ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার শহর আমি ফেরত চাই

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিশ্বে এই মুহূর্তে অনেক দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ফিলিপাইন, বাংলাদেশসহ অনেক দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বড় বড় শহর বৃষ্টি ও বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে, অন্যদিকে অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে চলছে তীব্র বন্যা, দক্ষিণ আর উত্তর-পশ্চিম ভারতে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড খরা আর পানির সংকট। যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ আর মানুষের দৈনন্দিন জীবন। কয়েক দিন আগে চেন্নাইয়ে ট্রেনে করে কয়েক লাখ লিটার পানীয়জল নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম বলছে, সে দেশে বর্তমান ৬০ কোটি মানুষ তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। আবার অন্যদিকে ইউরোপের কোনো দেশে আগাম গ্রীষ্মের আগমন ঘটেছে ঠিক, তার বিপরীতে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে শীতের তীব্রতা এখনো কমছে না। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকটাই আমাদের নিজেদেরই তৈরি। মানুষ নিত্যদিন প্রকৃতির ওপর যে ধরনের জুলুম করছে, প্রকৃতিও তার নিজ নিয়মে এর প্রতিশোধ নিচ্ছে। অন্য দেশ বা শহরের কথা এ মুহূর্তে আলোচনা না করে আমার নিজ শহর চট্টগ্রামের দিকে একটু নজর ফেরাতে চাই।চীনের বিখ্যাত পরিব্রাজক হিউ আন সাং সপ্তম শতকে চট্টগ্রামে এসেছিলেন।

তিনি চট্টগ্রামের সৌন্দর্য দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি চট্টগ্রামকে একটি নিদ্রামগ্ন রূপবতী সুন্দরীর সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে এই তরুণী কুয়াশা ভেদ করে জল হতে জেগে উঠছে।’ পর্তুগিজ বণিকরা এই চট্টগ্রাম বন্দরকে নাম দিয়েছিলেন ‘Porto Granda’ অর্থাৎ বড় বন্দর হিসেবে। চট্টগ্রামের সৌন্দর্য পর্তুগিজদের জাতীয় মহাকাব্য ‘লুসিয়াদাসে’ উল্লেখ করা হয়েছে। তারও অনেক আগে প্রথম শতকে রোমান ভূবিদ্যাবিদ টলেমি চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্ব দেশের একটি বড় বন্দর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পূর্ব ভারত, আসাম আর বার্মার সঙ্গে বাণিজ্য করেছে আরব, পর্তুগিজ আর ইংরেজ বণিকরা। এই চট্টগ্রামে আমার জন্ম, একটানা কমপক্ষে অর্ধশতাব্দী তো এই চট্টগ্রাম দেখেছি, এর ভরা যৌবন দেখেছি আর বর্তমানে এই শহরের করুণ অবস্থা আর মৃত্যু দেখছি। সবচেয়ে বড় দুঃখ, এটি আমার প্রজন্মের মানুষকে দেখে যেতে হলো।

সপ্তাহখানেকের বৃষ্টিতে ডুবে গেল ঐতিহাসিক ও একসময়ের নয়নাভিরাম এই শহর। সৃষ্টি হলো নাগরিক জীবন বিঘ্নকারী এক ভয়াবহ সংকট। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী শুরু হলো এ পরিস্থিতির জন্য পরস্পর দোষারোপের পালা। জনগণ এই পরিস্থিতির জন্য দুটি সংস্থাকে ভিলেন বানাল। প্রথমটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, দ্বিতীয়টি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সিডিএ। কেউ কেউ এর সঙ্গে যোগ করল ওয়াসাকে। এই সংকটের জন্য যে এই শহরের বাসিন্দারা কম দায়ী নয়, তা উল্লেখ করা থেকে সবাই বিরত থাকল। এবার নজর দিতে চাই এই শহরের নগর ব্যবস্থাপনার ওপর। চট্টগ্রামের নগর ব্যবস্থাপনার অতীত অতি গৌরবের। এই শহরে জন্ম নিয়েছিলেন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ, যাঁকে নগরের আদি বাসিন্দারা নূর আহম্মদ চেয়ারম্যান হিসেবে চেনেন।

একজন সফল নগর ব্যবস্থাপক ও চট্টগ্রাম পৌরসভার একটানা ৩৩ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন নূর আহম্মদ (চেয়ারম্যান)। তাঁর কর্মের কারণে এই শহরে এখনো কিংবদন্তি তিনি। আলকরণের একটি মাটির ঘরে ১৮৯০ সালে জন্ম নিয়ে সেই মাটির ঘরেই ১৯৬৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তৎকালীন মুসলমানরা শিক্ষাদীক্ষায় খুব বেশি অগ্রসর না থাকলেও নূর আহম্মদ ১৮৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ও ফারসি ভাষায় এবং পরবর্তীকালে ইতিহাস বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এমএ পাস করেন। এর জন্য তিনি চ্যান্সেলরের গোল্ড মেডেলে ভূষিত হন। এরই মধ্যে তিনি আইনশাস্ত্রে অধ্যয়ন করে বিএল ডিগ্রি লাভ করে চট্টগ্রাম আদালতে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময়ে সমগ্র বৃহৎ চট্টগ্রাম জেলা থেকে বঙ্গীয় আইনসভার জন্য দুটি আসন বরাদ্দ ছিল। অন্যটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন এ কে খান। প্রথম জীবনে এ কে খানও আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথম ১০ বছর নূর আহম্মদ পাকিস্তান গণপরিষদের একজন অত্যন্ত বাগ্মী সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তিনি সুযোগ পেলেই চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের স্বার্থ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করতেন। ১৯৪২ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদে নূর আহম্মদ চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

আইন পরিষদের সদস্য থাকাকালীন তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয় লাভ করেন। পরে তিনি এই সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে একটানা ৩৩ বছর দায়িত্ব পালন করে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেন। কারণ সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে একবার করাচি যাওয়া, আবার চট্টগ্রামে ফিরে আসা এই দুইয়ের মধ্যে তিনি সময় মেলাতে পারছিলেন না। মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করাকালে নূর আহম্মদ চেয়ারম্যানের একটি অসাধারণ কীর্তি ছিল চট্টগ্রাম শহরের ছেলে ও মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করা। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিটি ওয়ার্ডে ছেলে ও মেয়েদের জন্য অন্তত একটি করে প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

বালিকাদের জন্য শিক্ষা তখন গোঁড়া মুসলমানদের কাছে অনেকটা ‘হারাম’ ছিল। অনেক অর্ধশিক্ষিত কাঠমোল্লা এই সিদ্ধান্তের জন্য নানাভাবে তাঁর সমালোচনা করেন। তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এবং নির্দেশ জারি করলেন, যদি কারো ছয় থেকে ১০ বছরের শিশু থাকে এবং তাকে যদি স্কুলে পাঠানো না হয়, তাহলে অভিভাবকদের পাঁচ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। শিক্ষানুরাগী এই কিংবদন্তি পুরুষের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত এই উপমহাদেশে প্রথম। দুঃখের কথা, বর্তমান প্রজন্ম এমন মহাপুরুষদের কথা জানে না। কারণ আমাদের গলদে ভরা শিক্ষাব্যবস্থায় এমন মানুষদের স্থান নেই।

১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটিকে চট্টগ্রাম পৌরসভা নামকরণ করা হয়। ১৯৯০ সালে পৌরসভা হয় সিটি করপোরেশন। ফজলুল করিম সিটি করপোরেশনের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি একজন জনবান্ধব চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর আমলে তিনি কোনো কর-খাজনা না বাড়িয়ে জনসেবামূলক কাজের প্রভূত উন্নয়ন করেছিলেন। জোর দিয়েছিলেন জনস্বাস্থ্যের ওপর। চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা তাঁর সময়ে ব্যাপক উন্নত হয়েছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রদের কথা বলতে হলে অবশ্যই প্রয়াত আলহাজ মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা বলতে হয়। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা জনগণের নেতা।

১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে আমি একটা জাতীয় দৈনিকে লিখেছিলাম—‘আর একজন নূর আহম্মদ চেয়ারম্যানের অপেক্ষায় চট্টগ্রামের মানুষ।’ সেবার মহিউদ্দিন চৌধুরী সরকারি দলের প্রার্থী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে ১৬ হাজার ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি যেহেতু জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করেছেন, শত্রুকেও তিনি বন্ধু করে নিতে পারতেন। তাঁর আমলে তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তা করতে গিয়ে কখনো হয়তো তিনি কোনো কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরামর্শ দিলে তিনি তা সহজে গ্রহণ করার চেষ্টা করেছেন। শেষের দিকে এসে তাঁর চিন্তাভাবনার কিছু পরিবর্তন হলে তিনি তাঁর একজন অনুসারী নিজ দলের ওয়ার্ড কমিশনার মঞ্জুরুল আলমের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।

তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনেক কীর্তি তাঁকে অমর করে রাখবে। তিনি যে নির্বাচনে হেরে যান, সে নির্বাচনের আগে তিনি স্লোগান দিয়েছিলেন—চট্টগ্রামকে তিনি সিঙ্গাপুর বানাবেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম, চট্টগ্রাম সিঙ্গাপুর হওয়ার প্রয়োজন নেই, চট্টগ্রামকে চট্টগ্রাম থাকতে দিন। তা নিয়ে আমি জাতীয় দৈনিকে একটি কলামও লিখেছিলাম। কাজ হয়নি কিছু। নির্বাচনের ফলাফলের দিন যখন তাঁর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন দেখা যায় এক আমি আর একজন পিয়ন ছাড়া তাঁর নির্বাচনী প্যান্ডেলে অন্য কেউ উপস্থিত ছিল না। দুধের মাছিরা যথাসময়ে সটকে পড়েছে।অনেকের হয়তো শুনতে খারাপ লাগবে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান অবস্থার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্দলীয় কোন্দল।

কোন্দলের কারণে প্রতিটি সরকারের আমলে এই জেলা থেকে একাধিক মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এই শহরের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বর্তমান মেয়র সরকারদলীয় হলেও তিনি কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সবার দৃষ্টি আগামী নির্বাচনে তাঁকে কিভাবে পরাস্ত করা যায় সেদিকে। গোল্লায় যাক চট্টগ্রামের উন্নয়ন। অপরিকল্পিত উড়াল সেতু নির্মাণের জন্য অনেকে দুষছেন সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যানকে। এটি একটি কারণ বটে, তবে একমাত্র কারণ নয়। শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য চট্টগ্রামে আটটির মতো বড় খাল ছিল। যারা এই খালগুলো দখল করেছে, তারা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠজন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তেমন সাহস নেই কারো।

নিতে গেলে স্টে অর্ডার পাওয়াও তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। একসময় চাক্তাই খাল দিয়ে মিয়ানমার থেকে বড় বড় পণ্যবোঝাই গয়নার নৌকা আসত। এখন অবৈধ দখলের কারণে চাক্তাই খালের বিলুপ্তি হয়েছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কথা বাদই দিলাম, সরকারের বড় খাসজমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত বড় বড় নালা দখল করে ইমারত নির্মাণ এই শহরের আরেকটি সংস্কৃৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব উচ্ছেদের সাহস কার আছে? শহরের বাসিন্দারা ড্রেন আর সিটি করপোরেশন স্থাপিত ডাস্টবিনের মধ্যে তফাত তেমন একটা বুঝে না। আমার বাড়ি যেই গলির ভেতর, তাতে কোনো গাড়ি ঢুকে না। রিকশাওয়ালা জানতে চাইলে বলি ‘ডাস্টবিন পর্যন্ত’। কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশন গলিটাকে ভালো করে কার্পেটিং করেছিল।

কয়েক দিন পর ওয়াসার ‘ভালো সড়ক ধ্বংস বিভাগ’ এসে সেটা ফালা ফালা করে দিল। সে অবস্থায়ই আছে। আমার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথম দফায় তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি গলির ভয়াবহ অবস্থার কারণে।ওয়াসা চট্টগ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা এবং সম্পূর্ণরূপে একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। সিটি করপোরেশন, সিডিএ আর ওয়াসায় টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ বহু পুরনো। প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও এ মুহূর্তে ব্যক্তিগতভাবে আমি চট্টগ্রামের কোনো ভবিষ্যৎ দেখি না।

চট্টগ্রামের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দে কখনো কোনো বাধা ছিল না। বর্তমান সরকারের আমলে তো নয়ই। বাধা যোগ্য ও দক্ষ নগর ব্যবস্থাপকের। অনেকে বলেন মাস্টারপ্ল্যান করা দরকার। মাস্টারপ্ল্যান অনেক করা হয়েছে। এখন প্রয়োজন যোগ্য ও দক্ষ মাস্টারের, যাঁকে অন্যদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের জন্য একটি নগর সরকারের দাবি বহুদিনের। এ বিষয়টি সরকার গুরুত্বসহকারে চিন্তা করতে পারে। এই বয়সে একটাই আকুতি, আমার প্রিয় চট্টগ্রাম আমাকে ফিরিয়ে দিন। চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর বানানের প্রয়োজন নেই। চট্টগ্রামকে চট্টগ্রাম থাকতে দিন।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আমার শহর আমি ফেরত চাই

আপডেট টাইম : ১২:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জুলাই ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিশ্বে এই মুহূর্তে অনেক দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ফিলিপাইন, বাংলাদেশসহ অনেক দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বড় বড় শহর বৃষ্টি ও বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে, অন্যদিকে অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে চলছে তীব্র বন্যা, দক্ষিণ আর উত্তর-পশ্চিম ভারতে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড খরা আর পানির সংকট। যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ আর মানুষের দৈনন্দিন জীবন। কয়েক দিন আগে চেন্নাইয়ে ট্রেনে করে কয়েক লাখ লিটার পানীয়জল নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম বলছে, সে দেশে বর্তমান ৬০ কোটি মানুষ তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। আবার অন্যদিকে ইউরোপের কোনো দেশে আগাম গ্রীষ্মের আগমন ঘটেছে ঠিক, তার বিপরীতে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে শীতের তীব্রতা এখনো কমছে না। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকটাই আমাদের নিজেদেরই তৈরি। মানুষ নিত্যদিন প্রকৃতির ওপর যে ধরনের জুলুম করছে, প্রকৃতিও তার নিজ নিয়মে এর প্রতিশোধ নিচ্ছে। অন্য দেশ বা শহরের কথা এ মুহূর্তে আলোচনা না করে আমার নিজ শহর চট্টগ্রামের দিকে একটু নজর ফেরাতে চাই।চীনের বিখ্যাত পরিব্রাজক হিউ আন সাং সপ্তম শতকে চট্টগ্রামে এসেছিলেন।

তিনি চট্টগ্রামের সৌন্দর্য দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি চট্টগ্রামকে একটি নিদ্রামগ্ন রূপবতী সুন্দরীর সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে এই তরুণী কুয়াশা ভেদ করে জল হতে জেগে উঠছে।’ পর্তুগিজ বণিকরা এই চট্টগ্রাম বন্দরকে নাম দিয়েছিলেন ‘Porto Granda’ অর্থাৎ বড় বন্দর হিসেবে। চট্টগ্রামের সৌন্দর্য পর্তুগিজদের জাতীয় মহাকাব্য ‘লুসিয়াদাসে’ উল্লেখ করা হয়েছে। তারও অনেক আগে প্রথম শতকে রোমান ভূবিদ্যাবিদ টলেমি চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্ব দেশের একটি বড় বন্দর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পূর্ব ভারত, আসাম আর বার্মার সঙ্গে বাণিজ্য করেছে আরব, পর্তুগিজ আর ইংরেজ বণিকরা। এই চট্টগ্রামে আমার জন্ম, একটানা কমপক্ষে অর্ধশতাব্দী তো এই চট্টগ্রাম দেখেছি, এর ভরা যৌবন দেখেছি আর বর্তমানে এই শহরের করুণ অবস্থা আর মৃত্যু দেখছি। সবচেয়ে বড় দুঃখ, এটি আমার প্রজন্মের মানুষকে দেখে যেতে হলো।

সপ্তাহখানেকের বৃষ্টিতে ডুবে গেল ঐতিহাসিক ও একসময়ের নয়নাভিরাম এই শহর। সৃষ্টি হলো নাগরিক জীবন বিঘ্নকারী এক ভয়াবহ সংকট। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী শুরু হলো এ পরিস্থিতির জন্য পরস্পর দোষারোপের পালা। জনগণ এই পরিস্থিতির জন্য দুটি সংস্থাকে ভিলেন বানাল। প্রথমটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, দ্বিতীয়টি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সিডিএ। কেউ কেউ এর সঙ্গে যোগ করল ওয়াসাকে। এই সংকটের জন্য যে এই শহরের বাসিন্দারা কম দায়ী নয়, তা উল্লেখ করা থেকে সবাই বিরত থাকল। এবার নজর দিতে চাই এই শহরের নগর ব্যবস্থাপনার ওপর। চট্টগ্রামের নগর ব্যবস্থাপনার অতীত অতি গৌরবের। এই শহরে জন্ম নিয়েছিলেন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ, যাঁকে নগরের আদি বাসিন্দারা নূর আহম্মদ চেয়ারম্যান হিসেবে চেনেন।

