বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতের সবজি আসতে শুরু করে। তখন থেকে সব সবজির দামও কমতে শুরু করেছে। তবে সব ধরনের সবজির দাম কমলেও টমোটো ও গাজরের দাম ছিল খুবই চড়া। দীর্ঘসময় পরে হলেও টমেটো ও গাজরের দাম কমতে শুরু করেছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে বাজারে নতুন আলু, গাজর ও পাকা টমেটো পুরোদমে আসতে শুরু করেছে।
বাজারে এসব সবজি বাড়ায় দামও কিছুটা কমেছে। দুই সপ্তাহ আগে যে গাজর ও টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয় তা এখন মাত্র ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া অধিকাংশ সবজির দাম এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শালগম, মুলা, পেঁপে, শিমসহ বেশির ভাগ সবজিই এখন অধিকাংশ বাজারে ২০ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজিপাড়া, খিলগাঁও, শান্তিনগর, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিভন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মজুদ করে রাখা নিম্ন মানের পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। এ টমেটোই দুই সপ্তাহ আগে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। তবে বাজারে নতুন আসা ভালোমানের পাকা টমেটোর দাম এখনো কিছুটা চড়া।
বাজারভেদে এই পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। এদিকে বাজারে দীর্ঘদিন দামি সবজির তালিকায় থাকা গাজরের দামও কমে গেছে। বাজার ও মানভেদে গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। দুই সপ্তাহ আগেও রাজধানীর কোনো বাজারে ৮০ টাকা কেজির নিচে গাজর বিক্রি হয়নি। পাকা টমেটো ও গাজরের দাম কমার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন বাজারে শীতের সব ধরনের সবজি ভরপুর।
ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, মুলা অনেক আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। এখন নতুন পাকা টমেটো ও গাজরের পাশাপাশি নতুন আলুও বাজারে চলে এসেছে। দিন যত যাচ্ছে এসব সবজির সরবরাহ বাড়ছে, যে কারণে দামও কমছে। রামপুরার ব্যবসায়ী মো. সজিব হোসেন বলেন, কিছুদিন আগেও গাজর বিক্রি করেছি ৮০ টাকায়। টমোটো বিক্রি করেছি ১২০ টাকায়। এখন সেই গাজর ও টমোটো বিক্রি করছি ৩০ টাকা কেজি। এই ব্যবসায়ী বলেন, আড়তে এখন পছন্দমতো সব ধরনের শাক-সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কোনো সবজির ঘাটতি নেই। যে কারণে আমরা কিছুটা হলেও কম দামে সবজি আনতে পারছি।
বিক্রিও করতে পারছি কম দামে। এখন প্রায় সব ধরনের সবজির দামই সস্তা। তবে ক্রেতাদের মধ্যে গাজর, লাউ, পাকা টমেটো, ফুলকপি, শিমের চাহিদা কিছুটা বেশি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টমেটো ও গাজরের দাম কমায় এখন বাজারে সব থেকে দামি সবজির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বরবটি। বাজারভেদে এক কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এদিকে শীতের সবজি হিসেবে পরিচিত ফুলকপি বাজার ও মানভেদে পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকায়। শিম আগের সপ্তাহের মতোই বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পিস।
মানভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। শালগম বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। শীতের সবজির পাশাপাশি বাজারে এসেছে নতুন আলু। বাজারভেদে নতুন আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। পুরাতন আলু আগের মতো ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজারভেদে এক আঁটি পালনশাক বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১৫ টাকা।
লাল ও সবুজ শাক বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা আঁটি। লাউশাক পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি পাওয়া যাচ্ছে পুঁইশাক। দাম অপরিবর্তিত থাকা দেশি পেঁয়াজের কেজি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। আর বাজারে নতুন আসা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের মতো কম দামে পাওয়া যাচ্ছে কাঁচামরিচ। বাজারভেদে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। আর এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) হিসাবে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১৫ টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে বয়লার মুরগি, ডিম, গরু ও খাসির মাংসের দাম। বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।
ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ডজন। গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে আসা মো. ইজাজুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম কিছুটা কমেছে। এক মাস আগে যেসব সবজি ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল এখন তা ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি, সামনে দাম আরও কমবে। খিলগাঁওয়ের সালেহা খাতুন বলেন, এখন সবজির যে দাম তাতে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বেশি বেশি সবজি খাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বেশির ভাগ সবজিই এখন ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে নতুন পাকা টমেটো, লাউ ও বরবটির দাম এখনো বেশি। তবে পাকা টমেটো ও লাউয়ের দাম কমলে আমাদের জন্য আরও ভালো হতো। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এ মাসে সবজির দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।