ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চরের জমিতে করলা চাষে লাভবান কৃষক

করলা চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি, হাল চাষ, বীজ বপন, সার, কিটনাশক ও মাঁচা তৈরি এবং শ্রমিকদের পারিশ্রমিকসহ এক বিঘা জমিতে কৃষকের খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ফলন ও বাজারদর আশানুরূপ হলে ওই জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার করলা বিক্রি করা যায় অনায়াসে।

অনূকুল আবহাওয়া আর সঠিক পরিচর্যায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে মানিকগঞ্জে। চরে প্রচুর পরিমাণে ফলছে করলা। রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা আর ভালো বাজারদর পাওয়ায় করলায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন চর এলাকার শতাধিক কৃষক।

করলা চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি, হাল চাষ, বীজ বপন, সার, কিটনাশক ও মাঁচা তৈরি এবং শ্রমিকদের পারিশ্রমিকসহ এক বিঘা জমিতে কৃষকের খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ফলন ও বাজারদর আশানুরূপ হলে ওই জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার করলা বিক্রি করা যায় অনায়াসে।

চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চর মকিমপুর, বারাহিরচর, গুজুরির চর, চান্দির চর, গারাকুল, দশআনি, মকিমপুর ও চর কৃষ্ণপুর এলাকাজুড়ে করলার চাষাবাদ দেখা যায় সরেজমিনে। এক সময়ে এসব এলাকায় শুধু ভুট্টার আবাদ হলেও এখন সবজি চাষে বেশ লাভবান চর এলাকার কৃষকেরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ি, গাজীপুরের চৌরাস্তা ও সাভারের বাইপাইল বাজারের পাইকারেরা প্রতিদিন ভিড় জমান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা সবজির আড়তে। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাক-ডাকে সরগরম থাকে সবজির আড়ত।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব মকিমপুর এলাকার অস্থায়ী আড়তে প্রায় ২০০ মণ করলার আমদানি হয় প্রতিদিন। এখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী করলা ক্রয় করে রাজধানীসহ আশেপাশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যান পাইকারি ক্রেতারা। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন পাইকারি ক্রেতার আগমন ঘটে পর্ব মকিমপুর করলার আড়তে।

চর মকিমপুর এলাকার কৃষক সোহাগ মোল্লা বলেন, বীজ বপনের ৪০ দিন পর থেকে পরবর্তী ৬০ দিন করলার ফলন পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে দেড় লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন তিনি। আরও প্রায় লাখ খানেক টাকার করলা অনায়াসে বিক্রি করা যাবে বলে জানান।

পূর্ব মকিমপুর এলাকার কৃষক নাদের মিয়া বলেন, প্রায় লাখ খানেক টাকা খরচ করে তিন বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছেন। ওই তিন বিঘা জমি থেকে এ পর্যন্ত তিন লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন তিনি। আরও প্রায় লাখ দেড়েক টাকার করলা বিক্রি করা যাবে বলে জানান।

সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বলেন, পড়াশোনা প্রায় শেষ। সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন। তবে করোনাকালে কাজ না থাকায় বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে যুক্ত রয়েছেন। নিয়মিতভাবে কৃষি জমিতে সবজি চাষাবাদ করতে পারলে ভালো মুনাফা পাওয়া যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী শাজাহান মিয়া বলেন, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি রাজধানীর বাজারে বিক্রি করেন তিনি। রাজধানীতে এখন করলার চাহিদা থাকায় পূর্ব মকিমপুর এলাকা থেকে করলা ক্রয় করেন। স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ করলার পাইকারি বাজারদর ১৩ থেকে ১৪’শ টাকা। আর রাজধানীর বাজারে এই করলা বিক্রি হয় ১৮’শ থেকে দুই হাজার টাকায়।

আব্দুর রহিম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে অল্প সময়ে সতেজ সবজি নিয়ে ঢাকার বাজারে পৌঁছানো যায়। যে কারণে রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে মানিকগঞ্জের সবজির চাহিদাও বেশি বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার প্রতিটিতেই সবজির চাষাবাদ হয়। চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে করলাসহ বিভিন্ন ধরণের শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছে। দু’দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলনে জেলার কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

চরের জমিতে করলা চাষে লাভবান কৃষক

আপডেট টাইম : ১০:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩
করলা চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি, হাল চাষ, বীজ বপন, সার, কিটনাশক ও মাঁচা তৈরি এবং শ্রমিকদের পারিশ্রমিকসহ এক বিঘা জমিতে কৃষকের খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ফলন ও বাজারদর আশানুরূপ হলে ওই জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার করলা বিক্রি করা যায় অনায়াসে।

অনূকুল আবহাওয়া আর সঠিক পরিচর্যায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে মানিকগঞ্জে। চরে প্রচুর পরিমাণে ফলছে করলা। রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা আর ভালো বাজারদর পাওয়ায় করলায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন চর এলাকার শতাধিক কৃষক।

করলা চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি, হাল চাষ, বীজ বপন, সার, কিটনাশক ও মাঁচা তৈরি এবং শ্রমিকদের পারিশ্রমিকসহ এক বিঘা জমিতে কৃষকের খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ফলন ও বাজারদর আশানুরূপ হলে ওই জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার করলা বিক্রি করা যায় অনায়াসে।

চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চর মকিমপুর, বারাহিরচর, গুজুরির চর, চান্দির চর, গারাকুল, দশআনি, মকিমপুর ও চর কৃষ্ণপুর এলাকাজুড়ে করলার চাষাবাদ দেখা যায় সরেজমিনে। এক সময়ে এসব এলাকায় শুধু ভুট্টার আবাদ হলেও এখন সবজি চাষে বেশ লাভবান চর এলাকার কৃষকেরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ি, গাজীপুরের চৌরাস্তা ও সাভারের বাইপাইল বাজারের পাইকারেরা প্রতিদিন ভিড় জমান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা সবজির আড়তে। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাক-ডাকে সরগরম থাকে সবজির আড়ত।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব মকিমপুর এলাকার অস্থায়ী আড়তে প্রায় ২০০ মণ করলার আমদানি হয় প্রতিদিন। এখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী করলা ক্রয় করে রাজধানীসহ আশেপাশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যান পাইকারি ক্রেতারা। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন পাইকারি ক্রেতার আগমন ঘটে পর্ব মকিমপুর করলার আড়তে।

চর মকিমপুর এলাকার কৃষক সোহাগ মোল্লা বলেন, বীজ বপনের ৪০ দিন পর থেকে পরবর্তী ৬০ দিন করলার ফলন পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে দেড় লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন তিনি। আরও প্রায় লাখ খানেক টাকার করলা অনায়াসে বিক্রি করা যাবে বলে জানান।

পূর্ব মকিমপুর এলাকার কৃষক নাদের মিয়া বলেন, প্রায় লাখ খানেক টাকা খরচ করে তিন বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছেন। ওই তিন বিঘা জমি থেকে এ পর্যন্ত তিন লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন তিনি। আরও প্রায় লাখ দেড়েক টাকার করলা বিক্রি করা যাবে বলে জানান।

সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বলেন, পড়াশোনা প্রায় শেষ। সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন। তবে করোনাকালে কাজ না থাকায় বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে যুক্ত রয়েছেন। নিয়মিতভাবে কৃষি জমিতে সবজি চাষাবাদ করতে পারলে ভালো মুনাফা পাওয়া যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী শাজাহান মিয়া বলেন, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি রাজধানীর বাজারে বিক্রি করেন তিনি। রাজধানীতে এখন করলার চাহিদা থাকায় পূর্ব মকিমপুর এলাকা থেকে করলা ক্রয় করেন। স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ করলার পাইকারি বাজারদর ১৩ থেকে ১৪’শ টাকা। আর রাজধানীর বাজারে এই করলা বিক্রি হয় ১৮’শ থেকে দুই হাজার টাকায়।

আব্দুর রহিম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে অল্প সময়ে সতেজ সবজি নিয়ে ঢাকার বাজারে পৌঁছানো যায়। যে কারণে রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে মানিকগঞ্জের সবজির চাহিদাও বেশি বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার প্রতিটিতেই সবজির চাষাবাদ হয়। চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে করলাসহ বিভিন্ন ধরণের শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছে। দু’দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলনে জেলার কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছে বলেও জানান তিনি।