ঢাকা , রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধুর মতো কেউ বলে না, ‘তোরা কারা’

পীর হাবিবুর রহমান

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, এরা কারা? কারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী বা জাতির বেদনাবিধুর শোকাবহ ১৫ আগস্টের শোকদিবসকে ঘিরে কাঙালিভোজের নামে উৎসবের পরিবেশ নিয়ে আসে? এতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যার শিকার তার পরিবার পরিজনের আত্মা কী করে তা জানি না। তবে আমাদের অনেকের ভেতরই দ্রোহ করে। আমাদের অন্তর কাঁদে। বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা থেকে এর চূড়ান্ত বিকাশ ও তাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বের গৌরবেই অভিষিক্ত করেননি, দলটিকে গণমুখী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত হয়েছে। যেমন ইতিহাস থেকে মানুষের চোখের সামনে থেকে জাতির মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন আদর্শের কর্মীরা। আর একে দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রামে জনপ্রিয় করে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।  কিন্তু যতোবারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, ততোবারই একদল কর্মী উন্নাসিক আচরণ করেন। তাদের একালে নাম দেয়া হয়েছে হাইব্রিড। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।

৭৫’ উত্তর দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগকে দমন নির্যাতনই করা হয়নি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। টিভি-বেতার, রাষ্ট্রীয় সরকারি অনুষ্ঠান-কর্মসূচি এমনকি জাতীয় দিবসে অপমানের ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে। তার হত্যাকাণ্ডের বিচার তো হয়নি, ‍উল্টো বন্ধ রাখা হয়েছিলো ইনডেমনিটি নামে কালো আইনে। প্রতিটি সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাঙালি জাতির আত্মার প্রতি অবমাননা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে খুনিরা যে অবহেলায় অনাদরে রক্তাক্ত ধানমন্ডিতে ৩২ ঘণ্টা ফেলে রেখে পরে টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করেছে, সেখান থেকে ২১টি বছর প্রতিটি শাসক তাকে কেবল অবমাননাই করে গেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে বঙ্গবন্ধু ও ইতিহাসেরই প্রত্যাবর্তন ঘটাননি, লাখো লাখো মানুষের সংগ্রামকেই সফলতা দেননি, খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারও করেছেন। আবারও ক্ষমতার বাইরে আওয়ামী লীগ যেতেই বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় সরকারি, গণমাধ্যম, প্রচারযন্ত্র, সরকারি অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় দিবসগুলোতে।

২০০৮ সালে শেখ হাসিনা গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসে আবার প্রতিষ্ঠিত করেন। আবার ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। ইতিহাসের বিকৃতি রোধ হয়। জাতির বিজয়ের ইতিহাস স্রষ্টার নাম আবারও ফিরে আসে প্রজন্মের মাঝে। আসেন তিনি তার বর্ণাঢ্য সংগ্রাম ও জীবনের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস নিয়ে। এবার ঘাতক-খুনিদের ফাঁসি হয়।

অনলাইনে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন হয়েছে। যারা বোঝেন না বঙ্গবন্ধু শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি জাতির পিতা। যারা বোঝেন না বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ ইতিহাসে কতোটা নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে, যারা বোঝেন না বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশের রূপকার ও প্রতিষ্ঠাতা তারা অবমাননা করলে ভুল করবেন। যারা আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক হতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে খাঁটো করেন, যারা আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের আক্রমণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবজ্ঞা-অপমান করেন, তারা এতোটাই ভুল করেন যে নিজের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বা জাতির জন্মকেই অস্বীকার করেন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা, শাসনামলের অবশ্যই সমালোচনা করা যাবে কিন্তু তাকে অবজ্ঞা, অপমান, অনাদর, অবহেলা, কটাক্ষ করে নয়। কংগ্রেস, কংগ্রেস নেতৃত্ব ও গান্ধী পরিবারের সমালোচনায় মুখর হন ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু তাদের মহান নেতা গান্ধীকে মহাত্মা বা বাপুজি বলে সবাই শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন। লোকসভার ভেতরেই নয়, ভারতবর্ষ জুড়েই তার ভাস্কর্য শোভা পাচ্ছে। লৌকিকতায়, সংস্কৃতিতে, রাজনীতিতে, চিন্তায়, কর্মে, মননে তিনি সবার হৃদয়ে। আমাদের এখানে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ ছিলো বলে, পরাজিত একটি শক্তি ছিলো বলেই বিজয়ের নায়ক বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আক্রোশ ছিলো। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের বুকে এমন ধৃষ্টতা তার প্রতি কেন থাকবে? ইতিহাস যাকে জাতির জনক করেছে, জীবন, যৌবন দিয়ে যিনি স্বাধীনতাই দেননি, দেশ ও মানুষকে ভালোবেসে মানবকল্যাণের রাজনীতি করেছেন তার অমর কীর্তির প্রতি বীরত্বের প্রতি সবার যেমন শ্রদ্ধাশীল হতে হবে তেমনি হতে হবে ইতিহাসকে নিজের স্রোতধারায় বইতে দেয়া।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধার নিদর্শন কেবল মুখে মুখে লৌকিকতায় দিলেই হবে না, চিন্তায় চেতনায়, দর্শনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহস, উদার মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি মমত্ববোধের পরিচয় দিয়ে। তার সাদামাটা, সরল নিরাভরন জীবন বোধকে লালন করে। ত্যাগের পথে, ভোগবিলাস প্রাচুর্যের দম্ভের মোহে নয়। আত্মমর্যাদার পথে, আত্মসম্মানহীন পথে নয়। মাথা উঁচু করে চলার মধ্যে, মাথা নিচু করে চলার মধ্যে নয়।

যাক আমি যে কথা বলছিলাম, শোক দিবসে এরা কারা-যারা লুটপাট, চাঁদাবাজির টাকায় হাড়ি-হাড়ি বিরিয়ানি করে মাইক বাজিয়ে উৎসবের আমেজ এনে আমদের শোকাবহ পরিবেশ নষ্ট করে? এরা কারা-শোকের কর্মসূচিতে দলীয় কোন্দলের, সংঘাত বিভক্তির, আধিপত্যের মহড়া দেখায়? এরা কারা-যারা টুঙ্গিপাড়ায় ভাবগাম্ভীর্যের শোকের দিনে মেজবান পণ্ড করে দেয়? আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো না, তখন কতো দুঃসময়ে কতোবার টুঙ্গিপাড়ায় গেছি। দেখেছি শোকার্ত মানুষের ঢল। বঙ্গবন্ধুর ভবন থেকে টুঙ্গিপাড়ায়। ভাবগাম্ভীর্য, কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল। টুঙ্গিপাড়ায় ১৫ আগস্টে নিহত শেখ ফজলুল হক মনির বাসভাবনে তার সহদোর শেখ ফজলুল করিম সেলিম খাবারের আয়োজন করতেন। সরাদেশে নেতাকর্মীরা মসজিদে মিলাদ, শহর-গ্রামে  গরিবকে খাওয়ানো আর আলোচনা সভা করতেন। এখন বড় পরিসরে হয়। কিন্তু কারা যেনো আবেগহীন মনহীনের মতো শোডাউন করে উৎসবের ভোজ দেয়, এরা কারা? এতো খাবার ভাবগাম্ভীর্য এর সঙ্গে এতিমখানায় আর মিসকিনদের মধ্যে বিলি করতে পারে না। তাই নয়, রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ করে বঙ্গবন্ধুর নামে মুজিব কোট গায়ে পরে হাঁটে, রাজনীতি করে, দুর্নীতি করে বিত্তবৈভব ভোগবিলাসের জীবন যাপন করে! এরা কারা? এরা কারা-যারা শেয়ারবাজার লুট করে নেয়, ব্যাংক কেলেঙ্কারি করে?  এরা কারা, গরিবের দল আওয়ামী লীগে ইউপি নির্বাচনের মতোন তৃণমূল ভোটে মনোনয়ন বাণিজ্যের  রমরমা ব্যবসা করে? এদের বিরুদ্ধে দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় না কেন? দলের ত্যাগী দুর্দিনের কর্মীরা হয়ে যায় মনোনয়ন বঞ্চিত না হয় দলীয় ষড়যন্ত্রের শিকার। বঙ্গবন্ধু তো তার দলের গরিব কর্মীকে মনোনয়ন দিতেন। নেতা বানাতেন।  তাহলে আজ যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করে, দুর্নীতি করে,  এরা কি বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করে নাকি অবমাননা করে? বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ করে মানুষ মু্গ্ধ হয়। দলের উন্নাসিক, দাম্ভিক, ভোগবিলাসে লিপ্ত, দুর্নীতিগ্রস্তরা হৃদয়াঙ্গম করে না! কেন? এটা কি মহান নেতার নামে তার দল করে শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শন হয়।  নাকি তার নিরাভরন সাদামাটা গণমুখী আত্মত্যাগের রাজনৈতিক দর্শন অনুসরণ করার মধ্যেই সম্মান প্রদর্শন হয়।

