ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ময়মনসিংহে জীবন শঙ্কায় শিয়াল

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ময়মনসিংহে এক সময় শেয়াল আতঙ্কে থাকতেন মানুষ। তবে, মাঝেমধ্যে পাগল শিয়ালের আতঙ্কে পড়েন মানুষও। গতকাল ময়মনসিংহের কাতলাসেন গ্রামে ২৬ জনকে কামড়ে দেয়ার অপরাধে মানুষ এক শিয়ালকে হত্যা করেছে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিত্র ভিন্ন। আবাসস্থল সংকটে শেয়াল এখন মানুষ আতঙ্কে। একবার জনসম্মুখে এলে এদের বাঁচার আশঙ্কা খুবই কম। হাজারো বছর ধরে প্রতিবেশী হিসেবে এদের বসবাস মানুষের সাথেই। প্রাচীনকাল থেকেই অগনিত কবি, মহাকবি এদের নিয়ে লিখেছেন, কবিতা, গল্প আর ইতিহাস।

একটি সময় ছিল মাংসাশী এই প্রাণির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন মানুষ। কত মানুষের হাঁস, মুরগি চুরি করে নিয়ে গেছে। আর কত মানুষকে এরা কামড়ে দিয়েছে- তার হয়তো সঠিক কোন হিসাব নেই আমাদের কাছে।

জলজ প্রাণি কাঁকড়া এদের প্রিয় খাবার। খাল-বিল, নদ-নদী এবং হাওড়ের পাশে এরা গর্ত থেকে নিজের লেজ ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে কাঁকড়া ধরে খাওয়ার দৃশ্য মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। ফাঁদ হিসেবে গর্তে লেজ ঢুকিয়ে দেয় এরা। লেজে কাঁকড়া কামড় দিয়ে ধরলেই লেজ বের করে খেয়ে নেয় তাদের প্রিয় খাবারটি। ক্রমশ জলাশয়গুলোতে বাণিজ্যিক মাছ চাষের কারণে শেয়ালের প্রিয় খাবার কাকড়াও বিলুপ্তির পথে।

বন-জঙ্গল কেটে মানুষের প্রয়োজনে আবাসস্থল ও কৃষি জমি ব্যবহারের কারণে শেয়ালরা আজ  বাসস্থান সংকটে।

আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালনের কারণে এরা আর সহজে তাদের খাবারও চুরি করে খেতে পায় না। ফলে বাসস্থান আর খাদ্যাভাবে এরা এখন বিপন্ন কিংবা বিলুপ্ত প্রাণির হিসাবে। কিছুদিন আগেও এরা বিকাল থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত হুক্কা হুয়া ডাকে মাতিয়ে রাখত পাড়া-মহল্লা, মাঠ-ঘাট। এই তাদের কেহুয়া কেহুয়া ডাকের চিৎকার পূঁজি মায়েরা তাদের দূরন্ত শিশু-কিশোরদের ঘুম পারাতেন। লোককথায় এদের পণ্ডিত হিসেবে সম্বোধন করা হয়ে থাকে।

অথচ এই এরা পণ্ডিতি করেও নিজেদের বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে। নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে এদের সুরও এখন পাল্টে যাচ্ছে। এখন বাঁচার তাগিদে হারানোর শঙ্কা নিয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠ। আগের মত দেখা মেলে না এদের আবাসস্থল মাটি খোঁড়া গর্ত।

একসময় এদের গর্তে শুকনো মরিচ পুড়িয়ে ঢুকিয়ে দিত দুষ্ট শিশুর দল। পোড়া মরিচের ঝাঁঝালো গন্ধে গর্তের ভেতর থেকে শেয়াল বেরিয়ে দিত ভোঁ দৌড়। কুকুরের সাথে এদের দ্বন্দ্ব চিরকালের। প্রবাদে আছে, গৃহস্থের বাড়িতে এরা, মুরগি-হাঁস চুরি করতে এসে পোষা কুকুরের রোষাণলে পড়ে। কুকুর এদের ধাওয়া করলে, এরা নাকি প্রাকৃতিক বায়ুত্যাগ করে। সেই গন্ধে পিছু হটা থেকে কুকুর ফিরে আসে।

শোনা যায়, এখন অনেক মানুষের প্রিয় খাবার শেয়াল। প্রতিনিয়ত এরা শিকারে পরিণত হয়ে বেঘোড়ে প্রাণ দিচ্ছে। এদের হত্যাকালে উৎসুকরা বলে, খুব ভাল হইছে! একদম উচিৎ শিক্ষা হইছে। এরা তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় মানুষের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বেঁচে খাকার আকুতি জানায়। আর মানুষ তখন এদের কুকুরের বাচ্চা বলে গালিয়ে দেয়। অথচ এই পৃথিবীতে মানুষের মত ওদেরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এভাবে এদের আবাসস্থল ধ্বংস হলে প্রাণবৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। বাস্তবে দেখতে না পেয়ে প্রজন্ম  বই-পুস্তকে কল্পনায় জানবে এরাও একদিন আমাদের প্রতিবেশী ছিল।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ময়মনসিংহে জীবন শঙ্কায় শিয়াল

আপডেট টাইম : ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ময়মনসিংহে এক সময় শেয়াল আতঙ্কে থাকতেন মানুষ। তবে, মাঝেমধ্যে পাগল শিয়ালের আতঙ্কে পড়েন মানুষও। গতকাল ময়মনসিংহের কাতলাসেন গ্রামে ২৬ জনকে কামড়ে দেয়ার অপরাধে মানুষ এক শিয়ালকে হত্যা করেছে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিত্র ভিন্ন। আবাসস্থল সংকটে শেয়াল এখন মানুষ আতঙ্কে। একবার জনসম্মুখে এলে এদের বাঁচার আশঙ্কা খুবই কম। হাজারো বছর ধরে প্রতিবেশী হিসেবে এদের বসবাস মানুষের সাথেই। প্রাচীনকাল থেকেই অগনিত কবি, মহাকবি এদের নিয়ে লিখেছেন, কবিতা, গল্প আর ইতিহাস।

একটি সময় ছিল মাংসাশী এই প্রাণির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন মানুষ। কত মানুষের হাঁস, মুরগি চুরি করে নিয়ে গেছে। আর কত মানুষকে এরা কামড়ে দিয়েছে- তার হয়তো সঠিক কোন হিসাব নেই আমাদের কাছে।

জলজ প্রাণি কাঁকড়া এদের প্রিয় খাবার। খাল-বিল, নদ-নদী এবং হাওড়ের পাশে এরা গর্ত থেকে নিজের লেজ ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে কাঁকড়া ধরে খাওয়ার দৃশ্য মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। ফাঁদ হিসেবে গর্তে লেজ ঢুকিয়ে দেয় এরা। লেজে কাঁকড়া কামড় দিয়ে ধরলেই লেজ বের করে খেয়ে নেয় তাদের প্রিয় খাবারটি। ক্রমশ জলাশয়গুলোতে বাণিজ্যিক মাছ চাষের কারণে শেয়ালের প্রিয় খাবার কাকড়াও বিলুপ্তির পথে।

বন-জঙ্গল কেটে মানুষের প্রয়োজনে আবাসস্থল ও কৃষি জমি ব্যবহারের কারণে শেয়ালরা আজ  বাসস্থান সংকটে।

আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালনের কারণে এরা আর সহজে তাদের খাবারও চুরি করে খেতে পায় না। ফলে বাসস্থান আর খাদ্যাভাবে এরা এখন বিপন্ন কিংবা বিলুপ্ত প্রাণির হিসাবে। কিছুদিন আগেও এরা বিকাল থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত হুক্কা হুয়া ডাকে মাতিয়ে রাখত পাড়া-মহল্লা, মাঠ-ঘাট। এই তাদের কেহুয়া কেহুয়া ডাকের চিৎকার পূঁজি মায়েরা তাদের দূরন্ত শিশু-কিশোরদের ঘুম পারাতেন। লোককথায় এদের পণ্ডিত হিসেবে সম্বোধন করা হয়ে থাকে।

অথচ এই এরা পণ্ডিতি করেও নিজেদের বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে। নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে এদের সুরও এখন পাল্টে যাচ্ছে। এখন বাঁচার তাগিদে হারানোর শঙ্কা নিয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠ। আগের মত দেখা মেলে না এদের আবাসস্থল মাটি খোঁড়া গর্ত।

একসময় এদের গর্তে শুকনো মরিচ পুড়িয়ে ঢুকিয়ে দিত দুষ্ট শিশুর দল। পোড়া মরিচের ঝাঁঝালো গন্ধে গর্তের ভেতর থেকে শেয়াল বেরিয়ে দিত ভোঁ দৌড়। কুকুরের সাথে এদের দ্বন্দ্ব চিরকালের। প্রবাদে আছে, গৃহস্থের বাড়িতে এরা, মুরগি-হাঁস চুরি করতে এসে পোষা কুকুরের রোষাণলে পড়ে। কুকুর এদের ধাওয়া করলে, এরা নাকি প্রাকৃতিক বায়ুত্যাগ করে। সেই গন্ধে পিছু হটা থেকে কুকুর ফিরে আসে।

শোনা যায়, এখন অনেক মানুষের প্রিয় খাবার শেয়াল। প্রতিনিয়ত এরা শিকারে পরিণত হয়ে বেঘোড়ে প্রাণ দিচ্ছে। এদের হত্যাকালে উৎসুকরা বলে, খুব ভাল হইছে! একদম উচিৎ শিক্ষা হইছে। এরা তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় মানুষের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বেঁচে খাকার আকুতি জানায়। আর মানুষ তখন এদের কুকুরের বাচ্চা বলে গালিয়ে দেয়। অথচ এই পৃথিবীতে মানুষের মত ওদেরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এভাবে এদের আবাসস্থল ধ্বংস হলে প্রাণবৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। বাস্তবে দেখতে না পেয়ে প্রজন্ম  বই-পুস্তকে কল্পনায় জানবে এরাও একদিন আমাদের প্রতিবেশী ছিল।