ঢাকা , রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের নেতৃত্বদানে তাঁদের তৈরি করার এখনই সময়

আগামী ২২-২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কাউন্সিলকে ঘিরে সারাদেশের নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসব বইছে। চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের এ কাউন্সিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে এবারের কমিটি গঠিত হতে যাচ্ছে মর্মে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আর তাইতো এবারের কাউন্সিলে সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা, নাতনি সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু, দুই নাতি বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয় ও রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। কাউন্সিলে তাঁদের কেন্দ্রীয় কমিটির পদে আসা, না আসা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। ইতোমধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ লাভ করা সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে রংপুরবাসী। অপরদিকে শেখ রেহানা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাউন্সিলর হিসেবে, রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ঢাকা মহানগর উত্তরের কাউন্সিলর এবং সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু ফরিদপুর জেলার কাউন্সিলর হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। দলীয় নেতা-কর্মীরাও চাচ্ছেন আগামীতে তাঁরা দলে ও সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। তবে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বদরবারের সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। বিশ্বনেতারা তাঁর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। কর্মগুণেই তিনি মর্যাদার আসনে আসীন। ইতোমধ্যেই অসংখ্য পুরস্কার ও ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। মানবতা, উদারতা, ভদ্রতা ও ধার্মিকতার  উজ্জ্বলতম নক্ষত্র তিনি। তাঁর কোল আলো করেই জন্ম নিয়েছেন দুই সন্তান সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও সজীব ওয়াজেদ জয়। নিজ নিজ কর্মদক্ষতাবলে তাঁরা দুজনও বিশ্বদরবারে আজ সু-প্রতিষ্ঠিত। একজন মনোবিজ্ঞানী, অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান এবং অন্যজন বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা (অবৈতনিক)।

বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের বেদনাবিধূর ঘটনার পর থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এখনো কর্মজীবী।

শেখ রেহানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিকীর তিন সন্তান। পুত্র রেদওয়ান সিদ্দিক ববি। দুই কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত। টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ঠাঁই পেয়েছেন ছায়া মন্ত্রিসভায়ও। উচ্চ শিক্ষিত ববি ২০১১ সালে গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং এক্সপার্ট হিসেবে ইউএনডিপির ঢাকা অফিসে যাগদান করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতে ২০১৩ সালের জুনে চাকরি থেকে দূরে ছিলেন ববি। সে সময় তাঁর ছোটবোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী বাংলাদেশে এসে সেন্টার ফর রিসার্স ইনফরমেশনে (সিআরআই) কাজ করেছেন। শেখ রেহানার এ তিন সন্তান উচ্চ শিক্ষিত, অত্যন্ত স্মার্ট ও রাজনৈতিক দূরদর্শীসম্পন্ন।

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, সম্পদ। এ কথা আজ সর্বজন স্বীকৃত। নানা বঞ্চনা, উদাসীনতা ও অনাগ্রহের জাল ছিন্ন করে প্রতিবন্ধীরা আজ সমাজের বোঝা নয়, সুদক্ষ সম্পদ। প্রতিবন্ধীদের এ অভূতপূর্ব সাফল্যের পেছনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুলের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের কল্যাণে তাঁরা যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যা বিশ্বদরবারে প্রশংসিত। তাঁদের ঐকান্তিক প্রয়াসে প্রতিবন্ধীদের অনেকেই স্বর্ণ জয় করে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুলকে হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেন। ২০০৮ সালের পর থেকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম সমস্যার উন্নয়নে কাজ করার জন্য অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড পান। তাছাড়া অটিজম আন্দোলন ও বিশ্বস্বাস্থ্যে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে ডিসটিংগুইসড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় ১৯৭১ সালের ২৭ জুন তারিখে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কঠিন পরিস্থিতিতে জন্মগ্রহণ করেন। ৭৫-এ নানা, নানী, মামা ও নিকটাত্মীয়দের হারানো পর মা ও খালার সাথে দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে প্রবাসেই তাঁর শৈশব ও কৈশর কাটে। নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ হতে স্নাতক করার পর যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা (অবৈতনিক) পদে নিয়োগ লাভ করেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ঘোষণা তাঁরই চিন্তার ফসল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সজীব ওয়াজে জয় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁর মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন ‘বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল’। এক কথায় তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। আর তারই স্বীকৃতি স্বরূপ এবার জাতিসংঘ ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও সুশাসনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গভর্নেন্স অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস, প্লান ট্রিফিনিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হেভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস সম্মিলিতভাবে তাঁকে সম্মানসূচক ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।

রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সাইন্স (এলএসই) থেকে ১৯৯৯-২০০২ সালে গভর্নমেন্ট অ্যান্ড হিস্টরি, পলিটিক্যাল থিওরি ও ইন্টারনেশনাল হিস্টরি বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৩-২০০৩  সেশনে একই প্রতিষ্ঠান থেকে কমপারেটিভ পলিটিকস, পলিটিক্যাল সাইন্স, কনফ্লিক্ট রেগুলেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর ২০০৪ সালে তিনি অ্যানালিস্ট হিসেবে অ্যাকসেনচারে যোগ দেন। ২০০৭ সালে তিনি তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে লন্ডনে সেন্ট্রাল অফিস অব ইনফরমেশন/মিডিয়া মনিটরিং ইউনিটে যোগদান করেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন। পরে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে অ্যালাইন্স পাবলিশিং ট্রাস্ট-এ ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। জুনে তিনি ম্যানেজার, মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন-এশিয়া, ইউকে অ্যান্ড নর্থ আমেরিকা হিসেবে কাজ করেন চ্যানেল রিসার্সে। ২০১১ সালে তিনি গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং এক্সপার্ট হিসেবে ইউএনডিপির ঢাকা অফিসে যাগদান করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতে ২০১৩ সালের জুনে চাকরি থেকে দূরে ছিলেন ববি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি সক্রিয় না হলেও তিনি আওয়ামী লীগের শক্তিসঞ্চারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে গেলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার ছেলে ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের ট্রাস্টি রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি স্বাগত জানান এবং ৭৫-এর ১৫ আগস্টের বেদনাবিধূর ঘটনার বর্ণনা করেন।

বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে। লন্ডনের সবচেয়ে আলোচিত হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টির বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ২৩ হাজার ৯৭৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী টিউলিপ সিদ্দিক মাত্র ১৬ বছর বয়সেই লেবার পার্টির সদস্য হন। তিনি ২০১০ সালে লন্ডন বারা অব ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশি মহিলা হিসেবে কাউন্সিলার নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে কাউন্সিলের সংস্কৃতি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেন। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, গ্রেটার লন্ডন অথরিটি ও সেইভ দ্যা চিলড্রেন ফান্ড চ্যারিটির সাথেও তিনি কাজ করেন। সবচেয়ে সুখবর হলো বাংলাদেশ সময় রবিবার রাতে (০৯ অক্টোবর ২০১৬) ছায়া মন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়নার ব্রিটিশ স্কুল পূর্ববর্তী শিক্ষা বিভাগের ছায়ামন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করায় তিনি সে পদে যোগদান করেছেন। তাঁর এ বিরল সম্মান বাংলাদেশকে আরও উচ্চ আসনে আসীন করেছে।

শেখ রেহানার ছোট কন্যা আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী একজন উচ্চ শিক্ষিত তরুণী। তিনি বাংলাদেশে এসে সেন্টার ফর রিসার্স ইনফরমেশনে (সিআরআই) কাজ করেছেন। সংস্কৃতিমনা রূপন্তী লন্ডনে মঞ্চস্থ হওয়া ‘বাসন্তী’ নাটকের একটি অংশে নৃত্য পরিবেশন করেন। তিনি ৭ মার্চ উপলক্ষে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স-এর হংকং থিয়েটার হলে আয়োজিত বিএমই সিরিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অন্যতম আলোচক হিসেবে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর তাঁর দেয়া বক্তৃতায় উপস্থিত সবাই মুগ্ধ হন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা-নাতি-নাতনিরা নিজ নিজ অবস্থানে অত্যন্ত সুনাম ও সততার সাথে সু-প্রতিষ্ঠিত। তাই বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারে তাঁরা স্থান পাবেন – এটা সবাই আশা করেন। তবে বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক যেহেতু ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি ও ছায়া প্রতিমন্ত্রী সেহেতু তাঁর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়; বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ রেহানা, তাঁর পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং কনিষ্ঠ কন্যা আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি দল ও সরকারে তাঁদের স্থান পাওয়ার বিষয়ে মানুষ আশাবাদী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের রাজনৈতিক উত্তরসূরি হচ্ছেন। আর তাই-তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানা, নাতি সজীব ওয়াজেদ জয় ও রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, নাতনি সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হলে দল উপকৃত হবে। তাঁরা দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে সক্ষম হবেন। আর আগামী নির্বাচনে তাঁরাই হতে পারেন নতুন চমক। সে কারণে আগামীতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তাঁদেরকে তৈরি করতে হবে।

গত ১৫ অক্টোবর তারিখে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন কাউন্সিলে নতুন নেতা নির্বাচন করার কথা বলেছেন। সভায় উপস্থিত দলীয় নেতাদের আসন্ন কাউন্সিলে নতুন নেতা নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৮১ থেকে ২০১৬, আর কত?’ তিনি এর আগেও নতুন নেতা নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন। গণতান্ত্রিক দলের নেতা হিসেবে তাঁর এ বক্তব্যকে সাদুবাদ জানাই। কারণ তিনি ও তাঁর দল গণতান্ত্রিক চর্যায় বিশ্বাসী বলেই দৃঢ়তার সাথে তিনি একথা উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু তিনি ছাড়া দল ও সরকার  দুটোই অচল। কারণ তিনি না থাকলে তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করার মতো নেতা এখনও তৈরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগে ভাঙা-গড়ার খেলা চলার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাঁকে ৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি ৮১-র পর থেকে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলা করেছেন। বার বার তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের কারাঅন্তরীণ অবস্থার ক্রান্তিকাল তিনি দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে পার করেছেন। ফলে তিনি টানা দুই বারসহ বাংলাদেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী পদক্ষেপ তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তার অতুলনীয় ফসল। তাঁর সাহসী নেতৃত্বের দরুণ বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখতে আসছেন এবং আন্তরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে শেখার জন্য এবং উপযুক্ত, পরিপক্ক রাজনৈতিক কৌশল আয়ত্বে আনতে তাঁর পরিবারের সদস্যগণের আরও সময় লাগবে। সেকারণে দলে ও সরকারে স্থান দিয়ে তাঁদেরকে দক্ষ রাজনীতিবিদ ও পার্লমেন্টারিয়ান হিসেবে গড়ে তোলার এখনই সময়।  জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

দেশের নেতৃত্বদানে তাঁদের তৈরি করার এখনই সময়

আপডেট টাইম : ০৬:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

আগামী ২২-২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কাউন্সিলকে ঘিরে সারাদেশের নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসব বইছে। চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের এ কাউন্সিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে এবারের কমিটি গঠিত হতে যাচ্ছে মর্মে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আর তাইতো এবারের কাউন্সিলে সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা, নাতনি সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু, দুই নাতি বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয় ও রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। কাউন্সিলে তাঁদের কেন্দ্রীয় কমিটির পদে আসা, না আসা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। ইতোমধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ লাভ করা সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে রংপুরবাসী। অপরদিকে শেখ রেহানা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাউন্সিলর হিসেবে, রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ঢাকা মহানগর উত্তরের কাউন্সিলর এবং সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু ফরিদপুর জেলার কাউন্সিলর হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। দলীয় নেতা-কর্মীরাও চাচ্ছেন আগামীতে তাঁরা দলে ও সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। তবে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বদরবারের সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। বিশ্বনেতারা তাঁর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। কর্মগুণেই তিনি মর্যাদার আসনে আসীন। ইতোমধ্যেই অসংখ্য পুরস্কার ও ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। মানবতা, উদারতা, ভদ্রতা ও ধার্মিকতার  উজ্জ্বলতম নক্ষত্র তিনি। তাঁর কোল আলো করেই জন্ম নিয়েছেন দুই সন্তান সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও সজীব ওয়াজেদ জয়। নিজ নিজ কর্মদক্ষতাবলে তাঁরা দুজনও বিশ্বদরবারে আজ সু-প্রতিষ্ঠিত। একজন মনোবিজ্ঞানী, অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান এবং অন্যজন বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা (অবৈতনিক)।

বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের বেদনাবিধূর ঘটনার পর থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এখনো কর্মজীবী।

শেখ রেহানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিকীর তিন সন্তান। পুত্র রেদওয়ান সিদ্দিক ববি। দুই কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত। টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ঠাঁই পেয়েছেন ছায়া মন্ত্রিসভায়ও। উচ্চ শিক্ষিত ববি ২০১১ সালে গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং এক্সপার্ট হিসেবে ইউএনডিপির ঢাকা অফিসে যাগদান করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতে ২০১৩ সালের জুনে চাকরি থেকে দূরে ছিলেন ববি। সে সময় তাঁর ছোটবোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী বাংলাদেশে এসে সেন্টার ফর রিসার্স ইনফরমেশনে (সিআরআই) কাজ করেছেন। শেখ রেহানার এ তিন সন্তান উচ্চ শিক্ষিত, অত্যন্ত স্মার্ট ও রাজনৈতিক দূরদর্শীসম্পন্ন।

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, সম্পদ। এ কথা আজ সর্বজন স্বীকৃত। নানা বঞ্চনা, উদাসীনতা ও অনাগ্রহের জাল ছিন্ন করে প্রতিবন্ধীরা আজ সমাজের বোঝা নয়, সুদক্ষ সম্পদ। প্রতিবন্ধীদের এ অভূতপূর্ব সাফল্যের পেছনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুলের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের কল্যাণে তাঁরা যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যা বিশ্বদরবারে প্রশংসিত। তাঁদের ঐকান্তিক প্রয়াসে প্রতিবন্ধীদের অনেকেই স্বর্ণ জয় করে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুলকে হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেন। ২০০৮ সালের পর থেকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম সমস্যার উন্নয়নে কাজ করার জন্য অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড পান। তাছাড়া অটিজম আন্দোলন ও বিশ্বস্বাস্থ্যে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে ডিসটিংগুইসড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় ১৯৭১ সালের ২৭ জুন তারিখে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কঠিন পরিস্থিতিতে জন্মগ্রহণ করেন। ৭৫-এ নানা, নানী, মামা ও নিকটাত্মীয়দের হারানো পর মা ও খালার সাথে দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে প্রবাসেই তাঁর শৈশব ও কৈশর কাটে। নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ হতে স্নাতক করার পর যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা (অবৈতনিক) পদে নিয়োগ লাভ করেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ঘোষণা তাঁরই চিন্তার ফসল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সজীব ওয়াজে জয় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁর মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন ‘বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল’। এক কথায় তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। আর তারই স্বীকৃতি স্বরূপ এবার জাতিসংঘ ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও সুশাসনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গভর্নেন্স অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস, প্লান ট্রিফিনিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হেভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস সম্মিলিতভাবে তাঁকে সম্মানসূচক ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।

রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সাইন্স (এলএসই) থেকে ১৯৯৯-২০০২ সালে গভর্নমেন্ট অ্যান্ড হিস্টরি, পলিটিক্যাল থিওরি ও ইন্টারনেশনাল হিস্টরি বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৩-২০০৩  সেশনে একই প্রতিষ্ঠান থেকে কমপারেটিভ পলিটিকস, পলিটিক্যাল সাইন্স, কনফ্লিক্ট রেগুলেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর ২০০৪ সালে তিনি অ্যানালিস্ট হিসেবে অ্যাকসেনচারে যোগ দেন। ২০০৭ সালে তিনি তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে লন্ডনে সেন্ট্রাল অফিস অব ইনফরমেশন/মিডিয়া মনিটরিং ইউনিটে যোগদান করেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন। পরে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে অ্যালাইন্স পাবলিশিং ট্রাস্ট-এ ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। জুনে তিনি ম্যানেজার, মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন-এশিয়া, ইউকে অ্যান্ড নর্থ আমেরিকা হিসেবে কাজ করেন চ্যানেল রিসার্সে। ২০১১ সালে তিনি গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং এক্সপার্ট হিসেবে ইউএনডিপির ঢাকা অফিসে যাগদান করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতে ২০১৩ সালের জুনে চাকরি থেকে দূরে ছিলেন ববি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি সক্রিয় না হলেও তিনি আওয়ামী লীগের শক্তিসঞ্চারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে গেলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার ছেলে ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের ট্রাস্টি রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি স্বাগত জানান এবং ৭৫-এর ১৫ আগস্টের বেদনাবিধূর ঘটনার বর্ণনা করেন।

বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে। লন্ডনের সবচেয়ে আলোচিত হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টির বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ২৩ হাজার ৯৭৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী টিউলিপ সিদ্দিক মাত্র ১৬ বছর বয়সেই লেবার পার্টির সদস্য হন। তিনি ২০১০ সালে লন্ডন বারা অব ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশি মহিলা হিসেবে কাউন্সিলার নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে কাউন্সিলের সংস্কৃতি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেন। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, গ্রেটার লন্ডন অথরিটি ও সেইভ দ্যা চিলড্রেন ফান্ড চ্যারিটির সাথেও তিনি কাজ করেন। সবচেয়ে সুখবর হলো বাংলাদেশ সময় রবিবার রাতে (০৯ অক্টোবর ২০১৬) ছায়া মন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়নার ব্রিটিশ স্কুল পূর্ববর্তী শিক্ষা বিভাগের ছায়ামন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করায় তিনি সে পদে যোগদান করেছেন। তাঁর এ বিরল সম্মান বাংলাদেশকে আরও উচ্চ আসনে আসীন করেছে।

শেখ রেহানার ছোট কন্যা আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী একজন উচ্চ শিক্ষিত তরুণী। তিনি বাংলাদেশে এসে সেন্টার ফর রিসার্স ইনফরমেশনে (সিআরআই) কাজ করেছেন। সংস্কৃতিমনা রূপন্তী লন্ডনে মঞ্চস্থ হওয়া ‘বাসন্তী’ নাটকের একটি অংশে নৃত্য পরিবেশন করেন। তিনি ৭ মার্চ উপলক্ষে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স-এর হংকং থিয়েটার হলে আয়োজিত বিএমই সিরিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অন্যতম আলোচক হিসেবে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর তাঁর দেয়া বক্তৃতায় উপস্থিত সবাই মুগ্ধ হন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা-নাতি-নাতনিরা নিজ নিজ অবস্থানে অত্যন্ত সুনাম ও সততার সাথে সু-প্রতিষ্ঠিত। তাই বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারে তাঁরা স্থান পাবেন – এটা সবাই আশা করেন। তবে বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক যেহেতু ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি ও ছায়া প্রতিমন্ত্রী সেহেতু তাঁর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়; বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ রেহানা, তাঁর পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং কনিষ্ঠ কন্যা আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি দল ও সরকারে তাঁদের স্থান পাওয়ার বিষয়ে মানুষ আশাবাদী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের রাজনৈতিক উত্তরসূরি হচ্ছেন। আর তাই-তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানা, নাতি সজীব ওয়াজেদ জয় ও রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, নাতনি সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হলে দল উপকৃত হবে। তাঁরা দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে সক্ষম হবেন। আর আগামী নির্বাচনে তাঁরাই হতে পারেন নতুন চমক। সে কারণে আগামীতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তাঁদেরকে তৈরি করতে হবে।

গত ১৫ অক্টোবর তারিখে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন কাউন্সিলে নতুন নেতা নির্বাচন করার কথা বলেছেন। সভায় উপস্থিত দলীয় নেতাদের আসন্ন কাউন্সিলে নতুন নেতা নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৮১ থেকে ২০১৬, আর কত?’ তিনি এর আগেও নতুন নেতা নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন। গণতান্ত্রিক দলের নেতা হিসেবে তাঁর এ বক্তব্যকে সাদুবাদ জানাই। কারণ তিনি ও তাঁর দল গণতান্ত্রিক চর্যায় বিশ্বাসী বলেই দৃঢ়তার সাথে তিনি একথা উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু তিনি ছাড়া দল ও সরকার  দুটোই অচল। কারণ তিনি না থাকলে তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করার মতো নেতা এখনও তৈরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগে ভাঙা-গড়ার খেলা চলার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাঁকে ৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি ৮১-র পর থেকে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলা করেছেন। বার বার তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের কারাঅন্তরীণ অবস্থার ক্রান্তিকাল তিনি দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে পার করেছেন। ফলে তিনি টানা দুই বারসহ বাংলাদেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী পদক্ষেপ তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তার অতুলনীয় ফসল। তাঁর সাহসী নেতৃত্বের দরুণ বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখতে আসছেন এবং আন্তরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে শেখার জন্য এবং উপযুক্ত, পরিপক্ক রাজনৈতিক কৌশল আয়ত্বে আনতে তাঁর পরিবারের সদস্যগণের আরও সময় লাগবে। সেকারণে দলে ও সরকারে স্থান দিয়ে তাঁদেরকে দক্ষ রাজনীতিবিদ ও পার্লমেন্টারিয়ান হিসেবে গড়ে তোলার এখনই সময়।  জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।