ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে

ড. গোলসান আরা বেগমঃ বাংলাদেশে মার্চ মাস ২০২০ এর গোড়ার দিকে কোবিড -১৯ এ আক্রান্ত রুগীর সন্ধান পাওয়া যায়। সারাবিশ্বের মানুষ তখন করোনা মহামারির ভয়ে আতংক গ্রস্থ ছিলো। বাংলাদেশেও মানুষ সঙ্গ নিরোধ উপায়ে গৃহ বন্দি জীবন যাপন করছিলো। মেনে চলছিলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত বিধিবিধান। ভয়ে করোনায় আক্রান্ত রুগীর  কাছের স্বজনরাও সেবা যত্ন দুরে থাক,ধারে কাছেও যেতো না। হাসপাতালে মৃত ব্যক্তির লাশ ফেলে রেখে তার সন্তানরা পালিয়ে যেতো। এই ধরনের নির্মম, নির্দয়,অমানবিক আচরন করছিলো করোনা রুগীর সঙ্গে।
সরকার মানুষকে ঘরে আটকে রাখার নিষেধাঞ্জা হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,অফিস, আদালত, বিভিন্ন কর্মস্থল বন্দ করে দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করেছিলো। মানুষ ছিলো করোনার ভয়ে মৃত্যু আতংকে উন্মাদ প্রায়। বিগত ৯ মাসে আমরা এই ছোঁয়াছে রোগ অনুজীব করোনায় বহুজনকে হারিয়েছি। প্রহর গুনছি করোনার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষে, কবে কখন করোনার ভ্যাকসিন গায়ে পোশ করতে পারবো।
ইতিমধ্যে অনেক গবেষণার পর পৃথিবীবাসি করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে। চলছে বিভিন্ন দেশে মানুষের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার প্রক্রিয়া। পার্শবর্তী রাষ্ট্র ভারত চলতি সপ্তাহ থেকে জনসাধারনের দেহে ভ্যাকসিন দিচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউন ঘোষনা করছে। আবার সাধারন জনগণ লকডাউনের বিরুধীতাও করছে। কেউ বলছে করোনা বলে কিছু নেই। স্রেফ একটা প্রোপাগান্ডা মাত্র। কেউ কেউ আশংকা করছে – আগামী মার্চ মাসে তৃতীয় দফায় করোনার ঢেউ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছে ভ্যাকসিনের পেছনে। বাংলাদেশ সে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভারতের সেরাম ইনষ্টিটিউটে ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য ছয়শত কোটি টাকা জমা দিয়েছে। আশা করা যায় ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে টিকা পাওয়া যাবে। এই টিকা ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার নীচে সংরক্ষণ করতে হবে। ভ্যাকসিন বা টিকা যাই বলি না কেন বিনা মুল্যে জনগণকে দেয়া হবে। প্রতি ব্যক্তি দুই ডোজ করে টিকা পাবে। তবে টিকা দেবার পরও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেরাম ইনষ্টিটিউট সর্বমোট চার কোটি ৯০ লক্ষ টিকা বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে। এই বিশাল আকারের টিকা দান কর্মসুচি বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান তৈরীর কাজ প্রায় সম্পন্নের দিকে। দিকা দিতে আগ্রহী ব্যক্তিকে তার নাম, তারিখ, মোবাইল নাম্বার, এনআইডি কার্ডের নম্বর,পেশা,কোন জটিল রুগ আছে কিনা, ব্যক্তিগত পরিচয় যুক্ত করে নাম রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। দেশের যে কোন প্রান্তে বসে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশান করতে পারবে।
মোবাইল অ্যাপ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এসএমএস পাঠানো হবে- সে কবে কোথায় গিয়ে টিকা নিবে। টিকা নেবার পর দুই ঘন্টা টিকাদান কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে। যদি কোন পার্শ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে ওখানে তাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। অতএব ভয় পাওয়ার বা আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। নির্ভয়ে সবাই টিকা নিতে পারবে। কেউ কেউ বলছে গলার স্বর পরিবতর্ন হয়ে যাবে। আবার কেউ বলছে টিকা গায়ে পোশ করলে মেয়েদের গোঁফ ওঠবে। সাধারন মানুষকে এসব বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা।গুজবে কান না দিয়ে করোনা থেকে রেহাই পেতে হলে টিকা নেয়া হবে উত্তম কাজ।
