ঢাকা , রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার কবরের পাশে দিন-রাত বসে থাকি, ছেলে ফিরে আসে না সংস্কার না করলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্যায় করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত কাকে ‘ননসেন্স’ বললেন বুবলী ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের সচিবালয়ে প্রবেশে অস্থায়ী পাসের ব্যাপারে বিশেষ সেল গঠন জর্জিনাকে ‘স্ত্রী’ সম্বোধন, তবে কি বিয়েটা সেরেই ফেলেছেন রোনালদো ৩১ ডিসেম্বর আসছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা মহাখালীতে আবাসিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিট ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের

জার্মানির ড্রেসডেন শহরে কেন ডানপন্থার উত্থান

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  জার্মানির বড় শহরগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র এই ড্রেসডেনে বামপন্থার চেয়ে ডানপন্থার আধিপত্য দেখা যায়৷ ঐতিহাসিক ও পুরনো এই শহরের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে রাজকীয় মহিমা৷ এখানে সেখানে যেন এককালের সমৃদ্ধ অতীত নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে৷ একইসঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার করুণ স্মৃতির ক্ষতও যেন এখনো দগদগ করছে৷

জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের এই রাজধানী শহরে ডানপন্থার উত্থানের পেছেন এই সবকে কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ইতিহাসবিদ এবং বিশ্লেষকরা৷

ডানধারার উগ্রতা যেন পুরো অঞ্চলকেই ধীরে ধীরে ছেয়ে ফেলছে৷ ২০১৫ সালে যখন প্রায় ১ মিলিয়ন অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু জার্মানিতে পৌঁছে, এরপর এই ধারাটি হঠাৎ করে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে৷ আশ্রয়প্রার্থী এবং স্থানীয়দের মধ্যকার উত্তেজনা আরো বেড়ে গেছে৷

ড্রেসডেন থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বের শহর ফ্রাইটাল৷ যেখানে ন’জনের একটা দলের বিচার হচ্ছে৷ যাদের বিরুদ্ধে উদ্বাস্তুদের পাঁচটি ক্যাম্পে হামলার অভিযোগে রয়েছে৷

জার্মানি জুড়ে উদ্বাস্তুদের স্বার্থ এবং এমনকি সরাসরি উদ্বাস্তুদের উপর হামলার ঘটনা বাড়ছে৷ ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ দপ্তরের (বিকেএ) মতে, ২০১৫ সালে এই হামলার পরিমাণ বেড়েছে৷ যার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে স্যাক্সনি রাজ্য৷

পেগিডার কেন্দ্র ড্রেসডেন

জার্মানির ইসলাম বিরোধী আন্দোলন পেগিডা৷ সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে গড়ে উঠা ডানপন্থি এই আন্দোলন কেন্দ্রীভূত হয়েছে এই শহরেই৷ পেগিডা, এই শব্দটি যে জার্মান কথাগুলির অর্থ হচ্ছে, প্রতীচ্যের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী ইউরোপীয়রা৷

তাঁরা ২০১৪ সালে ১০ হাজার মানুষকে এই শহরের রাস্তায় আনতে সক্ষম হয়েছিল৷ যদিও সে সময় অন্য শহরগুলোতে তেমন একটা আবেদন সৃষ্টি হয়নি৷ তবে শরণার্থীরা আসার পর এই আন্দোলনে মানুষের অংশগ্রহণ আরো বেড়েছে৷

এখানকার মানুষ এমনিতে বিনয়ী হলেও গর্বিত৷ ডানপন্থি চিন্তা ধারণ করলেও আন্দোলনের মাঠে ব্যবহার করে বামপন্থিদের কলাকৌশল৷

অবশ্য সেখানে এমন মানুষও রয়েছেন, যারা নতুনকে স্বাগত জানাতে চান৷ একটি বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে সেটার অংশ হতে চান৷

ডান-বাম যাইহোক, এখানকার মানুষের মাঝে রাজনীতি ও সরকার নিয়ে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে৷ কয়েট্শগ্রাবেন জেলার সিটি সেন্টারের কাছে একটি ম্যাজেস্টিক ভিলা থেকে কয়েক মিনিটের পথ পার হলে ৬-৭ তলা বিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক দেখা যাবে৷ ৭০ ও ৮০’র দশকে এগুলো ছিল ঝকঝকে তকতকে৷ তখন এ রকম হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা ছিল৷

কয়েট্শগ্রাবেনকে এখন সংগ্রাম করতে হয় দারিদ্রের সঙ্গে৷ রয়েছে উচ্চ বেকারত্ব, বাড়ছে ছোট ছোট অপরাধও৷ অনেকেই বলেছেন, ক্রমবর্ধমান এই অসন্তোষই ডানপন্থার বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে৷

