ঢাকা , সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জমি নেই তবু পেলেন সরকারি প্রণোদনার বীজ-সার

নিজের কোনো জমি নেই। তবু অসহায় ও হতদরিদ্রের তালিকায় নাম রেখে বিধবা নারীকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় বাদামের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। আবাদের সময় চলে গেলেও ওই বীজ এখন স্থানীয় একটি দোকানে রয়েছে।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরলক্ষীদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই গ্রামের মৃত মো. রতনের স্ত্রী শিশির বেগম ওরফে শিল্পি শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন। তিনি এলাকায় একজন অসহায় ও হতদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত। গ্রামের লোকজন বিভিন্ন সময় তাকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে তিনি সম্প্রতি সরকারের দেওয়া প্রণোদনার বাদামের বীজ ও সার পেয়েছেন।

তবে বপনের সময় চরে গেলেও তিনি ওই বীজ বপন করতে পারেননি। কারণ তার বাদাম করার মতো কোনো উপযুক্ত জমি নেই।শিশির বেগমের প্রতিবেশী মো. আব্দুল জব্বার জানান, শিশির বেগম খুবই অসহায়। স্থানীয়ভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের বলা হয়েছিল সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা এলে একটু দেখার জন্য।

তারাই ওই নারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কৃষি অফিসে জমা দেয়। পরে সেখান থেকে প্রণোদনার তালিকায় নাম তালিকাভুক্ত করে বাদামের বীজ ও সার দিয়েছে। কিন্তু এগুলো পেয়ে তার কোনো কাজে লাগছে না। বাদাম করার মতো উপযুক্ত কোনো জমি নেই তার।জানা যায়, নান্দাইলে চলতি বাদাম মৌসুমে ২০ জনকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় এনে ১০ কেজি বাদামের বীজ ও ১০ কেজি ডিএফপি এবং ৫ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরপুর ও চরবেতাগৈর ইউনিয়নের ২০ জনকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তবে চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরাঞ্চলেই বাদাম চাষ বেশি হয়। সেখানে ১০-১২ জন কৃষক নিয়মিত চাষ করেন। তবে প্রণোদনা যাদের দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৯০ ভাগই প্রকৃত কৃষক নন।

চরশ্রীরামপুরের আব্দুল মতিন নামের এক কৃষক জানান, যাদের বাদামের বীজ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন ছাড়া আর কেউ বাদাম করার মতো প্রকৃত কৃষক নন। সবাই বাদামের বীজ বিক্রি করে দিয়েছেন বা ভেজে খেয়েছেন।

শিশির বেগম বলেন, ‘আমার কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) যারা নিছিন, তারাই জানাইছে আমি এইতা (বীজ, সার) পাইছি। আমি এইতা দিয়া কী করবাম?’

নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাঈমা সুলতানা কালের কণ্ঠকে জানান, যাদের জমি নেই তারা ইচ্ছা করলে বর্গা নিয়েও করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে আরো খোঁজখবর নেওয়া হবে।

তিনি দাবি করেন, বাদামের বীজ যারা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ কৃষক আবাদ করেছেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জমি নেই তবু পেলেন সরকারি প্রণোদনার বীজ-সার

আপডেট টাইম : ০১:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
নিজের কোনো জমি নেই। তবু অসহায় ও হতদরিদ্রের তালিকায় নাম রেখে বিধবা নারীকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় বাদামের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। আবাদের সময় চলে গেলেও ওই বীজ এখন স্থানীয় একটি দোকানে রয়েছে।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরলক্ষীদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই গ্রামের মৃত মো. রতনের স্ত্রী শিশির বেগম ওরফে শিল্পি শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন। তিনি এলাকায় একজন অসহায় ও হতদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত। গ্রামের লোকজন বিভিন্ন সময় তাকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে তিনি সম্প্রতি সরকারের দেওয়া প্রণোদনার বাদামের বীজ ও সার পেয়েছেন।

তবে বপনের সময় চরে গেলেও তিনি ওই বীজ বপন করতে পারেননি। কারণ তার বাদাম করার মতো কোনো উপযুক্ত জমি নেই।শিশির বেগমের প্রতিবেশী মো. আব্দুল জব্বার জানান, শিশির বেগম খুবই অসহায়। স্থানীয়ভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের বলা হয়েছিল সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা এলে একটু দেখার জন্য।

তারাই ওই নারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কৃষি অফিসে জমা দেয়। পরে সেখান থেকে প্রণোদনার তালিকায় নাম তালিকাভুক্ত করে বাদামের বীজ ও সার দিয়েছে। কিন্তু এগুলো পেয়ে তার কোনো কাজে লাগছে না। বাদাম করার মতো উপযুক্ত কোনো জমি নেই তার।জানা যায়, নান্দাইলে চলতি বাদাম মৌসুমে ২০ জনকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় এনে ১০ কেজি বাদামের বীজ ও ১০ কেজি ডিএফপি এবং ৫ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরপুর ও চরবেতাগৈর ইউনিয়নের ২০ জনকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তবে চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরাঞ্চলেই বাদাম চাষ বেশি হয়। সেখানে ১০-১২ জন কৃষক নিয়মিত চাষ করেন। তবে প্রণোদনা যাদের দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৯০ ভাগই প্রকৃত কৃষক নন।

চরশ্রীরামপুরের আব্দুল মতিন নামের এক কৃষক জানান, যাদের বাদামের বীজ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন ছাড়া আর কেউ বাদাম করার মতো প্রকৃত কৃষক নন। সবাই বাদামের বীজ বিক্রি করে দিয়েছেন বা ভেজে খেয়েছেন।

শিশির বেগম বলেন, ‘আমার কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) যারা নিছিন, তারাই জানাইছে আমি এইতা (বীজ, সার) পাইছি। আমি এইতা দিয়া কী করবাম?’

নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাঈমা সুলতানা কালের কণ্ঠকে জানান, যাদের জমি নেই তারা ইচ্ছা করলে বর্গা নিয়েও করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে আরো খোঁজখবর নেওয়া হবে।

তিনি দাবি করেন, বাদামের বীজ যারা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ কৃষক আবাদ করেছেন।