ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ননদের সঙ্গে বিয়ের পর স্বামীর সংসার করে যে গ্রামের নারীরা

 বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই। ঠিক এমনটিই ঘটেছে, ভারতের গুজরাটের ছোট উদয়পুর জেলার তিনটি গ্রামে। তবে পাড়া-পড়শির জায়গায় সেখানে ঘুম ছুটে যায় পাত্রের বোনের। হবু ননদের সঙ্গেই ছাদনাতলায় গাঁটছড়া বেঁধে ফেলেন নববধূ।

জানা যায়, উদয়পুর জেলার তিনটি গ্রামে বিয়ের আসরে বর নিজে হাজির থাকে না। বরের পরিবর্তে অবিবাহিত বরের বোন সমস্ত বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। যদি পাত্রের বোন না থাকে, সেক্ষেত্রে পাত্রের পরিবারের যেকোনো অবিবাহিত নারীর কাঁধে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়।

যুগ যুগ ধরে এই রীতি পালন করে আসছেন উদয়পুর জেলার এই তিনটি গ্রামের আদিবাসীরা। তাদের ধারণা, এই রীতি না মানলে সংসার জীবনে নানা অশান্তি এবং বিপদের মুখে পড়তে হয়। সুরকেধা, সানন্দা, অম্বলের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে বিয়ে মানেই এমন বরহীন অনুষ্ঠান। বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বরের কোনো ভূমিকা থাকে না। গ্রামবাসীরা বিয়ের দিন অবিবাহিত ছেলেদের বাড়িতেই রেখে যায়। মানে যার বিয়ে সে বাড়ি পাহারায় থাকে। আর তার সব আত্মীয়-স্বজন হাজির হয় মেয়ের বাড়িতে।

তবে ছাদনাতলায় যাবে না বলে পাত্র বর বেশে সাজবেন না তা কিন্তু নয়। বিয়ের দিন বলে কথা। তাই রঙচঙে শেরওয়ানি পড়ে তৈরি হন বর। মাথায় বাঁধেন পাগড়ি, কোমরে থাকে তলোয়ার। তবে এত সাজগোজ করলেও বিয়ের আসরে যাওয়া হয় না পাত্রের। মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই থাকেন পাত্র। আর বরযাত্রী নিয়ে মেয়ের বাড়ি হাজির হন পাত্রের অবিবাহিত বোন। বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানে একজন বর যা যা নিয়ম পালন করেন, তার সবটাই পালন করেন বরের অবিবাহিত বোন। সিঁদুর দান থেকে শুরু করে সাত পাক ঘোরা-সহ যাবতীয় বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান মেনে বিয়ের কাজ শেষ করেন ।

দাম্পত্য জীবন সুখের করতে এবং সংসারে যাতে অশান্তি বা বিপদ না আসে এজন্যই এমন বিয়ে! কয়েকজন এই রীতি ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, তাদের সংসারে প্রতিদিন ঝগড়া হওয়ায় বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। সে কারণে আর ঝুঁকি নেন না অন্যরা। গ্রাম প্রধানরাও সেই রীতির পক্ষে।

পুরোহিতদের বক্তব্য, ব্যতিক্রমী এই প্রথা আদিবাসীদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। প্রাচীনকাল থেকেই এই রীতি চলে আসছে। তবে একটি গল্পগাঁথা প্রচলিত আছে এই এলাকায়। এলাকার আদিবাসীদের বিশ্বাস, তাদের আরাধ্য দেবতা চিরকুমার ছিলেন। তাই পাত্রকে বিয়ের আসরে হাজির না করে এবং বাড়িতে রেখে দিয়ে এলে বিয়ে সুখের হয়। সেই আরাধ্য দেবতাকেই তারা সম্মান জানান।

তাই এসব সমস্যা এড়াতেই দীর্ঘদিন ধরে এই তিন গ্রামের ছেলেদের অবিবাহিত বোনেরাই তাদের ভাইয়ের জন্য বিয়ে করে বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে আসেন। এরপর বরের সঙ্গে দেখা হয় বউয়ের, অতঃপর একসঙ্গে তারা কিছু নিয়ম-কানুন ঘরোয়াভাবে পালন করে। তাদের বিশ্বাস, এই নিয়মগুলো মানলে তাদের জীবনে আর কোনো বিপদ হবে না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ননদের সঙ্গে বিয়ের পর স্বামীর সংসার করে যে গ্রামের নারীরা

আপডেট টাইম : ০১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অগাস্ট ২০২০

 বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই। ঠিক এমনটিই ঘটেছে, ভারতের গুজরাটের ছোট উদয়পুর জেলার তিনটি গ্রামে। তবে পাড়া-পড়শির জায়গায় সেখানে ঘুম ছুটে যায় পাত্রের বোনের। হবু ননদের সঙ্গেই ছাদনাতলায় গাঁটছড়া বেঁধে ফেলেন নববধূ।

জানা যায়, উদয়পুর জেলার তিনটি গ্রামে বিয়ের আসরে বর নিজে হাজির থাকে না। বরের পরিবর্তে অবিবাহিত বরের বোন সমস্ত বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। যদি পাত্রের বোন না থাকে, সেক্ষেত্রে পাত্রের পরিবারের যেকোনো অবিবাহিত নারীর কাঁধে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়।

যুগ যুগ ধরে এই রীতি পালন করে আসছেন উদয়পুর জেলার এই তিনটি গ্রামের আদিবাসীরা। তাদের ধারণা, এই রীতি না মানলে সংসার জীবনে নানা অশান্তি এবং বিপদের মুখে পড়তে হয়। সুরকেধা, সানন্দা, অম্বলের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে বিয়ে মানেই এমন বরহীন অনুষ্ঠান। বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বরের কোনো ভূমিকা থাকে না। গ্রামবাসীরা বিয়ের দিন অবিবাহিত ছেলেদের বাড়িতেই রেখে যায়। মানে যার বিয়ে সে বাড়ি পাহারায় থাকে। আর তার সব আত্মীয়-স্বজন হাজির হয় মেয়ের বাড়িতে।

তবে ছাদনাতলায় যাবে না বলে পাত্র বর বেশে সাজবেন না তা কিন্তু নয়। বিয়ের দিন বলে কথা। তাই রঙচঙে শেরওয়ানি পড়ে তৈরি হন বর। মাথায় বাঁধেন পাগড়ি, কোমরে থাকে তলোয়ার। তবে এত সাজগোজ করলেও বিয়ের আসরে যাওয়া হয় না পাত্রের। মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই থাকেন পাত্র। আর বরযাত্রী নিয়ে মেয়ের বাড়ি হাজির হন পাত্রের অবিবাহিত বোন। বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানে একজন বর যা যা নিয়ম পালন করেন, তার সবটাই পালন করেন বরের অবিবাহিত বোন। সিঁদুর দান থেকে শুরু করে সাত পাক ঘোরা-সহ যাবতীয় বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান মেনে বিয়ের কাজ শেষ করেন ।

দাম্পত্য জীবন সুখের করতে এবং সংসারে যাতে অশান্তি বা বিপদ না আসে এজন্যই এমন বিয়ে! কয়েকজন এই রীতি ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, তাদের সংসারে প্রতিদিন ঝগড়া হওয়ায় বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। সে কারণে আর ঝুঁকি নেন না অন্যরা। গ্রাম প্রধানরাও সেই রীতির পক্ষে।

পুরোহিতদের বক্তব্য, ব্যতিক্রমী এই প্রথা আদিবাসীদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। প্রাচীনকাল থেকেই এই রীতি চলে আসছে। তবে একটি গল্পগাঁথা প্রচলিত আছে এই এলাকায়। এলাকার আদিবাসীদের বিশ্বাস, তাদের আরাধ্য দেবতা চিরকুমার ছিলেন। তাই পাত্রকে বিয়ের আসরে হাজির না করে এবং বাড়িতে রেখে দিয়ে এলে বিয়ে সুখের হয়। সেই আরাধ্য দেবতাকেই তারা সম্মান জানান।

তাই এসব সমস্যা এড়াতেই দীর্ঘদিন ধরে এই তিন গ্রামের ছেলেদের অবিবাহিত বোনেরাই তাদের ভাইয়ের জন্য বিয়ে করে বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে আসেন। এরপর বরের সঙ্গে দেখা হয় বউয়ের, অতঃপর একসঙ্গে তারা কিছু নিয়ম-কানুন ঘরোয়াভাবে পালন করে। তাদের বিশ্বাস, এই নিয়মগুলো মানলে তাদের জীবনে আর কোনো বিপদ হবে না।