জাকির হোসাইনঃ যে বয়সে শিশুর বেড়ে ওঠার কথা পরিবারের স্নেহতলে সে বয়সে অনেক শিশুরই আশ্রয় এখন ফুটপাত। কিন্ত এই সংখ্যাটা কত-তা নিয়ে নেই সঠিক কোনো পরিসংখ্যান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারিবারের নানা সমস্যার কারণে পরিবার ছেড়ে আসা এসব শিশুর প্রয়োজন মানসিক কউন্সিলিং। এরমধ্য দিয়ে তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব বলেও মনে করেছেন তারা।
তুমি বাইরে বাইরে থাকো কেনো? বাসা ভালো লাগে না? স্বাভাবিক এই প্রশ্নগুলোতে লজ্জা ছোট্ট মিমের চোখে মুখে। যে বয়সে তার থাকার কথা পরিবারের স্নেহতলে সে বয়সেই সে ঘুরে বেড়াচ্ছে পথ থেকে পথে। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর মিলল মিমের বাসায় গিয়ে।
খুপরি ঘরে মা আর তিন ভাই-বোনসহ পরিবার তার। বাবার কথা অজানা। মেয়ের এমন অজানা পথ সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরগুলো অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ে অসহায় মায়ের। মিমের মা বলেন, ‘ও বাইরে বাইরে ঘুরে, ভিক্ষা করে। সাধ্য মত খাওয়াতে পারছি না, পরাতে পারছি না।’
জন্মের পর পরিবাই শিশুর প্রতিষ্ঠান। তাইতো পরিবারকে আমরা বলি আত্মিক বন্ধন কিন্তু মিমের মতো অনেকের ক্ষেত্রেই সেই সংজ্ঞা ভিন্ন। এ কারণে এমন অনেকের শিশুই বেছে নিয়েছে অনিরাপদ জীবন। যেখানে নেই শিক্ষার আলো, দু’বেলা খাবার নিশ্চয়তা এমনকি ঘুমানোর জায়গাও। এক শিশু বলে, আব্বা মাকে ছেড়ে দিয়েছে। এজন্য দুঃখে এসে পড়ছি কমলাপুর রেলস্টেশনে।
শিশুর এমন অনিরাপদ জীবন বেছে নেওয়ার জন্য শিশু গবেষকরা দায়ী করছেন, বাবা-মায়ের বিচ্ছিন্নতা, দারিদ্রতা এবং শিশুর মন-মানসিকতা বুঝতে না পারাকে।
বাংলাদেশ শিশু আধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুছ সহিদ বলেন, বাবা-মার সঙ্গে প্রতিদিন ঝগড়া হয়। ঠিকমত খেতে পারে না। এসব তাদের অনিরাপদ জীবনকে বেছে নিতে দায়ী। পরিবার বিচ্ছিন এমন শিশুর সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন সংস্থার কাছেই। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে, পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ চলছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ঘর ছেড়ে চলে আসা শিশুদের পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে এদেরকে নিরাপদ জায়গা এবং ঘরমুখো করার উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।
হয়ত এ সকল শিশুর নামের আগেও যুক্ত হতে পারে মেধাবী, চ্যাম্পিয়ন কিংবা গর্বিত করা আরো অনেক শব্দই। গবেষকরা মনে করছেন, তার জন্য প্রয়োজন শিশুর বেড়ে ওঠার একটি সুস্থ, সুন্দর, শিশুবান্ধব পরিবেশে সৃষ্টি করা।