বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাগানের পাশের চষা জমিতে নেমেই পাখিটি গলায় তুলল খুশির ডাক। তারপর কাচের চুড়ির টুংটাং শব্দের মতো মিষ্টি স্বরে ডাকল দু-তিনবার। অমনি ওদিক থেকেই দুলতে দুলতে উড়ে এসে এই পাখিটির সঙ্গিনী নামল মাটিতে। আহারে সুস্বাদু খাবার! গত রাতের ঝড়ে বাগানের কিনারার একখানা আমের ডাল পড়েছে মাটিতে, ওই ডালে ছিল লাসা পিঁপড়ার বড়সড় বাসা। মাটিতে পড়েই ভেঙে গেছে বাসা। অনেক ডিম আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। দুটিতে মিলে আনন্দ করে খেতে শুরু করল। লাসা পিঁপড়ারা কী আর খেতে দেয় সহজে! লেজ-পা ও ঠোঁট বেয়ে উঠে বিষ-কামড় বসাতে চায়। ডানা-ঠোঁট ও পা ঝাড়তে হয় বারবার। ওদিকে মরা নারকেলগাছের কোটরে ছানা আছে পাঁচটি। আজ এই খাবার দিয়েই পেট ভরানো যাবে ওদের। বাসাটি বানিয়েছিল নিজেরাই। বাসার গভীরতা ৪০-৬০ সেন্টিমিটার। তারপরেই না ডিমের চেম্বার। ডিম ফুটে ছানাও হয় ১২-১৫ দিনে।
মূল খাদ্য এদের পিঁপড়া, পিঁপড়ার রসালো সাদা ডিম, বাচ্চা উইপোকাসহ ওদের রস টসটসে ডিম-বাচ্চা, বিটল পোকা-কেঁচো, নানান রকম পোকামাকড়-লার্ভা ইত্যাদি। এ ছাড়া পান করে ফুলের মধুরেণু, তাল–খেজুরের রসসহ শিশিরকণা।
আবাসিক এই পাখির নাম চিত্রিত গলা কাঠঠোকরা। সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Streak-throated woodpecker। বৈজ্ঞানিক নাম picus xanthopygaeus। দৈর্ঘ্য ৩০ সেন্টিমিটার। ওজন ১০০ গ্রাম। মাটিতে চলতে চলতে ক্লান্ত হলে এরা লেজের পালক মেলে দিয়ে, সেই শক্ত পালক মাটিতে ঠেকিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসার মতো বসতে পারে খাড়া হয়ে। লেজটাকে এরা তৃতীয় পা হিসেবে ব্যবহার করে। গাছের চেয়ে মাটিতেই থাকে বেশি।
পুরুষ পাখিটির মাথার চূড়া ও তালু শুকনো আলতার মতো লাল, লেজের গোড়ার উপরিভাগ ও পিঠে এক ছোপ করে হলুদ রং, পিঠ হলুদাভ সবুজ, কানের পাশটা চকচকে ছাই বাদামি, চিবুক ধূসরাভ সাদা। তাতে সরু সরু কালচে রেখা টানা। কালচে কমলা রঙের আভা থাকে ঘাড়ে। চোখের ওপর দিয়ে সাদাটে টান থাকে। বোজানো অবস্থায় পাখার প্রান্তদেশ সাদাটে বাদামি ছোপের সারির অপূর্ব বিন্যাস। গলা-বুক-পেটেও শিল্পীর বাদামি ডোরা ও ছিট-ছোপের আশ্চর্য চিত্রিত শিল্পকর্ম।