কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গতকাল রবিবার রাতে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শনাক্তে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
গতকাল রবিবার দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আব্দুল হাই কানু। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সূত্র আরও জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। স্থানীয় এমপি মুজিবুল হকের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে আগে একাধিক মামলা হয়েছিল। রবিবার দুপুরে তাকে একা পেয়ে স্থানীয় ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি হেনস্থা করে গলায় জুতার মালা দেয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকায়, এমনকি কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দিচ্ছেন। এ সময় তিনি জুতার মালা সরিয়ে এলাকায় আর আসবেন না বলেও জানান। এ সময় তার ভিডিও ধারণ ও ছবি নেওয়া হয়। ওই ব্যক্তিরা বলতে থাকেন ‘এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা?’ অন্যরা বলতে থাকেন ‘তিনি কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, ছেড়ে দাও।’
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বলেন, ‘হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গালায় দিয়ে ভিডিও করেন। বিচার কার কাছে চাইব? মামলা দিয়ে আর কী হবে? তারা সবাই জামায়াতের রাজনীতি করে। আমি আওয়ামী লীগ করলেও বিগত দিনে তাদের কোনো ক্ষতি করিনি। উল্টো আওয়ামী লীগের এমপির রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকা ছাড়া ছিলাম।’
জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি বলেন, ‘ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাকে অবগত করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ করবেন না বলেও জানান।তবে রাতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আবারও তাকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দেবেন কি না বিষয়টি এখনো নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে ঘটনার বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। তবে সমর্থক কিংবা অনুসারী হলেও হতে পারে। এ বিষয়ে আরও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। জড়িতরা আমাদের কেউ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’