বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মানুষের সময় নেই মানুষকে সময় দেবার। সেখানে কয়েকটা বানরের থাকা না থাকা কিংবা খাওয়া না খাওয়া নিয়ে ভাববে, এমন মানুষ এশহরে ভীষন দূর্লভ। হয়তো সেজন্যই বানরগুলোকে আর দেখা যাচ্ছে না আগের মতন। ওরাও বুঝতে শিখে গেছে কংক্রিটের এশহরে প্রকৃতির ঠাই নেই, ঠাই নেই প্রকৃতির সন্তানদেরও।
তবুও কালে ভদ্রে চোখে পড়ে দুই একটা বানর। ৪০০ বছরের পুরানো ঢাকার প্রায় সব ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে গেলেও কিছু বানর টিকে আছে ঠিইকই। এখনো পুরান ঢাকার এক দালান থেকে আরেক দালানে বানরের লাফিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে পথচারীদের। বিশেষ করে গেন্ডারিয়া, মিল ব্যারাক,বনগ্রাম,মহসন্দি,জনসন রোড,নবাবপুর, শাঁখারীবাজার, টিপু সুলতান রোড, নারিন্দা, সূত্রাপুর, রায় সাহেবের বাজার, লক্ষীবাজার,রোকনপুর এলাকায় বানর চরে বেড়াবার দৃশ্য দেখা যায় মাঝে মাঝেই। কিন্তু ঢাকা থেকে গাছপালা, নদী -নালা, খাল -বিল হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে গেছে ঢাকায় বসবাসরত বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী।
পুরান ঢাকায় কত রকমের বানর ছিলো, কিংবা কতগুলো বানর ছিলো তার কোনো হিসেব কখনোই করা হয়নি। তাই বিলুপ্তির তালিকায় বানরের নাম না থাকলেও তাদের সংখ্যা বতর্মানে আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে। এলাকার বাসীন্দারা জানাচ্ছেন, বানর কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ পুরান ঢাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে অনেক বানরই অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের কয়েক মাসে বিশুদ্ধ পানির অনেক বেশি অভাব দেখা যায়। জলাশয় না পেয়ে এই বানর গুলো খাবার পানির জন্য মানুষের বাড়ির ছাদে পানির ট্যাঙ্কিতে পানির খোঁজ করে। না পেয়ে শেষে দূষিত ও বিষাক্ত পানি পান করতে বাধ্য হয়। ফলে বানর গুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং দীর্ঘ মেয়াদে অসুস্থতার কারণে মারাও যাচ্ছে।
তাছাড়া দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাড়িঘর। পুরান বাড়ি ও গাছপালা কেটে ফেলায় বানররা তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। তাই দিনে দিনে বানর অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে, আর পুরান ঢাকা হয়ে উঠেছে বানর শূন্য। ধোলাইখালে বাসিন্দা লুৎফুর রহমান বলেন ‘১৫ বছর আগেও এই এলাকায় প্রচুর বানর দেখতাম। কিন্তু এখন আর দেখি না। যাও দেখা যায়, মাত্র গুটি কয়েক। আগের মতন দল বেধে আর আসে না।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.সাইফুল ইসলাম বলেন ‘বানর বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ পুরান ঢাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। আগের মতো গাছপালা, বাগ-বাগিচা কিংবা খালি জায়গা না থাকায় বানর ও মানুষ পরস্পরের শত্রু হয়ে গেছে। তাই তাদের সহাবস্থান অন্তত এই পরিবেশে আর সম্ভব না।’
তিনি বলেন ‘বর্তমানে যে পরিস্থিতি, এখনই যদি সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বানর সুরক্ষায় এগিয়ে না আগে তাহলে ১০ থেকে ১৫ বছর পর পুরান ঢাকা বানর শূন্য হয়ে যাবে। তাই পুরান ঢাকাবাসীর উচিৎ হবে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা। লোকালয়ে এধরনের বন্যপ্রাণীর বিচরন মানুষের জন্য স্বাভাবিক জীবন যাপনের পরিবেশ থাকবার এক ধরনের ইঙ্গিত। তাই পুরান ঢাকার এই ঐতিহ্যকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট সচেতন এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার ঢাকাবাসীর নিজের স্বার্থেই।