ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্রুত কমছে পাখি, ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ

জার্মানিসহ ইউরোপজুড়ে উদ্বেগজনক হারে পাখি কমছে৷ জার্মান সরকারের এক প্রতিবেদনে এর অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে দু’টি বিষয় – পাখির আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়া এবং পোকামাকড় কমে যাওয়া৷ গত ৩০ বছরে জার্মানিসহ ইউরোপজুড়েই পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ জার্মান সরকার বলছে, গত শতকের ৯০ দশকের শেষের দিকে জার্মানিতে সব পাখি প্রজাতির এক তৃতীয়াংশের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ বিশেষ করে কৃষি অঞ্চলের পাখিরা হুমকির মুখে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে কৃষিভূমিতে থাকা ৩০ কোটি প্রজনন উপযোগী পাখি ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে উধাও হয়েছে৷

 

নির্দেশক প্রজাতি

 

১৯৯০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ল্যাপউইংস বা টিট্টির জাতীয় পাখির সংখ্যা কমেছে ৮০ শতাংশ৷ আর ১৯৯০ থেকে ২০১৫, অর্থাৎ ২৫ বছরে পার্ট্রিজ বা তিতির কমেছে ৮৪ শতাংশ৷

 

একই সময়ে উইনচ্যাট নামে ফ্যাকাশে গলার ছোট একটি পরিযায়ী পাখি ৬১ ভাগ এবং ইউরেশিয়ান স্কাইলার্ক বা ভরতপাখি কমেছে ৩৫ শতাংশ৷

 

জার্মান কনসারভেশন অর্গানাইজেশন এনএবিইউ-র পাখি সংরক্ষণ কর্মকর্তা লার্স লাচম্যান ডয়েচে ভেলেকে বলেন, স্কাইলার্কই এক সময় সর্বত্র দেখা যেত৷ কিন্তু এখন জার্মানির বহু এলাকায় দিনের যে কোনো সময়ে এই পাখির গান শোনা বেশ বিরলই হয়ে গেছে৷ পাখি আমাদেরকে বাস্তু চক্রের অন্য প্রাণীদের সম্পর্কে জানাতে পারে৷ একইসঙ্গে বাস্তু চক্রের সাধারণ স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তথ্য দিতে পারে পাখি, কারণ অন্য পতঙ্গের তুলনায় পাখি গণনা করা সহজ৷

 

 আবাসস্থল ও পোকার বিলুপ্তি

 

এনএবিইউ-র তথ্য মতে, কৃষি ঘনীভূতকরণই পাখি কমে যাওয়ার মূল কারণ৷ বড় ও কার্যকরী মেশিনের মাধ্যমে বিশাল মাঠ এবং এক ফসলি চাষ সম্ভব হয়েছে, পাশাপাশি কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার কীট ও পোকার মতো পাখি-খাদ্য এবং পাখির বাসা ও প্রজনন স্থান কমিয়েছে৷ কীটনাশক ও আগাছা নষ্টকারী উপকরণ ব্যবহারের ফলে কিছু কিছু প্রজাতির পোকার সংখ্যা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে জার্মান সরকার জানিয়েছে৷

 

কৃষির এক ফসলী চাষ ও কীটনাশকের ব্যবহার বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় গ্রিন পার্টি জার্মান সরকারকে অভিযুক্ত করেছে৷ লাচম্যান বলেন, পাখিরা যাতে উপকৃত হয়, এমন পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে কৃষি নীতির পরিবর্তন আনার বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর নির্ভর করে৷

 

কৃষি ভূমির ১০ শতাংশ বাস্তুগত অগ্রাধিকারে রাখলে ইতিবাচক ফল আসতে পারে৷ তার মানে এটা নয় যে, সেখানে আপনি কিছু উৎপাদন করতে পারবেন না৷ বরং পরিবেশ উপযোগী পদ্ধতিতে তা করা যাবে৷ যেমন, ফল উৎপাদন করা যেতে পারে, যা পাখির জন্য ভালো৷ সমীক্ষা বলছে, এভাবে কৃষিক্ষেত্রে পাখি হ্রাসের ধারাকে পাল্টে দেয়া যেতে পারে৷

 

কৃষির শিল্প মডেলকে অরগ্যানিক কৃষির মাধ্যমে স্থলাভিষিক্ত করা-আরেকটা উপায় হতে পারে৷

 

বিলুপ্তপ্রায় পাখি প্রজাতির হ্রাসকে উল্টে দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কনজার্ভেশন আইন সহায়তা করতে পারে৷ এনএবিইউ, বার্ডলাইফ ইউরোপসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২ লাখ ৬০ হাজার নাগরিক ২০২০ সালে নবায়ন হতে যাওয়া ইইউ-র সাধারণ কৃষি নীতির নতুন কাঠামোয় বাস্তুগত বৈচিত্র্যের সংযুক্তি চেয়েছে৷

 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাখির অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এটাই প্রথম নয়৷ যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাফিন, কারলিউ, নাইটিঙ্গেল ব্যাপকহারে কমেছে৷ ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬৪ শতাংশ কারলিউ হ্রাস পেয়েছে৷ আর এ সবই হয়েছে আবাসস্থল হারিয়ে ফেলার ফলে৷

 

২০১৫ সালে দু’টি প্রতিবেদনে দেখা যায়, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাখি প্রজাতির প্রায় এক তৃতীয়াংশ হয়ত হুমকির মুখে বা বিলুপ্তির মুখে৷ ২০১৪ সালের অন্য এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চড়াইপাখি এবং স্টারলিং বা শালিকের মতো প্রজাতির পাখি ইউরোপজুড়েই উদ্বেগজনক হারে কমছে৷
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

