সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের পুনর্মিলনী ছিল। সভাপতিত্ব করেছেন নূরুল ইসলাম আল-আমিন। প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। ভারতীয় এক অতিথি ছিলেন সালমান বিজনুরি। বিপুল জনসমাগমে মিলনমেলা ছিল ভরপুর। আমার বেশ ভালো লেগেছে। অনেক বক্তার বক্তৃতায় যথেষ্ট বাস্তবতার স্বাক্ষর দেখেছি। মিলনমেলা শেষ হওয়ার একটু আগে চলে এসেছিলাম। সম্মিলনীতে আসা হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতা পরম আগ্রহে আমার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, কুশল জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি যেমন দেশের মানুষ হিসেবে তাদের ভালোবাসি তারাও যে আমাকে ভালোবাসেন তা তাদের আচার-ব্যবহারে বোঝা গেছে। মুক্তিযুদ্ধে চরমোনাই ছিল পাকিস্তান-ঘেঁষা। কিন্তু চরমোনাইর প্রধান সৈয়দ ফজলুল করিম ছিলেন একজন মুক্তমনা মানুষ। তাই তারা পাকিস্তানের সঙ্গে থাকলেও যা নয় তা করেনি। সেজন্য স্বাধীনতার পর জাতীয় রাজনীতিতে তিনি যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে বিচরণ করেছেন। এ পর্যন্ত তাদের যে কয়েকটি অনুষ্ঠানে গেছি সেখানে তাদের আদব-কায়দা, তাহজিব-তমদ্দুন আমার খুবই ভালো লেগেছে। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম একজন কর্মঠ মানুষ। তিনি আমায় যেমন পছন্দ করেন আমিও তাকে পছন্দ করি। ছাত্র আন্দোলনের মিলনমেলায় তাদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমকে পীর মানতে নয়। সতী নারীর পতি যেমন একজন, রাজনৈতিক কর্মীর নেতাও একজন। আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর কাউকে পীর মানলে সে তো হতেন অলি পীরে কামেল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। অন্য কারও আমাদের মতো লাচারদের গুরু হওয়া বা পীর হওয়ার সুযোগ কোথায়। আর আমার দোষ-গুণ যাই থাকুক কোনোখানে কারও সঙ্গে হাততালি পাওয়ার জন্য একাত্মতা ঘোষণা বা জান কোরবান করি না। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে যখন বেরিয়ে আসছিলাম তখন প্রধান অতিথির নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। প্যান্ডেলে হাবিয়া দোজখের মতো গরম ছিল। তার মধ্যে দারুণ ধৈর্য নিয়ে শ্রোতারা কথা শুনছিলেন। অনেক সময় উন্মাদনায় ফেটে পড়ছিলেন। ইসলামী জলসায় যেমন হয় তেমনটা হচ্ছিল। যখন আমিরের নাম ঘোষণা করা হয় তখন বাইরে যারা ছিলেন তাদের মধ্যেও অনেকে প্যান্ডেলের কাছে ছুটে যাচ্ছিলেন। লোকসমাগমের দিক থেকে কোনো ত্রুটি ছিল না। বরং ছিল এক অসাধারণ সমাবেশ। হাত মেলানোর চোটে বেরোতে পারছিলাম না। গাড়িতে বসে যখন কিছুটা ফাঁকা পেয়েছিলাম কেন যেন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এত বড় একজন জনপ্রিয় নেতা যার এত সমর্থক তারা কিছু করতে পারছে না কেন? কে যেন বলছিলেন, জনপ্রিয়তা আছে, সমর্থক আছে কিন্তু রাজনীতি নেই। রাজনীতির অভাব। নিজেরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, সবাইকে মুরিদ বানাতে চায়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক নেই। যেজন্য এগোতে পারছে না। কথাটা শুনে মনে পড়ছিল কার সঙ্গে যেন চিটাগাংয়ের ফটিকছড়ি গিয়েছিলাম। সে সময় নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী আওয়ামী লীগ করতেন। তাদের বাড়ি মানে মাইজভাণ্ডার শরিফ গিয়েছিলাম। নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর বাবাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল। একপর্যায়ে বলেছিলেন, সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী একটি আসনও পায়নি। তিনি সেখানকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এত বড় দল জামায়াত আপনারা তাদের ভোট দিলেন না কেন? তারা নাকি তাকে বলেছিলেন, ‘জামায়াত কউমকে লিয়ে কুছ নেহি করতা, কুছ নেহি সোস্তা, ও আপনা লিয়ে সোস্তা। উসকো ভিখ দিয়া যা সাক্তা লেকিন ভোট কভি নেহি।’ মানে ‘জামায়াত জাতির জন্য, দেশের জন্য কিছু ভাবে না। ওরা শুধু নিজেদের জন্য ভাবে। ওদের ভিক্ষা দেওয়া যেতে পারে কিন্তু কখনো ভোট নয়।’ আমি চমকে উঠেছিলাম পীর সাহেবের কথা শুনে। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ক্ষেত্রেও কি এটা প্রযোজ্য?