ডয়চে ভেলের দুই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয়, মিশেল হোনাওয়ার সাথে৷ তিনি খেলা মাঠের পাশে একটি আইসক্রিমের দোকান তৈরিতে কাজ করছেন৷

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁকে অনেক উত্থান পতনের মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছে৷ মায়ের অসুস্থতা, কোনো কাজে স্থির হতে না পারা, পরিবারের প্রয়োজন ঠিকমতো মেটাতে না পারার ঘটনা ঘটেছে৷ একটা সময়ে গিয়ে তিনি প্রতিবেশী তরুণদের একটি দলে যোগ দিয়েছিলেন৷জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি

অভিবাসীদের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, তাঁদের মানসিকতা একেবারেই ভিন্ন৷ তাঁরা এক ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছেন৷ যেটা তাদের প্রাত্যহিক জীবনেরও অংশ হয়ে গেছে৷

‘‘অবশ্যই আমাদের উচিত তাদের সাথে ভালো আচরণ করা৷ কিন্তু তাঁদেরও এটা মনে রাখতে হবে, তাঁরা এখানে অতিথি হিসেবে এসেছেন৷ যখন আপনি অন্য কারো বাড়িতে অতিথি হিসাবে যাবেন, তখন আপনাকে অতিথি হিসাবেই আচরণ করতে হবে৷’’

‘‘একজন অতিথি কেমন থাকে? তাঁকে বন্ধুত্বপূর্ণ থাকতে হবে, প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিতে হবে সহায়তার হাত৷ অন্যের প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হবে৷ কিন্তু এখানেই সমস্যা৷ তাঁরা এভাবে আচরণ করে না৷

রাজনীতি নিয়ে কিছুটা আগ্রহ রয়েছে তাঁর, রয়েছে হতাশাও, যেটা অকপটেই জানিয়েছেন ২৬ বছরের এই যুবক৷ তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো নানা অঙ্গীকার করে৷ ক্ষমতায় এসে এমন সব কাজ করে, যেটা তাদের নির্বাচনি অঙ্গীকারে ছিল না৷ সুতরাং কে ক্ষমতায় আসলো, তাতে কিছুই যায় আসে না৷

কয়েট্শগ্রাবেনের এই দিকে এখন উদ্বাস্তুরাও আসছে৷ বাড়ছে চাপা ক্ষোভ৷ বিশেষ করে যখন তাঁরা এসেই সাজানো গোছানো একটা অ্যাপার্টমেন্ট পেয়ে যান৷ অন্যদিকে এখানে বসবাসকারীদেরকে চার রুমের একটা বাসার জন্য মাসে গড়পড়তা ৬০০ ইউরো খরচ করতে হয়৷

এ রকম একটি ফ্ল্যাটেই বাস করেন কারমেন নামে চার সন্তানের একজন মা৷ তিনি বলেন, আমার বাসাটি ছেড়ে দিলে মালিক এটি সাজিয়ে গুছিয়ে ভাড়া আরো দেড়শ’ ইউরো বাড়িয়ে দেবেন৷ তিনি বলেন, আমি এখনো এখানেই বাস করতে চাই৷ সমাজে বিভেদ বাড়ছে৷ এরপরও আমি বিশ্বাস করি, একটি সহিষ্ণু সমাজের জন্য আমাদেরকে আরো অনেকদূর যেতে হবে৷ জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ২০১৭: কবে, কী হচ্ছে।

খেলার মাঠে বিভিন্ন ধরনের শিশুদের দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে (উদ্বাস্তুরা আসায়) আরো রং হচ্ছে৷ এটা একটা ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতারও বিষয়৷ কিন্তু অনেকেই বিষয়টাকে এভাবে দেখেন না৷

কয়েট্শগ্রাবেনের খেলার মাঠে মায়েদের ভিড়ে আমাদের দেখা হয় আবদুল কাদির আহাদি এবং তাঁর চার কন্যার সাথে৷ উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে আহাদি জার্মান সেনাবাহিনীর অনুবাদের কাজ করতেন৷ এই কাজের ফলে দ্রুত তাঁর জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠে৷ তিনি জার্মানির ভিসার জন্য আবেদন করেন৷ ২০১৪ সালে জার্মানি এসে পৌঁছেছেন৷

পরিবার নিয়ে এখানে ঘর বাঁধতে এবং সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে তাঁকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে৷ আফগানিস্তান থেকে আসা নবাগতদের তিনি এখন সহায়তা দিচ্ছেন৷ কিন্তু এই নবাগতদের অনেকের আবেদন খারিজ হয়ে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, আফগানিস্তান নিরাপদ নয়৷

যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য দুয়ার খোলা রাখতে তিনি জার্মানির প্রতি আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, আমি আশা করি, জার্মান সরকার, বিশেষ করে স্যাক্সন সরকার, এই সব মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে৷ এই মুহূর্তে বিশ্বের সব দেশের মধ্যে জার্মানিতে এমন প্রচুর মানুষ রয়েছে, যারা অন্যদেরকে, বিশেষ করে অভিবাসীদেরকে সহায়তা করতে চায়৷

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

জার্মানির ড্রেসডেন শহরে কেন ডানপন্থার উত্থান

আপডেট টাইম : ০৫:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  জার্মানির বড় শহরগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র এই ড্রেসডেনে বামপন্থার চেয়ে ডানপন্থার আধিপত্য দেখা যায়৷ ঐতিহাসিক ও পুরনো এই শহরের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে রাজকীয় মহিমা৷ এখানে সেখানে যেন এককালের সমৃদ্ধ অতীত নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে৷ একইসঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার করুণ স্মৃতির ক্ষতও যেন এখনো দগদগ করছে৷

জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের এই রাজধানী শহরে ডানপন্থার উত্থানের পেছেন এই সবকে কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ইতিহাসবিদ এবং বিশ্লেষকরা৷

ডানধারার উগ্রতা যেন পুরো অঞ্চলকেই ধীরে ধীরে ছেয়ে ফেলছে৷ ২০১৫ সালে যখন প্রায় ১ মিলিয়ন অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু জার্মানিতে পৌঁছে, এরপর এই ধারাটি হঠাৎ করে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে৷ আশ্রয়প্রার্থী এবং স্থানীয়দের মধ্যকার উত্তেজনা আরো বেড়ে গেছে৷

ড্রেসডেন থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বের শহর ফ্রাইটাল৷ যেখানে ন’জনের একটা দলের বিচার হচ্ছে৷ যাদের বিরুদ্ধে উদ্বাস্তুদের পাঁচটি ক্যাম্পে হামলার অভিযোগে রয়েছে৷

জার্মানি জুড়ে উদ্বাস্তুদের স্বার্থ এবং এমনকি সরাসরি উদ্বাস্তুদের উপর হামলার ঘটনা বাড়ছে৷ ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ দপ্তরের (বিকেএ) মতে, ২০১৫ সালে এই হামলার পরিমাণ বেড়েছে৷ যার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে স্যাক্সনি রাজ্য৷

পেগিডার কেন্দ্র ড্রেসডেন

জার্মানির ইসলাম বিরোধী আন্দোলন পেগিডা৷ সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে গড়ে উঠা ডানপন্থি এই আন্দোলন কেন্দ্রীভূত হয়েছে এই শহরেই৷ পেগিডা, এই শব্দটি যে জার্মান কথাগুলির অর্থ হচ্ছে, প্রতীচ্যের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী ইউরোপীয়রা৷

তাঁরা ২০১৪ সালে ১০ হাজার মানুষকে এই শহরের রাস্তায় আনতে সক্ষম হয়েছিল৷ যদিও সে সময় অন্য শহরগুলোতে তেমন একটা আবেদন সৃষ্টি হয়নি৷ তবে শরণার্থীরা আসার পর এই আন্দোলনে মানুষের অংশগ্রহণ আরো বেড়েছে৷

এখানকার মানুষ এমনিতে বিনয়ী হলেও গর্বিত৷ ডানপন্থি চিন্তা ধারণ করলেও আন্দোলনের মাঠে ব্যবহার করে বামপন্থিদের কলাকৌশল৷

অবশ্য সেখানে এমন মানুষও রয়েছেন, যারা নতুনকে স্বাগত জানাতে চান৷ একটি বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে সেটার অংশ হতে চান৷

ডান-বাম যাইহোক, এখানকার মানুষের মাঝে রাজনীতি ও সরকার নিয়ে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে৷ কয়েট্শগ্রাবেন জেলার সিটি সেন্টারের কাছে একটি ম্যাজেস্টিক ভিলা থেকে কয়েক মিনিটের পথ পার হলে ৬-৭ তলা বিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক দেখা যাবে৷ ৭০ ও ৮০’র দশকে এগুলো ছিল ঝকঝকে তকতকে৷ তখন এ রকম হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা ছিল৷

কয়েট্শগ্রাবেনকে এখন সংগ্রাম করতে হয় দারিদ্রের সঙ্গে৷ রয়েছে উচ্চ বেকারত্ব, বাড়ছে ছোট ছোট অপরাধও৷ অনেকেই বলেছেন, ক্রমবর্ধমান এই অসন্তোষই ডানপন্থার বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে৷

ডয়চে ভেলের দুই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয়, মিশেল হোনাওয়ার সাথে৷ তিনি খেলা মাঠের পাশে একটি আইসক্রিমের দোকান তৈরিতে কাজ করছেন৷

