ঢাকা , রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচিত্র সব পাখির বাসা

পাখিদের মধ্য সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বাসা বানায় সালাংগান সুইফট পাখি। ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর গিরিগুহায় এই পাখিরা নিজের মুখের আঠালো লালা দিয়ে গোলাকার বাটির মতো পাঁচ থেকে ছয় সেন্টিমিটার বাসা বানায়। এরা সাধারণত পাহাড়ের গুহা ও খাড়া দেয়ালকে বাসা বানানোর স্থান হিসেবে বেছে নেয়। এরপর বাসার অদৃশ্য নকশা এঁকে নেয়।
বাবুই পাখির দুই পাতার ওপর এসব বাসা শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, বেশ মজবুতও বটে। প্রচণ্ড ঝড়-বাতাসেও এসব বাসা ছিঁড়ে পড়ে না। টুনটুনিকে বলা হয় দর্জি পাখি। এরা সাধারণত ছোট এবং বড় পাতাওয়ালা গাছে বাসা বানায়। এরা দুটি পাতা উল্টিয়ে এনে গাছের আঁশ দিয়ে অপূর্ব কৌশলে জুড়ে দেয়। দুই পাতার ভেতরে থাকে তুলা, আঁশ, নয়তো অন্য পাখির নরম পালক বিছানো, যাতে পাখিরা ডিম পাড়ে। দুই পাতার ওপর অংশে থাকে সামান্য ফাঁক, যা দিয়ে ওরা যাতায়াত করে। টুনটুনির বাসাগুলো ছোট সাইজের গাছের ঘন পাতার আড়ালে এমনভাবে লুকিয়ে ওরা তৈরি করে যেন, অতি সহজে তাদের খুঁজে পাওয়া না যায়। মৌটুসি, হামিং বার্ড এরা তুলা গাছের ডালের আঁশ মিলিয়ে ছোট আঁটসাঁট বাটির আকৃতির বাসা বানায়। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বাসা বানায় সালাংগান সুইফট পাখি। ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর গিরিগুহায় এই পাখিরা নিজের মুখের আঠালো লালা দিয়ে গোলাকার বাটির মতো পাঁচ থেকে ছয় সেন্টিমিটার বাসা বানায়। এরা সাধারণত পাহাড়ের গুহা ও খাড়া দেয়ালকে বাসা বানানোর স্থান হিসেবে বেছে নেয়। এরপর বাসার অদৃশ্য নকশা এঁকে নেয়। তারপর দুই পায়ের নখ দিয়ে পাথুরে দেয়াল আঁকড়ে মুখের আঠালো লালা দেয়ালে আটকিয়ে নেয়। মুহূর্তেই সে লালা বাতাসের সংস্পর্শে মাকড়সার জালের মতো শুকিয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন লালা ঢেলে গোলাকার বাদামি রঙের বাসা তৈরি করে এসব পাখি। সালাংগান সুইফট প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ দিনে একটি বাসা তৈরি করে।
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বাসা বানায় অস্ট্রেলিয়ার বোয়ার বার্জ বা কুঞ্জ পাখি। সুন্দর ইউ আকৃতির কুঞ্জদৃশ বাসা বানায় বলে এই পাখি বেশি সুখ্যাতি অর্জন করেছে। নীল রঙের পুরুষ পাখি লম্বা লম্বা চিকন গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে ঊর্ধ্বমুখী ইংরেজি ‘ইউ’ আকৃতির কুঞ্জ বানায়। এই দুই পাশের ডালের সংযোগস্থলে খড়কুটা, নীল কাচ, নীল ফুলসহ বিভিন্ন নীল রঙের জিনিস কুড়িয়ে এনে এরা বাসা সাজায়। বাসা সাজানোর ক্ষেত্রে এদের নীল রংপ্রীতি এতই বেশি যে, পাখি পর্যবেক্ষকরা বোয়ার বার্ডের বাসায় নীল রঙের চশমা, চাবির রিংও খুঁজে পেয়েছেন।
মাটির গর্তে বাসা বানায় মাছরাঙ্গা, বি-ইটার, গাংশালিক, কাদাখোঁচা, স্লাইপ, সুইচোরাসহ জলচর অনেক পাখি। এরা সাধারণত লম্বা খারালে নদীর খাড়া পাড়ের মাটিতে ১৪ থেকে ১৮ ইঞ্চি গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। এদের বাসায় ঢোকার মুখটা সঙ্কুচিত হলেও ভেতরের ডিম ও বাচ্চা লালন-পালনের স্থানটি যথেষ্ট প্রশস্ত। মরুভূমির এক জাতের পেঁচা আছে। এরা সমতল বালুতেই গভীর গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। এছাড়া শুধু বালু, পাথুরে ভূমি এবং ঝোপঝাড়ের আড়ালে মাটিতে বাসা বানায় নীল হাঁস, প্লোভার বার্ড, ববি ট্রিপ, হাজেল গ্রাউজ, বুনো মুরগি, বুনো হাঁস, করালি হাঁস, রাজ হাঁস, অ্যালবাট্রস, গাংচিল, যাওয়ার ও হাঁস প্রজাতির পাখি। এদের বাসায় পাখির বুকের নরম পালক, শুকনো জলজ উদ্ভিদ সুন্দর করে বিছিয়ে তাতে ডিম পাড়ে। খোলামেলা মাটিতে বাসা হলেও ঝোপঝাড়, বালুর ঢিবি ও পাথরের চাঁইয়ের আড়ালে লুকানো বাসাগুলো সহজে কারো নজরে পড়ে না।
পানির ওপর কলমি, শাপলা, পদ্মফুল বা জলজ কোনো উদ্ভিদের ঝোপে খড়কুটা দিয়ে বাসা বানায় ডাহুক, কালিম ও অন্য কিছু জলচর পাখি। অনেক সময় পানির চলমান স্রোতে কলমি বা কচুরিপানার সঙ্গে এসব পাখির বাসাও ভেসে যেতে থাকে। সে ক্ষেত্রে ডিম বা বাচ্চাওয়ালা ভাসমান বাসার সঙ্গে বাসার মালিকও ভেসে যেতে থাকে অজানার উদ্দেশে।
ছোট জাতের আডেলি পেঙ্গইন সমুদ্রতটের পাথুরের গিরিখাতে নয়তো পাথরের স্তূপের আড়ালে জলজ উদ্ভিদ, সমুদ্র শ্যাওলা বিছিয়ে বাসা বানায় অগোছালোভাবে। তবে বড় এমপারার বা অন্য জাতের পেঙ্গুইনরা বাসা বানায় না। এসব পাখি একটি বা দুটি ডিম পাড়ে। ডিম দুটি দু’পায়ের পাতায় রেখে ওদের তলপেটের ঘন লোমে ঢেকে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। মেয়ে-পুরুষ দুটি
পাখি মিলেই তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর দায়িত্ব সারে। আবার দক্ষিণ আমেরিকার কোকিল প্রজাতির পাখিরা পাঁচ থেকে ১০টির ক্ষুদ্র একটি দল করে একটি বড় বাসা বানায় খড়কুটা দিয়ে এবং সবাই পালাক্রমে বসে ডিমে তা দেয়। সেজন্য এসব পাখির বাসায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ বা তারও বেশি ডিম পাওয়া যায়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বিচিত্র সব পাখির বাসা

আপডেট টাইম : ০৪:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭

পাখিদের মধ্য সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বাসা বানায় সালাংগান সুইফট পাখি। ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর গিরিগুহায় এই পাখিরা নিজের মুখের আঠালো লালা দিয়ে গোলাকার বাটির মতো পাঁচ থেকে ছয় সেন্টিমিটার বাসা বানায়। এরা সাধারণত পাহাড়ের গুহা ও খাড়া দেয়ালকে বাসা বানানোর স্থান হিসেবে বেছে নেয়। এরপর বাসার অদৃশ্য নকশা এঁকে নেয়।
বাবুই পাখির দুই পাতার ওপর এসব বাসা শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, বেশ মজবুতও বটে। প্রচণ্ড ঝড়-বাতাসেও এসব বাসা ছিঁড়ে পড়ে না। টুনটুনিকে বলা হয় দর্জি পাখি। এরা সাধারণত ছোট এবং বড় পাতাওয়ালা গাছে বাসা বানায়। এরা দুটি পাতা উল্টিয়ে এনে গাছের আঁশ দিয়ে অপূর্ব কৌশলে জুড়ে দেয়। দুই পাতার ভেতরে থাকে তুলা, আঁশ, নয়তো অন্য পাখির নরম পালক বিছানো, যাতে পাখিরা ডিম পাড়ে। দুই পাতার ওপর অংশে থাকে সামান্য ফাঁক, যা দিয়ে ওরা যাতায়াত করে। টুনটুনির বাসাগুলো ছোট সাইজের গাছের ঘন পাতার আড়ালে এমনভাবে লুকিয়ে ওরা তৈরি করে যেন, অতি সহজে তাদের খুঁজে পাওয়া না যায়। মৌটুসি, হামিং বার্ড এরা তুলা গাছের ডালের আঁশ মিলিয়ে ছোট আঁটসাঁট বাটির আকৃতির বাসা বানায়। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বাসা বানায় সালাংগান সুইফট পাখি। ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর গিরিগুহায় এই পাখিরা নিজের মুখের আঠালো লালা দিয়ে গোলাকার বাটির মতো পাঁচ থেকে ছয় সেন্টিমিটার বাসা বানায়। এরা সাধারণত পাহাড়ের গুহা ও খাড়া দেয়ালকে বাসা বানানোর স্থান হিসেবে বেছে নেয়। এরপর বাসার অদৃশ্য নকশা এঁকে নেয়। তারপর দুই পায়ের নখ দিয়ে পাথুরে দেয়াল আঁকড়ে মুখের আঠালো লালা দেয়ালে আটকিয়ে নেয়। মুহূর্তেই সে লালা বাতাসের সংস্পর্শে মাকড়সার জালের মতো শুকিয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন লালা ঢেলে গোলাকার বাদামি রঙের বাসা তৈরি করে এসব পাখি। সালাংগান সুইফট প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ দিনে একটি বাসা তৈরি করে।
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বাসা বানায় অস্ট্রেলিয়ার বোয়ার বার্জ বা কুঞ্জ পাখি। সুন্দর ইউ আকৃতির কুঞ্জদৃশ বাসা বানায় বলে এই পাখি বেশি সুখ্যাতি অর্জন করেছে। নীল রঙের পুরুষ পাখি লম্বা লম্বা চিকন গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে ঊর্ধ্বমুখী ইংরেজি ‘ইউ’ আকৃতির কুঞ্জ বানায়। এই দুই পাশের ডালের সংযোগস্থলে খড়কুটা, নীল কাচ, নীল ফুলসহ বিভিন্ন নীল রঙের জিনিস কুড়িয়ে এনে এরা বাসা সাজায়। বাসা সাজানোর ক্ষেত্রে এদের নীল রংপ্রীতি এতই বেশি যে, পাখি পর্যবেক্ষকরা বোয়ার বার্ডের বাসায় নীল রঙের চশমা, চাবির রিংও খুঁজে পেয়েছেন।
মাটির গর্তে বাসা বানায় মাছরাঙ্গা, বি-ইটার, গাংশালিক, কাদাখোঁচা, স্লাইপ, সুইচোরাসহ জলচর অনেক পাখি। এরা সাধারণত লম্বা খারালে নদীর খাড়া পাড়ের মাটিতে ১৪ থেকে ১৮ ইঞ্চি গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। এদের বাসায় ঢোকার মুখটা সঙ্কুচিত হলেও ভেতরের ডিম ও বাচ্চা লালন-পালনের স্থানটি যথেষ্ট প্রশস্ত। মরুভূমির এক জাতের পেঁচা আছে। এরা সমতল বালুতেই গভীর গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। এছাড়া শুধু বালু, পাথুরে ভূমি এবং ঝোপঝাড়ের আড়ালে মাটিতে বাসা বানায় নীল হাঁস, প্লোভার বার্ড, ববি ট্রিপ, হাজেল গ্রাউজ, বুনো মুরগি, বুনো হাঁস, করালি হাঁস, রাজ হাঁস, অ্যালবাট্রস, গাংচিল, যাওয়ার ও হাঁস প্রজাতির পাখি। এদের বাসায় পাখির বুকের নরম পালক, শুকনো জলজ উদ্ভিদ সুন্দর করে বিছিয়ে তাতে ডিম পাড়ে। খোলামেলা মাটিতে বাসা হলেও ঝোপঝাড়, বালুর ঢিবি ও পাথরের চাঁইয়ের আড়ালে লুকানো বাসাগুলো সহজে কারো নজরে পড়ে না।
পানির ওপর কলমি, শাপলা, পদ্মফুল বা জলজ কোনো উদ্ভিদের ঝোপে খড়কুটা দিয়ে বাসা বানায় ডাহুক, কালিম ও অন্য কিছু জলচর পাখি। অনেক সময় পানির চলমান স্রোতে কলমি বা কচুরিপানার সঙ্গে এসব পাখির বাসাও ভেসে যেতে থাকে। সে ক্ষেত্রে ডিম বা বাচ্চাওয়ালা ভাসমান বাসার সঙ্গে বাসার মালিকও ভেসে যেতে থাকে অজানার উদ্দেশে।
ছোট জাতের আডেলি পেঙ্গইন সমুদ্রতটের পাথুরের গিরিখাতে নয়তো পাথরের স্তূপের আড়ালে জলজ উদ্ভিদ, সমুদ্র শ্যাওলা বিছিয়ে বাসা বানায় অগোছালোভাবে। তবে বড় এমপারার বা অন্য জাতের পেঙ্গুইনরা বাসা বানায় না। এসব পাখি একটি বা দুটি ডিম পাড়ে। ডিম দুটি দু’পায়ের পাতায় রেখে ওদের তলপেটের ঘন লোমে ঢেকে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। মেয়ে-পুরুষ দুটি
পাখি মিলেই তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর দায়িত্ব সারে। আবার দক্ষিণ আমেরিকার কোকিল প্রজাতির পাখিরা পাঁচ থেকে ১০টির ক্ষুদ্র একটি দল করে একটি বড় বাসা বানায় খড়কুটা দিয়ে এবং সবাই পালাক্রমে বসে ডিমে তা দেয়। সেজন্য এসব পাখির বাসায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ বা তারও বেশি ডিম পাওয়া যায়।