হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৩০ টি বিড়াল একসঙ্গে বাস করে একটি বাড়িতে। তাদের দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন এক দম্পতি। তারাই এই বিড়াদের বাবা-মা! নিজ সন্তানের মতো বুকে আগলে লালন-পালন করছেন বিড়ালগুলোকে।
আরশাদ হাসান ও আনজুম দম্পতি। তারা দুই সন্তানের বাবা-মা। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের বিহারি ক্যাম্পে তাদের বসবাস। একটি ১০০ বর্গফুটের দ্বিতীয় তলা বাড়িতে বসবাস করেন ৩০টির বেশি বিড়াল।
এই বাড়িতেই বিড়ালরা ঘুরে বেড়ায়, খাবার খায় আরশাদ হাসান ও আনজুম দম্পতির সঙ্গে খুনসুটি করে। বাড়ির ভেতরে বুটিকের কাজ করার জন্য একটি টেবিল বিছানো আছে সেখানে আরশাদ বসে কাজ করছে। তাকে ঘিরে আছে অনেকগুলো বিড়াল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট এই বাড়ি জুড়ে বিড়ালের ছুটাছুটি। এর মধ্যে কয়েকটি আরশাদ হাসানের শরীরের ওপর উঠে বসে আছে। কয়েকটিকে দেখা গেলো, টেবিলের নিচে খাপটি মেরে বসে আছে। আবার টেবিলের পাশেই কয়েকটি আবার দুটি প্লেটে ভাত-মাছ খাচ্ছিল।
ঘরের এক কোণায় ইট দিয়ে একটু উঁচু করা ছোট একটি টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে কয়েকটি বিড়াল বসে ছিল। ঘরের আরেক কোণায় দেখা যায় সাজানো ওষুধের বোতল।
বাড়ির কর্তা জানান, বিড়ালগুলো অসুস্থ হয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এই ওষুধগুলো ব্যবহার করি। কোনো বিড়ালের জ্বর হলে তাকে জ্বরের ওষুধ দেদয়া হয়, ঠান্ডা লাগলে দেওয়া হয় ঠাণ্ডার ওষুধ।
জানা গেলো যদি কোনো বিড়ালের জ্বর-ঠাণ্ডা ভালো না হয় তাহলে তাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। তারপরও যদি কোনো বিড়াল সুস্থ না হয় তাহলে ওই অসুস্থ বিড়ালকে গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরশাদ হাসানের মেয়ে আনজুম খুশবু এসব বিড়াল সংগ্রহ করা প্রসঙ্গে জানান, রাস্তাঘাটে অসুস্থ বিড়াল পড়ে থাকলে আমরা সেখান থেকে নিয়ে আসি। অনেক সময় আশেপাশের লোকজন সংবাদ দেন যে এক জায়গায় একটা বিড়ালের বাচ্চা পড়ে আছে। তখন আমরা সেটাকে নিয়ে আসি। এরপর ওই বিড়ালকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই, যত্ন নিই।
আরশাদ হাসান ও আনজুম দম্পতির বিড়ালগুলোর লালন-পালনে প্রতিদিন ৩০০ টাকার মতো খরচ হয়। প্রতিদিন দুই কেজি চিকন চালের ভাত ও দেড় কেজি মাছ রান্না করে বিড়ালগুলোকে ছয় বেলা খাওয়ানো হয়।
খুশবু আরও জানান, গত চার বছর আগে দুটো বিড়াল তাদের ছিল সেখান থেকে ধীরে ধীরে এখন ২৫টি হয়েছে। তবে কেউ যদি দত্তক হিসেবে তাদের কাছে বিড়াল চায় তাহলে তারা তাদের নাম-ঠিকানা-পরিচয় ভালোভাবে যাচাই করে বিড়াল দত্তক দেন।
গত এক বছর ধরে তারা বিভিন্নভাবে বিড়ালগুলোকে দত্তক হিসেবে দিয়েছেন বলেও জানান খুশবু। ২০১৭ সালে অনার্স পাশ করার পর আর্থিক অনটনের কারণে মাস্টার্স পড়তে পারেনি তিনি। তবে বিড়ালগুলোর প্রতি তার এতো মায়া জন্মেছে যে তাদের ফেলতে পারছেন না। তাদের পিছনে টাকা খরচ করছেন।
বর্তমান মহামারি পরিস্থিতি সম্পর্কে খুশবু বলেন, মহামারি শুরুর পর থেকে এলাকার কিছু মানুষ আমাদের চাপ দিতে থাকে বিড়ালগুলো যাতে না পুষি। এতে করে নাকি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। এরমধ্যে আমাদের দুটি বিড়ালকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।
‘রাস্তা থেকে কয়েকটি বিড়াল আমরা সংগ্রহ করি। এখন নতুন-পুরনো মিলিয়ে ৩০টির বেশি বিড়াল আছে। মানুষের শত বাধার মধ্যেও বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা থেকে পিছপা হইনি বলে জানান বিড়ালপ্রেমী খুশবু। এই বিড়ালগুলো নিয়ে দিব্যি তারা এক ঘরে বসবাস করছেন।