বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস মিলে শীতকাল। ইংরেজি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শীতকাল হলেও বাস্তবে নভেম্বরের শুরু থেকেই শীত শুরু হয়। সে অনুযায়ী শীত আসতে বাকি প্রায় এক মাস। তবে রাজধানীর বাজারে ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে শীতের বাহারি আইটেমের সবজি। বাজারে এসব সবজি বেশি থাকলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। শীত না এলেও শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে বাজারগুলোতে। তবে দাম তুলনামূলক বেশি। বাজারভেদে দামেরও হেরফের রয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, সবজিগুলো বাজারে নতুন ওঠানোর সময় দাম বেশিই রাখা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয় বলে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজির সরবরাহ বেড়ে গেলে দামও কমে আসবে।
সরেজমিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। সবজির মধ্যে শিম খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। যা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহেও ছিল একই দাম। বাঁধাকপি প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। মুলা প্রতি কেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা যা পাইকারিতে ২০ টাকা। টমেটো প্রতি কেজি ৮০ টাকা পাইকারিতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে টমেটোর দাম। বেগুন প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পাইকারিতে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ধনে পাতা ৩০০ টাকা, করলা ও চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৪০ টাকা পাইকারি ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কচুর মুখি খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকায়। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা পাইকারি বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা পাইকারি বাজারে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পটল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা হালি। এছাড়াও আলু ডায়মন্ড ২৫ টাকা। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৩০ টাকা প্রতি কেজি। দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের চেয়ে এসপ্তাহে অনেক সবজির দাম বেড়েছে। আবার অনেক সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। দাম বেড়েছে টমেটোর প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে কিছু সবজির দাম কমেছে এর মধ্যে অন্যতম করলা যা গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে ২০ টাকা কমেছে, বেগুন প্রতি কেজি ১০ টাকা কমেছে। এছাড়াও দাম বেড়েছে লেবুর। প্রতি পনে ( ৮০ পিসে এক পন) বেড়েছে ১০০ টাকা। শীতের সবজির মধ্যে টমেটো থাকলেও এখন সারা বছরই টমেটো পাওয়া যায়।
শীতের সবজির সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে জলপাইও। অনেকে ডাল বা টকের তরকারি হিসেবে জলপাই ব্যবহার করেন। অনেকে জলপাইয়ের আচার বানান। জলপাই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। তবে শীতের নতুন আলু বাজারে আসেনি এখনো। বিক্রেতারা জানালেন, এক মাসের মধ্যেই নতুন আলু বাজারে পাওয়া যাবে। এদিকে দামের ক্ষেত্রে বেশ ভিন্নতাও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি দোকানের সবজির দামে হেরফের দেখা গেছে। বাজারভেদেও রয়েছে দামের ভিন্নতা। যাত্রাবাড়িতে এক দোকানে শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।
আবার পাশের দোকানেই বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। বেশি দামে বিক্রি করা বিক্রেতা মো. রফিক দাবি করেছেন, তাঁর শিমের মান ভালো। এ কারণে দাম বেশি। শ্যামবাজারের সবজিবিক্রেতা মো. রেজাউল বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরেই শীতের নানা ধরনের সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। দিন দিন সরবরাহ বাড়ছে। তবে নতুন বলে দাম কিছুটা বেশি। আরেক বিক্রেতা নাসির মিয়া জানালেন, বিক্রেতাদের বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁরা ক্রেতাদের কাছে দাম বেশি রাখছেন।
কয়েকজন সবজিবিক্রেতা জানালেন, শিম, ধুন্দল, ফুলকপি, বাঁধাকপি এসব বেশি আসছে খুলনা, কুষ্টিয়া ও যশোর এলাকা থেকে। সেসব এলাকায় তুলনামূলক উঁচু জায়গায় এসব সবজির চাষ হয়। এ ছাড়া যেসব এলাকায় পানি সরে যেতে শুরু করেছে, সেখানেও সবজির চাষ শুরু হয়েছে। সেগুলো একযোগে আসা শুরু হলে দাম অনেক কমে আসবে। কারওয়ান বাজারে ধনে পাতা, মুলা কিনছিলেন মধুবাগের বাসিন্দা জামিল খান। তিনি জানালেন, মধুবাগ বাজারেও সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে সবজির দাম কারওয়ান বাজার থেকে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। তাই তিনি কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন।
যাত্রাবাড়ির বউ বাজারে সবজি বিক্রি করছেন শাহেদ তিনি জানান, যাত্রাবাড়ি আড়ত থেকে সবজি কিনে পাশের এই বাজারে বিক্রি করেন। তিনি প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ করেন। কারণ সবজি কিনার পর ঘাটতি হয় তাই একটু লাভের অংশটা বেশি না থাকলে লাভ হয় না। বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে সবজির আমদানি বেশি থাকা সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন পর থেকে সবজির দাম কমতে শুরু করবে। তখন সব এলাকা থেকে সবজি আসা শুরু করবে। আমদানি বেশি হবে দামও কমবে।