ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচ গ্রামের ভরসা এই বাঁশের সাঁকো

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খুলনার সর্ববৃহৎ উপজেলা ডুমুরিয়া সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার ভেতরে তেলিগাতী নদীর শাখা আড়োখালীতে নির্মিত বাঁশের সাঁকো এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন প্রতিদিন। দুর্ভোগ অনুধাবন করে ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ডিও লেটার দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। তাতেও কষ্ট লাঘব হয়নি এলাকাবাসীর।

বাঁশের সাঁকোতে কুলবাড়িয়া বিকেএমএস নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগআঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লীশী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পল্লীশী মহাবিদ্যালয়, কাঁঠালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বয়ারশিং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে।

ফলে প্রতিনিয়তই ঘটে দুর্ঘটনা। সাঁকো থেকে পড়ে গেলে সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হয় না। গ্রামের ছেলে-মেয়ে সাঁতার জানে বলেই জীবনে রক্ষা-বললেন বাগআঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা ফুলতলা কলেজের প্রভাষক নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল।

তিনি আরও বলেন, দেশে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে তা আমাদের এলাকার মানুষ বিশ্বাস-ই করতে চায় না! পদ্মানদী মাঝি’র উপ্যানাসের মতো তাদের বক্তব্য, ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্রপল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’

একই এলাকার বাসিন্দা কাঁঠালতলা বরাতিয়া কওমি মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “যাতায়াতের কষ্টের কথা বলতে চাই না, আমরা সামাজিকভাবে যে কতটা অবহেলিত তা বোঝাতে পারবো না’।

ডুমুরিয়ার বাগআঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা গাজী আলী বাদশা বলেন, বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাতায়াত করতে হয় বলে এলাকায় কেউ ছেলে-মেয়ে বিয়ে দেয় না। নতুন আত্মীয়তা সৃষ্টি তো দূরের কথা, সম্পর্ক ছিন্ন হবার অনেক ক্ষেত্রেই দায়ী আটলিয়া ও শোভনা ইউনিয়নের এ সংযোগ সাঁকোটি।

ভোট এলে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি দেন; কিন্তু পাঁচ গ্রামের দশ সহস্রাধিক অধিবাসীর সাঁকো অভিশাপ মোচন হয় না।

এ মনোকষ্ট শুধু আলী বাদশার একার নয়; কুলবাড়িয়া, বাগআঁচড়া, বাদুরগাছা, মনোহরপুর, বয়ারশিং ও মাদারতলা গ্রামবাসীরও।

জানা গেছে, প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে সাঁকো পারাপারে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের কোনো উদ্যোগের ছোঁয়া লাগেনি ওই এলাকায়। বছর খানেক আগে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে এলাকা।

তবে ভারী-মাঝারি যানবাহন তো দূরের কথা মোটরসাইকেল চলাচল করেনি ওইসব এলাকায়। যাতায়াতের সমস্যার কারণে কুলবাড়িয়া মৎস্য আড়তে অল্প দামে পাওয়া যায় নদীর মাছ; তাতে অবশ্যই জেলে পল্লীর দুঃখ-দুর্দশা বাড়ে বৈকি কমে না!

খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর, শোভনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্য ও আটলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায় একই সুরে বলেন, ‘চেষ্টা চলছে, দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ করা হবে’।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

পাঁচ গ্রামের ভরসা এই বাঁশের সাঁকো

আপডেট টাইম : ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খুলনার সর্ববৃহৎ উপজেলা ডুমুরিয়া সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার ভেতরে তেলিগাতী নদীর শাখা আড়োখালীতে নির্মিত বাঁশের সাঁকো এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন প্রতিদিন। দুর্ভোগ অনুধাবন করে ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ডিও লেটার দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। তাতেও কষ্ট লাঘব হয়নি এলাকাবাসীর।

বাঁশের সাঁকোতে কুলবাড়িয়া বিকেএমএস নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগআঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লীশী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পল্লীশী মহাবিদ্যালয়, কাঁঠালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বয়ারশিং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে।

ফলে প্রতিনিয়তই ঘটে দুর্ঘটনা। সাঁকো থেকে পড়ে গেলে সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হয় না। গ্রামের ছেলে-মেয়ে সাঁতার জানে বলেই জীবনে রক্ষা-বললেন বাগআঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা ফুলতলা কলেজের প্রভাষক নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল।

তিনি আরও বলেন, দেশে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে তা আমাদের এলাকার মানুষ বিশ্বাস-ই করতে চায় না! পদ্মানদী মাঝি’র উপ্যানাসের মতো তাদের বক্তব্য, ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্রপল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’

একই এলাকার বাসিন্দা কাঁঠালতলা বরাতিয়া কওমি মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “যাতায়াতের কষ্টের কথা বলতে চাই না, আমরা সামাজিকভাবে যে কতটা অবহেলিত তা বোঝাতে পারবো না’।

ডুমুরিয়ার বাগআঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা গাজী আলী বাদশা বলেন, বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাতায়াত করতে হয় বলে এলাকায় কেউ ছেলে-মেয়ে বিয়ে দেয় না। নতুন আত্মীয়তা সৃষ্টি তো দূরের কথা, সম্পর্ক ছিন্ন হবার অনেক ক্ষেত্রেই দায়ী আটলিয়া ও শোভনা ইউনিয়নের এ সংযোগ সাঁকোটি।

ভোট এলে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি দেন; কিন্তু পাঁচ গ্রামের দশ সহস্রাধিক অধিবাসীর সাঁকো অভিশাপ মোচন হয় না।

এ মনোকষ্ট শুধু আলী বাদশার একার নয়; কুলবাড়িয়া, বাগআঁচড়া, বাদুরগাছা, মনোহরপুর, বয়ারশিং ও মাদারতলা গ্রামবাসীরও।

জানা গেছে, প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে সাঁকো পারাপারে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের কোনো উদ্যোগের ছোঁয়া লাগেনি ওই এলাকায়। বছর খানেক আগে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে এলাকা।

তবে ভারী-মাঝারি যানবাহন তো দূরের কথা মোটরসাইকেল চলাচল করেনি ওইসব এলাকায়। যাতায়াতের সমস্যার কারণে কুলবাড়িয়া মৎস্য আড়তে অল্প দামে পাওয়া যায় নদীর মাছ; তাতে অবশ্যই জেলে পল্লীর দুঃখ-দুর্দশা বাড়ে বৈকি কমে না!

খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর, শোভনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্য ও আটলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায় একই সুরে বলেন, ‘চেষ্টা চলছে, দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ করা হবে’।