ঢাকা , বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরস্কার নিয়ে আফসোস নেই আমার

বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ সত্তর ও আশি দশকের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী সুচরিতা। তার আসল নাম বেবী হেলেন। ১৯৬৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘বাবুল’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। তিনি শিশু চরিত্রে আরো অভিনয় করেন ‘নিমাই সন্ন্যাসী’, ‘অবাঞ্ছিত’, ‘রং  বেরং’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘কত যে মিনতি’, ‘রাজ মুকুট’ সহ আরো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে। নায়িকা হিসেবে আজিজুর রহমানের নির্দেশনায় প্রথম অভিনয় করেন ১৯৭২ সালে ‘স্বীকৃতি’ ছবিতে। এরপর নায়িকা হিসেবে দীলিপ বিশ্বাসের ‘সমাধি’ এবং অশোক ঘোষের ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রে পরপর অভিনয় করেন। একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং মুক্তির পর দর্শকপ্রিয়তার কারণে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘যাদুর বাঁশি’ ছবিটি তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়।

বরেণ্য গীতিকবি ও নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার তার হেলেন নাম পরিবর্তন করে রাখেন সুচরিতা।
চাষী নজরুল ইসলামের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। দীর্ঘ সময় পর আবারো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন তিনি। আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করবেন এ অভিনেত্রী। ২০১৮ সালের ‘মেঘকন্যা’ সিনেমায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্য তিনি মনোনিত হয়েছেন। পুরস্কার প্রসঙ্গে সুচরিতা বলেন, পুরস্কার নিয়ে আফসোস নেই আমার। বরং আনন্দ আছে। আমি আমার জীবনের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’-এর সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে নিয়েছিলাম। এখনো মনে আছে। দীর্ঘ সময় পর আবার উনার হাত থেকেই আজ পুরস্কার নিবো।
এ সিনেমায় আমি একটি চার্চের মাদারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সিনেমাটির সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এর চিত্রগ্রাহক ছিলেন মাহফুজুর রহমান খান। তিনি বলেছিলেন যে, এ ছবিতে তুমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবা। সেটাই হলো। আজ এ কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে। আল্লাহ তাকে বেহেশতবাসী করুক এটাই দোয়া রইলো। সুচরিতা বর্তমানে খুব কম সিনেমায় কাজ করেন। এর কারণ কি ? তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ভালো গল্পের পাশাপাশি ভালো চরিত্রের জন্য অপেক্ষায় থাকি আমি। পরিকল্পিত চরিত্রের লুক তৈরি করার যে নিয়ম অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে তা ঢাকার চলচ্চিত্রে অনেকটাই কম। পরিচালক বদিউল আলম খোকনের ‘আগুন’ সিনেমায় কাজ করেছি সবশেষ। অনেকেই বলে, ঘরে বসে থাকলে নাকি অসুস্থ হয়ে পড়বো।
তাই মাঝে মধ্যেই কাজ করা হয় আমার। হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেন তিনি। সুচরিতা আরো বলেন, কাজ করার আগে ভাবি যে, সময়ও কাটবে, সবার সঙ্গে দেখাও হবে। আমি সবশেষ রফিক শিকদারের ‘বসন্ত বিকেল’ সিনেমার মহরতে এফডিসিতে গিয়েছিলাম। এই তো কয়েকদিন আগের কথা। তখন মাহফুজুর রহমান খানের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। উনারও এ সিনেমায় কাজ করার কথা ছিল। বর্তমানে সিনেমার নির্মাণ কমেছে। খুব বড় বাজেটের কাজও কম হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সুচরিতা বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দশর্কদের চাহিদার পরিবর্তনও এসেছে। তাই এখন আমাদের ছবির মান আরো ঊধ্বর্মুখী করতে হবে। তা না হলে সিনেমা হলে দর্শক ধরে রাখা সম্ভব না। আর ভালো সিনেমার জন্য বাজেট খুব জরুরী। ভালো কাহিনীকারও দরকার। মৌলিক গল্পের ভালো সিনেমা দর্শকদের উপহার দিতে হবে। ‘জনি’, ‘রঙিন জরিনা সুন্দরী’, ‘ডাকু মনসুর’, ‘এখনো অনেক রাত’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’, ‘সমাধি’, ‘ত্রাস’, ‘দ্য ফাদার’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘নাগরদোলা’, ‘বদলা’, ‘রকি’, ‘মাস্তান’, ‘জানোয়ার’, ‘আসামী’, ‘তুফান’, ‘সাক্ষী’, ‘আঁখি মিলন’, ‘দাঙ্গা’ সহ আরো অনেক ছবিতে জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করেছেন এ অভিনেত্রী। ভালো কাজের মাধ্যমে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার কথা সবশেষে জানালেন তিনি। বললেন, গল্প আর নিভর্রযোগ্য চরিত্র পেলে নিয়মিত কাজ করতে আমার আপত্তি নেই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পুরস্কার নিয়ে আফসোস নেই আমার