যদি তাই হয় তবে এরা কারা? যারা লুটেরা ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, বিত্তবান, ভোগবিলাসী, যারা বঙ্গবন্ধুর নামে আবার রাজনীতি করে? মানুষের সামনে কালো টাকার দম্ভ দেখায়? মানুষকে শোষণ করে? এরা কারা? কে দেবে এর জবাব?

বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটার অশোভন দৃশ্য নিয়ে বহু সমালোচনা করেছি, বহুবার টক শোতে বলেছি। এবার তিনি বন্ধ করেছেন। কিন্তু এরা কারা, মানুষের কাছে বিতর্কিত কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতোন মহান নেতার সঙ্গে ছবি পোস্টার বানায়? ফায়দা লুটে?

বঙ্গবন্ধুর মতোন কেউ বলে না তাদের-তোরা কারা? ভাসানীর মতোন কেউ বলে না- খামোশ। সৈয়দ আশরাফ বলেন, খাই খাই স্বভাব ছাড়তে। ওবায়দুল কাদের বলেন, এভাবে মহানায়কের সঙ্গে ছবি দিয়ে  পোস্টার না বানাতে। সরকার বা দল কিছু বলে না,  কেন?

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর মতো কেউ বলে না, ‘তোরা কারা’

আপডেট টাইম : ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৬

পীর হাবিবুর রহমান

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, এরা কারা? কারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী বা জাতির বেদনাবিধুর শোকাবহ ১৫ আগস্টের শোকদিবসকে ঘিরে কাঙালিভোজের নামে উৎসবের পরিবেশ নিয়ে আসে? এতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যার শিকার তার পরিবার পরিজনের আত্মা কী করে তা জানি না। তবে আমাদের অনেকের ভেতরই দ্রোহ করে। আমাদের অন্তর কাঁদে। বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা থেকে এর চূড়ান্ত বিকাশ ও তাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বের গৌরবেই অভিষিক্ত করেননি, দলটিকে গণমুখী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত হয়েছে। যেমন ইতিহাস থেকে মানুষের চোখের সামনে থেকে জাতির মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন আদর্শের কর্মীরা। আর একে দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রামে জনপ্রিয় করে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।  কিন্তু যতোবারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, ততোবারই একদল কর্মী উন্নাসিক আচরণ করেন। তাদের একালে নাম দেয়া হয়েছে হাইব্রিড। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।

৭৫’ উত্তর দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগকে দমন নির্যাতনই করা হয়নি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। টিভি-বেতার, রাষ্ট্রীয় সরকারি অনুষ্ঠান-কর্মসূচি এমনকি জাতীয় দিবসে অপমানের ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে। তার হত্যাকাণ্ডের বিচার তো হয়নি, ‍উল্টো বন্ধ রাখা হয়েছিলো ইনডেমনিটি নামে কালো আইনে। প্রতিটি সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাঙালি জাতির আত্মার প্রতি অবমাননা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে খুনিরা যে অবহেলায় অনাদরে রক্তাক্ত ধানমন্ডিতে ৩২ ঘণ্টা ফেলে রেখে পরে টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করেছে, সেখান থেকে ২১টি বছর প্রতিটি শাসক তাকে কেবল অবমাননাই করে গেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে বঙ্গবন্ধু ও ইতিহাসেরই প্রত্যাবর্তন ঘটাননি, লাখো লাখো মানুষের সংগ্রামকেই সফলতা দেননি, খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারও করেছেন। আবারও ক্ষমতার বাইরে আওয়ামী লীগ যেতেই বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় সরকারি, গণমাধ্যম, প্রচারযন্ত্র, সরকারি অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় দিবসগুলোতে।

২০০৮ সালে শেখ হাসিনা গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসে আবার প্রতিষ্ঠিত করেন। আবার ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। ইতিহাসের বিকৃতি রোধ হয়। জাতির বিজয়ের ইতিহাস স্রষ্টার নাম আবারও ফিরে আসে প্রজন্মের মাঝে। আসেন তিনি তার বর্ণাঢ্য সংগ্রাম ও জীবনের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস নিয়ে। এবার ঘাতক-খুনিদের ফাঁসি হয়।

অনলাইনে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন হয়েছে। যারা বোঝেন না বঙ্গবন্ধু শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি জাতির পিতা। যারা বোঝেন না বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ ইতিহাসে কতোটা নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে, যারা বোঝেন না বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশের রূপকার ও প্রতিষ্ঠাতা তারা অবমাননা করলে ভুল করবেন। যারা আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক হতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে খাঁটো করেন, যারা আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের আক্রমণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবজ্ঞা-অপমান করেন, তারা এতোটাই ভুল করেন যে নিজের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বা জাতির জন্মকেই অস্বীকার করেন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা, শাসনামলের অবশ্যই সমালোচনা করা যাবে কিন্তু তাকে অবজ্ঞা, অপমান, অনাদর, অবহেলা, কটাক্ষ করে নয়। কংগ্রেস, কংগ্রেস নেতৃত্ব ও গান্ধী পরিবারের সমালোচনায় মুখর হন ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু তাদের মহান নেতা গান্ধীকে মহাত্মা বা বাপুজি বলে সবাই শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন। লোকসভার ভেতরেই নয়, ভারতবর্ষ জুড়েই তার ভাস্কর্য শোভা পাচ্ছে। লৌকিকতায়, সংস্কৃতিতে, রাজনীতিতে, চিন্তায়, কর্মে, মননে তিনি সবার হৃদয়ে। আমাদের এখানে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ ছিলো বলে, পরাজিত একটি শক্তি ছিলো বলেই বিজয়ের নায়ক বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আক্রোশ ছিলো। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের বুকে এমন ধৃষ্টতা তার প্রতি কেন থাকবে? ইতিহাস যাকে জাতির জনক করেছে, জীবন, যৌবন দিয়ে যিনি স্বাধীনতাই দেননি, দেশ ও মানুষকে ভালোবেসে মানবকল্যাণের রাজনীতি করেছেন তার অমর কীর্তির প্রতি বীরত্বের প্রতি সবার যেমন শ্রদ্ধাশীল হতে হবে তেমনি হতে হবে ইতিহাসকে নিজের স্রোতধারায় বইতে দেয়া।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধার নিদর্শন কেবল মুখে মুখে লৌকিকতায় দিলেই হবে না, চিন্তায় চেতনায়, দর্শনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহস, উদার মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি মমত্ববোধের পরিচয় দিয়ে। তার সাদামাটা, সরল নিরাভরন জীবন বোধকে লালন করে। ত্যাগের পথে, ভোগবিলাস প্রাচুর্যের দম্ভের মোহে নয়। আত্মমর্যাদার পথে, আত্মসম্মানহীন পথে নয়। মাথা উঁচু করে চলার মধ্যে, মাথা নিচু করে চলার মধ্যে নয়।

যাক আমি যে কথা বলছিলাম, শোক দিবসে এরা কারা-যারা লুটপাট, চাঁদাবাজির টাকায় হাড়ি-হাড়ি বিরিয়ানি করে মাইক বাজিয়ে উৎসবের আমেজ এনে আমদের শোকাবহ পরিবেশ নষ্ট করে? এরা কারা-শোকের কর্মসূচিতে দলীয় কোন্দলের, সংঘাত বিভক্তির, আধিপত্যের মহড়া দেখায়? এরা কারা-যারা টুঙ্গিপাড়ায় ভাবগাম্ভীর্যের শোকের দিনে মেজবান পণ্ড করে দেয়? আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো না, তখন কতো দুঃসময়ে কতোবার টুঙ্গিপাড়ায় গেছি। দেখেছি শোকার্ত মানুষের ঢল। বঙ্গবন্ধুর ভবন থেকে টুঙ্গিপাড়ায়। ভাবগাম্ভীর্য, কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল। টুঙ্গিপাড়ায় ১৫ আগস্টে নিহত শেখ ফজলুল হক মনির বাসভাবনে তার সহদোর শেখ ফজলুল করিম সেলিম খাবারের আয়োজন করতেন। সরাদেশে নেতাকর্মীরা মসজিদে মিলাদ, শহর-গ্রামে  গরিবকে খাওয়ানো আর আলোচনা সভা করতেন। এখন বড় পরিসরে হয়। কিন্তু কারা যেনো আবেগহীন মনহীনের মতো শোডাউন করে উৎসবের ভোজ দেয়, এরা কারা? এতো খাবার ভাবগাম্ভীর্য এর সঙ্গে এতিমখানায় আর মিসকিনদের মধ্যে বিলি করতে পারে না। তাই নয়, রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ করে বঙ্গবন্ধুর নামে মুজিব কোট গায়ে পরে হাঁটে, রাজনীতি করে, দুর্নীতি করে বিত্তবৈভব ভোগবিলাসের জীবন যাপন করে! এরা কারা? এরা কারা-যারা শেয়ারবাজার লুট করে নেয়, ব্যাংক কেলেঙ্কারি করে?  এরা কারা, গরিবের দল আওয়ামী লীগে ইউপি নির্বাচনের মতোন তৃণমূল ভোটে মনোনয়ন বাণিজ্যের  রমরমা ব্যবসা করে? এদের বিরুদ্ধে দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় না কেন? দলের ত্যাগী দুর্দিনের কর্মীরা হয়ে যায় মনোনয়ন বঞ্চিত না হয় দলীয় ষড়যন্ত্রের শিকার। বঙ্গবন্ধু তো তার দলের গরিব কর্মীকে মনোনয়ন দিতেন। নেতা বানাতেন।  তাহলে আজ যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করে, দুর্নীতি করে,  এরা কি বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করে নাকি অবমাননা করে? বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ করে মানুষ মু্গ্ধ হয়। দলের উন্নাসিক, দাম্ভিক, ভোগবিলাসে লিপ্ত, দুর্নীতিগ্রস্তরা হৃদয়াঙ্গম করে না! কেন? এটা কি মহান নেতার নামে তার দল করে শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শন হয়।  নাকি তার নিরাভরন সাদামাটা গণমুখী আত্মত্যাগের রাজনৈতিক দর্শন অনুসরণ করার মধ্যেই সম্মান প্রদর্শন হয়।

যদি তাই হয় তবে এরা কারা? যারা লুটেরা ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, বিত্তবান, ভোগবিলাসী, যারা বঙ্গবন্ধুর নামে আবার রাজনীতি করে? মানুষের সামনে কালো টাকার দম্ভ দেখায়? মানুষকে শোষণ করে? এরা কারা? কে দেবে এর জবাব?

বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটার অশোভন দৃশ্য নিয়ে বহু সমালোচনা করেছি, বহুবার টক শোতে বলেছি। এবার তিনি বন্ধ করেছেন। কিন্তু এরা কারা, মানুষের কাছে বিতর্কিত কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতোন মহান নেতার সঙ্গে ছবি পোস্টার বানায়? ফায়দা লুটে?

বঙ্গবন্ধুর মতোন কেউ বলে না তাদের-তোরা কারা? ভাসানীর মতোন কেউ বলে না- খামোশ। সৈয়দ আশরাফ বলেন, খাই খাই স্বভাব ছাড়তে। ওবায়দুল কাদের বলেন, এভাবে মহানায়কের সঙ্গে ছবি দিয়ে  পোস্টার না বানাতে। সরকার বা দল কিছু বলে না,  কেন?