ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সতর্ক কর‌লো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের খেলা‌পি ঋণ বে‌ড়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও ঋণ দেয়ার ব্যাপা‌রে আ‌রো সতর্ক থাকার নি‌র্দেশ দি‌য়ে‌ছে। একইস‌ঙ্গে খেলা‌পি ঋণ আদা‌য়ের বিষ‌য়েও তা‌গিদ দি‌য়ে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স‌ঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের এক সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ফজলে কবীর ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকগুলোর বর্তমান খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি ও আদায়ের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। যেখানে আলাদাভাবে সোনালীর ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, জনতার ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, অগ্রণীর ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং রূপালীর খেলাপী ঋণের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

এদিকে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সোনালী ব্যাংকের এক হাজার ৬৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ২৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ঘাটতি রয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালীর এক হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।

সভা সূত্রে জানা যায়, গভর্নর ব্যাংক চারটির প্রধান নির্বাহীদের খেলাপি ঋণ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্গে যেকোনভাবে আদায় বাড়াতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘ডিসেম্বর কোয়ার্টারের চেয়ে মার্চে খেলাপি ঋণের হার একটু বেড়ে যাওয়ায় গভর্নর আমাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যে করে হোক খেলাপির পরিমাণ কমানোর নির্দেশ দেন তিনি। সেই সঙ্গে আদায় যাতে বাড়ে তারও একটা নির্দেশনা দিয়েছেন।

এছাড়া বড় গ্রাহকদের পেছনে না ছুটে এসএমই ও কৃষিতে আরো বেশি করে কীভাবে ঋণ বিতরণ বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কাজ করতে বলেছেন বলে জানান রূপালির এমডি।

উল্লেখ্য, এই চার ব্যাংকের আর্থিক সূচক ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর আগে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি তিন মাস পরপর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈঠকে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচকের পাশাপাশি ব্যবস্থাগত উন্নয়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়ে সময়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন ডিভিশন এই চার ব্যাংকের সঙ্গে করা এমওইউ’র অগ্রগতি পর্যালোচনা করে থাকে।

ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৭ হাজার ২৮৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা; যা ৫৬টি তফসিলি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। বেসিক, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৬ হাজার ৮২৪ কোটি, ৫ হাজার ৪০ কোটি, ১ হাজার ৫৯৮ কোটি এবং ৭ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সতর্ক কর‌লো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আপডেট টাইম : ০৫:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০১৬

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের খেলা‌পি ঋণ বে‌ড়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও ঋণ দেয়ার ব্যাপা‌রে আ‌রো সতর্ক থাকার নি‌র্দেশ দি‌য়ে‌ছে। একইস‌ঙ্গে খেলা‌পি ঋণ আদা‌য়ের বিষ‌য়েও তা‌গিদ দি‌য়ে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স‌ঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের এক সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ফজলে কবীর ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকগুলোর বর্তমান খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি ও আদায়ের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। যেখানে আলাদাভাবে সোনালীর ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, জনতার ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, অগ্রণীর ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং রূপালীর খেলাপী ঋণের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

এদিকে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সোনালী ব্যাংকের এক হাজার ৬৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ২৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ঘাটতি রয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালীর এক হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।

সভা সূত্রে জানা যায়, গভর্নর ব্যাংক চারটির প্রধান নির্বাহীদের খেলাপি ঋণ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্গে যেকোনভাবে আদায় বাড়াতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘ডিসেম্বর কোয়ার্টারের চেয়ে মার্চে খেলাপি ঋণের হার একটু বেড়ে যাওয়ায় গভর্নর আমাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যে করে হোক খেলাপির পরিমাণ কমানোর নির্দেশ দেন তিনি। সেই সঙ্গে আদায় যাতে বাড়ে তারও একটা নির্দেশনা দিয়েছেন।

এছাড়া বড় গ্রাহকদের পেছনে না ছুটে এসএমই ও কৃষিতে আরো বেশি করে কীভাবে ঋণ বিতরণ বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কাজ করতে বলেছেন বলে জানান রূপালির এমডি।

উল্লেখ্য, এই চার ব্যাংকের আর্থিক সূচক ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর আগে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি তিন মাস পরপর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈঠকে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচকের পাশাপাশি ব্যবস্থাগত উন্নয়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়ে সময়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন ডিভিশন এই চার ব্যাংকের সঙ্গে করা এমওইউ’র অগ্রগতি পর্যালোচনা করে থাকে।

ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৭ হাজার ২৮৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা; যা ৫৬টি তফসিলি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। বেসিক, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৬ হাজার ৮২৪ কোটি, ৫ হাজার ৪০ কোটি, ১ হাজার ৫৯৮ কোটি এবং ৭ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।