একজন সফল নগর ব্যবস্থাপক ও চট্টগ্রাম পৌরসভার একটানা ৩৩ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন নূর আহম্মদ (চেয়ারম্যান)। তাঁর কর্মের কারণে এই শহরে এখনো কিংবদন্তি তিনি। আলকরণের একটি মাটির ঘরে ১৮৯০ সালে জন্ম নিয়ে সেই মাটির ঘরেই ১৯৬৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তৎকালীন মুসলমানরা শিক্ষাদীক্ষায় খুব বেশি অগ্রসর না থাকলেও নূর আহম্মদ ১৮৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ও ফারসি ভাষায় এবং পরবর্তীকালে ইতিহাস বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এমএ পাস করেন। এর জন্য তিনি চ্যান্সেলরের গোল্ড মেডেলে ভূষিত হন। এরই মধ্যে তিনি আইনশাস্ত্রে অধ্যয়ন করে বিএল ডিগ্রি লাভ করে চট্টগ্রাম আদালতে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময়ে সমগ্র বৃহৎ চট্টগ্রাম জেলা থেকে বঙ্গীয় আইনসভার জন্য দুটি আসন বরাদ্দ ছিল। অন্যটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন এ কে খান। প্রথম জীবনে এ কে খানও আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথম ১০ বছর নূর আহম্মদ পাকিস্তান গণপরিষদের একজন অত্যন্ত বাগ্মী সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তিনি সুযোগ পেলেই চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের স্বার্থ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করতেন। ১৯৪২ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদে নূর আহম্মদ চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

আইন পরিষদের সদস্য থাকাকালীন তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয় লাভ করেন। পরে তিনি এই সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে একটানা ৩৩ বছর দায়িত্ব পালন করে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেন। কারণ সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে একবার করাচি যাওয়া, আবার চট্টগ্রামে ফিরে আসা এই দুইয়ের মধ্যে তিনি সময় মেলাতে পারছিলেন না। মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করাকালে নূর আহম্মদ চেয়ারম্যানের একটি অসাধারণ কীর্তি ছিল চট্টগ্রাম শহরের ছেলে ও মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করা। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিটি ওয়ার্ডে ছেলে ও মেয়েদের জন্য অন্তত একটি করে প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

বালিকাদের জন্য শিক্ষা তখন গোঁড়া মুসলমানদের কাছে অনেকটা ‘হারাম’ ছিল। অনেক অর্ধশিক্ষিত কাঠমোল্লা এই সিদ্ধান্তের জন্য নানাভাবে তাঁর সমালোচনা করেন। তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এবং নির্দেশ জারি করলেন, যদি কারো ছয় থেকে ১০ বছরের শিশু থাকে এবং তাকে যদি স্কুলে পাঠানো না হয়, তাহলে অভিভাবকদের পাঁচ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। শিক্ষানুরাগী এই কিংবদন্তি পুরুষের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত এই উপমহাদেশে প্রথম। দুঃখের কথা, বর্তমান প্রজন্ম এমন মহাপুরুষদের কথা জানে না। কারণ আমাদের গলদে ভরা শিক্ষাব্যবস্থায় এমন মানুষদের স্থান নেই।

১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটিকে চট্টগ্রাম পৌরসভা নামকরণ করা হয়। ১৯৯০ সালে পৌরসভা হয় সিটি করপোরেশন। ফজলুল করিম সিটি করপোরেশনের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি একজন জনবান্ধব চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর আমলে তিনি কোনো কর-খাজনা না বাড়িয়ে জনসেবামূলক কাজের প্রভূত উন্নয়ন করেছিলেন। জোর দিয়েছিলেন জনস্বাস্থ্যের ওপর। চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা তাঁর সময়ে ব্যাপক উন্নত হয়েছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রদের কথা বলতে হলে অবশ্যই প্রয়াত আলহাজ মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা বলতে হয়। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা জনগণের নেতা।

১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে আমি একটা জাতীয় দৈনিকে লিখেছিলাম—‘আর একজন নূর আহম্মদ চেয়ারম্যানের অপেক্ষায় চট্টগ্রামের মানুষ।’ সেবার মহিউদ্দিন চৌধুরী সরকারি দলের প্রার্থী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে ১৬ হাজার ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি যেহেতু জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করেছেন, শত্রুকেও তিনি বন্ধু করে নিতে পারতেন। তাঁর আমলে তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তা করতে গিয়ে কখনো হয়তো তিনি কোনো কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরামর্শ দিলে তিনি তা সহজে গ্রহণ করার চেষ্টা করেছেন। শেষের দিকে এসে তাঁর চিন্তাভাবনার কিছু পরিবর্তন হলে তিনি তাঁর একজন অনুসারী নিজ দলের ওয়ার্ড কমিশনার মঞ্জুরুল আলমের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।

তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনেক কীর্তি তাঁকে অমর করে রাখবে। তিনি যে নির্বাচনে হেরে যান, সে নির্বাচনের আগে তিনি স্লোগান দিয়েছিলেন—চট্টগ্রামকে তিনি সিঙ্গাপুর বানাবেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম, চট্টগ্রাম সিঙ্গাপুর হওয়ার প্রয়োজন নেই, চট্টগ্রামকে চট্টগ্রাম থাকতে দিন। তা নিয়ে আমি জাতীয় দৈনিকে একটি কলামও লিখেছিলাম। কাজ হয়নি কিছু। নির্বাচনের ফলাফলের দিন যখন তাঁর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন দেখা যায় এক আমি আর একজন পিয়ন ছাড়া তাঁর নির্বাচনী প্যান্ডেলে অন্য কেউ উপস্থিত ছিল না। দুধের মাছিরা যথাসময়ে সটকে পড়েছে।অনেকের হয়তো শুনতে খারাপ লাগবে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান অবস্থার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্দলীয় কোন্দল।

কোন্দলের কারণে প্রতিটি সরকারের আমলে এই জেলা থেকে একাধিক মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এই শহরের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বর্তমান মেয়র সরকারদলীয় হলেও তিনি কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সবার দৃষ্টি আগামী নির্বাচনে তাঁকে কিভাবে পরাস্ত করা যায় সেদিকে। গোল্লায় যাক চট্টগ্রামের উন্নয়ন। অপরিকল্পিত উড়াল সেতু নির্মাণের জন্য অনেকে দুষছেন সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যানকে। এটি একটি কারণ বটে, তবে একমাত্র কারণ নয়। শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য চট্টগ্রামে আটটির মতো বড় খাল ছিল। যারা এই খালগুলো দখল করেছে, তারা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠজন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তেমন সাহস নেই কারো।

নিতে গেলে স্টে অর্ডার পাওয়াও তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। একসময় চাক্তাই খাল দিয়ে মিয়ানমার থেকে বড় বড় পণ্যবোঝাই গয়নার নৌকা আসত। এখন অবৈধ দখলের কারণে চাক্তাই খালের বিলুপ্তি হয়েছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কথা বাদই দিলাম, সরকারের বড় খাসজমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত বড় বড় নালা দখল করে ইমারত নির্মাণ এই শহরের আরেকটি সংস্কৃৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব উচ্ছেদের সাহস কার আছে? শহরের বাসিন্দারা ড্রেন আর সিটি করপোরেশন স্থাপিত ডাস্টবিনের মধ্যে তফাত তেমন একটা বুঝে না। আমার বাড়ি যেই গলির ভেতর, তাতে কোনো গাড়ি ঢুকে না। রিকশাওয়ালা জানতে চাইলে বলি ‘ডাস্টবিন পর্যন্ত’। কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশন গলিটাকে ভালো করে কার্পেটিং করেছিল।

কয়েক দিন পর ওয়াসার ‘ভালো সড়ক ধ্বংস বিভাগ’ এসে সেটা ফালা ফালা করে দিল। সে অবস্থায়ই আছে। আমার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথম দফায় তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি গলির ভয়াবহ অবস্থার কারণে।ওয়াসা চট্টগ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা এবং সম্পূর্ণরূপে একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। সিটি করপোরেশন, সিডিএ আর ওয়াসায় টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ বহু পুরনো। প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও এ মুহূর্তে ব্যক্তিগতভাবে আমি চট্টগ্রামের কোনো ভবিষ্যৎ দেখি না।

চট্টগ্রামের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দে কখনো কোনো বাধা ছিল না। বর্তমান সরকারের আমলে তো নয়ই। বাধা যোগ্য ও দক্ষ নগর ব্যবস্থাপকের। অনেকে বলেন মাস্টারপ্ল্যান করা দরকার। মাস্টারপ্ল্যান অনেক করা হয়েছে। এখন প্রয়োজন যোগ্য ও দক্ষ মাস্টারের, যাঁকে অন্যদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের জন্য একটি নগর সরকারের দাবি বহুদিনের। এ বিষয়টি সরকার গুরুত্বসহকারে চিন্তা করতে পারে। এই বয়সে একটাই আকুতি, আমার প্রিয় চট্টগ্রাম আমাকে ফিরিয়ে দিন। চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর বানানের প্রয়োজন নেই। চট্টগ্রামকে চট্টগ্রাম থাকতে দিন।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক