বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ তার চারপাশে বহু লোকজন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্নজন এসেছেন। তার কাছে থেকে সবাই কিছু এলেম শিখতে চান। কুরআনের আয়াতের মর্ম শুনতে চান। রাসূল (সাঃ)-এর হাদীস শুনতে চান। তিনি হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ)। রাসূল (সাঃ)-এর বিশিষ্ট সাহাবী। ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন এক সময়। হাদীসের এলেম শিখতে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করেছেন। হাদীসের জ্ঞান আহরণ করে বহু মানুষের শিক্ষকে পরিণত হয়েছেন। সবাই এখন তার কাছে আসেন হাদীস শোনার জন্য; দ্বীনের এলেম শিক্ষা লাভ করার জন্য।
সেদিনও দামেস্কের মসজিদে সবাই সমবেত হয়েছেন তার কাছ থেকে এলেম আহরণ করার উদ্দেশ্যে। এজন্য সকলেই খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন। এমন সময় একলোক এসে আবুদ্দারদা (রাঃ)-এ সামনে বসলেন। সবাই উৎসুক চোখে তার দিকে তাকালেন। লোকটি হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ)-কে বললেন—“আমি শুধু হাদীসের জ্ঞান লাভ করার জন্য মদীনা থেকে আপনার দরবারে এসেছি। আমি শুনেছি, আপনি বহু # হাদীস রাসূলে করীম (সাঃ)-এর কাছ থেকে শুনেছেন। এজন্য আমি আপনার দরবারে এসেছি।”
উপস্থিত সব লোকজন চুপ। আবুদ্দারদা (রাঃ) আগত লোকটির দিকে তাকালেন। তারপর বললেন—“এদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের কোন গরজ ছিলনা তো? লোকটি বললেন—জী না। আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিলনা।” হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) আবারো জিজ্ঞাসা করলেন—“দেখুন, অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা? বৈষয়িক কিংবা সাংসারিক কোন প্রয়োজন এদিকে ছিলনাতো আপনার?
আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর পরপর দু’বার প্রশ্ন করায় সবাই সচেতন হয়ে উঠলেন। সতর্ক হয়ে উঠলেন। তিনি কি লোকটির পরীক্ষা করছেন? কিন্তু আগত লোকোটি একদম ঘাবড়ালেন না। তিনি অবিচল কণ্ঠে জবাব দিলেন—“জ্বী-না। আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু হাদীস শিক্ষার জন্যই আমি মদীনা থেকে দামেস্কে আপনার কাছে এসেছি।”
এবার যেন হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। একটা পবিত্র খুশী খুশী ভাব তার সারা মুখে ছড়িয়ে পড়লো। তিনি দরাজ কণ্ঠে বললেন—“তাহলে শুনুন! আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছি, যে ব্যক্তি এলেম লাভ করার উদ্দেশ্যে কোন রাস্তা অতিক্রম করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশতের পথ সহজ করে দেন।” এলেম বলা হয় কুরআন আর হাদীসের জ্ঞানকে।
এলেম বলা হয় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যে দ্বীনে ইসলাম দুনিয়াতে নিয়ে এসেছেন, সে দ্বীনে ইসলামের যাবতীয় শিক্ষাকে।হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) আরো বলে চললেন—“ফেরেশতাগণ এলেম অনুসন্ধানকারীর পথে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। আসমান ও যমীনে যারা বাস্ন করেন, তাঁরা এলেম অনুসন্ধান কারীর গুনাহ মাফের দুআ’ করে থাকেন। এমন কি, পানিতে বাস করে যে মাছ, সেই মাছও এলেম অনুসন্ধানকারীর জন্য মাগফিরাতের দুআ’ করতে থাকে।”
সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন, আগত ব্যক্তি যেন যা জানতে এসেছেন, তা অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে যাচ্ছেন, এমন ভাবে হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর কথাগুলো শুনতে লাগলেন। আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর মুখে বলা হাদীসটি শুনতে শুনতে সবার মনেই খুশীর দোলা লাগছিল।
আবুদ্দারদা (রাঃ) আরো বললেন—রাতের আকাশে তারকাগুলোর তুলনায় চাঁদ যেমন উজ্জ্বল, তেমনি সাধারণ কোন ইবাদতকারীর তুলনায় আলেম এবং এলেম অনুসন্ধানকারী অনেক বেশী শ্রেষ্ঠ। আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ কাউকেই দীনার-দেরহামের উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি। তাঁদের এলেমের উত্তরাধিকারো বানিয়ে গেছেন।যে ব্যক্তি এলেম হাসিল করে, দ্বীনের শিক্ষা লাভ করে, সে যেন তুলনাহীন সম্পদ লাভ করে।
হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) হাদীসটি বলে সম্পূর্ণ মজমাকে শোনালেন। সবাই শুনলেন। কুরআন-হাদীস এবং দ্বীনের শিক্ষা অর্জনের উপকার শুনে গোটা মজমা ধন্য হয়ে গেল।