বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ গাছভর্তি ফল। থোকায় থোকায় ফল। নানা রকমের ফল। সারি সারি গাছে ঝুলে আছে আম, লেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, করমচা। নানা রঙের বাহারি ফল। ফল আর গাছে এমন পরিবেশ যে দুই হাত সামনে কী আছে দেখা যায় না। আছে নানা প্রকারের ফুল। সুগন্ধ বিলিয়ে পরিবেশটা আরও মৌ-মৌ করে তুলেছে।
বেশি দূরে নয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশেই বিরাট এলাকাজুড়ে বসেছে বৃক্ষমেলা। ৪ জুন থেকে শুরু হওয়া মেলা চলবে মাসব্যাপী।
বৃক্ষমেলার প্রধান ফটক পেরুতেই মনে হবে আপনি কোনো অরণ্যে ঢুকে পড়েছেন। চারিদিকে শুধু গাছগাছালি। থরে বিথরে সাজানো বিশাল বৃক্ষরাজি, পুষ্পরাজি। চলে গেছে সরু বৃক্ষের পথ। দুই ধারে ঝুলে আছে হরেক রকমের ফল। চিকন সরু পথ ধরে এক একটি পথে গেলে আপনি দেখা পাবেন কখনো আমের রাজ্য, কখনো লেবুর রাজ্য। পাবেন কাঁঠাল, লিচু, আনারস, ডালিম, ডুমুরসহ বিদেশি ফল। চেনাজানা ফলের পাশাপাশি অচেনা অদেখা হরেক রকমের ফল। শুধু ফল দেখেছেন কিন্তু কখনোই গাছ দেখেননি। আপনার দেখা হবে সেই সব অপরিচিত ফলের গাছ। পাবেন অপরিচিত অনেক ফলও।
কোনো সরুপথ আপনার কাছে মনে হবে ফুলের রাজ্য। সবুজের মাঝে মুখ উঁচু করে, কখনো উঁকি মেরে আছে চেনা অচেনা ফুল। সাথে তো আছে মন মাতানো সৌরভ।
সমস্ত মাঠজুড়েই রয়েছে ফুল-ফলের স্টল। অনেক স্টল আবার গাছ পরিচর্যার যন্ত্রপাতি বিক্রি ও প্রদর্শন করছেন। আছে বিভিন্ন ফুল ফলের চারা, বিজ, সার। জৈব ও সবুজ সার, কম্পোস্ট সার। আছে প্রচার পত্র। কীভাবে গাছ লাগাবেন, কীভাবে গাছের যত্ন নেবেন, পরিচর্যা করবেন এর ফিরিস্তি।
দেখতে পাবেন বিশাল আকৃতির ফল-ফুল। আছে নানা প্রজাতির রঙিন ক্যাকটাস। দেখে মনে হবে যেন কৃত্তিমভাবে রঙ মাখানো। আদতে কিন্তু তা নয়। নয়ন জুড়ানো ক্যাকটাস।
পাশাপাশি ওষুধি গাছ। যে ঔষধি গাছই আপনি খুঁজতে চান না কেনো পেয়ে যাবেন। একেবারে বাসক, তুলশি, হরিতকি, বহেরা থেকে শুরু করে থানকুনি, উলটকম্বল, সর্পগন্ধা, আকন্দ, চিরতাসহ অনেক গাছ। বিভিন্ন গাছের উপকরণ। কোনোটার পাতা উপকারী। কোনোটার বাকল বা শেকড়। আবার কোনোটার বীজ বা ফুল-ফল। যেটাই চান পেয়ে যাবেন।
কোনো কোনো স্টল আবার গাছ দিয়ে গৃহসজ্জার নানা উপকরণ রেখেছে। কোনোটা বাঁশের, কোনোটা মাটির, কাঠের বা নারিকেলের। আছে প্লাস্টিকেরও। নানা আকার আকৃতির। নানা ডিজাইনের। নানা ধরনের। নানা রঙের। কোনোটি আবার আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না।
আনা হয়েছে বিভিন্ন রঙের মার্বেল পাথর। পাশাপাশি কিছু তক্ষক শিল্পের চোখ ধাঁধানো কারুকাজ। মৃতশিল্পের কথা না হয় বাদই দিলাম। বাবুই পাখির বাসাও বাদ পড়েনি এসব থেকে। যা অনেকের চোখে হবে জীবনের প্রথম দেখা।
বনসাই, লতাবাহারি, পাতাপাহারি, তরুগুল্ম, তুলা গাছ, বড় বৃক্ষ সবই আছে এখানে। যেমন পাওয়া যাবে কাঠের গাছ তেমনি ফল ফুলের গাছ। দেখতে দেখতে আপনার সময় অনেকটায় পার হবে যাবে তবু যেন দেখা আর শেষ হয় না।
বৃক্ষমেলায় আগতদের জন্য আছে সবকিছুর সুযোগ সুবিধা। নামাজের জন্য মসজিদ, খাবার হোটেল, টয়লেট। আপনার ক্লান্তি দূর করতে জিরিয়ে নেবার জায়গা।
ঝুলন্ত টবের গাছ আপনাকে বিশেষভাবে মোহিত করবে। সেই সাথে রঙিন ও বিচিত্র পাতায় ভরা গাছ। কিছু গাছের নান্দনিকভাবে বেড়ে ওঠা আপনাকে করবে আরো মনোমুগ্ধ। কোনোটি সর্পিল, কোনোটি বহুভুজ আকৃতির। আবার কোনোগুলো বুনন শিল্পের।
গাছ পরিচর্যা করার যন্ত্রপাতিও ঢের পাবেন এখানে। যেকোনো ধরনের যন্ত্রপাতি। সার, কীটনাশক, ছাঁটাই করা, নিড়ানি দেয়া সবকিছুই মিলবে। বসত ঘরে বা বাসা-বাড়ি কিংবা অফিস আদালতের গাছ পরিচর্যার যন্ত্রপাতি। পানি স্প্রে বোতল, মেশিন ও মেশিনারি টুলস।
মসলা জাতীয় গাছের অভাব নেই সেখানে। মরিচ থেকে শুরু করে আদা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, কাজুবাদাম, আলুবাখারা, তেজপাতা, ধনিয়া, জিরা, হলুদসহ আরও অনেক কিছু।
পান, পান মসলা গাছ, মেহেদি গাছ, আগরবাতি গাছ কী নেই এখানে! যদি হাতে সময় থাকে তাহলে ঘুরে আসুন। দেখে নিন। আর ভালো লাগলে তো কেনাকাটা করতে পারবেন অনায়েসে। দাম যে আকাশচুম্বী তা কিন্তু নয়। আছে হাতের নাগালেই। কিছু মানুষ গাছগাছালি কেনাকাটায় আপনাকে বহনে সহায়তা করবে। বিশেষ করে কিছু কিশোর বাচ্চারা ঝুড়ি নিয়ে আপনার সাথে ঘুরবে। আপনার গাড়িতে ওঠা অবদি তারাই বহন করবে। তবে এজন্য আপনি খুশি মনে যা বকশিস তাতেই সন্তুষ্ট।
সুতরাং সময় নিয়ে পারলে আজই ঘুরে আসুন বৃক্ষমেলার ফল ফুলের স্বর্গরাজ্য থেকে।