ঢাকা , শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যত দ্রুত নির্বাচন, ততই দেশের মঙ্গল: মির্জা ফখরুল ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে দেখা যাবে দ্বিতীয় চাঁদ এক পদে দুইবারের বেশি কেউ নয়: আসিফ কলকাতায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি ইলিশ ভারী বৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা, দ্রুত বাড়ছে নদ-নদীর পানি সাম্প্রদায়িক-জাতিগত সংঘাতের সুযোগ বাংলাদেশে নেই: খেলাফত মজলিস হিজবুল্লাহ প্রধানকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা বাড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ড. ইউনূসের আহ্বান যে সরকার কোরআনকে জঙ্গি কিতাব বলে, সে সরকার মুসলমানদের নয়: মুজিবুর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ ড. ইউনূস ‘তরুণরা যে প্রজ্ঞা, সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে তা আমাদের অভিভূত করেছে’

ব্যয় করা হচ্ছে ৪২ কোটি টাকা শ্যালো মেশিনে খনন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মাগুরার নবগঙ্গা নদীর ১১ কিলোমিটারজুড়ে পুনঃখনন প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে ৪২ কোটি টাকা। অথচ খনন যন্ত্রের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে শ্যালো মেশিন। ধীরগতিতে চলায় যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নদী পুনঃখনন তদারকি কমিটির প্রধান মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাহাবুবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল সম্প্রতি শহরের পারনান্দুয়ালীসহ বিভিন্ন এলাকায় খনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। নদীপারের বাসিন্দারা ঠিকাদারদের নানা অসংগতির কথা তুলে ধরেছে। কাজে ধীরগতির নেপথ্যে ঠিকাদাররা বর্ষা মৌসুমের অপেক্ষা করছেন—এমন মন্তব্য অনেকের।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাহাবুবুর রহমান জানান, গোটা খননকাজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এটির মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একদিকে উল্লেখিত সময় যেমন প্রায় শেষ, তেমনি বর্ষা সমাগত। অন্যদিকে নদী খননে উন্নত মানের ড্রেজার ব্যবহার করার কথা। কিন্তু ব্যবহৃত হচ্ছে স্থানীয়ভাবে তৈরি ম্যানুয়েল ড্রেজার। এ কারণে কাজে ধীরগতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন করে নদী খননের গভীরতা ১৩ থেকে ১৫ ফুট ধার্য আছে। পরিমাপের সময় এটি ৫-১২ ফুট পাওয়া গেছে।

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে মাগুরা শহরের পূর্বাশা সিনেমা হল এলাকার পারনান্দুয়ালী থেকে সদর উপজেলার বারাশিয়া পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারজুড়ে খননকাজ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলাম, মেসার্স শামীম আহসান, মেসার্স শামীম আহমেদ, মেসার্স সালেহ আহমেদ কাজ পেয়েছেন। দ্রুত কাজ সম্পাদনের জন্য তাদের প্রতিনিয়ত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলামের প্রতিনিধি মাহাবুব হোসেন রিপন বলেন, ‘এখন দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করার আশা করছি।’

এদিকে গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে পুনঃখননের কাজ ঘুরে দেখার সময় এ বিষয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে নানা তথ্য। নবগঙ্গা নদীপারের বাসিন্দা পারনান্দুয়ালীর মোমিন শেখ বলেন, ‘নদী খননের শুরু থেকেই এখানে নানা অসংগতি চোখে পড়েছে। যেমন নদীর মাটি খনন করে নদীর মধ্যেই রেখে দেওয়া হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় ড্রেজার ব্যবহার না করে পুকুর খননে ব্যবহৃত হয় এমন শ্যালো ইঞ্জিন চালানো হচ্ছে। এমন দেশি যন্ত্রে নদীর বালু উত্তোলন করে তা আবার নদীর পাশেই স্তূপ করা হচ্ছে।’

একই এলাকার আবু জাফর বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, নদীটি ৩০০ মিটার প্রশস্ত। খননের আওতায় আনা হয়েছে ১০০ মিটার। বাকি ২০০ মিটারের কিছু অংশ আগেই দখল করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কিছু অংশ চরকবলিত ছিল, যা এখন খননের মাটি বালু দিয়ে আবার ভরাট হচ্ছে। একটু বড় ধরনের বর্ষা হলে এসব বালু তলদেশে গিয়ে নদীর গভীরতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। ফলে নদীর নাব্যতা ফেরানোর লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া নদী খননে শুরু থেকেই ঠিকাদাররা ধীরগতিতে কাজ করছেন। যেটি দেখে মনে হয়েছে, তাঁরা বর্ষাকালের অপেক্ষায় আছেন। কারণ বর্ষা এলে নদীর পানির গভীরতা ও প্রশস্ততা এমনিতেই বাড়বে। খননের প্রয়োজন হবে না।’

এসব বিষয়ে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, ‘নদীর বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা দখলমুক্ত করার কাজ চলছে। এটি সম্ভব হলে ভবিষ্যতে নদীটি আরো প্রশস্ত করা যাবে।’

