বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সাধারণত মানুষ জন্ম নেয় দুই হাত ও দুই পা নিয়ে। আর এই দুই হাত ও দুই পায়ে আঙুল থাকে ২০টি। তবে কোনো কোনো মানুষের দুই একটি আঙুল বেশি কম থাকে। যেমন কারো ২১ আঙুল হয়, আবার কারো ১৯ আঙুল হয়। তবে কখনো শুনেছেন কি? কারো ৩২ আঙুল হয়। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন!
তেমনটাই হয়েছে ভারতের ওড়িষার গঞ্জাম জেলায় এক নারীর। নাম তার নয়ক কুমারী। তবে এলাকার মানুষ ডাইনি বুড়ি নামে ডাকে। বয়স তার ৬৪ বছর। তিনি জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ। তার হাতের আঙুলের সংখ্যা ১২টি আর পায়ের আঙুল ২০টি।
দারিদ্রতার কারণে তার এই ডাইনি অপবাদ মেনে নিতে হয়েছে। আর এই দোষেই ওড়িশার গঞ্জম জেলার নয়ক কুমারীকে ডাইনি বুড়ি হিসেবে দাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে গ্রামের এক প্রান্তে স্থান হয়েছে তার।
তার সঙ্গে কেউ কথাও বলে না, এমনকি বাড়ির বাইরে কখনও দেখলে ভয়ে পালিয়ে যায় গ্রামবাসীরা। তাই ৬৪ বছর বয়সে এসেও একেবারে একলা, একাকি দিন কাটে তার।
নয়ক কুমারী জানিয়েছেন, জন্ম থেকেই তার হাত ও পায়ে ওই বিকৃতি রয়েছে। তার আঙুলের সংখ্যা বেশি। আর সেই সময় থেকেই তার উপর ডাইনি তকমা লাগিয়ে দিয়েছে তার প্রতিবেশীরা। ফলে ছোট থেকে একেবারে একলাই জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বিয়ে-সাদি তো অনেক দূরের কথা।
তিনি জানেন চিকিৎসা করলে তার এই শারীরিক সমস্যা দূর হতে পারে। তবে অত্যন্ত দরীদ্র পরিবারে জন্ম তার। কাজেই ডাইনি তকমা ঘোচাতে চিকিৎসার ব্যয় বহন করাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই গ্রামের লোকেদের চক্ষুশূল হওয়ার থেকে বেশিরভাগ সময় জানালা দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভিতরেই থাকতে পছন্দ করেন তিনি।
নয়ক কুমারীর সব প্রতিবেশীই যে তাকে ডাইনি মনে করেন তা নয়। গ্রামেরই একজন জানিয়েছন, তাদের গ্রাম খুব ছোট একটা গ্রাম। বেশিরভাগ মানুষই কুসংস্কারের দাস। আর সেই কুসংস্কারের বশবর্তী হয়েই সাধারণের বাইরে কোনো কিছু দেখলেই তারা ভয় পায়। সেই কারণেই নয়ক কুমারীকে একঘরে করে রেখেছে গ্রামবাসীরা ।
চিকিৎসকরা বলছেন, এটা একটা অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। প্রতি ৫ হাজার জনে অন্তত দুইজনের শরীরে অতিরিক্ত আঙুল দেখা যায়। তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন এমনকি বলিউড সুপারস্টার ঋত্বিক রোশনের বাঁহাতে একটি অতিরিক্ত আঙুল রয়েছে। একে বিজ্ঞানের পরিভাষায় পলিড্যাক্টাইলি বলা হয়।
ল্যাটিন শব্দ ‘পলিস’ যার অর্থ বহু এবং ‘ড্যাকটিলস’ যার অর্থ আঙুল, এই দুই শব্দের মেলবন্ধনেই এসেছে ‘পলিড্যাকটিলি’। সার্জিকাল স্পেশ্যালিস্ট পিনাকী মোহন্তি বলছেন, এই ধরনের ঘটনা বিরল।