ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  আষাঢ়স্য প্রথম দিবস। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ বর্ষার প্রথম দিন। বৈশ্বিক জলবায়ু ক্রমশ পরিবর্তনের ফলে ঋতু এবং ঋতুচক্র চরিত্র হারালেও বর্ষা ঋতু স্বীয় বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাব বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আধিপত্যও বিস্তার করে রেখেছে। ষঢ়ঋতুর বাংলাদেশে এখন ঋতুবৈচিত্র তেমন পরিলক্ষিত হয় না। শীত সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ক্ষণিক বসন্তের রঙ রূপ আগাম বর্ষায় স্থায়িত্ব হারায়। প্রলম্বিত বর্ষায় শরৎও চাপা পড়ে ঝড়া শিউলি আর কাশফুলেই কেবল আটকে থাকে।
ব্যপ্তিতে বৈচিত্রে বাংলাদেশে বর্ষার তুলনা নেই। কবে কখন বর্ষার শুরু আর কখন শেষ তার নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন বাঁধা নেই। ষঢ় ঋতুর বিভাজনে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। বাংলাদেশে সাধারণত বৈশাখ থেকে বর্ষার সূচনা হয় এবং তা আশ্বিন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। মূলত বছরের অর্ধেকটা সময়ই বর্ষার দখলে। বাংলাদেশের প্রকৃতি সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা হয়ে উঠার অন্তস্থিত রহস্য লুকিয়ে আছে বর্ষার অনন্ত ভা-ারে। মানব জীবনে মানব মনে প্রকৃতিতে বর্ষা ঋতুর প্রভাবই সর্বাধিক। আদিকবি কালিদাস বর্ষার আবির্ভাব দেখেছিলেন আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে। বর্ষার দূত হয়ে ফুটে কদমফুল। শুস্কতা দীনতা ধূশিধুসরতার অবসান ঘটিয়ে শুচি¯িœগ্ধ বর্ষার আগমন গ্রীস্মের অগ্নিক্ষরা দহনে প্রকৃতি যখন দগ্ধ হয়ে উঠে অন্তর যখন তৃষ্ণা জর্জর উন্মুখ হয়ে থাকে তখন নব বারিধারায় সিক্ত হয়ে জীবনের আহ্বান নিয়ে আসে বর্ষা। এবার হয়ত এর ব্যতিক্রম। গ্রীস্মের দাবদাহে দগ্ধ হওয়ার আগেই খেয়ালী বর্ষার আগমন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে ভাটিঅঞ্চলে। অকাল বর্ষায় তলিয়ে গেছে ফসল। শুচি¯িœগ্ধ রূপলাবন্য তলিয়ে গেছে হাহাকারে। তবুও আষাঢ়ের মেঘে মেঘে জড়িয়ে থাকে বিরহী মনের ভাবাবেগ। আষাঢ়ের মেঘ প্রতিবারই নতুন হয়ে দেখা দেয়। বর্ষা যেমন সৃষ্টির অফুরন্ত শক্তি তেমনি বিরহী মনের হাহাকারেরও বিপুল প্রকাশ। যেমন আছে জীবনের প্রাচুর্য তেমনি আছে ধ্বংসের তা-বও।
বাংলা সাহিত্যে বর্ষা ঋতুর প্রভাবই সবচাইতে বেশি। বর্ষা যেমন জীবনকে সমৃদ্ধ করে প্রাণের সন্ধান আনে তেমনি সমৃদ্ধ করে রেখেছে বাংলা সাহিত্যকেও। বাংলা সাহিত্য ভরপুর হয়ে আছে বর্ষার ছন্দে। কবিহৃদয় বারবার আপ্লুত হয়ে বর্ষার অপরূপ চিত্র অঙ্কণ করেছে  গানে-কবিতায়। আদিকবি কালিদাস থেকে শুরু করে রবীন্দ্র নজরুল জসীম উদ্দিন এবং সাম্প্রতিককালের কবিরাও সিক্ত হয়েছেন বর্ষার অঝোড় ধারায়। করেছেন বর্ষার রূপ বন্দনা। এঁকেছেন বৃষ্টি¯œাত সজীবতার রূপ। রবীন্দ্রকাব্যে বর্ষা জীবনঘনিষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে বিরহে প্রেমে বেদনায় দিযেছে অফুরন্ত ভাবসম্পদের সন্ধান।
মানুষের জীবন কেবল প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অপ্রয়োজনের প্রাচুর্যেও সমৃদ্ধ হয়ে উঠে। বর্ষার ভাবালুতা তেমনি জাগায় ব্যক্তি জীবনে অপ্রয়োজনের অভিসার, ঘটে নিরুদ্দেশযাত্রা। বর্ষায় বিচ্ছিন্ন একাকী মন খুঁজে পায় আপন অন্তরে সৌন্দর্যের অলকাপুরী। হৃদয়ের প্রকাশে হয়ে পড়ে ব্যাকুল, কেবল তখনই মনের কথাটি প্রাণের কথাটি বলা যায় প্রিয়জনকে। কবিগুরু বর্ষার রঙরূপগন্ধস্পর্শের সাথে বাঙালি মননে উন্মোচিত করে দিয়েছেন এই ঋতুর গুঢ় রহস্যময়তা-এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরষায়…।
এবারের বর্ষা ভাটি অঞ্চলের মানুষকে করেছে রিক্ত। তবুও বর্ষাতেই অঙ্কুরিত হয়ে আছে প্রাণসঞ্জিবনী। আশাজাগানিয়া বিপুলা বর্ষা শক্তির প্রতীক জীবনচিহ্ন হয়ে আশা জোগাক রিক্তের অন্তরে।
এবার হয়েছে বান
জমেছে পলি।
উর্বর ফসলের ক্ষেতে চাষ করে
স্বপ্নের বীজ
দুই হাতে তুলে নেব আরবার
সোনার ধান
বর্ষার কাছে শুনি সেই আহ্বান
বারবার।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস

আপডেট টাইম : ০৬:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  আষাঢ়স্য প্রথম দিবস। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ বর্ষার প্রথম দিন। বৈশ্বিক জলবায়ু ক্রমশ পরিবর্তনের ফলে ঋতু এবং ঋতুচক্র চরিত্র হারালেও বর্ষা ঋতু স্বীয় বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাব বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আধিপত্যও বিস্তার করে রেখেছে। ষঢ়ঋতুর বাংলাদেশে এখন ঋতুবৈচিত্র তেমন পরিলক্ষিত হয় না। শীত সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ক্ষণিক বসন্তের রঙ রূপ আগাম বর্ষায় স্থায়িত্ব হারায়। প্রলম্বিত বর্ষায় শরৎও চাপা পড়ে ঝড়া শিউলি আর কাশফুলেই কেবল আটকে থাকে।
ব্যপ্তিতে বৈচিত্রে বাংলাদেশে বর্ষার তুলনা নেই। কবে কখন বর্ষার শুরু আর কখন শেষ তার নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন বাঁধা নেই। ষঢ় ঋতুর বিভাজনে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। বাংলাদেশে সাধারণত বৈশাখ থেকে বর্ষার সূচনা হয় এবং তা আশ্বিন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। মূলত বছরের অর্ধেকটা সময়ই বর্ষার দখলে। বাংলাদেশের প্রকৃতি সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা হয়ে উঠার অন্তস্থিত রহস্য লুকিয়ে আছে বর্ষার অনন্ত ভা-ারে। মানব জীবনে মানব মনে প্রকৃতিতে বর্ষা ঋতুর প্রভাবই সর্বাধিক। আদিকবি কালিদাস বর্ষার আবির্ভাব দেখেছিলেন আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে। বর্ষার দূত হয়ে ফুটে কদমফুল। শুস্কতা দীনতা ধূশিধুসরতার অবসান ঘটিয়ে শুচি¯িœগ্ধ বর্ষার আগমন গ্রীস্মের অগ্নিক্ষরা দহনে প্রকৃতি যখন দগ্ধ হয়ে উঠে অন্তর যখন তৃষ্ণা জর্জর উন্মুখ হয়ে থাকে তখন নব বারিধারায় সিক্ত হয়ে জীবনের আহ্বান নিয়ে আসে বর্ষা। এবার হয়ত এর ব্যতিক্রম। গ্রীস্মের দাবদাহে দগ্ধ হওয়ার আগেই খেয়ালী বর্ষার আগমন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে ভাটিঅঞ্চলে। অকাল বর্ষায় তলিয়ে গেছে ফসল। শুচি¯িœগ্ধ রূপলাবন্য তলিয়ে গেছে হাহাকারে। তবুও আষাঢ়ের মেঘে মেঘে জড়িয়ে থাকে বিরহী মনের ভাবাবেগ। আষাঢ়ের মেঘ প্রতিবারই নতুন হয়ে দেখা দেয়। বর্ষা যেমন সৃষ্টির অফুরন্ত শক্তি তেমনি বিরহী মনের হাহাকারেরও বিপুল প্রকাশ। যেমন আছে জীবনের প্রাচুর্য তেমনি আছে ধ্বংসের তা-বও।
বাংলা সাহিত্যে বর্ষা ঋতুর প্রভাবই সবচাইতে বেশি। বর্ষা যেমন জীবনকে সমৃদ্ধ করে প্রাণের সন্ধান আনে তেমনি সমৃদ্ধ করে রেখেছে বাংলা সাহিত্যকেও। বাংলা সাহিত্য ভরপুর হয়ে আছে বর্ষার ছন্দে। কবিহৃদয় বারবার আপ্লুত হয়ে বর্ষার অপরূপ চিত্র অঙ্কণ করেছে  গানে-কবিতায়। আদিকবি কালিদাস থেকে শুরু করে রবীন্দ্র নজরুল জসীম উদ্দিন এবং সাম্প্রতিককালের কবিরাও সিক্ত হয়েছেন বর্ষার অঝোড় ধারায়। করেছেন বর্ষার রূপ বন্দনা। এঁকেছেন বৃষ্টি¯œাত সজীবতার রূপ। রবীন্দ্রকাব্যে বর্ষা জীবনঘনিষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে বিরহে প্রেমে বেদনায় দিযেছে অফুরন্ত ভাবসম্পদের সন্ধান।
মানুষের জীবন কেবল প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অপ্রয়োজনের প্রাচুর্যেও সমৃদ্ধ হয়ে উঠে। বর্ষার ভাবালুতা তেমনি জাগায় ব্যক্তি জীবনে অপ্রয়োজনের অভিসার, ঘটে নিরুদ্দেশযাত্রা। বর্ষায় বিচ্ছিন্ন একাকী মন খুঁজে পায় আপন অন্তরে সৌন্দর্যের অলকাপুরী। হৃদয়ের প্রকাশে হয়ে পড়ে ব্যাকুল, কেবল তখনই মনের কথাটি প্রাণের কথাটি বলা যায় প্রিয়জনকে। কবিগুরু বর্ষার রঙরূপগন্ধস্পর্শের সাথে বাঙালি মননে উন্মোচিত করে দিয়েছেন এই ঋতুর গুঢ় রহস্যময়তা-এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরষায়…।
এবারের বর্ষা ভাটি অঞ্চলের মানুষকে করেছে রিক্ত। তবুও বর্ষাতেই অঙ্কুরিত হয়ে আছে প্রাণসঞ্জিবনী। আশাজাগানিয়া বিপুলা বর্ষা শক্তির প্রতীক জীবনচিহ্ন হয়ে আশা জোগাক রিক্তের অন্তরে।
এবার হয়েছে বান
জমেছে পলি।
উর্বর ফসলের ক্ষেতে চাষ করে
স্বপ্নের বীজ
দুই হাতে তুলে নেব আরবার
সোনার ধান
বর্ষার কাছে শুনি সেই আহ্বান
বারবার।