ঢাকা , রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালি পেটে লিচু খেলে শিশুর মৃত্যু হতে পারে

২০১৫ সালের ২৯ মে থেকে ১৮ জুনের মধ্যে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১১ শিশু। ওদের বয়স ছিল দেড় থেকে ছয় বছর। এই ঘটনার আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী ফল খেয়ে আরো অনেক শিশু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভারতেও ১৯৯৫ সাল থেকে এভাবে শিশুর মৃত্যুর খবর আসছে। তবে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা পেটে শিশুরা লিচু খেলে কোনো সমস্যা নেই। খালি পেটে লিচু খেলে শিশুর মৃত্যু হতে পারে। কারণ হাইপোগ্লাইসিন নামক রাসায়নিক।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষকরা এতদিন কারণ হিসেবে লিচু বাগানে ছিটানো কীটনাশক ও রাসায়নিকের কথা বলে আসছিলেন। তবে সমপ্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে খালি পেটে লিচু খেলেই শিশুদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।

ভারতের বিহারে দুই বছর আগে মৌসুমী ফল লিচু খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৩৯০টি শিশু। তার মধ্যে ১২২ জনই মারা গিয়েছিল। গবেষকরা এখন বলছেন, খালি পেটে লিচু খাওয়ার ফলেই তাদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।

লিচু মৌসুমী ফল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হলেও, ভারত ও বাংলাদেশের কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ এটি। আন্তর্জাতিক চিকিত্সা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ল্যানচেট’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে। খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেয়ে ফেললে শরীরে যে বিষ তৈরি হয়, তার ফলেই সুস্থ-সবল শিশুদের হঠাত্ খিঁচুনি আর বমি শুরু হয়। তারপরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে তারা। আর এভাবে আক্রান্ত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়।

বিহারে ‘লিচু রোগ’ বা বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ‘অজানা কীটনাশকের প্রয়োগ’—কেই এসব শিশুমৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হতো এতদিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে মৃত্যুর কারণটা লুকিয়ে থেকেছে ‘লিচু’ ফলের মধ্যেই। লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিহারের ঘটনায় বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটি শিশুর চিকিত্সা সংক্রান্ত তথ্য খুঁটিয়ে দেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, ওই বাচ্চাগুলো আগের রাতে খাবার খায়নি অথবা কম খেয়েছিল। পরের দিন রাস্তায় পড়ে থাকা, নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা অপরিপক্ব লিচু একসঙ্গে অনেকগুলো খেয়ে ফেলেছিল তারা। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চাগুলো।

মে থেকে জুলাই মাসেই লিচুর ফলন হয়ে থাকে। আর ওই সময়েই শিশুরা ওই উপসর্গ নিয়ে মারাও যায় সব থেকে বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরিপক্ব লিচু বা লিচু জাতীয় ফল খেয়েই যে বিষক্রিয়ায় বহু শিশু মারা যায়, সেটা অনেক দিন আগেই ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গবেষণায় জানা গিয়েছিল। এরপর ‘জামাইকান ভমিটিং সিকনেস’ নামের ওই রোগটির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ভারত ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়েছে, বলছে ‘ল্যানচেট’।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

খালি পেটে লিচু খেলে শিশুর মৃত্যু হতে পারে

আপডেট টাইম : ০৫:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০১৭

২০১৫ সালের ২৯ মে থেকে ১৮ জুনের মধ্যে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১১ শিশু। ওদের বয়স ছিল দেড় থেকে ছয় বছর। এই ঘটনার আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী ফল খেয়ে আরো অনেক শিশু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভারতেও ১৯৯৫ সাল থেকে এভাবে শিশুর মৃত্যুর খবর আসছে। তবে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা পেটে শিশুরা লিচু খেলে কোনো সমস্যা নেই। খালি পেটে লিচু খেলে শিশুর মৃত্যু হতে পারে। কারণ হাইপোগ্লাইসিন নামক রাসায়নিক।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষকরা এতদিন কারণ হিসেবে লিচু বাগানে ছিটানো কীটনাশক ও রাসায়নিকের কথা বলে আসছিলেন। তবে সমপ্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে খালি পেটে লিচু খেলেই শিশুদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।

ভারতের বিহারে দুই বছর আগে মৌসুমী ফল লিচু খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৩৯০টি শিশু। তার মধ্যে ১২২ জনই মারা গিয়েছিল। গবেষকরা এখন বলছেন, খালি পেটে লিচু খাওয়ার ফলেই তাদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।

লিচু মৌসুমী ফল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হলেও, ভারত ও বাংলাদেশের কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ এটি। আন্তর্জাতিক চিকিত্সা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ল্যানচেট’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে। খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেয়ে ফেললে শরীরে যে বিষ তৈরি হয়, তার ফলেই সুস্থ-সবল শিশুদের হঠাত্ খিঁচুনি আর বমি শুরু হয়। তারপরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে তারা। আর এভাবে আক্রান্ত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়।

বিহারে ‘লিচু রোগ’ বা বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ‘অজানা কীটনাশকের প্রয়োগ’—কেই এসব শিশুমৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হতো এতদিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে মৃত্যুর কারণটা লুকিয়ে থেকেছে ‘লিচু’ ফলের মধ্যেই। লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিহারের ঘটনায় বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটি শিশুর চিকিত্সা সংক্রান্ত তথ্য খুঁটিয়ে দেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, ওই বাচ্চাগুলো আগের রাতে খাবার খায়নি অথবা কম খেয়েছিল। পরের দিন রাস্তায় পড়ে থাকা, নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা অপরিপক্ব লিচু একসঙ্গে অনেকগুলো খেয়ে ফেলেছিল তারা। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চাগুলো।

মে থেকে জুলাই মাসেই লিচুর ফলন হয়ে থাকে। আর ওই সময়েই শিশুরা ওই উপসর্গ নিয়ে মারাও যায় সব থেকে বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরিপক্ব লিচু বা লিচু জাতীয় ফল খেয়েই যে বিষক্রিয়ায় বহু শিশু মারা যায়, সেটা অনেক দিন আগেই ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গবেষণায় জানা গিয়েছিল। এরপর ‘জামাইকান ভমিটিং সিকনেস’ নামের ওই রোগটির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ভারত ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়েছে, বলছে ‘ল্যানচেট’।