ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পতিত জমিতে নিরাপদ সবজি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অনাবাদি পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে উঠছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতায় বাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় দরিদ্র কৃষকরা। এর ফলে কৃষকদের পরিবারে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা যেমন মিটছে ঠিক একইভাবে উদ্ধৃত সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয়েরও সুযোগ পাচ্ছেন তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি দপ্তর বলছে, পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়তে পারিবারগুলোকে বিনামূল্যে চারা-বীজসহ অন্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’  প্রকল্পের আওতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন জেলার কৃষক-কৃষাণীরা। পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফল ও শাক সবজির চাষ করছেন তারা। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে সবজি চারা-বীজ পেয়ে কৃষকদের পরিবারের সদস্যরা বাড়ির উঠান ও আশপাশের খালি জায়গায় সবজি চাষ করছেন। বাজারে ফল ও সবজি বিক্রি করেও তারা বাড়তি টাকা আয় করছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জেলার প্রায় ৭২ বিঘা পতিত জমিকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৫৭৮টি পরিবার সরকারের কারিগরি সহযোগিতায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৩২ পরিবার, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৪৯৪ পরিবার, গোমস্তাপুর উপজেলার ২৫২ পরিবার, নাচোল উপজেলার ১৫৪ পরিবার ও ভোলাহাট উপজেলার ২৪৬ পরিবার পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। তারা প্রত্যেকেই ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিত্যক্ত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে মুলা, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, লাউ, পালংশাক, শিম, ডাটা, ধনিয়া ও ঘিমা কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজির বীজ-চারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাগানের মাটি উর্বর আর ফলনে পোকাদমনে ৮ কেজি ইউরিয়া, ৮ কেজি টিএসপি, এমওপি ৮ কেজি, জিপসাম ১ কেজি, ভার্মিপোষ্ট ১০ কেজি, ১টি ঝাঁঝর, বীজ সংরক্ষণের পাত্রের পাশাপাশি ঘেরাবেড়ার জন্য একটি নেট দেওয়া হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা মুনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তার বাড়ির পাশের পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে সার, নেট ও ৭ প্রকারের সবজির বীজ দিয়েছে। তাদের পরামর্শে বাড়ির উঠানে ও পাশের ফাঁকা জায়গায় বাগান তৈরি করেছি। আমি এই বাগান থেকে পাওয়া সবজি থেকে আমার নিজের ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে প্রতিবেশীদের বিতরণ করি। এরপর বাকি থাকা সবজি বাজারে বিক্রি করি। এতে বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে।

শিবগঞ্জের মুনিরা কৃষাণী সানজিদা বেগম বলেন, বাড়ির পাশে কিছু জায়গা দীর্ঘদিন ধরে পতিত ছিল। সেই পতিত জায়গায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সবজির বাগান করেছি। এই বাগান করার পর থেকে আমার বাজার থেকে কোনো শাক সবজি কেনার প্রয়োজন হয়নি। অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করেছি। আমাদের পুষ্টি বাগানের সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। আমার আশপাশের লোকজনও বাড়িতে এসে সবজি কিনে নিয়ে যান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে সরকারি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় বিভিন্ন জায়গায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। ১ হাজার ১৫ কৃষক-কৃষাণী পরিবারকে বিনামূল্যে বীজ-সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাকি আরও ৫৬৩ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাসিন্দাদের মধ্যে আম,পেয়ারা, আমড়া, পেপেসহ বিভিন্ন ফলের চারা দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা ফল ও সবজি চাষে সমস্যার মুখোমুখি হলে তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, কৃষকরা বাগানে উৎপাদিত সবজি থেকে পরিবার ও নিজেদের পুষ্টি পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে অধিক যে শাক-সবজি উৎপাদন করছেন সেটা বিক্রি করেও আয় হচ্ছে তাদের।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পতিত জমিতে নিরাপদ সবজি

আপডেট টাইম : ০৬:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অনাবাদি পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে উঠছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতায় বাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় দরিদ্র কৃষকরা। এর ফলে কৃষকদের পরিবারে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা যেমন মিটছে ঠিক একইভাবে উদ্ধৃত সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয়েরও সুযোগ পাচ্ছেন তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি দপ্তর বলছে, পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়তে পারিবারগুলোকে বিনামূল্যে চারা-বীজসহ অন্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’  প্রকল্পের আওতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন জেলার কৃষক-কৃষাণীরা। পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফল ও শাক সবজির চাষ করছেন তারা। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে সবজি চারা-বীজ পেয়ে কৃষকদের পরিবারের সদস্যরা বাড়ির উঠান ও আশপাশের খালি জায়গায় সবজি চাষ করছেন। বাজারে ফল ও সবজি বিক্রি করেও তারা বাড়তি টাকা আয় করছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জেলার প্রায় ৭২ বিঘা পতিত জমিকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৫৭৮টি পরিবার সরকারের কারিগরি সহযোগিতায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৩২ পরিবার, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৪৯৪ পরিবার, গোমস্তাপুর উপজেলার ২৫২ পরিবার, নাচোল উপজেলার ১৫৪ পরিবার ও ভোলাহাট উপজেলার ২৪৬ পরিবার পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। তারা প্রত্যেকেই ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিত্যক্ত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে মুলা, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, লাউ, পালংশাক, শিম, ডাটা, ধনিয়া ও ঘিমা কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজির বীজ-চারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাগানের মাটি উর্বর আর ফলনে পোকাদমনে ৮ কেজি ইউরিয়া, ৮ কেজি টিএসপি, এমওপি ৮ কেজি, জিপসাম ১ কেজি, ভার্মিপোষ্ট ১০ কেজি, ১টি ঝাঁঝর, বীজ সংরক্ষণের পাত্রের পাশাপাশি ঘেরাবেড়ার জন্য একটি নেট দেওয়া হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা মুনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তার বাড়ির পাশের পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে সার, নেট ও ৭ প্রকারের সবজির বীজ দিয়েছে। তাদের পরামর্শে বাড়ির উঠানে ও পাশের ফাঁকা জায়গায় বাগান তৈরি করেছি। আমি এই বাগান থেকে পাওয়া সবজি থেকে আমার নিজের ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে প্রতিবেশীদের বিতরণ করি। এরপর বাকি থাকা সবজি বাজারে বিক্রি করি। এতে বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে।

শিবগঞ্জের মুনিরা কৃষাণী সানজিদা বেগম বলেন, বাড়ির পাশে কিছু জায়গা দীর্ঘদিন ধরে পতিত ছিল। সেই পতিত জায়গায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সবজির বাগান করেছি। এই বাগান করার পর থেকে আমার বাজার থেকে কোনো শাক সবজি কেনার প্রয়োজন হয়নি। অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করেছি। আমাদের পুষ্টি বাগানের সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। আমার আশপাশের লোকজনও বাড়িতে এসে সবজি কিনে নিয়ে যান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে সরকারি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় বিভিন্ন জায়গায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। ১ হাজার ১৫ কৃষক-কৃষাণী পরিবারকে বিনামূল্যে বীজ-সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাকি আরও ৫৬৩ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাসিন্দাদের মধ্যে আম,পেয়ারা, আমড়া, পেপেসহ বিভিন্ন ফলের চারা দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা ফল ও সবজি চাষে সমস্যার মুখোমুখি হলে তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, কৃষকরা বাগানে উৎপাদিত সবজি থেকে পরিবার ও নিজেদের পুষ্টি পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে অধিক যে শাক-সবজি উৎপাদন করছেন সেটা বিক্রি করেও আয় হচ্ছে তাদের।