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁকে অনেক উত্থান পতনের মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছে৷ মায়ের অসুস্থতা, কোনো কাজে স্থির হতে না পারা, পরিবারের প্রয়োজন ঠিকমতো মেটাতে না পারার ঘটনা ঘটেছে৷ একটা সময়ে গিয়ে তিনি প্রতিবেশী তরুণদের একটি দলে যোগ দিয়েছিলেন৷জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি

অভিবাসীদের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, তাঁদের মানসিকতা একেবারেই ভিন্ন৷ তাঁরা এক ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছেন৷ যেটা তাদের প্রাত্যহিক জীবনেরও অংশ হয়ে গেছে৷

‘‘অবশ্যই আমাদের উচিত তাদের সাথে ভালো আচরণ করা৷ কিন্তু তাঁদেরও এটা মনে রাখতে হবে, তাঁরা এখানে অতিথি হিসেবে এসেছেন৷ যখন আপনি অন্য কারো বাড়িতে অতিথি হিসাবে যাবেন, তখন আপনাকে অতিথি হিসাবেই আচরণ করতে হবে৷’’

‘‘একজন অতিথি কেমন থাকে? তাঁকে বন্ধুত্বপূর্ণ থাকতে হবে, প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিতে হবে সহায়তার হাত৷ অন্যের প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হবে৷ কিন্তু এখানেই সমস্যা৷ তাঁরা এভাবে আচরণ করে না৷

রাজনীতি নিয়ে কিছুটা আগ্রহ রয়েছে তাঁর, রয়েছে হতাশাও, যেটা অকপটেই জানিয়েছেন ২৬ বছরের এই যুবক৷ তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো নানা অঙ্গীকার করে৷ ক্ষমতায় এসে এমন সব কাজ করে, যেটা তাদের নির্বাচনি অঙ্গীকারে ছিল না৷ সুতরাং কে ক্ষমতায় আসলো, তাতে কিছুই যায় আসে না৷

কয়েট্শগ্রাবেনের এই দিকে এখন উদ্বাস্তুরাও আসছে৷ বাড়ছে চাপা ক্ষোভ৷ বিশেষ করে যখন তাঁরা এসেই সাজানো গোছানো একটা অ্যাপার্টমেন্ট পেয়ে যান৷ অন্যদিকে এখানে বসবাসকারীদেরকে চার রুমের একটা বাসার জন্য মাসে গড়পড়তা ৬০০ ইউরো খরচ করতে হয়৷

এ রকম একটি ফ্ল্যাটেই বাস করেন কারমেন নামে চার সন্তানের একজন মা৷ তিনি বলেন, আমার বাসাটি ছেড়ে দিলে মালিক এটি সাজিয়ে গুছিয়ে ভাড়া আরো দেড়শ’ ইউরো বাড়িয়ে দেবেন৷ তিনি বলেন, আমি এখনো এখানেই বাস করতে চাই৷ সমাজে বিভেদ বাড়ছে৷ এরপরও আমি বিশ্বাস করি, একটি সহিষ্ণু সমাজের জন্য আমাদেরকে আরো অনেকদূর যেতে হবে৷ জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ২০১৭: কবে, কী হচ্ছে।

খেলার মাঠে বিভিন্ন ধরনের শিশুদের দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে (উদ্বাস্তুরা আসায়) আরো রং হচ্ছে৷ এটা একটা ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতারও বিষয়৷ কিন্তু অনেকেই বিষয়টাকে এভাবে দেখেন না৷

কয়েট্শগ্রাবেনের খেলার মাঠে মায়েদের ভিড়ে আমাদের দেখা হয় আবদুল কাদির আহাদি এবং তাঁর চার কন্যার সাথে৷ উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে আহাদি জার্মান সেনাবাহিনীর অনুবাদের কাজ করতেন৷ এই কাজের ফলে দ্রুত তাঁর জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠে৷ তিনি জার্মানির ভিসার জন্য আবেদন করেন৷ ২০১৪ সালে জার্মানি এসে পৌঁছেছেন৷

পরিবার নিয়ে এখানে ঘর বাঁধতে এবং সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে তাঁকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে৷ আফগানিস্তান থেকে আসা নবাগতদের তিনি এখন সহায়তা দিচ্ছেন৷ কিন্তু এই নবাগতদের অনেকের আবেদন খারিজ হয়ে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, আফগানিস্তান নিরাপদ নয়৷

যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য দুয়ার খোলা রাখতে তিনি জার্মানির প্রতি আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, আমি আশা করি, জার্মান সরকার, বিশেষ করে স্যাক্সন সরকার, এই সব মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে৷ এই মুহূর্তে বিশ্বের সব দেশের মধ্যে জার্মানিতে এমন প্রচুর মানুষ রয়েছে, যারা অন্যদেরকে, বিশেষ করে অভিবাসীদেরকে সহায়তা করতে চায়৷