শক্তিশালী করবে। তা ছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে একটি কক্ষ বা পরিষদ সংযোজনের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। সংসদীয় রাজনৈতিক পদ্ধতির অনেক দেশেই দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ দেখা যায়। যুক্তরাজ্যে বা ব্রিটেনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা জারি থাকলেও সেখানে হাউস অব লর্ডস এবং হাউস অব কমনস নামে দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট রয়েছে। হাউস অব কমনসের সদস্যরা জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এবং তাঁদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারীরা সরকার গঠন করে থাকেন। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিক (অবসরগ্রহণকারী), অভিজাত শ্রেণির মানুষ, পণ্ডিত ব্যক্তি কিংবা বিভিন্ন পেশার উচ্চস্থানীয় রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি হাউস অব লর্ডসে সদস্য পদ লাভ করে থাকেন। প্রথাগত রাজনীতিকদের বাইরে থাকা উল্লিখিত ব্যক্তিরা দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখে থাকেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির মুখেও তাদের সর্বাত্মক সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। সেসব কাজের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত থেকে শুরু করে সংবিধানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার বা পরিবর্তন। উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীসহ অন্যান্য মনগড়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের সংবিধানটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাংঘর্ষিক করে তুলেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মতো মৌলিক বিষয়গুলো বিভিন্ন কৌশলে পাশ কাটিয়ে গেছে। এতে অন্যান্য রাজনৈতিক দল কিংবা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য সংবিধানটি হয়ে পড়েছে অচল কিংবা স্ববিরোধী। এই সংবিধান এখন তাদের নিজ দলের রাজনৈতিক কৌশলে পরিণত হয়েছে। এই সংবিধান দেশের আপামর জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য অচল বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশের বিভিন্ন লব্ধপ্রতিষ্ঠ সংবিধান বিশেষজ্ঞ কিংবা আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে জাতির সামনে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সংবিধান উপস্থাপন করা। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে এই কাজটি অত্যন্ত দুরূহ এবং কষ্টসাধ্য। তার পরও বলতে হবে, এই কাজের আর কোনো বিকল্প পথ নেই আমাদের সামনে। এই কাজটি যতই দুঃসাধ্য হোক, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে করতে হবে। প্রয়োজন হলে সেই কথিত সংশোধনী কিংবা সংস্কারের কাজটি সর্বজনগ্রাহ্য করতে হলে একটি গণভোটে যেতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট দলীয় সরকারের জন্য তা রেখে গেলে দেশে বারবার সাংবিধানিক সংকট দেখা দেবে, যা দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেবে, অচলায়তন সৃষ্টি করবে।

আরো শোনা গেছে যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার মতো একটি ‘পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট’ তৈরি করার কাজে হাত দিচ্ছে। এটি শেষ পর্যন্ত সাফল্যজনকভাবে করতে সক্ষম হলে, এটি হবে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য একটি বৈপ্লবিক কাজ। কারণ বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের হাতে দলীয় রাজনীতি বন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দলে নেতাদের কাছে দলের সংবিধান কিংবা গঠনতন্ত্র কোনো বিষয়ই নয়, কারণ দলনেতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষকে প্রাধান্য দেওয়া, পরিবারতন্ত্র থেকে শুরু করে মনোনয়ন বাণিজ্য—সবই চলে দলের সর্বোচ্চ নেতাদের পরিকল্পনামতো। এর অবসান হওয়া উচিত। নতুবা দলের অভ্যন্তরে যে স্বৈরাচারের সৃষ্টি হচ্ছে, তা খুব দ্রুত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যবসিত বা প্রতিফলিত হবে। এবং সবাই এটিকে আগের মতো যথারীতি ‘তৃতীয় বিশ্বের’ রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রয়াস পাবে। এ ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা অপতৎপরতাকে অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। নতুবা সুষ্ঠু দলীয় নেতৃত্ব, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা কিংবা বৃহত্তরভাবে মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে উঠবে না। বিচার বিভাগকে সত্যিকার অর্থেই প্রশাসনের নাগপাশ ছিন্ন করাতে হবে। নতুবা দেশের মানুষ সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে পারবে না। এ ব্যাপারে দেশপ্রেমিক রাজনীতিক কিংবা আইন প্রণেতাদের কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এই সেদিনও অর্থাৎ ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে থানার পুলিশ চলেছে মন্ত্রী, এমপি কিংবা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রীদের নির্দেশে। পুলিশ, র‌্যাব কিংবা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা এবং অন্যরা সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হয়েছেন তাঁদের নির্দেশে। এতে মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক কিংবা মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে পর্যুদস্ত হতে দেখেছে বারবার। সারা দেশের জেলখানাগুলোতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অবাধ গ্রেপ্তারের কারণে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না।

সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক মিথ্যা মামলায় সাজা পাওয়া বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা এখন ক্রমে ছাড়া পাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরাও। মুক্তি পাচ্ছে দুর্নীতি, মানব পাচারকারী ও বিভিন্ন সামাজিক অনাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত অপরাধীরা। ভবিষ্যতে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সামনে রেখে এই অপরাধীদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। কারণ তারা এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ভিড়ে তাদের সন্ত্রাসী কিংবা মাস্তানি জাহির করতে চাইবে। তাদের কাছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা আইনের শাসন হচ্ছে কতগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত, অবান্তর ও অর্থহীন বিষয়। অসাধু কিংবা নীতি-জ্ঞানহীন রাজনীতিকরা এই অপরাধীদের পাশাপাশি দেশের বিশাল বেকার ছাত্রসমাজ কিংবা যুবগোষ্ঠীকে তাঁদের ক্ষমতালাভের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবেন। সুতরাং তাঁদের ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে হুঁশিয়ার থাকতে হবে। নতুবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্ভাব্য মেয়াদ নিয়ে যারা এখন চায়ের কাপে ঝড় তুলছে, তারা তাদের অজ্ঞাতসারেই এক আগুনের খোলা থেকে সরাসরি জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজনীতি যেন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণ না হয়

আপডেট টাইম : ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজ নিজ মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রায় সব মানুষই কথা বলতে কিংবা তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে ভালোবাসে। তবে এ ক্ষেত্রে সুচিন্তিত অভিমত বলে একটি কথা আছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানের পরিণতিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটি।

এখানে মনে রাখতে হবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনের মূল প্রেক্ষিতটি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, নীতি-নৈতিকতার বলিষ্ঠ ধারাবাহিকতা কিংবা সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তা বারবার হোঁচট খেতে থাকে। তবে দেড় দশক ধরে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের এক চরম অবক্ষয় পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে কর্তৃত্ববাদ কিংবা স্বৈরাচার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুধু গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকেই বিপর্যস্ত করেনি, সর্বস্তরে দুর্নীতি ও দৃশ্যত একদলীয় শাসনের ফলে ভেঙে পড়েছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের সব পরিকাঠামো বা ভিত্তি।

রাষ্ট্র শাসনে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছাই প্রাধান্য পেতে থাকে সর্বত্র। মূলত সে কারণেই ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এক দফা আন্দোলনের বৃহত্তর পরিসর বা ব্যাপ্তি খুঁজে পায়। এমন একটি অবস্থার জন্য দেশের ছাত্র-জনতা দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিল। তাদের ওপর চালানো দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা এবং নির্যাতন-নিষ্পেষণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সংগত কারণে তাই দেশব্যাপী এবং বিশেষ করে ঢাকার রাজপথে ঝরে পড়েছিল ৫ আগস্ট।

তারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সার্বিক দুরবস্থার অবসান চেয়েছিল। তাই তারা চায় বিপর্যস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং দেশের সংবিধানের একটি অর্থবহ সংস্কার বা পরিবর্তন।

এমন একটি অবস্থায় দেশের কোনো কোনো মহলকে অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে উঠতে দেখা গেছে। তাদের একটিই প্রশ্ন, আর তা হচ্ছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কখন বিদায় নেবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে আসেনি।

