ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে হারে পতন হয়েছে ফরাসি রানির, বিক্রি হলো ৫৭ কোটি টাকায়

৫০০টি হীরাখচিত রহস্যময় এক নেকলেস নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। ধারণা করা হচ্ছে, ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের শেষ রানি ম্যারি আনতোনির নেকলেস ছিল এটি। আর তার পতনের পেছনেও ভূমিকা রয়েছে এই হারের। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল বুধবার জেনেভায় এক নিলামে ৪৮ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে হারটি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ৫৭ কোটি টাকারও বেশি।১৮ শতকের এই গয়নাতে ৩০০ ক্যারাটের হীরা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছিল, ১৮ থেকে ২৮ লাখ ডলারে বিক্রি হতে পারে হারটি। তবে শেষ পর্যন্ত আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং ৪৮ লাখ ডলারে বিক্রি হয়।

হারে থাকা কিছু হীরা ১৭৮০ দশকের আলোচিত ‘ডায়মন্ড নেকলেস অ্যাফেয়ার’ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেজন্যই হারটি নিয়ে সবার এত আগ্রহ ছিল।

ফ্রান্সের দ্য ডায়মন্ড নেকলেস অ্যাফেয়ার ১৮ শতকের শেষের দিকে ঘটে যাওয়া এক ঐতিহাসিক কেলেঙ্কারি, যা ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের পতনের পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি মহামূল্যবান হীরার হার, যার দাম ছিল ১০ লাখ লিভ্রেস, যা সেই সময়ের ফরাসি অর্থনীতিতে বিশাল পরিমাণ অর্থ।

১৭৮৪ সালে এই কেলেঙ্কারি শুরু। লুই পঞ্চদশের সময়ের বিখ্যাত গয়না প্রস্তুতকারক দিয়ে একটি অতি দামী হীরার হার তৈরি করেন। তিনি আশা করেছিলেন, তার প্রেমিকা ম্যাডাম দু ব্যারি-এর জন্য এই হারের অর্ডার দেবেন। কিন্তু লুই পঞ্চদশের অকাল মৃত্যু এবং রাজকীয় ব্যয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। হারের মালিকরা আশা করছিলেন, হয়তো নতুন রানি ম্যারি আনতোনির এটি কিনবেন। তবে একে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে প্রত্যাখ্যান করেন রানি।

এমন পরিস্থিতিতে জেন দে লা মোত নামে এক নারী সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য পরিচয়ে কার্ডিনাল লুই দে রোহানকে বিভ্রান্ত করেন এবং রানির নামে হারের জন্য টাকা প্রদান করতে প্ররোচিত করেন। কার্ডিনাল তা বিশ্বাস করে জেনের হাতে টাকাও দেন। এরপর জেন গয়না প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে হারটি নেন, কিন্তু টাকা পরিশোধ করেন না। তিনি টাকা ও গয়না নিয়ে পালিয়ে যান।

কেলেঙ্কারিটি প্রকাশ হওয়ার পর রানির বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিদ্বেষ বেড়ে যায়। সাধারণ জনগণ মনে করতে থাকে যে রাজপরিবার অতি বিলাসী, লোভী এবং সাধারণ মানুষের সমস্যা সম্পর্কে অজ্ঞ। এ ঘটনায় ফরাসি রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়ায়। পরবর্তীতে, এই অসন্তোষই ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলশ্রুতিতে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং রাজা ও রানি উভয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

যে হারে পতন হয়েছে ফরাসি রানির, বিক্রি হলো ৫৭ কোটি টাকায়

আপডেট টাইম : ১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

৫০০টি হীরাখচিত রহস্যময় এক নেকলেস নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। ধারণা করা হচ্ছে, ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের শেষ রানি ম্যারি আনতোনির নেকলেস ছিল এটি। আর তার পতনের পেছনেও ভূমিকা রয়েছে এই হারের। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল বুধবার জেনেভায় এক নিলামে ৪৮ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে হারটি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ৫৭ কোটি টাকারও বেশি।১৮ শতকের এই গয়নাতে ৩০০ ক্যারাটের হীরা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছিল, ১৮ থেকে ২৮ লাখ ডলারে বিক্রি হতে পারে হারটি। তবে শেষ পর্যন্ত আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং ৪৮ লাখ ডলারে বিক্রি হয়।

হারে থাকা কিছু হীরা ১৭৮০ দশকের আলোচিত ‘ডায়মন্ড নেকলেস অ্যাফেয়ার’ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেজন্যই হারটি নিয়ে সবার এত আগ্রহ ছিল।

ফ্রান্সের দ্য ডায়মন্ড নেকলেস অ্যাফেয়ার ১৮ শতকের শেষের দিকে ঘটে যাওয়া এক ঐতিহাসিক কেলেঙ্কারি, যা ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের পতনের পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি মহামূল্যবান হীরার হার, যার দাম ছিল ১০ লাখ লিভ্রেস, যা সেই সময়ের ফরাসি অর্থনীতিতে বিশাল পরিমাণ অর্থ।

১৭৮৪ সালে এই কেলেঙ্কারি শুরু। লুই পঞ্চদশের সময়ের বিখ্যাত গয়না প্রস্তুতকারক দিয়ে একটি অতি দামী হীরার হার তৈরি করেন। তিনি আশা করেছিলেন, তার প্রেমিকা ম্যাডাম দু ব্যারি-এর জন্য এই হারের অর্ডার দেবেন। কিন্তু লুই পঞ্চদশের অকাল মৃত্যু এবং রাজকীয় ব্যয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। হারের মালিকরা আশা করছিলেন, হয়তো নতুন রানি ম্যারি আনতোনির এটি কিনবেন। তবে একে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে প্রত্যাখ্যান করেন রানি।

এমন পরিস্থিতিতে জেন দে লা মোত নামে এক নারী সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য পরিচয়ে কার্ডিনাল লুই দে রোহানকে বিভ্রান্ত করেন এবং রানির নামে হারের জন্য টাকা প্রদান করতে প্ররোচিত করেন। কার্ডিনাল তা বিশ্বাস করে জেনের হাতে টাকাও দেন। এরপর জেন গয়না প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে হারটি নেন, কিন্তু টাকা পরিশোধ করেন না। তিনি টাকা ও গয়না নিয়ে পালিয়ে যান।

কেলেঙ্কারিটি প্রকাশ হওয়ার পর রানির বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিদ্বেষ বেড়ে যায়। সাধারণ জনগণ মনে করতে থাকে যে রাজপরিবার অতি বিলাসী, লোভী এবং সাধারণ মানুষের সমস্যা সম্পর্কে অজ্ঞ। এ ঘটনায় ফরাসি রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়ায়। পরবর্তীতে, এই অসন্তোষই ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলশ্রুতিতে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং রাজা ও রানি উভয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।