বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আমাদের অতিপরিচিত টুনটুনি বা দরজি পাখির ছোট ভাই হলো ‘ঘাড় কালো টুনটুনি’। ছোট ভাইটিও কিন্তু দরজিপনায় বড় ভাইয়ের চেয়ে কম কিছু যায় না। বরং, তার সেলাই কুশলতা, নিপুণতা বড় ভাইয়ের চেয়ে বেশি। ডুমুর-বুনো আম-শটিপাতা, কাঁঠাল পাতা-খোকসাগাছের পাতাসহ যেকোনো বড় পাতার গাছের দু-তিনটি পাতাজুড়ে সরু সুই-ঠোঁটে মাকড়সার জাল বা অতি সরু শক্ত লতা অথবা কলাগাছের আঁশের সূক্ষ্ম সুতো দিয়ে কিনারা সেলাই করে একটি পকেট তৈরি করে নেয় প্রথমে, তারপরে ওই পকেটের ভেতরে চিকন ঘাস, বাঁশের শিকড়, কলাগাছের শিকড়, মাকড়সার জাল, নরম বড় বড় ঘাস, পশুর লোম, তুলো ইত্যাদি দিয়ে চমৎকার আরামদায়ক বাটির মতো বাসা বানায়। মাটি থেকে মাত্র ছয় ইঞ্চি থেকে চার ফুট উচ্চতার ভেতরে বাসা করে, প্রবেশমুখ থাকে ওপরের দিকে। পানের বরজের একটি পানকে মুড়ে টুনটুনিকে (Tailor Bird) বাসা বানাতে আমি বহুবার দেখেছি।
টুনটুনির ছোট ভাই অবশ্য বাংলাদেশের সব জায়গায় থাকে না। মূল আবাসভূমি ওদের দেশের বৃহত্তর সিলেট-চট্টগ্রামের টিলা-পাহাড়ি এলাকায়। এরা ডিম পাড়ে চারটি। স্বভাব-চরিত্র-খাদ্যতালিকা ও চঞ্চলতা বড় ভাই টুনটুনির মতোই। বাসার সীমানায় শত্রু দেখলে তারস্বরে চেঁচায় আর লাফালাফি করে। প্রজনন মৌসুমে একটি পুরুষ অন্য পুরুষকে দেখলেই তেড়ে যায়। উত্তেজিত হলে এরাও লম্বা লেজটি পিঠের ওপর খাড়া করে দোলায়-ঝোলায়।
টুনটুনির এই ছোট ভাইটির নাম ঘাড় কালো টুনি। কালো টুনি
ও ঘাড় কালো টিকরা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Dark-necked Tailor Bird. বৈজ্ঞানিক নাম orthotomus atrogularis. বড় ভাই টুনটুনির চেয়ে আকার-ওজনে সামান্যই কম। দৈর্ঘ্য দশ সেন্টিমিটার। ওজন সাত গ্রাম। এদের কপাল-মাথার তালু ও ঘাড়-পিঠসহ লেজের উপরিভাগটা জলপাই সবুজ, মাথার তালুতে অবশ্য লালচে আভা আছে। চিবুক-গলা-বুক-পেট ধূসরাভ সাদা। চিবুকে সূক্ষ্ম-সরু কালচে-বাদামি রেখা। পুরুষটির গলা-বুক কালো। মেয়েটির এই কালো রং নেই। মেয়েটির সামান্য ভ্রু-রেখা থাকলেও পুরুষের তা নেই। দুজনেরই শরীরের ডানার কিনারা, পার্শ্বদেশ, লেজের তলায় হলুদাভ রং থাকে। চোখ কমলা-বাদামি, পা ও পায়ের পাতা গোলাপি, নখর কালচে। ঠোঁটের অগ্রভাগ সামান্য নিচের দিকে বাঁকানো, ঠোঁটও গোলাপি রঙের। বাসা করে বসন্ত-বর্ষাকালে। মূল খাদ্য ছোট ছোট পোকামাকড় ও তাদের শূককীটসহ ফুলের মধুরেণু। শুঁয়োপোকা-উইপোকা অতীব প্রিয়।
প্রথম আলো