মাগুরা পৌরসভার মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল বলেন, ‘নদীর দুই পারে একটি ওয়াকওয়ে তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য কিছু জায়গা ব্যবহার করা হবে। এ কারণে নদীর খননকৃত কিছু মাটি দুই পারের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা সমতল করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

যত দ্রুত নির্বাচন, ততই দেশের মঙ্গল: মির্জা ফখরুল

ব্যয় করা হচ্ছে ৪২ কোটি টাকা শ্যালো মেশিনে খনন

আপডেট টাইম : ০৬:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মাগুরার নবগঙ্গা নদীর ১১ কিলোমিটারজুড়ে পুনঃখনন প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে ৪২ কোটি টাকা। অথচ খনন যন্ত্রের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে শ্যালো মেশিন। ধীরগতিতে চলায় যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নদী পুনঃখনন তদারকি কমিটির প্রধান মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাহাবুবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল সম্প্রতি শহরের পারনান্দুয়ালীসহ বিভিন্ন এলাকায় খনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। নদীপারের বাসিন্দারা ঠিকাদারদের নানা অসংগতির কথা তুলে ধরেছে। কাজে ধীরগতির নেপথ্যে ঠিকাদাররা বর্ষা মৌসুমের অপেক্ষা করছেন—এমন মন্তব্য অনেকের।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাহাবুবুর রহমান জানান, গোটা খননকাজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এটির মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একদিকে উল্লেখিত সময় যেমন প্রায় শেষ, তেমনি বর্ষা সমাগত। অন্যদিকে নদী খননে উন্নত মানের ড্রেজার ব্যবহার করার কথা। কিন্তু ব্যবহৃত হচ্ছে স্থানীয়ভাবে তৈরি ম্যানুয়েল ড্রেজার। এ কারণে কাজে ধীরগতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন করে নদী খননের গভীরতা ১৩ থেকে ১৫ ফুট ধার্য আছে। পরিমাপের সময় এটি ৫-১২ ফুট পাওয়া গেছে।

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে মাগুরা শহরের পূর্বাশা সিনেমা হল এলাকার পারনান্দুয়ালী থেকে সদর উপজেলার বারাশিয়া পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারজুড়ে খননকাজ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলাম, মেসার্স শামীম আহসান, মেসার্স শামীম আহমেদ, মেসার্স সালেহ আহমেদ কাজ পেয়েছেন। দ্রুত কাজ সম্পাদনের জন্য তাদের প্রতিনিয়ত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলামের প্রতিনিধি মাহাবুব হোসেন রিপন বলেন, ‘এখন দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করার আশা করছি।’

এদিকে গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে পুনঃখননের কাজ ঘুরে দেখার সময় এ বিষয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে নানা তথ্য। নবগঙ্গা নদীপারের বাসিন্দা পারনান্দুয়ালীর মোমিন শেখ বলেন, ‘নদী খননের শুরু থেকেই এখানে নানা অসংগতি চোখে পড়েছে। যেমন নদীর মাটি খনন করে নদীর মধ্যেই রেখে দেওয়া হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় ড্রেজার ব্যবহার না করে পুকুর খননে ব্যবহৃত হয় এমন শ্যালো ইঞ্জিন চালানো হচ্ছে। এমন দেশি যন্ত্রে নদীর বালু উত্তোলন করে তা আবার নদীর পাশেই স্তূপ করা হচ্ছে।’

একই এলাকার আবু জাফর বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, নদীটি ৩০০ মিটার প্রশস্ত। খননের আওতায় আনা হয়েছে ১০০ মিটার। বাকি ২০০ মিটারের কিছু অংশ আগেই দখল করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কিছু অংশ চরকবলিত ছিল, যা এখন খননের মাটি বালু দিয়ে আবার ভরাট হচ্ছে। একটু বড় ধরনের বর্ষা হলে এসব বালু তলদেশে গিয়ে নদীর গভীরতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। ফলে নদীর নাব্যতা ফেরানোর লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া নদী খননে শুরু থেকেই ঠিকাদাররা ধীরগতিতে কাজ করছেন। যেটি দেখে মনে হয়েছে, তাঁরা বর্ষাকালের অপেক্ষায় আছেন। কারণ বর্ষা এলে নদীর পানির গভীরতা ও প্রশস্ততা এমনিতেই বাড়বে। খননের প্রয়োজন হবে না।’

এসব বিষয়ে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, ‘নদীর বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা দখলমুক্ত করার কাজ চলছে। এটি সম্ভব হলে ভবিষ্যতে নদীটি আরো প্রশস্ত করা যাবে।’

মাগুরা পৌরসভার মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল বলেন, ‘নদীর দুই পারে একটি ওয়াকওয়ে তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য কিছু জায়গা ব্যবহার করা হবে। এ কারণে নদীর খননকৃত কিছু মাটি দুই পারের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা সমতল করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।’