ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবাসিক পাখি ঝুঁটি শালিক

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বরিশাল ফিরছিলাম। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় হয় অবস্থায় লেবুখালী ফেরিঘাটে এসে থামলাম। ঘাটে ফেরি আসতে ঢের দেরি। কড়া রোদের তেজটা আর নেই, কেমন একটা মিষ্টি আমেজ পেলাম রোদটাতে। ফেরিঘাটের অগুনতি চা দোকানের একটায় গিয়ে বেশ আয়েশ করে চা পান করলাম। শরীরটা বেশ চাঙা হয়ে উঠল। ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি। হঠাৎই ক্যামেরার ফ্রেমে সাধারণ একটা পাখি অসাধারণভাবে ধরা দিল। সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করলাম।

এই পাখিদের ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। বেশ পোষ মানে। অনেককেই পুষতে দেখেছি। কিছুদিন আগেও বাগেরহাট শহরের এক কলেজপড়ুয়া ছেলের ঘাড়ের ওপর এ রকম একটা পাখি দেখে ওকে ডাকলাম। বাচ্চা বয়সে ওকে সে এনেছিল। এখন সারাক্ষণ ওর কাছে কাছেই থাকে, একদম কাছছাড়া হয় না। দু-একটা শব্দও অনুকরণ করতে পারে। আমি ওকে বলেছিলাম পাখিটাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু ও কিছু 
বলেনি, শুধু হেসেছে। বুঝলাম ও পাখিটাকে ছাড়বে না। যাহোক, যত ভালো পোষ মানুক না কেন আমি বনের পাখি পোষার পক্ষে নই। লেবুখালী ফেরিঘাটের মুক্ত পাখিগুলোকে দেখে কেন যেন ওদের সেই পোষা জাতভাইয়ের কথাই বারবার মনে হতে লাগল।

লেবুখালীর এই পাখিটি এ দেশের বহুল দৃশ্যমান আবাসিক পাখি ঝুঁটি শালিক। জংলি শালিক নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Jungle Myna। Sturnidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম acridotheres fuscus।

 ঝুঁটি শালিক লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার ও ওজনে ৮৫ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপালের চমৎকার ঝুঁটিসহ মাথা ও ঘাড় কালচে-ধূসর। লেজ, পিঠ ও বুক মাঝারি ধূসর। দেহের নিচটা কালচে-গোলাপি। লেজতল-ঢাকনি ও ডানার প্রান্ত সাদা। ঠোঁট কমলা-হলুদ, তবে নাসারন্ধ্রসহ ঠোঁটের গোড়া কালচে-ধূসর। চোখ চকচকে হলুদ, চোখের চারদিকের কিছুটা অংশ পালকহীন। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। নখ বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল, ঠোঁট হলদে ও ঝুঁটি অপেক্ষাকৃত ছোট।

বহুল দৃশ্যমান এই পাখিটি দেশজুড়ে বিস্তৃত। এরা সাধারণত গ্রাম, চষা জমি, মুক্ত বনভূমি, বনের প্রান্ত প্রভৃতি জায়গায় বিচরণ করে। সচরাচর দলে থাকে। বিভিন্ন রকম ফল, পোকামাকড়, কেঁচো ইত্যাদি খায়। গোধূলিতে অন্য প্রজাতির শালিকের সঙ্গে দল বেঁধে কোলাহল করে। বড় ঝাঁকে বাঁশবন, নলবন, আখখেত বা অন্যান্য জায়গায় রাত কাটায়।

 ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই প্রজননকাল। এরা প্রায় আজীবনের জন্য জোড় বাঁধে। গাছের কোটর, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সেতু বা দরদালানের ফাঁকফোকরে বাসা বানায়। নীলচে রঙের ৩-৭টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৫-২১ দিনে। ছানারা ১৮-২০ দিনে উড়তে শেখে। আয়ুষ্কাল প্রায় ৮ বছর।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

আবাসিক পাখি ঝুঁটি শালিক

আপডেট টাইম : ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বরিশাল ফিরছিলাম। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় হয় অবস্থায় লেবুখালী ফেরিঘাটে এসে থামলাম। ঘাটে ফেরি আসতে ঢের দেরি। কড়া রোদের তেজটা আর নেই, কেমন একটা মিষ্টি আমেজ পেলাম রোদটাতে। ফেরিঘাটের অগুনতি চা দোকানের একটায় গিয়ে বেশ আয়েশ করে চা পান করলাম। শরীরটা বেশ চাঙা হয়ে উঠল। ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি। হঠাৎই ক্যামেরার ফ্রেমে সাধারণ একটা পাখি অসাধারণভাবে ধরা দিল। সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করলাম।

এই পাখিদের ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। বেশ পোষ মানে। অনেককেই পুষতে দেখেছি। কিছুদিন আগেও বাগেরহাট শহরের এক কলেজপড়ুয়া ছেলের ঘাড়ের ওপর এ রকম একটা পাখি দেখে ওকে ডাকলাম। বাচ্চা বয়সে ওকে সে এনেছিল। এখন সারাক্ষণ ওর কাছে কাছেই থাকে, একদম কাছছাড়া হয় না। দু-একটা শব্দও অনুকরণ করতে পারে। আমি ওকে বলেছিলাম পাখিটাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু ও কিছু 
বলেনি, শুধু হেসেছে। বুঝলাম ও পাখিটাকে ছাড়বে না। যাহোক, যত ভালো পোষ মানুক না কেন আমি বনের পাখি পোষার পক্ষে নই। লেবুখালী ফেরিঘাটের মুক্ত পাখিগুলোকে দেখে কেন যেন ওদের সেই পোষা জাতভাইয়ের কথাই বারবার মনে হতে লাগল।

লেবুখালীর এই পাখিটি এ দেশের বহুল দৃশ্যমান আবাসিক পাখি ঝুঁটি শালিক। জংলি শালিক নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Jungle Myna। Sturnidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম acridotheres fuscus।

 ঝুঁটি শালিক লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার ও ওজনে ৮৫ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপালের চমৎকার ঝুঁটিসহ মাথা ও ঘাড় কালচে-ধূসর। লেজ, পিঠ ও বুক মাঝারি ধূসর। দেহের নিচটা কালচে-গোলাপি। লেজতল-ঢাকনি ও ডানার প্রান্ত সাদা। ঠোঁট কমলা-হলুদ, তবে নাসারন্ধ্রসহ ঠোঁটের গোড়া কালচে-ধূসর। চোখ চকচকে হলুদ, চোখের চারদিকের কিছুটা অংশ পালকহীন। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। নখ বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল, ঠোঁট হলদে ও ঝুঁটি অপেক্ষাকৃত ছোট।

বহুল দৃশ্যমান এই পাখিটি দেশজুড়ে বিস্তৃত। এরা সাধারণত গ্রাম, চষা জমি, মুক্ত বনভূমি, বনের প্রান্ত প্রভৃতি জায়গায় বিচরণ করে। সচরাচর দলে থাকে। বিভিন্ন রকম ফল, পোকামাকড়, কেঁচো ইত্যাদি খায়। গোধূলিতে অন্য প্রজাতির শালিকের সঙ্গে দল বেঁধে কোলাহল করে। বড় ঝাঁকে বাঁশবন, নলবন, আখখেত বা অন্যান্য জায়গায় রাত কাটায়।

 ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই প্রজননকাল। এরা প্রায় আজীবনের জন্য জোড় বাঁধে। গাছের কোটর, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সেতু বা দরদালানের ফাঁকফোকরে বাসা বানায়। নীলচে রঙের ৩-৭টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৫-২১ দিনে। ছানারা ১৮-২০ দিনে উড়তে শেখে। আয়ুষ্কাল প্রায় ৮ বছর।