আপডেট টাইম : ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ সত্তর ও আশি দশকের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী সুচরিতা। তার আসল নাম বেবী হেলেন। ১৯৬৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘বাবুল’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। তিনি শিশু চরিত্রে আরো অভিনয় করেন ‘নিমাই সন্ন্যাসী’, ‘অবাঞ্ছিত’, ‘রং  বেরং’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘কত যে মিনতি’, ‘রাজ মুকুট’ সহ আরো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে। নায়িকা হিসেবে আজিজুর রহমানের নির্দেশনায় প্রথম অভিনয় করেন ১৯৭২ সালে ‘স্বীকৃতি’ ছবিতে। এরপর নায়িকা হিসেবে দীলিপ বিশ্বাসের ‘সমাধি’ এবং অশোক ঘোষের ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রে পরপর অভিনয় করেন। একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং মুক্তির পর দর্শকপ্রিয়তার কারণে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘যাদুর বাঁশি’ ছবিটি তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়।

বরেণ্য গীতিকবি ও নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার তার হেলেন নাম পরিবর্তন করে রাখেন সুচরিতা।
চাষী নজরুল ইসলামের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। দীর্ঘ সময় পর আবারো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন তিনি। আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করবেন এ অভিনেত্রী। ২০১৮ সালের ‘মেঘকন্যা’ সিনেমায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্য তিনি মনোনিত হয়েছেন। পুরস্কার প্রসঙ্গে সুচরিতা বলেন, পুরস্কার নিয়ে আফসোস নেই আমার। বরং আনন্দ আছে। আমি আমার জীবনের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’-এর সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে নিয়েছিলাম। এখনো মনে আছে। দীর্ঘ সময় পর আবার উনার হাত থেকেই আজ পুরস্কার নিবো।
এ সিনেমায় আমি একটি চার্চের মাদারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সিনেমাটির সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এর চিত্রগ্রাহক ছিলেন মাহফুজুর রহমান খান। তিনি বলেছিলেন যে, এ ছবিতে তুমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবা। সেটাই হলো। আজ এ কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে। আল্লাহ তাকে বেহেশতবাসী করুক এটাই দোয়া রইলো। সুচরিতা বর্তমানে খুব কম সিনেমায় কাজ করেন। এর কারণ কি ? তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ভালো গল্পের পাশাপাশি ভালো চরিত্রের জন্য অপেক্ষায় থাকি আমি। পরিকল্পিত চরিত্রের লুক তৈরি করার যে নিয়ম অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে তা ঢাকার চলচ্চিত্রে অনেকটাই কম। পরিচালক বদিউল আলম খোকনের ‘আগুন’ সিনেমায় কাজ করেছি সবশেষ। অনেকেই বলে, ঘরে বসে থাকলে নাকি অসুস্থ হয়ে পড়বো।
তাই মাঝে মধ্যেই কাজ করা হয় আমার। হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেন তিনি। সুচরিতা আরো বলেন, কাজ করার আগে ভাবি যে, সময়ও কাটবে, সবার সঙ্গে দেখাও হবে। আমি সবশেষ রফিক শিকদারের ‘বসন্ত বিকেল’ সিনেমার মহরতে এফডিসিতে গিয়েছিলাম। এই তো কয়েকদিন আগের কথা। তখন মাহফুজুর রহমান খানের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। উনারও এ সিনেমায় কাজ করার কথা ছিল। বর্তমানে সিনেমার নির্মাণ কমেছে। খুব বড় বাজেটের কাজও কম হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সুচরিতা বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দশর্কদের চাহিদার পরিবর্তনও এসেছে। তাই এখন আমাদের ছবির মান আরো ঊধ্বর্মুখী করতে হবে। তা না হলে সিনেমা হলে দর্শক ধরে রাখা সম্ভব না। আর ভালো সিনেমার জন্য বাজেট খুব জরুরী। ভালো কাহিনীকারও দরকার। মৌলিক গল্পের ভালো সিনেমা দর্শকদের উপহার দিতে হবে। ‘জনি’, ‘রঙিন জরিনা সুন্দরী’, ‘ডাকু মনসুর’, ‘এখনো অনেক রাত’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’, ‘সমাধি’, ‘ত্রাস’, ‘দ্য ফাদার’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘নাগরদোলা’, ‘বদলা’, ‘রকি’, ‘মাস্তান’, ‘জানোয়ার’, ‘আসামী’, ‘তুফান’, ‘সাক্ষী’, ‘আঁখি মিলন’, ‘দাঙ্গা’ সহ আরো অনেক ছবিতে জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করেছেন এ অভিনেত্রী। ভালো কাজের মাধ্যমে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার কথা সবশেষে জানালেন তিনি। বললেন, গল্প আর নিভর্রযোগ্য চরিত্র পেলে নিয়মিত কাজ করতে আমার আপত্তি নেই।