ঢাকা , রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

সৈয়দপুরের ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারতবর্ষ পীর আউলিয়াদের দেশ হিসেবে পরিচিত। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে অনেক পীর, আউলিয়া ও বুজুর্গের আগমন ঘটেছিল এখানে। আর তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় মুসলমান শাসক ও মুঘল আমলে অসংখ্য মসজিদ স্থাপিত হয় এই উপমহাদেশে।

নীলফামারীর সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ শুধু উপসনালয় নয়, এই মসজিদ অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীকও। মসজিদের নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্য্য সবার নজর কাড়ে খুবই সহজে। ইতোমধ্যে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি এ অঞ্চলের অন্যতম মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই তো দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতিদিন আসেন দেখার জন্য।

সৈয়দপুর শহরের উত্তরে ইসলামবাগ এলাকায় ১৮৬৩ সালে ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম দিকে এটি দোচালা ছোট একটি টিনের ঘর ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯২০ সালে হাজী হাফিজ আব্দুল করিমের উদ্যোগে ৩৯ ফুট বাই ৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট মসজিদটির প্রথম অংশ পাকা করা হয়।

হাজী আব্দুল করিম নিজেই মসজিদটির নকশা এঁকেছিলেন। পুনরায় ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ বাই ৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। এই চিনি মসজিদের সারা অবয়ব রঙিন উজ্জ্বল চীনা মাটির পাথরের টুকরো দ্বারা আবৃত। ১৯৬৫ সালে বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি চিনি মসজিদের জন্য প্রায় ২৫ টনের মতো চীনা মাটির পাথর দান করে। এ ছাড়া সেই সময় কলকাতা থেকেও ২৪৩ খানা শংকর মর্মর পাথর এনে লাগানো হয় এই মসজিদে। ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদের ৪৫টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ রয়েছে।

মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে দরজা রয়েছে। মসজিদের দোতলায় একটি ভবনসহ পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ দেখার জন্য বহু বিদেশি পর্যটকের আগমনের ইতিহাস রয়েছে। স্থাপত্যের নিদর্শন এই চিনি মসজিদ দেশের ক’জন রাষ্ট্র প্রধানও পরিদর্শন করে গেছেন। ইসলামের মহিমা প্রচার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ইসলাম অনুসারীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে সৈয়দপুর চিনি মসজিদে স্থান সংকুলানের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। মসজিদটির ডানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বামে একটি ইমামবারা রয়েছে। আর পশ্চিমে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান। মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে রয়েছে দক্ষিণে মসজিদের গা ঘেঁষে ১২টির মতো দোকানঘর। এসব দোকানের ভাড়া ও মুসল্লিদের চাঁদায় মসজিদের আয়ের একমাত্র উৎস। যার ওপর নির্ভর করে মসজিদের সব ব্যয় ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। তাই সৈয়দপুর শহরের অতীত ইতিহাসের প্রতীক ‘চিনি মসজিদ’ এর সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, মসজিদটি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে দু’বার সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের মিনার ও গম্বুজ অর্থের অভাবে সংস্কার করা হচ্ছে না। সংস্কার হলে মসজিদটি আরো সুন্দর লাগবে দেখতে। তিনি মসজিদটি সংস্কারের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে অনুদানের জন্য অনুরোধ জানান।

যেভাবে আসবেন: ঢাকা থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি সৈয়দপুরে আসতে পারবেন। এ ছাড়া গাবতলী, কলেজ গেট, মহাখালী থেকে সরাসরি অনেকগুলো বাস সার্ভিস চালু আছে। আরামদায়ক ভ্রমণে আকাশ পথে বিমানযোগে সৈয়দপুরে চলে আসতে পারেন।

মানব কণ্ঠ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রাজধানীর ১৫টি খাল খননে দূর হবে ৮০ শতাংশ জলাবদ্ধতা

সৈয়দপুরের ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

আপডেট টাইম : ০১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারতবর্ষ পীর আউলিয়াদের দেশ হিসেবে পরিচিত। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে অনেক পীর, আউলিয়া ও বুজুর্গের আগমন ঘটেছিল এখানে। আর তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় মুসলমান শাসক ও মুঘল আমলে অসংখ্য মসজিদ স্থাপিত হয় এই উপমহাদেশে।

নীলফামারীর সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ শুধু উপসনালয় নয়, এই মসজিদ অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীকও। মসজিদের নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্য্য সবার নজর কাড়ে খুবই সহজে। ইতোমধ্যে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি এ অঞ্চলের অন্যতম মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই তো দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতিদিন আসেন দেখার জন্য।

সৈয়দপুর শহরের উত্তরে ইসলামবাগ এলাকায় ১৮৬৩ সালে ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম দিকে এটি দোচালা ছোট একটি টিনের ঘর ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯২০ সালে হাজী হাফিজ আব্দুল করিমের উদ্যোগে ৩৯ ফুট বাই ৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট মসজিদটির প্রথম অংশ পাকা করা হয়।

হাজী আব্দুল করিম নিজেই মসজিদটির নকশা এঁকেছিলেন। পুনরায় ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ বাই ৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। এই চিনি মসজিদের সারা অবয়ব রঙিন উজ্জ্বল চীনা মাটির পাথরের টুকরো দ্বারা আবৃত। ১৯৬৫ সালে বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি চিনি মসজিদের জন্য প্রায় ২৫ টনের মতো চীনা মাটির পাথর দান করে। এ ছাড়া সেই সময় কলকাতা থেকেও ২৪৩ খানা শংকর মর্মর পাথর এনে লাগানো হয় এই মসজিদে। ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদের ৪৫টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ রয়েছে।

মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে দরজা রয়েছে। মসজিদের দোতলায় একটি ভবনসহ পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ দেখার জন্য বহু বিদেশি পর্যটকের আগমনের ইতিহাস রয়েছে। স্থাপত্যের নিদর্শন এই চিনি মসজিদ দেশের ক’জন রাষ্ট্র প্রধানও পরিদর্শন করে গেছেন। ইসলামের মহিমা প্রচার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ইসলাম অনুসারীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে সৈয়দপুর চিনি মসজিদে স্থান সংকুলানের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। মসজিদটির ডানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বামে একটি ইমামবারা রয়েছে। আর পশ্চিমে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান। মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে রয়েছে দক্ষিণে মসজিদের গা ঘেঁষে ১২টির মতো দোকানঘর। এসব দোকানের ভাড়া ও মুসল্লিদের চাঁদায় মসজিদের আয়ের একমাত্র উৎস। যার ওপর নির্ভর করে মসজিদের সব ব্যয় ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। তাই সৈয়দপুর শহরের অতীত ইতিহাসের প্রতীক ‘চিনি মসজিদ’ এর সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, মসজিদটি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে দু’বার সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের মিনার ও গম্বুজ অর্থের অভাবে সংস্কার করা হচ্ছে না। সংস্কার হলে মসজিদটি আরো সুন্দর লাগবে দেখতে। তিনি মসজিদটি সংস্কারের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে অনুদানের জন্য অনুরোধ জানান।

যেভাবে আসবেন: ঢাকা থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি সৈয়দপুরে আসতে পারবেন। এ ছাড়া গাবতলী, কলেজ গেট, মহাখালী থেকে সরাসরি অনেকগুলো বাস সার্ভিস চালু আছে। আরামদায়ক ভ্রমণে আকাশ পথে বিমানযোগে সৈয়দপুরে চলে আসতে পারেন।

মানব কণ্ঠ