বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শোক দিবস হওয়ার কারণেই দেশব্যাপী এদিন লাল সবুজের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই নিয়মেই পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
এছাড়াও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও এদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান রয়েছে সংবিধানে। এক কথায় সরকারিভাবে ঘোষিত সব শোক দিবসেই জাতীয় পতাকা উত্তলনের সময় তা অর্ধনমিত রাখতে হবে।
আচ্ছা পতাকা অর্ধনমিত রাখা বলতে আপনি কি বোঝেন? আমরা অনেকেই অর্ধনমিত রাখা বলতে বুঝি পতাকা দন্ডের অর্ধেক/মাঝামাঝি পরিমাণ নিচে বেঁধে রাখা। যা একেবারেই ঠিক না। আমাদের সবারই সঠিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান জেনে রাখা উচিত। ১৯৭২ সালে প্রণীত (২০১০ সালে সংশোধিত) ‘জাতীয় পতাকা বিধিমালা’য় জাতীয় পতাকা যথাযথভাবে ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনা মেনে চলা প্রতিটি নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য।
জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা মানে পতাকা দন্ডের অর্ধেক/মাঝামাঝি পরিমাণ নিচে নামানো নয়। বরং পতাকার প্রস্থের সমপরিমান নিচে নামানো। তা সে পতাকা দন্ডটি যতই লম্বা হোক বা খাটো হোক। পতাকা দন্ডের মাপের সঙ্গে পতাকা অর্ধনমিত করার মাপের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্ধনমিত করার মাপ নির্ভর করবে পতাকার প্রস্থের মাপের উপর।
অর্থাৎ যদি পতাকাটির প্রস্থের মাপ ৬ ফুট হয় তো ৬ ফুট নিচে নামিয়ে বাঁধতে হবে। পতাকাটির প্রস্থের মাপ যদি ৩ ফুট হয় তো ৩ ফুট নিচে নামিয়ে রাখতে হবে এবং পতাকাটির প্রস্থ যদি দেড় ফুট হয় তো দেড় ফুট নিচে নামিয়ে রাখতে হবে। পতাকাটি নির্ধারিত দড়িতে বেঁধে প্রথমে দন্ডের চূড়া পর্যন্ত তুলে তারপর নিয়মানুসারে মাপ মতো নামাতে হবে।
সকালে সূর্যোদয়ের পর মূহুর্তেই জাতীয় পতাকাটি ধীরে ধীরে পূর্ণ উত্তোলন করে ৩০ সেকেন্ড রেখে স্যালুট দিতে হবে। স্যালুট শেষ হলেই ধীরে ধীরে মাপ মতো (পতাকাটির প্রস্থের সমপরিমান) নিচে নামিয়ে বাঁধতে হবে। এটিই জাতীয় পতাকার অর্ধনমিতকরণ। এই অর্ধনমিত অবস্থায় পতাকাটি রাখতে হবে সারাদিন। এরপর বিকেলে সূর্যাস্তের পূর্ব মূহুর্তে পতাকাটি পুনরায় পূর্ণ উত্তোলন করে ৩০ সেকেণ্ড রেখে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ নামিয়ে ফেলতে হবে।
রাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত বা অর্ধনমিত রাখা যাবে না। পরদিন প্রয়োজনে আবার একইভাবে পতাকা উত্তোলন করতে হবে। শোক দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন বা অর্ধনমিত করার সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা যাবে না। জাতীয় শোক দিবসে কালো পতাকা পূর্ণ উত্তোলিত রাখতে হবে।
সেক্ষেত্রে জাতীয় পতাকা ও কালো পতাকা পাশাপাশি থাকলে কোনোভাবেই কালো পতাকা জাতীয় পতাকার উর্ধ্বে বা সমউচ্চতায় রাখা যাবে না। কালো পতাকা অবশ্যই জাতীয় পতাকার চেয়ে নিচে রাখতে হবে। সেজন্য কালো পতাকার দন্ডটি জাতীয় পতাকার দন্ডের চেয়ে ততটুকু খাটো রাখতে হবে যাতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত হলেও কালো পতাকা নিচে থাকে।
দু’টি পতাকা দন্ড পাশাপাশি স্থাপিত হলে জাতীয় পতাকার দন্ডটি (উঁচু দন্ডটি) ডান পাশে রাখতে হবে। অর্থাৎ জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়ালে ডানদিকে জাতীয় পতাকার দন্ডটি স্থাপিত করতে হবে। দুইয়ের অধিক পতাকা দন্ড পাশাপাশি স্থাপন করা হলে জাতীয় পতাকার উঁচু দন্ডটি মাঝে স্থাপন করতে হবে। সকল পতাকাদন্ড অবশ্যই সোজাভাবে দন্ডায়মান রাখতে হবে। কালো পতাকাটি জাতীয় পতাকার চেয়ে ছোট হতে হবে। পাশাপাশি উত্তোলিত কোন পতাকাই জাতীয় পতাকার চেয়ে বড় রাখা যাবে না।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(১) অনুযায়ী ‘প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকা হচ্ছে সবুজ ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত।’
আকার ভেদে ছোট-বড় বিভিন্ন ভবনে উত্তোলনের জন্য জাতীয় পতাকার মাপ তিন রকম:
(ক) দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট।
(খ) দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও প্রস্থ ৩ ফুট।
(গ) দৈর্ঘ্য ২.৫ ফুট ও প্রস্থ ১.৫ ফুট।
শুধু অনুমোদিত মোটর গাড়িতে উত্তোলনের জন্য জাতীয় পতাকার মাপ:
(ক) দৈর্ঘ্য ১৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৯ ইঞ্চি।
(খ) দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৬ ইঞ্চি।
(গ) ৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৩ ইঞ্চি।
জাতীয় পতাকার জমিন হবে গাঢ় সবুজ, বৃত্ত হবে রক্ত লাল। সবুজ জমিনের মাঝের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ।