বিগত একবছরে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা।
গত বছরের ৯ মে পুঁজিবাজারটির মূলধন ছিল তিন লাখ সাত হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত ৯ মে ২০১৭ তারিখে ডিএসই’র পৌঁছে যায় তিন লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকায়। নতুন বেশ কয়েকটি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারে তালিকাভূক্তি ছাড়াও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাজারের ঊর্ধমুখি প্রবণতার ফলে ডিএসই’র বাজার মূলধনের এ উন্নতি ঘটেছে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
২০১৭ সালের শুরুতেই ডিএসই’র বাজার মূলধনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে আগের বছরের শেষদিকে ঊর্ধমুখি প্রবণতায় ফেরা পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় চমক দেখায় ব্যাংকিং খাত। বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারিদের আগ্রহের তলানিতে থাকা খাতটি হঠাৎ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। আর মূলধন সমৃদ্ধ এ খাতের উল্লেখযোগ্য মূল্যবৃদ্ধিই সার্বিকভাবে বাজার মূলধনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটায়।
বাজার মূলধনের পাশাপাশি পুঁজিবাজারটির সবকয়টি বিভাগেই বড় ধরনের উন্নতি গত বকে বছরে। এ সময় ডিএসই’র প্রধান সূচকটি যেমন পুনর্গঠনের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে তেমনি অপর দু’টি সূচকও পৌঁছে গেছে নতুন উচ্চতায়।
গত ৪ এপ্রিল ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পৌছে যায় পাঁচ হাজার ৭৭৭ দশমিক ১১ পয়েন্টে যা সূচকটির এযাবৎকালের সর্বোচ্চ অবস্থান। ডিএসই-৩০ সূচকটি একই দিন পৌঁছে যায় দুই হাজার ১৪৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে। বাজারের মৌলভিত্তির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গড়া সূচকটি গঠনের পর থেকে এটিই ছিল সর্বোচ্চ।
একই সাথে লেনদেনে অসাধারণ উন্নতি করে বিগত একবছরে। যেখানে ২০১৬ সালের মে মাসে ডিএসই’র লেনদেন ৩০০ থেকে ৪০০ কোটির ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছিল সেখানে গত একবছরে ডিএসই’র লেনদেন ছাড়িয়ে যায় দুই হাজার কোটি টাকা।
এ বছরের ২৪ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয় দুই হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এটি ছিল দেশের শীর্ষ এ পুঁজিবাজারটির গত ছয়বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন। তবে পরবর্তিতে লেনদেন কিছুটা হ্রাস পায়। এ মুহূর্তে ডিএসই’র লেনদেন ৭০০ থেকে ৮০০ কোটির মধ্যে রয়েছে।
ডিএসই ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে গত বছরের মাঝামাঝি সময়েই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার। বলতে গেলে ওই বছরের জুন মাস থেকেই ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করে বাজারটি। বিশেষ করে ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি শিথিল করা পর থেকেই গতি পায় পুঁজিবাজারটি। সরকারের নীতি নির্ধারকদের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ ঘটে। এতে বছরের শেষদিকে এসে নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় বাজারটি। দীর্ঘদিন থেকে আস্থাহীনতায় ধুঁকতে থাকা বাজার আস্থার পরিবেশ ফিরে পায়। নতুন নতুন বিনিয়োগকারির আগমন ঘটে। বাড়তে শুরু করে লেনদেন।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পুঁজিবাজার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল। এখন বাজারে যেমন সূচকের উন্নতি ঘটছে তেমনি যথাসময়ে ঘটছে সংশোধন। তাছাড়া বাজারের এখন যে আকার তাতে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা বাজারে অস্বাভাবিক কোনো কেলেঙ্কারি ঘটানো সম্ভব নয়। তবে অন্য যেকোনো বিনিয়োগের চেয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন তারা। তাই বিনিয়োগকারিদের প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে এ ঝুঁকি মেনে নিয়েই বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তারা।
শীর্ষ বাজার মূলধন গ্রামীণ ফোনের
ডিএসই’র তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাজার মূলধভূক্ত হওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু গত সাতবছরে কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৮৫৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা যা ডিএসই’র মোট বাজার মূলধনের ১৩ শতাংশের বেশি।
ডিএসই’র বাজারমূলধনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে কোম্পানিটির বাজার মূলধন এ মুহূর্তে ১৮ হাজার ৫৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ৬৯৫ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হয়। এ মুহূর্তে ডিএসই’র বাজার মূলধনের প্রায় ছয় শতাংশ রয়েছে কোম্পানিটির দখলে।
মূলধনের দিক থেকে পরবর্তি অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি (বিএসটিবিসি), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, ইসলামী ব্যাংক ও রেনাতা লিঃ।
কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন যথাক্রমে ১৪ হাজার ৭১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ১১ হাজার ৪৬০ কোটি ২৩ লাখ টাকা, আট হাজার ৫০১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, সাত হাজার ১৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও ছয় হাজার ১১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
কোম্পানিগুলো বর্তমানে ডিএসই’র বাজার মূলধনের যথাক্রমে চার দশমিক ৭৫, তিন দশমিক ৩৩, তিন দশমিক ০০, দুই দশমিক ২৫ ও দুই দশমিক ১৫ শতাংশ দখলে রেখেছে।