বাঙালি কণ্ঠ ডেস্কঃ মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। গতকাল শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সাংবাদিকদের সামনে এ আহ্বান জানান তিনি। খবর দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের।
চলিত সপ্তাহে প্রথম বারের মতো দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত সিত্তে ও মোয়াংদ শহর পরিদর্শন করেন। তিনি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি’র সঙ্গেও দেখা করেন।
গত বছরের অক্টোবরে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চৌকিতে হামলার পর রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এ অভিযানের সময় ব্যাপকহারে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে।
জাতিসংঘ বলছে, এই সময় নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকশ রোহিঙ্গাদের হত্যা করে। এক হাজারের বেশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় এবং ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
তবে অভিযানের সময় কোনো ধরনের সহিংস আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার। সরকারের ভাষ্য, দেশের উত্তরের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। তবে কোনো সংবাদমাধ্যম বা ত্রাণকর্মীদের এসব হিংসাত্মক ঘটনার জায়গাগুলোতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিবিসি সেসব স্থানে যেতে পারেনি।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারে অনেকেই এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে মনে করে। ২০১২ সাল থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কয়েকশ মুসলিম রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং দেশ ছেড়েছেন এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা জঙ্গি ক্যাম্প নির্মূল করতে গিয়ে গ্রাম প্রশাসকসহ চারজনকে হত্যা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই নিয়ে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার ব্যাংককে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘মুসলিম সম্প্রদায়দের নাগরিকত্ব প্রদানে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু বছর ধরে তাদের নাগরিকত্ব প্রদানে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
মিয়ানমার সরকার মনে করে, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে এসেছে। তাই এদের নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমার সরকারের অনীহা। যদিও রোহিঙ্গারা বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে।
এই অঞ্চলে অধিক বিনিয়োগের দরকার বলে জানান ফিলিপ্পো।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্যে হচ্ছে রাখাইন। জরুরি ভিত্তিতে এখানকার উন্নয়নে বিনিয়োগ দরকার এবং এতে অবশ্য দুই সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।’