ঢাকা , রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষমা চাইলেন জাকির নায়েক

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারতের ইসলামিক বক্তা ও ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েক অবশেষে নিজের বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, আসলে তিনি বর্ণবাদী নন। তার অভিযোগ, সমালোচকরা তার বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং এতে নিজেদের কাল্পনিক কথাবার্তা যোগ করেছেন। যে কারণে মালয়েশিয়ার শাসক শ্রেণি থেকে শুরু করে সবাই তাকে ভুল বুঝছে।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমার কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তার জন্য আমি দুঃখিত। এখানে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে আঘাত করাটা কখনোই আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এটা ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, এই ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাচ্ছি।

জাকির নায়েক বলেন, সারাবিশ্বে শান্তি ছড়িয়ে দেয়াই তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তার অভিযোগ, তার নিন্দুকেরা তার এই কাজে সব সময়ই বাধা দিয়ে যাচ্ছে।

তার ভাষায়, ‘গত কয়েকদিনের ঘটনা লক্ষ্য করলে দেখবেন মালয়েশিয়ায় আমার বিরুদ্ধে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। আমার সমালোচকরা নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ব্যবহার করে আমার ওপর আক্রমণ করছেন। তারা আমার বক্তব্যকে রং মাখিয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন। এসব ভুল বক্তব্যের কারণে অমুসলিমরা তাকে বর্ণবাদী মনে করছেন।’

তিনি আরো দাবি করেন, যারা এসব কথায় আঘাত পেয়েছেন তারা তার মূল বক্তব্য শোনেননি।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশটির সংখ্যালঘু চীনাদের নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন জাকির নায়েক। ওই বক্তব্যে তিনি মালয়েশিয়ায় বসবাসরত চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিকদের আগে দেশে ফেরার আহ্বান জানান।

ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের চেয়ে মালয়েশিয়ার সংখ্যালঘু হিন্দুরা শত গুণ বেশি সুবিধা ভোগ করছে।

তার এমন মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার দাবি তুলে মালয়েশিয়ার তিন মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার মুসলিমদের সঙ্গে অমুসলিমদের দূরত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন জাকির নায়েক। তিনি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছেন বলেও অভিযোগ করেন ওই মন্ত্রীরা।

এ নিয়ে জাকির নায়েকের তীব্র সমালোচনা করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি জানি না, কে তাকে মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের মর্যাদা দিয়েছেন। তবে রাজনীতি থেকে তার দূরে থাকা উচিত। তিনি ইসলামের ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা বললে আমরা তাকে বাধা দিব না। কিন্তু তাকে অবশ্যই মালয়েশিয়ার রাজনীতি নিয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। চীনা এবং ভারতীয়দের নিজ দেশে ফিরে যেতে বলাটা রাজনৈতিক। তিনি বর্ণবাদী মানসিকতা উসকে দিচ্ছেন।’

জাকির নায়েকের এই বক্তব্য নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে বলেও জানান মাহাথির মোহাম্মদ।

কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আমাদের আইনের শাসন আছে এবং আমরা এটার চর্চা করবো।’

এই সব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ১১৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাকির নায়েকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হতে পারে বলেও জানা গেছে।

জাকির নায়েক স্থায়ী নাগরিকত্ব নিয়ে গত তিন বছর ধরে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়া নিয়ে দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিন মন্ত্রী তাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে শান্তি বিনষ্টের অভিযোগও আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মুসলিম, বাকি ৪০ শতাংশ মানুষের অধিকাংশই চীনা ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

ক্ষমা চাইলেন জাকির নায়েক

আপডেট টাইম : ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারতের ইসলামিক বক্তা ও ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েক অবশেষে নিজের বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, আসলে তিনি বর্ণবাদী নন। তার অভিযোগ, সমালোচকরা তার বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং এতে নিজেদের কাল্পনিক কথাবার্তা যোগ করেছেন। যে কারণে মালয়েশিয়ার শাসক শ্রেণি থেকে শুরু করে সবাই তাকে ভুল বুঝছে।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমার কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তার জন্য আমি দুঃখিত। এখানে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে আঘাত করাটা কখনোই আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এটা ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, এই ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাচ্ছি।

জাকির নায়েক বলেন, সারাবিশ্বে শান্তি ছড়িয়ে দেয়াই তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তার অভিযোগ, তার নিন্দুকেরা তার এই কাজে সব সময়ই বাধা দিয়ে যাচ্ছে।

তার ভাষায়, ‘গত কয়েকদিনের ঘটনা লক্ষ্য করলে দেখবেন মালয়েশিয়ায় আমার বিরুদ্ধে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। আমার সমালোচকরা নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ব্যবহার করে আমার ওপর আক্রমণ করছেন। তারা আমার বক্তব্যকে রং মাখিয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন। এসব ভুল বক্তব্যের কারণে অমুসলিমরা তাকে বর্ণবাদী মনে করছেন।’

তিনি আরো দাবি করেন, যারা এসব কথায় আঘাত পেয়েছেন তারা তার মূল বক্তব্য শোনেননি।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশটির সংখ্যালঘু চীনাদের নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন জাকির নায়েক। ওই বক্তব্যে তিনি মালয়েশিয়ায় বসবাসরত চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিকদের আগে দেশে ফেরার আহ্বান জানান।

ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের চেয়ে মালয়েশিয়ার সংখ্যালঘু হিন্দুরা শত গুণ বেশি সুবিধা ভোগ করছে।

তার এমন মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার দাবি তুলে মালয়েশিয়ার তিন মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার মুসলিমদের সঙ্গে অমুসলিমদের দূরত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন জাকির নায়েক। তিনি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছেন বলেও অভিযোগ করেন ওই মন্ত্রীরা।

এ নিয়ে জাকির নায়েকের তীব্র সমালোচনা করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি জানি না, কে তাকে মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের মর্যাদা দিয়েছেন। তবে রাজনীতি থেকে তার দূরে থাকা উচিত। তিনি ইসলামের ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা বললে আমরা তাকে বাধা দিব না। কিন্তু তাকে অবশ্যই মালয়েশিয়ার রাজনীতি নিয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। চীনা এবং ভারতীয়দের নিজ দেশে ফিরে যেতে বলাটা রাজনৈতিক। তিনি বর্ণবাদী মানসিকতা উসকে দিচ্ছেন।’

জাকির নায়েকের এই বক্তব্য নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে বলেও জানান মাহাথির মোহাম্মদ।

কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আমাদের আইনের শাসন আছে এবং আমরা এটার চর্চা করবো।’

এই সব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ১১৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাকির নায়েকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হতে পারে বলেও জানা গেছে।

জাকির নায়েক স্থায়ী নাগরিকত্ব নিয়ে গত তিন বছর ধরে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়া নিয়ে দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিন মন্ত্রী তাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে শান্তি বিনষ্টের অভিযোগও আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মুসলিম, বাকি ৪০ শতাংশ মানুষের অধিকাংশই চীনা ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।