দুইজন স্বাস্থ্য কর্মি যেখানে একজন থাকবে নারী, চারজন ভলানটিয়ার সেখানেও একজন নারী ভলানটিয়ার থাকবে। – মোট ছয় জন দিয়ে একটি টিকা প্রদানকারী দল গঠন করা হবে। সে দল প্রতি দিন ১০০- ১৫০ টি টিকা দিতে পারবে। ৮০% জনগনকে টিকা প্রদানের আওতায় আনা যাবে। তবে সময় লাগতে পারে ১৯০ দিন। প্রয়োজন হবে সকল স্তরের জনগণের সহযোগিতা।
প্রতিদিন সকালা ৯ টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চলবে। কোনা কোন এলাকায় প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে রাতেও টিকা দেয়া হতে পারে।
ঢাকা শহরে ৩৩০টি টিকা দান কেন্দ্র খুলা হবে। প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেবে। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ এর মাধ্যমে টিকা পাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে কে আগে বা পরে টিকা পাবে। প্রথম দফায় বেশী গুরুত্ব পাবে ফ্রন্ট লাইনে যারা কাজ করে। স্বাস্থ্য সেবায় যারা কাজ করে যেমন ডাক্তার, নার্স, ডায়াগনেস্টিক কর্মকর্তা, এম্বুলেন্স কর্মচারি, ক্লিনার,আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা, মুক্তিযোদ্ধারা,প্রশাসনিক কর্মকর্তারা,দেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
দ্বিতীয় দফায় যারা গুরুত্ব পাবে তারা হলেন – ষাট উর্ধ্ব বয়স্করা, জটিল রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা,ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষক, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা, সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তিরা, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস,বিমান বন্দর, পৌরকর্মি,ধর্মীয় নেতা ইত্যাদি পর্যায়ের জনগণসহ সকল স্তরের মানুষকেই টিকা দেয়া হবে।
আমরা ধৈর্যসহ অপেক্ষ করবো ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে দেবো সেবা খাতে। সবাই হবো দেশ ও দশের সেবক। তবেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিরাট উদ্যোগ সফল হবে।
লেখকঃ কবি, কলামিস্ট,উপদেষ্টা সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ। 
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে

আপডেট টাইম : ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১
ড. গোলসান আরা বেগমঃ বাংলাদেশে মার্চ মাস ২০২০ এর গোড়ার দিকে কোবিড -১৯ এ আক্রান্ত রুগীর সন্ধান পাওয়া যায়। সারাবিশ্বের মানুষ তখন করোনা মহামারির ভয়ে আতংক গ্রস্থ ছিলো। বাংলাদেশেও মানুষ সঙ্গ নিরোধ উপায়ে গৃহ বন্দি জীবন যাপন করছিলো। মেনে চলছিলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত বিধিবিধান। ভয়ে করোনায় আক্রান্ত রুগীর  কাছের স্বজনরাও সেবা যত্ন দুরে থাক,ধারে কাছেও যেতো না। হাসপাতালে মৃত ব্যক্তির লাশ ফেলে রেখে তার সন্তানরা পালিয়ে যেতো। এই ধরনের নির্মম, নির্দয়,অমানবিক আচরন করছিলো করোনা রুগীর সঙ্গে।
সরকার মানুষকে ঘরে আটকে রাখার নিষেধাঞ্জা হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,অফিস, আদালত, বিভিন্ন কর্মস্থল বন্দ করে দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করেছিলো। মানুষ ছিলো করোনার ভয়ে মৃত্যু আতংকে উন্মাদ প্রায়। বিগত ৯ মাসে আমরা এই ছোঁয়াছে রোগ অনুজীব করোনায় বহুজনকে হারিয়েছি। প্রহর গুনছি করোনার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষে, কবে কখন করোনার ভ্যাকসিন গায়ে পোশ করতে পারবো।
ইতিমধ্যে অনেক গবেষণার পর পৃথিবীবাসি করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে। চলছে বিভিন্ন দেশে মানুষের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার প্রক্রিয়া। পার্শবর্তী রাষ্ট্র ভারত চলতি সপ্তাহ থেকে জনসাধারনের দেহে ভ্যাকসিন দিচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউন ঘোষনা করছে। আবার সাধারন জনগণ লকডাউনের বিরুধীতাও করছে। কেউ বলছে করোনা বলে কিছু নেই। স্রেফ একটা প্রোপাগান্ডা মাত্র। কেউ কেউ আশংকা করছে – আগামী মার্চ মাসে তৃতীয় দফায় করোনার ঢেউ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছে ভ্যাকসিনের পেছনে। বাংলাদেশ সে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভারতের সেরাম ইনষ্টিটিউটে ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য ছয়শত কোটি টাকা জমা দিয়েছে। আশা করা যায় ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে টিকা পাওয়া যাবে। এই টিকা ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার নীচে সংরক্ষণ করতে হবে। ভ্যাকসিন বা টিকা যাই বলি না কেন বিনা মুল্যে জনগণকে দেয়া হবে। প্রতি ব্যক্তি দুই ডোজ করে টিকা পাবে। তবে টিকা দেবার পরও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেরাম ইনষ্টিটিউট সর্বমোট চার কোটি ৯০ লক্ষ টিকা বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে। এই বিশাল আকারের টিকা দান কর্মসুচি বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান তৈরীর কাজ প্রায় সম্পন্নের দিকে। দিকা দিতে আগ্রহী ব্যক্তিকে তার নাম, তারিখ, মোবাইল নাম্বার, এনআইডি কার্ডের নম্বর,পেশা,কোন জটিল রুগ আছে কিনা, ব্যক্তিগত পরিচয় যুক্ত করে নাম রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। দেশের যে কোন প্রান্তে বসে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশান করতে পারবে।
মোবাইল অ্যাপ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এসএমএস পাঠানো হবে- সে কবে কোথায় গিয়ে টিকা নিবে। টিকা নেবার পর দুই ঘন্টা টিকাদান কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে। যদি কোন পার্শ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে ওখানে তাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। অতএব ভয় পাওয়ার বা আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। নির্ভয়ে সবাই টিকা নিতে পারবে। কেউ কেউ বলছে গলার স্বর পরিবতর্ন হয়ে যাবে। আবার কেউ বলছে টিকা গায়ে পোশ করলে মেয়েদের গোঁফ ওঠবে। সাধারন মানুষকে এসব বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা।গুজবে কান না দিয়ে করোনা থেকে রেহাই পেতে হলে টিকা নেয়া হবে উত্তম কাজ।
দুইজন স্বাস্থ্য কর্মি যেখানে একজন থাকবে নারী, চারজন ভলানটিয়ার সেখানেও একজন নারী ভলানটিয়ার থাকবে। – মোট ছয় জন দিয়ে একটি টিকা প্রদানকারী দল গঠন করা হবে। সে দল প্রতি দিন ১০০- ১৫০ টি টিকা দিতে পারবে। ৮০% জনগনকে টিকা প্রদানের আওতায় আনা যাবে। তবে সময় লাগতে পারে ১৯০ দিন। প্রয়োজন হবে সকল স্তরের জনগণের সহযোগিতা।
প্রতিদিন সকালা ৯ টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চলবে। কোনা কোন এলাকায় প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে রাতেও টিকা দেয়া হতে পারে।
ঢাকা শহরে ৩৩০টি টিকা দান কেন্দ্র খুলা হবে। প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেবে। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ এর মাধ্যমে টিকা পাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে কে আগে বা পরে টিকা পাবে। প্রথম দফায় বেশী গুরুত্ব পাবে ফ্রন্ট লাইনে যারা কাজ করে। স্বাস্থ্য সেবায় যারা কাজ করে যেমন ডাক্তার, নার্স, ডায়াগনেস্টিক কর্মকর্তা, এম্বুলেন্স কর্মচারি, ক্লিনার,আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা, মুক্তিযোদ্ধারা,প্রশাসনিক কর্মকর্তারা,দেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
দ্বিতীয় দফায় যারা গুরুত্ব পাবে তারা হলেন – ষাট উর্ধ্ব বয়স্করা, জটিল রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা,ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষক, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা, সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তিরা, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস,বিমান বন্দর, পৌরকর্মি,ধর্মীয় নেতা ইত্যাদি পর্যায়ের জনগণসহ সকল স্তরের মানুষকেই টিকা দেয়া হবে।
আমরা ধৈর্যসহ অপেক্ষ করবো ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে দেবো সেবা খাতে। সবাই হবো দেশ ও দশের সেবক। তবেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিরাট উদ্যোগ সফল হবে।
লেখকঃ কবি, কলামিস্ট,উপদেষ্টা সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ।