ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক হাজার দিনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, থামবে কবে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক হাজার দিন পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার।তবে থেমে যাওয়ার এখনো কোনো লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ফ্রন্টে লড়াই চলছে।

এখনো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে মাঝে মধ্যেই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে আবার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে জো বাইডেন রাশিয়ার ভিতরে মার্কিন রকেট হামলা করার অনুমতি ইউক্রেনকে দিয়ে দিয়েছেন। আর রাশিয়া হুমকি দিয়েছে, এরকম আক্রমণ হলে তার উপযুক্ত ও কড়া জবাব দেয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প আসার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তিনি এবার এই যুদ্ধ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন? প্রশ্ন উঠেছে, ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেয়ার নীতির, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্টের ভবিষ্যৎ কী হবে?

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দুই দেশের মধ্যে কোনোরকম আলোচনা হয়নি। সম্ভাব্য আলোচনার আগে দুই দেশই তাদের শক্তি বাড়িয়ে নিতে চাইতে পারে। ইউক্রেন ও রাশিয়া চাইবে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের আরও কিছুটা জমি দখল করে নিয়ে আলোচনায় বসতে।

রাশিয়া ইরানের কাছ থেকে ড্রোন পেয়েছে। কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজারের মতো সেনাও যুদ্ধে নেমে পড়েছে। কিয়েভের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া এক লাখ সেনা পাঠাবার ক্ষমতা রাখে।

ইউক্রেন আবার আগস্ট থেকে রাশিয়ার কুরস্কের একটা অংশ দখল করে রেখেছে। সেখানে তারা সবচেয়ে দক্ষ সেনা পাঠিয়েছে। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া সেখানে ৫০ হাজার সেনা পাঠিয়েছে। তাছাড়া তারা পূর্ব ইউক্রেনেও দ্রুত কিছু এলাকা দখল করতে চায়।

ক্রমশ শীত আসছে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি রাশিয়া একদিনে ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৯০টি ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার গভীরে মার্কিন রকেট দিয়ে হামলার অনুমতি দেয়া, ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দেওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গত দুই বছরে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে মাঝারি বৃদ্ধি হয়েছে। তা সত্ত্বেও যুদ্ধের আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে, ইস্পাত শিল্প ও কৃষিক্ষেত্র।

ইউক্রেনের প্রোসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, আগামী বছর কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। তবে যে কোনো আলোচনা শুরুর আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে এবং ইউক্রেনকে উপযুক্ত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে।

আর ক্রেমলিন বলেছে, গত জুনেই প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার উচ্চাশা বন্ধ করতে হবে। আর চারটি এলাকা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু ইউক্রেন সেই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে।

গত শুক্রবার জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস প্রায় দুই বছর পর পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তারপরই জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার নেতা একঘরে হয়ে ছিলেন। এই ফেনের ফলে তার সেই দশা কিছুটা হলেও কমলো। জেলেনস্কি সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, প্রকৃত শান্তি দরকার। কিন্তু এক হাজার দিন পরেও প্রশ্ন হলো, সেই শান্তি কীভাবে আসবে?

তবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এসে এই নীতির পরিবর্তন করতে পারেন। সমর-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু এই পদক্ষেপ নিলে ৩৩ মাস ধরে চলা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির বদল হবে না।

এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। লাখ লাখ মানুষ বাইরের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাত। এর ফলে সামরিক দিক থেকে কার কত ক্ষতি হয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। গোযেন্দাদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমা দেশগুলি যে হিসাব করেছে, তাতে এক দেশের হিসাবের সঙ্গে অন্য দেশের হিসাবের প্রচুর ফারাক রয়েছে। তবে সব রিপোর্টই বলছে, দুই পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর মানুষ হতাহত হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

এক হাজার দিনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, থামবে কবে

আপডেট টাইম : ৩ ঘন্টা আগে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক হাজার দিন পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার।তবে থেমে যাওয়ার এখনো কোনো লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ফ্রন্টে লড়াই চলছে।

এখনো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে মাঝে মধ্যেই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে আবার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে জো বাইডেন রাশিয়ার ভিতরে মার্কিন রকেট হামলা করার অনুমতি ইউক্রেনকে দিয়ে দিয়েছেন। আর রাশিয়া হুমকি দিয়েছে, এরকম আক্রমণ হলে তার উপযুক্ত ও কড়া জবাব দেয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প আসার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তিনি এবার এই যুদ্ধ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন? প্রশ্ন উঠেছে, ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেয়ার নীতির, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্টের ভবিষ্যৎ কী হবে?

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দুই দেশের মধ্যে কোনোরকম আলোচনা হয়নি। সম্ভাব্য আলোচনার আগে দুই দেশই তাদের শক্তি বাড়িয়ে নিতে চাইতে পারে। ইউক্রেন ও রাশিয়া চাইবে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের আরও কিছুটা জমি দখল করে নিয়ে আলোচনায় বসতে।

রাশিয়া ইরানের কাছ থেকে ড্রোন পেয়েছে। কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজারের মতো সেনাও যুদ্ধে নেমে পড়েছে। কিয়েভের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া এক লাখ সেনা পাঠাবার ক্ষমতা রাখে।

ইউক্রেন আবার আগস্ট থেকে রাশিয়ার কুরস্কের একটা অংশ দখল করে রেখেছে। সেখানে তারা সবচেয়ে দক্ষ সেনা পাঠিয়েছে। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া সেখানে ৫০ হাজার সেনা পাঠিয়েছে। তাছাড়া তারা পূর্ব ইউক্রেনেও দ্রুত কিছু এলাকা দখল করতে চায়।

ক্রমশ শীত আসছে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি রাশিয়া একদিনে ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৯০টি ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার গভীরে মার্কিন রকেট দিয়ে হামলার অনুমতি দেয়া, ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দেওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গত দুই বছরে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে মাঝারি বৃদ্ধি হয়েছে। তা সত্ত্বেও যুদ্ধের আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে, ইস্পাত শিল্প ও কৃষিক্ষেত্র।

ইউক্রেনের প্রোসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, আগামী বছর কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। তবে যে কোনো আলোচনা শুরুর আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে এবং ইউক্রেনকে উপযুক্ত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে।

আর ক্রেমলিন বলেছে, গত জুনেই প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার উচ্চাশা বন্ধ করতে হবে। আর চারটি এলাকা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু ইউক্রেন সেই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে।

গত শুক্রবার জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস প্রায় দুই বছর পর পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তারপরই জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার নেতা একঘরে হয়ে ছিলেন। এই ফেনের ফলে তার সেই দশা কিছুটা হলেও কমলো। জেলেনস্কি সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, প্রকৃত শান্তি দরকার। কিন্তু এক হাজার দিন পরেও প্রশ্ন হলো, সেই শান্তি কীভাবে আসবে?

তবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এসে এই নীতির পরিবর্তন করতে পারেন। সমর-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু এই পদক্ষেপ নিলে ৩৩ মাস ধরে চলা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির বদল হবে না।

এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। লাখ লাখ মানুষ বাইরের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাত। এর ফলে সামরিক দিক থেকে কার কত ক্ষতি হয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। গোযেন্দাদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমা দেশগুলি যে হিসাব করেছে, তাতে এক দেশের হিসাবের সঙ্গে অন্য দেশের হিসাবের প্রচুর ফারাক রয়েছে। তবে সব রিপোর্টই বলছে, দুই পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর মানুষ হতাহত হয়েছে।