ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইট পাথর ও মাটি খেয়েই ২৫ বছর পার

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আপনার পছন্দের খাবারের তালিকায় নিশ্চয় বিরিয়ানি, পোলাও, কোরমা ইত্যাদি রয়েছে! তবে জানেন কি এমনও কেউ আছে যে কিনা ইট, পাথর এবং মাটি খেতে পছন্দ করে! হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন!

এমনই কাণ্ড ২৫ বছর ধরে ঘটিয়ে আসছেন এক ব্যক্তি। ভারতের পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি নামক এই ব্যক্তি ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন কৃষক। কৃষিকাজ করেই তার সংসার চলে। কারণ তার বাবা চার বছর আগে মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে সংসারের হাল তারই ধরতে হয়েছে। তার মায়ের দেখাশোনা তিনি নিজেই করেন।

পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি নামক এই ব্যক্তি অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস খেয়ে থাকেন। মাটি থেকে শুরু করে পাথর ও ইটের টুকরো সবই খান তিনি। তাও আবার দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে। ধরতে গেলে এখন তার অদ্ভুত এসব খাবার নেশায় পরিণত হয়েছে। তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর।

ইট খাচ্ছেন তিনিইট খাচ্ছেন তিনি

১০ বছর বয়স থেকে তিনি বুঝতে পারেন আসলে এসব অদ্ভুত জিনিস খাওয়া তার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। প্রায় ২৫ বছর ধরে গড়ে প্রতি দিন একটি ইট এবং ৩ কেজি কাদা মাটি খান তিনি। ইট বা মাটি ছাড়া অন্যান্য খাবার তিনি খুব কমই খান।

আমরা যেমন ভাত এবং রুটি খাওয়া ছাড়া থাকতে পারি না। তেমনি পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি এসব ইট, মাটি না খেয়ে থাকতে পারেন না। এই সমস্ত খাবার হজম করার জন্য সে পানি পান করে।

পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি বলেছেন, আমার খাবার না খেলেও চলে। তবে আমি পাথর ও কাদা খাওয়া ছাড়বো না। কারণ এটা আমার নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারে পরিণত হয়েছে।

ব্রিটেনের ডেইলি মিরর পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, যদি আপনি তাকে চিকেন ফ্রাই আর ইটের মধ্যে একটি জিনিস খেতে বলেন, তাহলে সে অবশ্যই ইট খাবেন।

প্লাস্টারও খাচ্ছেনপ্লাস্টারও খাচ্ছেনএটি আসলে ভয়ানক একটি মানসিক রোগ। যাকে বলা হয় পিকা। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে বিভিন্ন অখাদ্য খাবার খাওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছে কাজ করে। বিভিন্ন জড় পদার্থের প্রতি তারা যৌন আকর্ষণ অনুভব করে থাকেন। যেমন- এদের মধ্যে অনেকেই বই, খাতা, কলম, মাটি ইত্যাদি অখাদ্য খেয়ে থাকে।

আবার অনেকেই বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ইত্যাদির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে থাকেন। ফলস্বরূপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের ক্ষতি করে বসেন। বলা বাহুল্য এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন বস্তু এবং ব্যক্তিকে সহজে সনাক্ত করতে পারেন না।

তাছাড়া তাদের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে থাকে। স্নায়ু চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোভে কোনো আঘাত বা সংক্রমণের ফলে এই রোগটি হয়ে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত এই রোগেটির কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির এই রোগটি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

প্লেটে ইট-মাটি সাজিয়ে খান তিনিপ্লেটে ইট-মাটি সাজিয়ে খান তিনি

ভারতীয় পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি অস্বাভাবিক এক ধরনের রোগে ভুগছেন। তবে হুনাগুন্দি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তার কোনো অসুখ নেই এবং এটা তার প্রতিভা ও নৈপুণ্য। হুনাগুন্দির আচরণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি এরই মধ্যে বিখ্যাত হয়ে গেছে।

হুনাগুন্দির এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, আমরা এটিকে অত্যন্ত অদ্ভুত বলে মনে করি। হুনাগুন্দির বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের লোকজন তাকে এসব বস্তু খেতে নিষেধ করেছেন। এমনকি তার মা গত ২৫ বছর ধরে তার ছেলের এই নেশা দূর করার চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু সে সক্ষম হননি।

ইট খাচ্ছেন তিনিইট খাচ্ছেন তিনি

হুনাগুন্দি বলেন, আমি গত ২৫ বছর ধরে ইট আর পাথর খাচ্ছি। আমি এসব খেতে ভালোবাসি। এটা আমার জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। এটা আমার উপর কোনো প্রকারের প্রভাব ফেলে না।

আমার দাঁত একেবারে সুস্থ আছে এবং আমি যে কোনো শক্ত পাথরেও সহজেই কামড় বসাতে পারি। তিনি আরও বলেছেন, আমি আশা করি, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে নিজের নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আরো বেশি আয় করতে পারবো।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ইট পাথর ও মাটি খেয়েই ২৫ বছর পার

আপডেট টাইম : ১০:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ অক্টোবর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আপনার পছন্দের খাবারের তালিকায় নিশ্চয় বিরিয়ানি, পোলাও, কোরমা ইত্যাদি রয়েছে! তবে জানেন কি এমনও কেউ আছে যে কিনা ইট, পাথর এবং মাটি খেতে পছন্দ করে! হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন!

এমনই কাণ্ড ২৫ বছর ধরে ঘটিয়ে আসছেন এক ব্যক্তি। ভারতের পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি নামক এই ব্যক্তি ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন কৃষক। কৃষিকাজ করেই তার সংসার চলে। কারণ তার বাবা চার বছর আগে মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে সংসারের হাল তারই ধরতে হয়েছে। তার মায়ের দেখাশোনা তিনি নিজেই করেন।

পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি নামক এই ব্যক্তি অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস খেয়ে থাকেন। মাটি থেকে শুরু করে পাথর ও ইটের টুকরো সবই খান তিনি। তাও আবার দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে। ধরতে গেলে এখন তার অদ্ভুত এসব খাবার নেশায় পরিণত হয়েছে। তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর।

ইট খাচ্ছেন তিনিইট খাচ্ছেন তিনি

১০ বছর বয়স থেকে তিনি বুঝতে পারেন আসলে এসব অদ্ভুত জিনিস খাওয়া তার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। প্রায় ২৫ বছর ধরে গড়ে প্রতি দিন একটি ইট এবং ৩ কেজি কাদা মাটি খান তিনি। ইট বা মাটি ছাড়া অন্যান্য খাবার তিনি খুব কমই খান।

আমরা যেমন ভাত এবং রুটি খাওয়া ছাড়া থাকতে পারি না। তেমনি পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি এসব ইট, মাটি না খেয়ে থাকতে পারেন না। এই সমস্ত খাবার হজম করার জন্য সে পানি পান করে।

পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি বলেছেন, আমার খাবার না খেলেও চলে। তবে আমি পাথর ও কাদা খাওয়া ছাড়বো না। কারণ এটা আমার নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারে পরিণত হয়েছে।

ব্রিটেনের ডেইলি মিরর পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, যদি আপনি তাকে চিকেন ফ্রাই আর ইটের মধ্যে একটি জিনিস খেতে বলেন, তাহলে সে অবশ্যই ইট খাবেন।

প্লাস্টারও খাচ্ছেনপ্লাস্টারও খাচ্ছেনএটি আসলে ভয়ানক একটি মানসিক রোগ। যাকে বলা হয় পিকা। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে বিভিন্ন অখাদ্য খাবার খাওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছে কাজ করে। বিভিন্ন জড় পদার্থের প্রতি তারা যৌন আকর্ষণ অনুভব করে থাকেন। যেমন- এদের মধ্যে অনেকেই বই, খাতা, কলম, মাটি ইত্যাদি অখাদ্য খেয়ে থাকে।

আবার অনেকেই বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ইত্যাদির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে থাকেন। ফলস্বরূপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের ক্ষতি করে বসেন। বলা বাহুল্য এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন বস্তু এবং ব্যক্তিকে সহজে সনাক্ত করতে পারেন না।

তাছাড়া তাদের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে থাকে। স্নায়ু চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোভে কোনো আঘাত বা সংক্রমণের ফলে এই রোগটি হয়ে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত এই রোগেটির কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির এই রোগটি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

প্লেটে ইট-মাটি সাজিয়ে খান তিনিপ্লেটে ইট-মাটি সাজিয়ে খান তিনি

ভারতীয় পাকিরাপ্পা হুনাগুন্দি অস্বাভাবিক এক ধরনের রোগে ভুগছেন। তবে হুনাগুন্দি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তার কোনো অসুখ নেই এবং এটা তার প্রতিভা ও নৈপুণ্য। হুনাগুন্দির আচরণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি এরই মধ্যে বিখ্যাত হয়ে গেছে।

হুনাগুন্দির এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, আমরা এটিকে অত্যন্ত অদ্ভুত বলে মনে করি। হুনাগুন্দির বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের লোকজন তাকে এসব বস্তু খেতে নিষেধ করেছেন। এমনকি তার মা গত ২৫ বছর ধরে তার ছেলের এই নেশা দূর করার চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু সে সক্ষম হননি।

ইট খাচ্ছেন তিনিইট খাচ্ছেন তিনি

হুনাগুন্দি বলেন, আমি গত ২৫ বছর ধরে ইট আর পাথর খাচ্ছি। আমি এসব খেতে ভালোবাসি। এটা আমার জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। এটা আমার উপর কোনো প্রকারের প্রভাব ফেলে না।

আমার দাঁত একেবারে সুস্থ আছে এবং আমি যে কোনো শক্ত পাথরেও সহজেই কামড় বসাতে পারি। তিনি আরও বলেছেন, আমি আশা করি, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে নিজের নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আরো বেশি আয় করতে পারবো।