বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ইউনিকর্ন এর ধারণা মানুষের হাজার হাজার বছরের পুরনো। ফ্রান্সের লাসকক্স গুহায় ১৫ হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ইউনিকর্নের চিত্র পাওয়া যায়।
মার্কো পোলো ভেবেছিলেন, বিশ্বভ্রমণে তিনি ইউনিকর্নের সঙ্গে বহুবার মিলিত হয়েছেন। রেকর্ড বইয়ে তিনি লিখেছিলেন, ইউনিকর্ন খুবই কুৎসিত প্রাণী। আমরা যেভাবে উপস্থাপন করি, সেরকম তারা নয়।
তিনি মূলত গণ্ডারদের দেখে এমন মন্তব্য করেছিলেন। বাস্তবে পৃথিবীতে ঘোড়া সদৃশ ইউনিকর্ন না থাকলেও, উত্তর মহাসাগরে এক সামুদ্রিক ইউনিকর্নের বসবাস।
নারহোয়েল! ২০ ফুট লম্বা এবং দেড় টন ওজনের এক দৈত্যাকার ইউনিকর্ন। এরা তিমি পরিবারের এক দুষ্প্রাপ্য সদস্য। এদের সম্মুখভাগের শিং লম্বায় হতে পারে ১০ ফুট পর্যন্ত।
এটি মূলত নারহোয়েলের একটি ক্যানাইন দাঁত। যা বর্ধিত হয়ে শিং-এর আকৃতি ধারণ করেছে। দাঁতটি উপরের চোয়াল থেকে সোজা সামনের দিকে বেড়ে ওঠে।
সাধারণত পুরুষ নারহোয়েলের এধরনের বর্ধিত দাঁত দেখা যায়। অনেক সময় নারী নারহোয়েলের এমন শিং গজালেও পুরুষদের মতো বৃহৎ হয় না।
বিজ্ঞানীদের কাছে নারহোয়েলের শিং-এর কাজ এখনো এক রহস্য। তবে অনেকেই মনে করেন নারীদের আকৃষ্ট করা, অন্য পুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধ করার কাজে এই বর্ধিত দন্ত ব্যবহৃত হয়।
নারহোয়েলের রং দেখেই বয়স বলে দেয়া সম্ভব। শিশু নারহোয়েলের রং নীল-ধূসর উঠতি বয়সীরা কালচে নীল প্রাপ্তবয়স্করা ধূসর এবং বুড়োরা প্রায় শুভ্র। ডলফিনের মতোই এরা শিকার ধরতে ইকোলোকেশন বা সোনার ব্যবহার করে থাকে।
প্রথমে এরা ক্লিক ক্লিক আওয়াজ তুলে সামনে এগিয়ে যায়। প্রতিফলিত শব্দের ধরন শুনেই এরা শিকারের অবস্থান, গতিবিধি বুঝতে পারে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে স্কুইড কাটলফিশ, চিংড়ি ও ছোট ছোট সামুদ্রিক মাছ।
অনেক সময় এরা ধাবমান বরফের ফাঁদে আটকা পড়ে। মেরু অঞ্চলে বসবাসকারী ইনুইট শিকারি, মেরু ভালুক ওলারুসের শিকারে পরিণত হয়। ইনুইটদের সমাজে নারহোয়েল এক উপাদেয় খাদ্য।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এদের অনেক বিচরণস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে রূপকথার ইউনিকর্ন সদৃশ এই প্রাণীদের স্থান এখন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের তালিকায়।
নারহোয়েল তিমির মতই স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর্কটিক মহাসাগরের গ্রিনল্যান্ড, কানাডা আর রাশিয়া অঞ্চলে দেখা যায় এদের। আকারে একটি প্রাপ্তবয়স্ক নারহোয়েল ১৩ থেকে ১৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে আর ওজন হয় ৮০০-১৬০০ কেজি।