বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ জাপানের তাইয়ো নো তামাগো আম, বাংলা ভাষায় যার অর্থ সূর্যের ডিম আম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম। বিশ্বব্যপী এই আম লাল আম হিসেবে অধিক পরিচিত। জাপানের মিয়াজাকিতে উৎপন্ন হয় বলে অনেকে একে মিয়াজাকি আম নামেও ডাকে।
এর একটি আমের ওজন ৩৫০ গ্রামের কম নয়। ভারতের বাজারে দু’টি আমের একটি বাক্সের দাম পড়তে পারে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার মতো। বিশেষজ্ঞদের বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম এই মিয়াজাকিই।
১৯৭০-১৯৮০ সালের মাঝামাঝি জাপানে মিয়াজাকির ফলন শুরু হয়। জাপানে দামি উপহার হিসেবে দেওয়া হয় এই আম। টকটকে লাল রং, তাতে হালকা বেগুনি আভা। মিয়াজাকির তুলনা টানা হয় দামি পাথর চুনির সঙ্গে।
বর্তমানে খাগড়াছড়িতে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৬৫ জাতের আমের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশি ব্যানানা, কিউ জাই, থ্রি টেস্ট, ফুনাই, লাল ফুনাই, কিং অব চাকপাত, ব্ল্যাক স্টার আম আগে থেকেই চাষ হয়ে আসছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে রেড ম্যাঙ্গো বা সূর্যডিম।
তিন-চার বছর আগে খাগড়াছড়িতে এই আমের গাছের চারা লাগান কৃষক আতিয়ার, সাসিমং, দীপংকর চাকমা, হ্ল্যাশিমং চৌধুরীসহ কয়েকজন। এবারই প্রথম খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর বাগানে অন্তত ১২০টি গাছে এই সূর্যডিম আম ধরেছে। এই আমের মনোরম দৃশ্যে সবুজ পাহাড় যেন রঙিন হয়ে উঠেছে। আমের সাফল্যে বিস্মিত কৃষি বিভাগও।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার ২০০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের ঢালুতে সারি সারি মিয়াজাকি জাতের আমের গাছ। প্রতিটি গাছের বয়স তিন থেকে চার বছর। প্রতিটি গাছেই ঝুলছে ৩০ থেকে ৪০টি মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম। প্রতিটি আমের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। পুরো আম লাল রঙে মোড়ানো। রঙিন এই আম দেখতে অনেকেই ভিড় করছে ক্রা এএ অ্যাগ্রো ফার্ম নামের বাগানে।
কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, মহালছড়ির ধুমনিঘাট এলাকায় ৩৫ একর পাহাড়জুড়ে ফল চাষ করে ক্রা এএ অ্যাগ্রো ফার্ম গড়ে তুলেছেন তিনি। তাঁর বাগানে প্রায় ৬০ প্রজাতির আমগাছ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনিই প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে মিয়াজাকি জাতের আমের আবাদ শুরু করেছেন।
তিন-চার বছর আগে দেশের বাইরে থেকে চারা সংগ্রহ করে মিয়াজাকি আমের চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। বিদেশি প্রজাতি হওয়ায় ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে আমটি চাষাবাদ করেছেন তিনি। রোপণের চার বছর পরে ভালো ফলনও পেয়েছেন।
ভারতে মধ্যপ্রদেশের এক দম্পতির বাগানে মিয়াজাকি গাছ রয়েছে। তবে এই গাছ দু’টিই এখন তাঁদের যাবতীয় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মধ্যেই আম কিনতে চেয়ে প্রস্তাব আসছে তাঁদের কাছে। কেউ কেউ এর জন্য যে কোনও মূল্য দিতেও রাজি। এক গয়না ব্যবসায়ী এমন প্রস্তাব দিয়েছেন সম্প্রতি। যদিও ওই দম্পতি তাঁর প্রস্তাবে রাজি হননি।
তাঁরা জানিয়েছেন, এই আম কাউকে বিক্রি করবেন না তাঁরা। বরং আমের বীজ থেকে গাছের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে তাঁদের। এমনকি গাছ থেকে যাতে কেউ আম চুরিও না করতে পারে, তার জন্য রক্ষী রেখেছেন মধ্যপ্রদেশের ওই দম্পতি। চার জন সশস্ত্র পাহারাদার এবং ছ’টি কুকুর দিনরাত পাহারা দেয় ওই আমগাছ।
জাপান ছাড়াও ফিলিপিন্স এবং তাইল্যান্ডে এই আমের চাষ হয়। আম চাষের জন্য দরকার প্রচুর রোদ, উষ্ণ আবহাওয়া আর নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃষ্টি। রোদের তাপ যাতে আমের চারপাশে সমান ভাবে পড়ে তার জন্য জাল দিয়ে মুড়ে রাখা হয় আমগুলিকে। মিয়াজাকির মিষ্টি স্বাদ অন্য আমের তূলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এমনকি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের পরিমাণও অন্যান্য আমের চেয়ে অনেক বেশি।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ বলেন, সূর্যডিম বা মিয়াজাকি হলো জাপানিজ আম। বিশ্ববাজারে এটি রেড ম্যাঙ্গো নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। জাপানিজ এই আমের স্বাদ অন্য আমের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি। আমটি খেতে খুবই মিষ্টি। আমটির গড় ওজন প্রায় ৭০০ গ্রামের মতো। বিশ্ববাজারে এর ভালো দাম ও চাহিদা রয়েছে। অনেক কৃষক নতুন এ জাতের আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
বিটা ক্যারোটিন এবং ফলিক অ্যাসিডে ঠাসা এই আম দৃষ্টিশক্তির জন্যও ভাল। বিশেষজ্ঞদের মতে তা ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমায়। কোলেস্টেরল কমায় এমনকি ত্বকের জন্যও উপকারী। এপ্রিল থেকে অগস্ট মাসে ফলন হয় এই আমের।
আনন্দবাজার বলছে, দু’টো আমের বাক্স গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হয়েছিল ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায়।
২০১৬ সালে নিলামে দু’টি মিয়াজাকি আম বিক্রি হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকায়। সম্প্রতি ঢাকাতেও ছাদের বাগানে এই আম ফলিয়েছেন এক ব্যবসায়ী।