আমরা রাজনীতিক মানুষ রাজনীতি করি। পীরালি করি না, জানিও না। সে হিসেবে সাহেবজাদা, পীরজাদা সামনে পিছে সম্বোধন শিখিনি। মানুষকে মানুষের মতোই সম্মান করতে শিখেছি। পীরের মুরিদ হতে নয়, আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাতে, তাদের শুভ কামনা করতে গিয়েছিলাম। সেটাই থাকবে চিরকাল।
ধলেশ্বরী-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ে বানভাসি মানুষ দেখে যেমন বিচলিত হয়েছি, তাদের আন্তরিকতা, সাহস, দেশপ্রেম দেখে তেমনই উৎসাহিতও হয়েছি। আমরা দ্বিতীয় দিন ঘাঁটি গাড়তে চেয়েছিলাম মোল্লার চরে। এখন লোকজন তেমন নদীপথ চেনে না। কারণ নদীপথ কানা হয়ে গেছে। মোল্লার চরের উজানে মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়ার চর। বেশ একটি বড় বাজার। স্কুল, কলেজ আছে। আমরা বাজার ঘাটের কাছে থাকিনি। দুর্গম অবহেলিত এলাকায় নদীর পাড়ে ঘাঁটি গেড়েছি। নয়ার চরের একটু ভাটিতে শ্যালো বেঁধেছিলাম। জায়গাটা তেমন পছন্দ হয়নি বলে এবং মোল্লার চর আর কত দূর জানার পর শ্যালো ছেড়ে দিতে গেলে বহু মানুষ ছুটে আসে। নামতে বলে, দুই কথা শোনাতে বলে। আমি কথা শোনাতে যাইনি, দুর্গতদের পাশে থাকতে গিয়েছিলাম। ভিড়ের মধ্যে একজন মাস্টার এবং আরও কে যেন শ্যালোতে লাফিয়ে ওঠেন। আমরা ভাটি পথে ছিলাম। আরও ১ কিলোমিটার ভেসে চলার পর নদীভাঙা একটা ফাঁকা জায়গা আমার পছন্দ হয়। সেখানে নেমে সোহেল, আনিস, খলিল আশপাশ দেখতে গিয়েছিল। আনিস ভিতরের দিকে কিছুটা গিয়ে ফিরে এসে বলল, স্যার, এখানে থাকা যাবে না। লোকজন বলছে ঘর দুয়ার নেই, পেশাব পায়খানার জায়গা নেই। এতগুলো লোক থাকবে কী করে? আনিস বেশ কিছু বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছে। খুব সোজা-সরল কর্মঠ মানুষ। এবার ত্রাণযাত্রায় সে যে অসম্ভব কর্মতত্পরতার পরিচয় দিয়েছে তা মনে রাখার মতো। ওখানকার মানুষের ধারণা হচ্ছিল জায়গাটা আমার জন্য থাকার মতো নয়। ততক্ষণে আমার থাকার মতো হয়ে গিয়েছিল। অন্য দিনের মতো সেদিন কাজকর্ম শুরু হয়ে গিয়েছিল। মাটি কেটে চুলা বানিয়ে রান্নাবান্না শুরু হয়। একেবারে নিভৃত নদীভাঙা জায়গা। উদাম গায়ে হাজারো ছেলেমেয়ে। কাউকে চকলেট, কাউকে ওষুধ দিতে দিতেই সন্ধ্যা নেমে আসে। নয়ার চর স্কুলের মাস্টার শাহ আলম আমাদের সঙ্গে এসেছিলেন, তার বাড়ি পাশেই কিন্তু এতক্ষণ তিনি বলতে সাহস করেননি। ততক্ষণে তার ছেলে মাজহার, মেয়ে সাদিয়া আফরিন নদীর পাড়ে এসে গিয়েছিল। আগে