শনিবার ভারতের আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি)-এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ওই তালিকা অনুসারে আসামে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৬৭ জন নাগরিককে ভারতীয় নয় বলে বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু, এই তালিকার তৈরির নেপথ্যের নায়ক সম্পর্কে অনেকের অজানা।
জানা গেছে, এই এনআরসি তালিকা তৈরির নেপথ্যে প্রতীক হাজেলার ভুমিকা উল্লেখযোগ্য। এনআরসি নিয়ে চিন্তাভাবনা তাঁর মাথা থেকে বের হয়েছিল। তিনি এনআরসির স্টেট কো-অর্ডিনেটর পদে রয়েছেন।প্রতীক এই দায়িত্বে আসার আগে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। পরে আইএসএ অফিসার হন। আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর (এআরসি) আপডেট করার ক্ষেত্রে ভারতে সবচেয়ে আলোচ্য ব্যক্তিদের অন্যতম হলেন প্রতীক হাজেলা। তিনিই এনআরসির প্রাথমিক পরিকাঠামোটি রচনা করেছিলেন।
প্রতীক আইআইটি দিল্লির সাবেক ছাত্র। ১৯৯২ সালের তিনি সেখান থেকে ইলেকট্রনিক্সে ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশুনার পাট চুকিয়ে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং শুরু করেন৷ পরবর্তীকালে তিনি পেশা বদল করতে চান এবং আইএএস অফিসার হন। প্রতীক ১৯৯৫ ব্যাচের আইএএস অফিসার। তাঁর জন্ম ভোপালে৷ বাবা এস পি হাজেলা মধ্যপ্রদেশ লোকসেবা আয়োগের পদস্থ অফিসার ছিলেন৷ তাঁর ছোটভাই অনুপ হাজেলা ভোপালের প্রখ্যাত চিকিৎসক। বর্তমানে হাজেলা আসম-মেঘালয় ক্যাডারের অফিসার৷
গুয়াহাটির জিএস রোডের এক বহুতল আবাসনে তাঁর কার্যালয় সামলান প্রতীক। তিনি আইআইটি দিল্লির এক প্রাক্তন ছাত্রকে সঙ্গে নিজের টিম তৈরি করেছেন৷ তারপরই তাঁরা এনআরসি আপডেটের প্রযুক্তিগত ধারণা তৈরি করেন। প্রতীক হাজেলা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের আমলে স্টেট কোঅর্ডিনেটর পদে নিযুক্ত হন। সেই সময় তিনি জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ম্যানিজিং ডিরেক্টরে পদে ছিলেন৷
আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছেন, হাজেলাকে আমাদের সুপারিশে নিয়োগ করা হয়েছিল এবং তাকেই এই কাজে যোগ্য বলে মনে করা হয়েছিল।
গুয়াহাটিসহ প্রায় দশ বছর জেলা প্রশাসকের পদে কাজ করা হাজেলা সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের কাছে নিয়মিত আপডেট চাইতে শুরু করেন। সর্বশেষ খসড়া ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীদের তথ্য যাচাইয়ের দিকেই জোর দেওয়া হয়েছিল।
প্রতীক হাজেলাও এনআরসি’র জন্য আবেদন করেছিলেন৷ ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম তালিকা প্রকাশ হয়। সেই তালিকায় হাজেলা ও তাঁর মেয়ের নাম ছিল না। পরবর্তীতে রাজ্যের লাখো মানুষের সঙ্গে তিনি ও তাঁর মেয়ে ২০১৮ সালের গুয়াহাটির শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন। সেই শুনানির পর প্রতীক ও তাঁর মেয়ের নাম চূ়ড়ান্ত খসড়া তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়।
প্রসঙ্গত, আসাম প্রথম রাজ্য যেখানে ভারতীয় নাগরিকের নাম যুক্ত করার জন্য ১৯৫১ সালের পর এনআরসি আপডেট করা হলো। প্রথম তালিকা ১৯৫১ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল।