ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃদ্ধাশ্রম ও আমরা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বৃদ্ধাশ্রম শব্দটি আমাদের মানবজীবনের বেশিরভাগ মানুষের কাছেই আতংকের। একটা সময় আমারো চিন্তাধারা তেমনি ছিল। আজ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমিও ভাবতে বসেছি বৃদ্ধাশ্রম সম্বন্ধে। । আমার অনেক দিনের ইচ্ছা বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে কিছু করার, আর সেই লালিত ইচ্ছাই আজ আমাকে বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে লেখার উৎসাহ জোগাচ্ছে। শুরুতেই বলেছি, আমাদের দেশে আমাদের সমাজে বৃদ্ধাশ্রম অনেকের কাছে একটি আতংক, যেমন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কাছে তেমনি আবার বাবা-মা ভক্ত সন্তানদের কাছে। তবে আমার মতো অনেকেই আছেন যারা সমর্থন করেন বৃদ্ধাশ্রমকে। অবশ্য আমার মতের সঙ্গে অনেকের মতের মিল হবে না।

আমরা যা এতদিন চিন্তা করে এসেছি বাস্তবে । কিন্তু সত্যি বলতে কি খুব কম বাবা-মারই সৌভাগ্য হয় সন্তানদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গে থাকলেও সে থাকাটা পুরনো আসবাবপত্রের মতো এক কোণে পড়ে থাকা। ছেলের সময়ও হয় না তাদের খোঁজ-খবর নেয়ার।আমরা বাঙালিরা বেশিরভাগ বাবা-মাই দোষ দিই বৌয়ের কিন্তু না সেটা আমাদের ভুল ধারণা। কারণ আমার মতে আমাদের ছেলেরা যদি আমাদের সম্মান দেয়, আমাদের ছেলেরা যদি আমাদের ভালোবাসে তবে বৌ তো ছাড় কোনো তৃতীয় ব্যক্তিরও সাহস হবে না আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার।

যাক যা বলছিলাম, যেসব বাবা-মাদের সন্তানদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার সৌভাগ্য হয় না, তাদের বেশিরভাগই আশ্রয়পায় বৃদ্ধাশ্রমে। এক্ষেত্রে বৃদ্ধাশ্রমই হয়ে যায় অনেক বাবা-মার শেষ ঠিকানা। আবার এমনো দেখা গেছে যে বেশি ভাই-বোন হওয়াতে বাবা-মাকে রাখার সমস্যা হয় যেমন, ভাই-বোন তখন ভাগাভাগি করে নেয় কখন কার কাছে কত দিন বাবা-মাকে রাখবে। শেষে হয়তো দেখা যায় ভাই-বোন ৩ মাস অন্তর অন্তর ভাগাভাগি করে নিজেদের কাছে বাবা-মাকে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারা কেউ একবারও ভাবে না যে, তাদের বাবা-মা এই শেষ বয়সে এসে একজনকে ছেড়ে অন্যজন কিভাবে থাকবে, একবারও ভাবে না এই বয়সে তাদের একা করে দেয়ার পরিণতির কথা, তাদের একবারও মনে পড়ে না যে মা-বাবা সন্তানদের নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে অনেক কষ্টে লালন-পালন করেন। কিন্তু আমরা কয়জন সন্তান সেটা মনে রেখেছি। তাদের কি একবারও মনে পড়ে না, এই বাবা-মাই একদিন তাদের অনেক আদরে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন। আর আজ তারাই কত অসহায়, ছেলের সংসারে তাদের ঠাঁই হয় না, যদিও বা হয় তাও অনেক নিয়ম-কানুন মেনে। দেশের বাইরে বৃদ্ধাশ্রম আছে, কিন্তু তাদের দেশের নিয়ম-কানুন উন্নত, তাদের সন্তানরা ব্যয়ভার বহন করেন। ছুটির দিনে তাদের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য লোক আছে, তারাই তাদের বেড়াতে নিয়ে যায়। খাবার দাবার সঙ্গে নিয়ে পিকনিকের মতো বেড়িয়ে আসেন, এতে তাদের মন মানসিকতাও ভালো থাকে। তাদের সময়ও কাটে আর আমাদের এখানে দুই একটা বৃদ্ধাশ্রম যাও আছে অত্যন্ত কষ্টে তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করে। এই বিষয়ে অনেক লেখা বেরিয়েছে এবং অনেকেই অবগত আছেন। সরকারি বৃদ্ধাশ্রমের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। তাছাড়া সরকার কয় দিকে খেয়াল রাখবেন। বৃদ্ধাশ্রম এর কিছু নিয়ম-কানুন যা ওখানে বসবাসরতদের কষ্ট দেয়, যা দূর করার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। আমাদের সময় ছিল একরকম আর বর্তমান যুগের সময় অন্যরকম। এখানে ব্যস্ততার কারণে বাবা-মাকে কেন, আমাদের সন্তানরা তাদের সন্তানদেরও সময় দিতে পারে না।

বৃদ্ধাশ্রম শুধুমাত্র অসহায় বৃদ্ধ/বৃদ্ধাদের জন্য নয়, বৃদ্ধাশ্রম হবে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহানুভূতিশীল একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে সবাই একই পরিবারের সদস্য হিসাবে বসবাস করবেন। যে সব সন্তানরা বাবা-মাকে সময় দিতে পারে না আমি চাই সেই সব সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে এমনই একটা সুন্দর পরিবেশের প্রতিষ্ঠানে রাখেন, তবে এখানেও কথা আছে যে শুধু রেখে গেলেই হবে না কিছু নিয়মের মধ্যে তাদের রাখতে হবে। যেমন- কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে তারা তাদের বাবা-মাকে বাসায় নিয়ে দুই দিনের জন্য রাখবেন, কোনো বিয়ে, জন্মদিন বা তদ্রুপ অন্য যে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় মা/বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। ছুটির দিন কোনো সময় তারা বাবা-মাকে দেখতে আসবেন অথবা কোনো ছুটির দিন বাবা-মাকে নিয়ে যাবেন বাসায়। তাহলে আমার বিশ্বাস উভয়েই ভালো থাকবেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বৃদ্ধাশ্রম ও আমরা

আপডেট টাইম : ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বৃদ্ধাশ্রম শব্দটি আমাদের মানবজীবনের বেশিরভাগ মানুষের কাছেই আতংকের। একটা সময় আমারো চিন্তাধারা তেমনি ছিল। আজ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমিও ভাবতে বসেছি বৃদ্ধাশ্রম সম্বন্ধে। । আমার অনেক দিনের ইচ্ছা বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে কিছু করার, আর সেই লালিত ইচ্ছাই আজ আমাকে বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে লেখার উৎসাহ জোগাচ্ছে। শুরুতেই বলেছি, আমাদের দেশে আমাদের সমাজে বৃদ্ধাশ্রম অনেকের কাছে একটি আতংক, যেমন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কাছে তেমনি আবার বাবা-মা ভক্ত সন্তানদের কাছে। তবে আমার মতো অনেকেই আছেন যারা সমর্থন করেন বৃদ্ধাশ্রমকে। অবশ্য আমার মতের সঙ্গে অনেকের মতের মিল হবে না।

আমরা যা এতদিন চিন্তা করে এসেছি বাস্তবে । কিন্তু সত্যি বলতে কি খুব কম বাবা-মারই সৌভাগ্য হয় সন্তানদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গে থাকলেও সে থাকাটা পুরনো আসবাবপত্রের মতো এক কোণে পড়ে থাকা। ছেলের সময়ও হয় না তাদের খোঁজ-খবর নেয়ার।আমরা বাঙালিরা বেশিরভাগ বাবা-মাই দোষ দিই বৌয়ের কিন্তু না সেটা আমাদের ভুল ধারণা। কারণ আমার মতে আমাদের ছেলেরা যদি আমাদের সম্মান দেয়, আমাদের ছেলেরা যদি আমাদের ভালোবাসে তবে বৌ তো ছাড় কোনো তৃতীয় ব্যক্তিরও সাহস হবে না আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার।

যাক যা বলছিলাম, যেসব বাবা-মাদের সন্তানদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার সৌভাগ্য হয় না, তাদের বেশিরভাগই আশ্রয়পায় বৃদ্ধাশ্রমে। এক্ষেত্রে বৃদ্ধাশ্রমই হয়ে যায় অনেক বাবা-মার শেষ ঠিকানা। আবার এমনো দেখা গেছে যে বেশি ভাই-বোন হওয়াতে বাবা-মাকে রাখার সমস্যা হয় যেমন, ভাই-বোন তখন ভাগাভাগি করে নেয় কখন কার কাছে কত দিন বাবা-মাকে রাখবে। শেষে হয়তো দেখা যায় ভাই-বোন ৩ মাস অন্তর অন্তর ভাগাভাগি করে নিজেদের কাছে বাবা-মাকে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারা কেউ একবারও ভাবে না যে, তাদের বাবা-মা এই শেষ বয়সে এসে একজনকে ছেড়ে অন্যজন কিভাবে থাকবে, একবারও ভাবে না এই বয়সে তাদের একা করে দেয়ার পরিণতির কথা, তাদের একবারও মনে পড়ে না যে মা-বাবা সন্তানদের নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে অনেক কষ্টে লালন-পালন করেন। কিন্তু আমরা কয়জন সন্তান সেটা মনে রেখেছি। তাদের কি একবারও মনে পড়ে না, এই বাবা-মাই একদিন তাদের অনেক আদরে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন। আর আজ তারাই কত অসহায়, ছেলের সংসারে তাদের ঠাঁই হয় না, যদিও বা হয় তাও অনেক নিয়ম-কানুন মেনে। দেশের বাইরে বৃদ্ধাশ্রম আছে, কিন্তু তাদের দেশের নিয়ম-কানুন উন্নত, তাদের সন্তানরা ব্যয়ভার বহন করেন। ছুটির দিনে তাদের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য লোক আছে, তারাই তাদের বেড়াতে নিয়ে যায়। খাবার দাবার সঙ্গে নিয়ে পিকনিকের মতো বেড়িয়ে আসেন, এতে তাদের মন মানসিকতাও ভালো থাকে। তাদের সময়ও কাটে আর আমাদের এখানে দুই একটা বৃদ্ধাশ্রম যাও আছে অত্যন্ত কষ্টে তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করে। এই বিষয়ে অনেক লেখা বেরিয়েছে এবং অনেকেই অবগত আছেন। সরকারি বৃদ্ধাশ্রমের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। তাছাড়া সরকার কয় দিকে খেয়াল রাখবেন। বৃদ্ধাশ্রম এর কিছু নিয়ম-কানুন যা ওখানে বসবাসরতদের কষ্ট দেয়, যা দূর করার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। আমাদের সময় ছিল একরকম আর বর্তমান যুগের সময় অন্যরকম। এখানে ব্যস্ততার কারণে বাবা-মাকে কেন, আমাদের সন্তানরা তাদের সন্তানদেরও সময় দিতে পারে না।

বৃদ্ধাশ্রম শুধুমাত্র অসহায় বৃদ্ধ/বৃদ্ধাদের জন্য নয়, বৃদ্ধাশ্রম হবে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহানুভূতিশীল একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে সবাই একই পরিবারের সদস্য হিসাবে বসবাস করবেন। যে সব সন্তানরা বাবা-মাকে সময় দিতে পারে না আমি চাই সেই সব সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে এমনই একটা সুন্দর পরিবেশের প্রতিষ্ঠানে রাখেন, তবে এখানেও কথা আছে যে শুধু রেখে গেলেই হবে না কিছু নিয়মের মধ্যে তাদের রাখতে হবে। যেমন- কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে তারা তাদের বাবা-মাকে বাসায় নিয়ে দুই দিনের জন্য রাখবেন, কোনো বিয়ে, জন্মদিন বা তদ্রুপ অন্য যে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় মা/বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। ছুটির দিন কোনো সময় তারা বাবা-মাকে দেখতে আসবেন অথবা কোনো ছুটির দিন বাবা-মাকে নিয়ে যাবেন বাসায়। তাহলে আমার বিশ্বাস উভয়েই ভালো থাকবেন।