বিপর্যস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং সংবিধানের একটি অর্থবহ সংস্কার বা পরিবর্তনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই সরকারকে। এটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসা কোনো সরকার নয়। এটি সংগ্রামী ছাত্র-জনতার আহ্বানে গঠিত হয়েছে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে। কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী কিংবা দলের স্বার্থে নয়। দেশের পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতি, অপশাসন ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ দায়ী নন। দেশের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিপর্যস্ত অবস্থার জন্য কোনো না কোনো রাজনীতিক অবশ্যই দায়ী। সুতরাং এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য রাজনীতিকদেরই দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে এই জাতির জীবনে ৫ আগস্ট বারবার ফিরে না আসে। কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত সংস্কার এবং সংবিধানের পরিবর্তন বারবার যেন ব্যর্থ না হয়। সে কারণে রাষ্ট্রীয় কাঠামো কিংবা সংবিধানের ক্ষেত্রে অর্থবহ পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধন অত্যন্ত আবশ্যক। যে দেশে বড় বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের দলের কাউন্সিল অধিবেশন কিংবা নেতা নির্বাচিত হয় না, তারা কিভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কিংবা আইনের শাসনের কথা বলে? তা ছাড়া স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে কোনো দল থেকে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী কিংবা মাস্তানদের বহিষ্কারের লক্ষ্যে কোনো শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। এ অবস্থার মধ্যেই অর্থাৎ দলীয় অরাজকতার মধ্যে পরিবারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র গড়ে ওঠে বিনা বাধায়।

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) সংবিধানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর জন্য সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কোনো দলের নেতা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এবং অন্যটি হচ্ছে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর নিজ দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। এর ফলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কিংবা দলীয় নেতৃত্ব দখল করে রাখার প্রবণতা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেখা যাক নির্দলীয় সরকার এই সুপারিশগুলো গ্রহণ করে কি না। তবে টিআইবির উপরোক্ত সুপারিশগুলোর পক্ষে জনগণের যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন গণ ও সামাজিক সংগঠনের উচিত হবে রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন অর্থবহ পরিবর্তনের প্রস্তাব আনা, যা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুসংহত ও শক্তিশালী করবে। তা ছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে একটি কক্ষ বা পরিষদ সংযোজনের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। সংসদীয় রাজনৈতিক পদ্ধতির অনেক দেশেই দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ দেখা যায়। যুক্তরাজ্যে বা ব্রিটেনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা জারি থাকলেও সেখানে হাউস অব লর্ডস এবং হাউস অব কমনস নামে দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট রয়েছে। হাউস অব কমনসের সদস্যরা জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এবং তাঁদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারীরা সরকার গঠন করে থাকেন। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিক (অবসরগ্রহণকারী), অভিজাত শ্রেণির মানুষ, পণ্ডিত ব্যক্তি কিংবা বিভিন্ন পেশার উচ্চস্থানীয় রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি হাউস অব লর্ডসে সদস্য পদ লাভ করে থাকেন। প্রথাগত রাজনীতিকদের বাইরে থাকা উল্লিখিত ব্যক্তিরা দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখে থাকেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির মুখেও তাদের সর্বাত্মক সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। সেসব কাজের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত থেকে শুরু করে সংবিধানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার বা পরিবর্তন। উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীসহ অন্যান্য মনগড়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের সংবিধানটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাংঘর্ষিক করে তুলেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মতো মৌলিক বিষয়গুলো বিভিন্ন কৌশলে পাশ কাটিয়ে গেছে। এতে অন্যান্য রাজনৈতিক দল কিংবা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য সংবিধানটি হয়ে পড়েছে অচল কিংবা স্ববিরোধী। এই সংবিধান এখন তাদের নিজ দলের রাজনৈতিক কৌশলে পরিণত হয়েছে। এই সংবিধান দেশের আপামর জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য অচল বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশের বিভিন্ন লব্ধপ্রতিষ্ঠ সংবিধান বিশেষজ্ঞ কিংবা আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে জাতির সামনে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সংবিধান উপস্থাপন করা। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে এই কাজটি অত্যন্ত দুরূহ এবং কষ্টসাধ্য। তার পরও বলতে হবে, এই কাজের আর কোনো বিকল্প পথ নেই আমাদের সামনে। এই কাজটি যতই দুঃসাধ্য হোক, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে করতে হবে। প্রয়োজন হলে সেই কথিত সংশোধনী কিংবা সংস্কারের কাজটি সর্বজনগ্রাহ্য করতে হলে একটি গণভোটে যেতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট দলীয় সরকারের জন্য তা রেখে গেলে দেশে বারবার সাংবিধানিক সংকট দেখা দেবে, যা দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেবে, অচলায়তন সৃষ্টি করবে।

আরো শোনা গেছে যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার মতো একটি ‘পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট’ তৈরি করার কাজে হাত দিচ্ছে। এটি শেষ পর্যন্ত সাফল্যজনকভাবে করতে সক্ষম হলে, এটি হবে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য একটি বৈপ্লবিক কাজ। কারণ বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের হাতে দলীয় রাজনীতি বন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দলে নেতাদের কাছে দলের সংবিধান কিংবা গঠনতন্ত্র কোনো বিষয়ই নয়, কারণ দলনেতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষকে প্রাধান্য দেওয়া, পরিবারতন্ত্র থেকে শুরু করে মনোনয়ন বাণিজ্য—সবই চলে দলের সর্বোচ্চ নেতাদের পরিকল্পনামতো। এর অবসান হওয়া উচিত। নতুবা দলের অভ্যন্তরে যে স্বৈরাচারের সৃষ্টি হচ্ছে, তা খুব দ্রুত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যবসিত বা প্রতিফলিত হবে। এবং সবাই এটিকে আগের মতো যথারীতি ‘তৃতীয় বিশ্বের’ রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রয়াস পাবে। এ ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা অপতৎপরতাকে অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। নতুবা সুষ্ঠু দলীয় নেতৃত্ব, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা কিংবা বৃহত্তরভাবে মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে উঠবে না। বিচার বিভাগকে সত্যিকার অর্থেই প্রশাসনের নাগপাশ ছিন্ন করাতে হবে। নতুবা দেশের মানুষ সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে পারবে না। এ ব্যাপারে দেশপ্রেমিক রাজনীতিক কিংবা আইন প্রণেতাদের কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এই সেদিনও অর্থাৎ ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে থানার পুলিশ চলেছে মন্ত্রী, এমপি কিংবা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রীদের নির্দেশে। পুলিশ, র‌্যাব কিংবা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা এবং অন্যরা সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হয়েছেন তাঁদের নির্দেশে। এতে মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক কিংবা মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে পর্যুদস্ত হতে দেখেছে বারবার। সারা দেশের জেলখানাগুলোতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অবাধ গ্রেপ্তারের কারণে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না।

সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক মিথ্যা মামলায় সাজা পাওয়া বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা এখন ক্রমে ছাড়া পাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরাও। মুক্তি পাচ্ছে দুর্নীতি, মানব পাচারকারী ও বিভিন্ন সামাজিক অনাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত অপরাধীরা। ভবিষ্যতে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সামনে রেখে এই অপরাধীদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। কারণ তারা এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ভিড়ে তাদের সন্ত্রাসী কিংবা মাস্তানি জাহির করতে চাইবে। তাদের কাছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা আইনের শাসন হচ্ছে কতগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত, অবান্তর ও অর্থহীন বিষয়। অসাধু কিংবা নীতি-জ্ঞানহীন রাজনীতিকরা এই অপরাধীদের পাশাপাশি দেশের বিশাল বেকার ছাত্রসমাজ কিংবা যুবগোষ্ঠীকে তাঁদের ক্ষমতালাভের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবেন। সুতরাং তাঁদের ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে হুঁশিয়ার থাকতে হবে। নতুবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্ভাব্য মেয়াদ নিয়ে যারা এখন চায়ের কাপে ঝড় তুলছে, তারা তাদের অজ্ঞাতসারেই এক আগুনের খোলা থেকে সরাসরি জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক