ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোলায় জনপ্রিয় হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে বাগদা চিংড়ি চাষ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লবনাক্ততার কারনে ভোলার দক্ষিনাঞ্চলে বাগদা চিংড়ি চাষের উপযোগী। লোনা পানিতে এই চিংড়ির উৎপাদন ভাল হয়। ভোলা থেকে উৎপাদিত বাগদা চিংড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাসনে জমি, পুকুর বা জলাশয় লিজ নিয়ে লোনা পানি আটকিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে নদী থেকে বাগদা রেনু সংগ্রহ করে চিংড়ি চাষ করা হয়। জোয়ার ভাটার পানি সরবরাহের জন্য আলাদাভাবে সরু ড্রেন থাকে। মাত্র ৩ মাসেই বাগদা রেনু গ্রেড চিংড়িতে পরিনত হয়।

চর নিউটনের নুরে আলম জানান, বাগদা চিংড়ি বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন এবং তার দেখাদেখি অনেকে পরিকল্পিত ভাবে ঘের করে বাগদা চিংড়ি চাষে ঝুকে পড়েছে। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিক্ষিত বেকার যুবকরা জীবনযুদ্ধে টিকে আছে বাগদা চিংড়ি চাষ করে।

চরফ্যাসনের বিচ্ছিন্ন উপকূল চর পাতিলার মৎস্যজীবি আলাউদ্দিন জানান – মশারী জাল, নেট, ঠেলা জাল দিয়ে মাছের পোনা যেমন হরিনা, মটকা, চাকা, কুছো, কাকড়া, বেলে, পাইর্সা, ভেটকি, গলদা রেনু সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আটকা পড়লে ঝিনুকের সাহায্যে গলদা চিংড়ির সরু রেনু সংগ্রহ করা হয়।

বানিজ্যিক ভাবে বাগদা চাষ ও পদ্ধতি নিয়ে ঢালচরের মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল কালাম বেপারী জানান, নদীর অদূরে জমি পুকুর বা জলাশয় লিজ নিয়ে মৎস্য ঘেরের চারদিকে উচু বাঁধ দিয়ে তলদেশে চুনা ও সার দিয়ে নদী থেকে লবনাক্ত লোনা পানি ঢুকিয়ে কিশোর কিশোরিদের মাধ্যমে নদী থেকে প্রাকৃতিক ভাবে ভেসে আসা বাগদা রেনু সংগ্রহ করে খামারে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিয়ে ৩ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ৩ মাস পর রেনু পোনা পুর্নাঙ্গ গ্রেড চিংড়িতে পরিনত হয়। তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও ক্লাইমেট কেয়ার সেন্টারে মৎস্য চাষে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, অনেক সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় হঠাৎ জোয়ারের পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে পানিতে এক ধরনের এসিড সৃষ্টি হয় ফলে বাগদা চাষীরা বিনিয়োগের টাকাও ঠিকমত তুলতে পারেনা। তারপরেও বর্তমানে প্রযুক্তির ছোয়ায় অনেক চাষীরা উন্নত পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করে দেশ-বিদেশে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।

এছাড়াও অভাবের তারনায় চরফ্যাসনে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া শিশু কিশোর-কিশোরিরা মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে প্রতিনিয়ত বাগদা রেনু সংগ্রহ করে মহাজনদের কাছে বিক্রি করে জন প্রতি ৩/৪শ টাকা উপার্জন করে। বাগদা রেনু মহাজনরা সংগ্রহ করে হাড়িতে খুলনা ও বাগেরহাট এলাকায় বিক্রি করছে। এসব এলাকা বাগদা ঘের মহাজনরা রেনু জলাশয়ে চাষ করে দেশ-বিদেশে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করে লাভবান হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানান, এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ মূলত আধানিবিড় পদ্ধতিকেই বুঝায়। আধানিবিড় পদ্ধতিটি হচ্ছে স্বল্প জমিতে অধিক চাষ। যাকে ইংরেজিতে সেমি ইন্টেন্সি বলা হয়। যেহেতু ঘেরে চিংড়ি চাষের জন্য অধিক জমির প্রয়োজন হয়, সে কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়। প্রয়োজনীয় উপযোগী জমিরও অভাব রয়েছে। তাই স্বল্প জমিতে পুকুর কেটে এ পদ্ধতির চাষ বেশ সুবিধা ও লাভজনক।

তিনি বলেন, এক হেক্টর (সাড়ে ৭ বিঘা) জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতির চাষে ৫-৬ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ১, ২ ও ৩ বিঘা আয়তনের পুকুরে ৫ ফুট পানি থাকা আবশ্যক। চিংড়িতে প্রতিদিন ২-৩ বার করে (এক ঘণ্টা) মেশিনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ভোলায় জনপ্রিয় হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে বাগদা চিংড়ি চাষ

আপডেট টাইম : ০২:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লবনাক্ততার কারনে ভোলার দক্ষিনাঞ্চলে বাগদা চিংড়ি চাষের উপযোগী। লোনা পানিতে এই চিংড়ির উৎপাদন ভাল হয়। ভোলা থেকে উৎপাদিত বাগদা চিংড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাসনে জমি, পুকুর বা জলাশয় লিজ নিয়ে লোনা পানি আটকিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে নদী থেকে বাগদা রেনু সংগ্রহ করে চিংড়ি চাষ করা হয়। জোয়ার ভাটার পানি সরবরাহের জন্য আলাদাভাবে সরু ড্রেন থাকে। মাত্র ৩ মাসেই বাগদা রেনু গ্রেড চিংড়িতে পরিনত হয়।

চর নিউটনের নুরে আলম জানান, বাগদা চিংড়ি বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন এবং তার দেখাদেখি অনেকে পরিকল্পিত ভাবে ঘের করে বাগদা চিংড়ি চাষে ঝুকে পড়েছে। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিক্ষিত বেকার যুবকরা জীবনযুদ্ধে টিকে আছে বাগদা চিংড়ি চাষ করে।

চরফ্যাসনের বিচ্ছিন্ন উপকূল চর পাতিলার মৎস্যজীবি আলাউদ্দিন জানান – মশারী জাল, নেট, ঠেলা জাল দিয়ে মাছের পোনা যেমন হরিনা, মটকা, চাকা, কুছো, কাকড়া, বেলে, পাইর্সা, ভেটকি, গলদা রেনু সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আটকা পড়লে ঝিনুকের সাহায্যে গলদা চিংড়ির সরু রেনু সংগ্রহ করা হয়।

বানিজ্যিক ভাবে বাগদা চাষ ও পদ্ধতি নিয়ে ঢালচরের মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল কালাম বেপারী জানান, নদীর অদূরে জমি পুকুর বা জলাশয় লিজ নিয়ে মৎস্য ঘেরের চারদিকে উচু বাঁধ দিয়ে তলদেশে চুনা ও সার দিয়ে নদী থেকে লবনাক্ত লোনা পানি ঢুকিয়ে কিশোর কিশোরিদের মাধ্যমে নদী থেকে প্রাকৃতিক ভাবে ভেসে আসা বাগদা রেনু সংগ্রহ করে খামারে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিয়ে ৩ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ৩ মাস পর রেনু পোনা পুর্নাঙ্গ গ্রেড চিংড়িতে পরিনত হয়। তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও ক্লাইমেট কেয়ার সেন্টারে মৎস্য চাষে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, অনেক সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় হঠাৎ জোয়ারের পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে পানিতে এক ধরনের এসিড সৃষ্টি হয় ফলে বাগদা চাষীরা বিনিয়োগের টাকাও ঠিকমত তুলতে পারেনা। তারপরেও বর্তমানে প্রযুক্তির ছোয়ায় অনেক চাষীরা উন্নত পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করে দেশ-বিদেশে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।

এছাড়াও অভাবের তারনায় চরফ্যাসনে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া শিশু কিশোর-কিশোরিরা মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে প্রতিনিয়ত বাগদা রেনু সংগ্রহ করে মহাজনদের কাছে বিক্রি করে জন প্রতি ৩/৪শ টাকা উপার্জন করে। বাগদা রেনু মহাজনরা সংগ্রহ করে হাড়িতে খুলনা ও বাগেরহাট এলাকায় বিক্রি করছে। এসব এলাকা বাগদা ঘের মহাজনরা রেনু জলাশয়ে চাষ করে দেশ-বিদেশে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করে লাভবান হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানান, এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ মূলত আধানিবিড় পদ্ধতিকেই বুঝায়। আধানিবিড় পদ্ধতিটি হচ্ছে স্বল্প জমিতে অধিক চাষ। যাকে ইংরেজিতে সেমি ইন্টেন্সি বলা হয়। যেহেতু ঘেরে চিংড়ি চাষের জন্য অধিক জমির প্রয়োজন হয়, সে কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়। প্রয়োজনীয় উপযোগী জমিরও অভাব রয়েছে। তাই স্বল্প জমিতে পুকুর কেটে এ পদ্ধতির চাষ বেশ সুবিধা ও লাভজনক।

তিনি বলেন, এক হেক্টর (সাড়ে ৭ বিঘা) জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতির চাষে ৫-৬ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ১, ২ ও ৩ বিঘা আয়তনের পুকুরে ৫ ফুট পানি থাকা আবশ্যক। চিংড়িতে প্রতিদিন ২-৩ বার করে (এক ঘণ্টা) মেশিনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়।