নদী ছিল ২-৩ কিলোমিটার পশ্চিমে। এখন দুই-তিনশ গজের মধ্যে এসে গেছে। এ বছর বাড়িটা রক্ষা পেলেও আগামী বছর আদৌ রক্ষা পাবে কিনা কেউ বলতে পারে না। রাতে জোর করে তাদের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। মাস্টারের স্ত্রী মনোয়ারা প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারি করেন। এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। দারুণ সুন্দর রান্না করেছিলেন। তার মধ্যে তিল, তিসি ও বাদাম বাটা অসাধারণ। নারায়ণগঞ্জের বন্দর আর রাজীবপুরের নয়ার চরে একই রকম বাদাম বাটা খেয়েছি।
পরদিন সকালে শুরু হয়েছিল ছেলে, বুড়ো, মেয়ে সবাইকে রুটি খাওয়ানো। সে এক দেখবার মতো বিষয়। আটাটা একটু বেশি সাদা ছিল। এলাকার মেয়েরাই রুটি বানাচ্ছিল, ভাজছিল আর দুই হাতে বিলাচ্ছিল। গুড়, চিনি, সবজি যে যেভাবে খায়। আমিও খেয়েছি। দুপুরে খিচুড়ি খেতে সবার সঙ্গে বাঁশতলে বসেছিলাম। এ জায়গাতেই সমাজের বড় বড় লোক এসেছিলেন। সাবেক চেয়ারম্যান তিনজন। জাতীয় পার্টি, বিএনপি, আওয়ামী লীগ কেউ বাদ ছিল না, বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের। তার নাম আনোয়ার হোসেন কারেন্ট। এলাকায় বিদ্যুতের লাইন টানতে টানতেই তার নাম কারেন্ট চেয়ারম্যান হয়ে গেছে। তার আসল নাম ঢাকা পড়ে গেছে কারেন্ট চেয়ারম্যানের নিচে। আগে চেয়ারম্যান ছিলেন আনোয়ার হোসেন আনু। তারও আগে একনাগাড়ে চারবার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আবদুল বারী সরকার। একবার তার এক মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। অসম্ভব যত্ন করেছিলেন সেবার। সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনো রেষারেষি দেখলাম না। এমনকি মোল্লার চর ইউনিয়নে জামায়াতের চেয়ারম্যান তার মধ্যে কোনো জড়তা দেখিনি। নিভৃত দুর্গম গায়ে ভেদাভেদহীন পরিবেশ দেখে বেশ আলোকিত হয়েছিলাম। সারা দেশ যদি এমন ভেদাভেদহীন হতো কতই না আনন্দের হতো। দেশে উচ্চপর্যায়ে এত রেষারেষির পরও গ্রামগঞ্জে অত সুন্দর অনাবিল আনন্দময় পরিবেশ।
বেলা ৩টার দিকে যখন শ্যালো ছাড়ছিল নদীর পাড়ে হাজারো মানুষ তাদের মনে হয় আমাদের ছাড়তে ইচ্ছা হচ্ছিল না। আমারও কেন যেন বুক ভারী হয়ে এসেছিল। একদিন আগেও যাদের দেখিনি মনে হচ্ছিল তারা যেন কত চেনা, কত আপন। নয়ার চরের পর ভাটি পথে প্রায় সবটাই আমার চেনা। নয়ার চরে আলোচনা হচ্ছিল এরপর কোথায় ঘাঁটি গাড়া যায়। বাহাদুরাবাদের আশপাশে থাকার ইচ্ছা ছিল। কয়েক বছর আগে নৌপথে একবার গোবিন্দাসী থেকে রৌমারী গিয়েছিলাম। যাত্রী ছিলাম ১০-১২ জন। দুই ইঞ্জিনের স্পিডবোট ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার গতি। রাস্তা তেমন চেনা ছিল না। তাতে যমুনার এক রাস্তায় রাজীবপুর-রৌমারী। ছুটছি, পড়ছি আবার ছুটছি। মনে হয় প্রচুর পানি। কিন্তু বোট ঠেকে যাচ্ছে। প্রায় ৪ ঘণ্টায় প্রচুর বিরক্তি ও হতাশা নিয়ে ফুলছড়ি ঘাটে পৌঁছি। আমরা ৪০০ লিটার তেল নিয়েছিলাম। পুবপাড়ের বাহাদুরাবাদ ঘাট হয়ে যাব কিন্তু পশ্চিমে ফুলছড়ি ঘাটে পৌঁছে গেছি। সেখানে চার-পাঁচশ লিটার তেল যা পাওয়া গিয়েছিল সবই নিয়েছিলাম। হেলিকপ্টারের মতো স্পিডবোটেও ওজনের ব্যাপার আছে। ১০ কিলো ওজন বেশি হলে স্পিডবোট আর স্পিডবোট থাকে না, শ্যালো হয়ে যায়। দুই ইঞ্জিনের কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। ফুলছড়িতে পথপ্রদর্শক খুঁজছিলাম। নদীপথ কেউ ভালো চেনে কিনা। পেয়েও গিয়েছিলাম মুন্নার চরের মো. ওসমানের ছেলে আবদুল মালেককে। বড় চমৎকার। ফুলছড়ি ঘাট থেকে সে স্পিডবোটে ওঠার পর মনে হচ্ছিল যেন সর্বত্র অথই পানি। যেখানে ২ ঘণ্টার পথ ৫ ঘণ্টায় গিয়েছিলাম, সেখানে ৫ ঘণ্টার পথ দেড়-পৌনে দুই ঘণ্টায় অতিক্রম করেছিলাম। কোথাও আটকে পড়িনি। ডানে বামে যেদিকে হাত দেখিয়েছে স্বচ্ছন্দে চলে গেছি। সেই আবদুল মালেক পরে আমার কাছে বেশ কয়েক বছর ছিল।
নয়ার চর থেকে যখন রওনা হই তখন বাহাদুরাবাদের পাশে ফুটানির চরের কথা উঠেছিল। নাম শুনেই মোহাবিষ্ট হয়েছিলাম। কারণ আমার সখিপুরে ফুটানির বাজার আছে। সেখানকার লোকজন সব কিছুতেই একটু বাড়াবাড়ি করত। তাদের ডাটফাট দেখার মতো। এসব দেখে কে যেন জায়গাটির নাম দিয়েছিল ফুটানির বাজার। এখন সখিপুরে ফুটানির বাজার বেশ প্রতিষ্ঠিত। তাই নাম শুনেই ফুটানির চরকেই টার্গেট করেছিলাম। নৌকার চালকরা এক অর্থে ভালোই ছিল। আরেক অর্থে কথাবার্তা বুঝত না বলে অসুবিধা হতো। বেলা পড়ে আসছিল। বাম দিকে কিছুটা জনবসতি দেখা যাচ্ছিল। অনেক দূরে জাহাজ বা ফেরির মতো চোখে পড়ে। ১৫-২০ মিনিট পর কাছাকাছি হলে মনে হয় জায়গাটি বাহাদুরাবাদ। ১৫-২০ বছর আগে কী জমজমাট ছিল। যমুনা-বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পর একেবারেই মরে গেছে। ঘাটের মাইল দুই ভাটিতে শ্যালো ভিড়িয়েছিলাম। দারিদ্র্যের চিহ্ন চারদিকে। কেবল পানি নেমে যাওয়ার ছাপ রয়ে গেছে। জায়গাটা ফুটানির চর নয়, দেওয়ানগঞ্জের ভালো গ্রাম। ফুটানির চর একটু দূরে, বড় ভালো লেগেছে ভালো গ্রামে। বসবার শোবার তেমন ভালো জায়গা ছিল না। কিন্তু মানুষের আন্তরিকতা ছিল ব্যাপক। কোথায় পাকশাক করা যায়, কোথায় খাওয়া যায় তার জন্য একটু জায়গা খুঁজছিলাম। নদীর ঘাট থেকে পুব দিকে ১০০ গজের মতো গিয়েছিলাম। না তেমন ভালো জায়গা নেই। ঘাট থেকে ৫০ গজের মধ্যে একটা বাড়ি। কয়েকজন মাছ ধরে ফিরছিল। আমি আগ বাড়িয়ে দেখতে চেয়েছিলাম। দেখলাম কয়েকটা বেলে মাছ আর অন্য কিছু। লাল মিয়ার ছেলে রেজাউল কিংবা নীল মিয়া অথবা এনামুল হক মাছগুলো মেরেছিল। আমি যেই বলেছিলাম আমাকে একটু বেলে মাছ ভর্তা করে দেবে। কে যেন ভিতর থেকে বলে উঠেছিল। আমরা যেভাবে রাঁধি সেভাবে রাঁধলে খাবেন? খুশিমনে বলেছিলাম অবশ্যই খাব। নদীর ঘাটে ফিরেছিলাম মাগরিবের নামাজ আদায় করতে। লাল মিয়ার বাড়ির লোকজন কেমন করে মনে করেছিল তাদের বাড়িতে থাকব। মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করে ফিরে শহীদ বলল, দাদা যে বাড়িতে বেলে মাছের ভর্তা খেতে চেয়েছিলেন তারা বাড়িটা যেন কেমন বদলে ফেলেছে। শহীদের কথা বুঝতে না পেরে বললাম কী হয়েছে? সে বলল দুইটা ঘর তিন তিন ছয়জন, সারা বাড়ি আরও চারজন মহিলা ঝাড়ু দিয়ে বাড়িটাকে যেন কেমন করে ফেলেছে। মসজিদে যাওয়ার সময় অন্ধকার, ফেরার পথে দেখি ঝকঝক করছে। ৯টার দিকে আমি গিয়েও দেখলাম গ্রামের বাড়ি তো নয়, এ যেন টিনের ঝকঝকে প্রাসাদ। কোথাও একটু ময়লা নেই। যে ঘরে শুয়েছিলাম ছবির মতো ঝকঝক-তকতক করছিল। নানা শ্রেণির লোকজন এসেছিল। এসেছিলেন দেওয়ানগঞ্জ আওয়ামী লীগের বহুদিনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বাচ্চু মাস্টার। এখন আর সে আওয়ামী লীগের কেউ না। খুব দুঃখ করলেন। এসেছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক লোক। এসেছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মী।
সবার সঙ্গে কথা বলে সে যে কী আনন্দ লেগেছে। মনে হয়েছে দেশে যেন কোনো ভেদাভেদ নেই, কোনো শত্রুতা নেই। টিনের ঘরে তিন দিকেই জানালা বাতাস ম-ম করছিল। খুব ভালো লাগছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি কলা ও বিস্কুটের টোপলা। ব্যাপার কী? ছাত্রলীগ-যুবলীগের যে ছেলেরা রাতে এসেছিল তারা দিয়ে গেছে সকালের নাস্তার জন্য। ঘুম থেকে উঠে প্রশান্তিতে মন ভরে গিয়েছিল। এত ভালো মানুষ। তার পরও আমরা কেন সবাইকে নিয়ে চলতে পারি না। আমাদের ত্রুটি কোথায়? দুর্বলতা কোথায়? -বাংলাদেশ প্রতিদিন