ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারের সুদ খাতে ব্যয় ছাড়ালো লাখ কোটি টাকা

সরকারের সুদ ব্যয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে খরচ করতে হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর আগে আর কখনো সুদ খাতে এত ব্যয় হয়নি।

সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থ বিভাগের এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটে দেশি-বিদেশি ঋণের জন্য সুদ ব্যয় খাতে অর্থ বরাদ্দ প্রাক্কলন ছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বৃদ্ধি করে এক লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে সুদ ব্যয় এ সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব হয়নি। মোট সম্পদের ২৮ ভাগই ব্যয় হচ্ছে সুদ ব্যয় খাতে। এরপর ২১ ভাগ যাচ্ছে সরকারি চাকরিদের বেতন ভাতা খাতে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ৬০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ১৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বেড়েছে। এছাড়া দেশীয় উৎস থেকে নেওয়া ঋণের সুদ ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৯৯ হাজার ৬০৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনমনীয় এবং আধা-নমনীয় ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ খাতের সুদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাকার ডিভ্যালুয়েশন এবং বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক উৎসের অন্তর্নিহিত সুদের হার ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ শতাংশ হতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ শতাংশে উন্নীত হবে। সুদ ব্যয়ের এই চিত্র অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৪-২০২৫ হতে ২০২৬-২০২৭’ এ প্রকাশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নীতি বিবৃতি বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করতে হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া সুদ ব্যয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ ব্যয় বেড়ে হবে এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এবং বিদেশি সুদ ব্যয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এরপরের অর্থবছরে অর্থ্যৎ ২০২৬-২০২৭ তে আরও বৃদ্ধি পেয়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশি সুদ ব্যয় হবে এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদেশি সুদ ব্যয় হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,‘মধ্যমেয়াদে সরকারের প্রাক্কলিত সুদ ব্যয় এ খাতে সরকারের ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে। সুদ পরিশোধের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২১ অর্থবছরের সুদ ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মোট বাজেটের অনুপাতে সুদ পরিশোধ হ্রাস-বৃদ্ধি লক্ষ্যণীয়। সুদ ব্যয় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পায় তবে তা ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে পুনরায় ১৫.৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

এদিকে, বাজেট ডকুমেন্ট থেকে দেখা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৭০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা ছিল চার হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২১-২০২২অর্থবছরে সুদ ছিল ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এক লাখ ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ বেড়ে হবে এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা।

এর আগে,২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। এবং বিদেশি সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সরকারের সুদ খাতে ব্যয় ছাড়ালো লাখ কোটি টাকা

আপডেট টাইম : ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

সরকারের সুদ ব্যয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে খরচ করতে হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর আগে আর কখনো সুদ খাতে এত ব্যয় হয়নি।

সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থ বিভাগের এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটে দেশি-বিদেশি ঋণের জন্য সুদ ব্যয় খাতে অর্থ বরাদ্দ প্রাক্কলন ছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বৃদ্ধি করে এক লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে সুদ ব্যয় এ সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব হয়নি। মোট সম্পদের ২৮ ভাগই ব্যয় হচ্ছে সুদ ব্যয় খাতে। এরপর ২১ ভাগ যাচ্ছে সরকারি চাকরিদের বেতন ভাতা খাতে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ৬০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ১৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বেড়েছে। এছাড়া দেশীয় উৎস থেকে নেওয়া ঋণের সুদ ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৯৯ হাজার ৬০৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনমনীয় এবং আধা-নমনীয় ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ খাতের সুদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাকার ডিভ্যালুয়েশন এবং বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক উৎসের অন্তর্নিহিত সুদের হার ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ শতাংশ হতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ শতাংশে উন্নীত হবে। সুদ ব্যয়ের এই চিত্র অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৪-২০২৫ হতে ২০২৬-২০২৭’ এ প্রকাশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নীতি বিবৃতি বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করতে হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া সুদ ব্যয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ ব্যয় বেড়ে হবে এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এবং বিদেশি সুদ ব্যয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এরপরের অর্থবছরে অর্থ্যৎ ২০২৬-২০২৭ তে আরও বৃদ্ধি পেয়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশি সুদ ব্যয় হবে এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদেশি সুদ ব্যয় হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,‘মধ্যমেয়াদে সরকারের প্রাক্কলিত সুদ ব্যয় এ খাতে সরকারের ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে। সুদ পরিশোধের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২১ অর্থবছরের সুদ ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মোট বাজেটের অনুপাতে সুদ পরিশোধ হ্রাস-বৃদ্ধি লক্ষ্যণীয়। সুদ ব্যয় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পায় তবে তা ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে পুনরায় ১৫.৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

এদিকে, বাজেট ডকুমেন্ট থেকে দেখা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৭০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা ছিল চার হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২১-২০২২অর্থবছরে সুদ ছিল ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এক লাখ ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ বেড়ে হবে এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা।

এর আগে,২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। এবং বিদেশি সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।