দ্রুত কমছে পাখি, ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ

আপডেট টাইম : ০৫:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭
জার্মানিসহ ইউরোপজুড়ে উদ্বেগজনক হারে পাখি কমছে৷ জার্মান সরকারের এক প্রতিবেদনে এর অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে দু’টি বিষয় – পাখির আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়া এবং পোকামাকড় কমে যাওয়া৷ গত ৩০ বছরে জার্মানিসহ ইউরোপজুড়েই পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ জার্মান সরকার বলছে, গত শতকের ৯০ দশকের শেষের দিকে জার্মানিতে সব পাখি প্রজাতির এক তৃতীয়াংশের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ বিশেষ করে কৃষি অঞ্চলের পাখিরা হুমকির মুখে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে কৃষিভূমিতে থাকা ৩০ কোটি প্রজনন উপযোগী পাখি ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে উধাও হয়েছে৷

 

নির্দেশক প্রজাতি

 

১৯৯০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ল্যাপউইংস বা টিট্টির জাতীয় পাখির সংখ্যা কমেছে ৮০ শতাংশ৷ আর ১৯৯০ থেকে ২০১৫, অর্থাৎ ২৫ বছরে পার্ট্রিজ বা তিতির কমেছে ৮৪ শতাংশ৷

 

একই সময়ে উইনচ্যাট নামে ফ্যাকাশে গলার ছোট একটি পরিযায়ী পাখি ৬১ ভাগ এবং ইউরেশিয়ান স্কাইলার্ক বা ভরতপাখি কমেছে ৩৫ শতাংশ৷

 

জার্মান কনসারভেশন অর্গানাইজেশন এনএবিইউ-র পাখি সংরক্ষণ কর্মকর্তা লার্স লাচম্যান ডয়েচে ভেলেকে বলেন, স্কাইলার্কই এক সময় সর্বত্র দেখা যেত৷ কিন্তু এখন জার্মানির বহু এলাকায় দিনের যে কোনো সময়ে এই পাখির গান শোনা বেশ বিরলই হয়ে গেছে৷ পাখি আমাদেরকে বাস্তু চক্রের অন্য প্রাণীদের সম্পর্কে জানাতে পারে৷ একইসঙ্গে বাস্তু চক্রের সাধারণ স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তথ্য দিতে পারে পাখি, কারণ অন্য পতঙ্গের তুলনায় পাখি গণনা করা সহজ৷

 

 আবাসস্থল ও পোকার বিলুপ্তি

 

এনএবিইউ-র তথ্য মতে, কৃষি ঘনীভূতকরণই পাখি কমে যাওয়ার মূল কারণ৷ বড় ও কার্যকরী মেশিনের মাধ্যমে বিশাল মাঠ এবং এক ফসলি চাষ সম্ভব হয়েছে, পাশাপাশি কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার কীট ও পোকার মতো পাখি-খাদ্য এবং পাখির বাসা ও প্রজনন স্থান কমিয়েছে৷ কীটনাশক ও আগাছা নষ্টকারী উপকরণ ব্যবহারের ফলে কিছু কিছু প্রজাতির পোকার সংখ্যা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে জার্মান সরকার জানিয়েছে৷

 

কৃষির এক ফসলী চাষ ও কীটনাশকের ব্যবহার বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় গ্রিন পার্টি জার্মান সরকারকে অভিযুক্ত করেছে৷ লাচম্যান বলেন, পাখিরা যাতে উপকৃত হয়, এমন পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে কৃষি নীতির পরিবর্তন আনার বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর নির্ভর করে৷

 

কৃষি ভূমির ১০ শতাংশ বাস্তুগত অগ্রাধিকারে রাখলে ইতিবাচক ফল আসতে পারে৷ তার মানে এটা নয় যে, সেখানে আপনি কিছু উৎপাদন করতে পারবেন না৷ বরং পরিবেশ উপযোগী পদ্ধতিতে তা করা যাবে৷ যেমন, ফল উৎপাদন করা যেতে পারে, যা পাখির জন্য ভালো৷ সমীক্ষা বলছে, এভাবে কৃষিক্ষেত্রে পাখি হ্রাসের ধারাকে পাল্টে দেয়া যেতে পারে৷

 

কৃষির শিল্প মডেলকে অরগ্যানিক কৃষির মাধ্যমে স্থলাভিষিক্ত করা-আরেকটা উপায় হতে পারে৷

 

বিলুপ্তপ্রায় পাখি প্রজাতির হ্রাসকে উল্টে দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কনজার্ভেশন আইন সহায়তা করতে পারে৷ এনএবিইউ, বার্ডলাইফ ইউরোপসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২ লাখ ৬০ হাজার নাগরিক ২০২০ সালে নবায়ন হতে যাওয়া ইইউ-র সাধারণ কৃষি নীতির নতুন কাঠামোয় বাস্তুগত বৈচিত্র্যের সংযুক্তি চেয়েছে৷

 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাখির অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এটাই প্রথম নয়৷ যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাফিন, কারলিউ, নাইটিঙ্গেল ব্যাপকহারে কমেছে৷ ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬৪ শতাংশ কারলিউ হ্রাস পেয়েছে৷ আর এ সবই হয়েছে আবাসস্থল হারিয়ে ফেলার ফলে৷

 

২০১৫ সালে দু’টি প্রতিবেদনে দেখা যায়, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাখি প্রজাতির প্রায় এক তৃতীয়াংশ হয়ত হুমকির মুখে বা বিলুপ্তির মুখে৷ ২০১৪ সালের অন্য এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চড়াইপাখি এবং স্টারলিং বা শালিকের মতো প্রজাতির পাখি ইউরোপজুড়েই উদ্বেগজনক হারে কমছে৷