ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহি বাবুই পাখির বাসা বানানোর

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এক সময় গ্রাম-গঞ্জের তাল, নারিকেল, খেজুর ও সুপারি গাছে দেখা যেত দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা। ব্যাপক নগায়রণের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্যবাহি বাবুই পাখির বাসা বানানোর দৃশ্য।

অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫-২০ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জে দেখা যেত বাবুই পাখির নিপুণ কারুকাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বন শিল্পীর বন্ধনের দৃষ্টিনন্দন এই বাবুই পাখি ও তার বাসা। বাবুই পাখির বাসা এখন অনেকটা স্মৃতির অন্তরালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমনি চিত্র দেখা যায় ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার সর্বত্রই।

খড়, লতাপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ছিঁড়ে পড়ে না। শক্ত বুননের এ বাসাটি শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি যা টেনেও ছেঁড়া সম্ভব নয়।

বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সঙ্গী বানানোর জন্য বিভিন্নভাবে ভাব-ভালোবাসা নিবেদন করে এরা। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাক্ষিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে পুরুষ বাবুই পাখি মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপূণভাবে বাসা তৈরির বাকী কাজ শেষ করে চারদিনে।

সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব রেজাউল করিম বলেন, বাবুই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসতো সুদূর সাইবেরিয়া থেকে। বাবুই পাখির বিলুপ্তির প্রধান কারণ হচ্ছে ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আর মামুন জনান, ১৯৮০’র দশকে ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে কীটনাশক যুক্ত ফসল এবং মৃত পোকামাকড় খেয়ে বাবুই পাখির প্রজাতির বিলুপ্তি প্রধান কারণ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গ্রামঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসছে প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি বাবুই পাখি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডা. শরীফ ফয়েজুল আলম জানান, মানুষ গাছ-পালা কেটে, বন উজার ও ফসলি কৃষি জমিতে মাটি ভরাট করে বাড়ি তৈরি করার কারণে এখন আর আগের মত বাবুই পাখি ও তার বাসা দেখা যায় না। তবে মাঠে ধান পাখলে কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় বাবুই পাখি ও তার বাসা। পাখিটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জানা গেছে- এক শ্রেণির মানুষ অর্থের লোভে বাবুই পাখির বাসা সংগ্রহ করে শহরে ধনীদের নিকট বিক্রি করছে। এই বাবুই পাখির বাসাগুলো এখন শুধুই শোভা পাচ্ছে ধনীদের ড্রইং রুমে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহি বাবুই পাখির বাসা বানানোর

আপডেট টাইম : ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এক সময় গ্রাম-গঞ্জের তাল, নারিকেল, খেজুর ও সুপারি গাছে দেখা যেত দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা। ব্যাপক নগায়রণের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্যবাহি বাবুই পাখির বাসা বানানোর দৃশ্য।

অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫-২০ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জে দেখা যেত বাবুই পাখির নিপুণ কারুকাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বন শিল্পীর বন্ধনের দৃষ্টিনন্দন এই বাবুই পাখি ও তার বাসা। বাবুই পাখির বাসা এখন অনেকটা স্মৃতির অন্তরালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমনি চিত্র দেখা যায় ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার সর্বত্রই।

খড়, লতাপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ছিঁড়ে পড়ে না। শক্ত বুননের এ বাসাটি শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি যা টেনেও ছেঁড়া সম্ভব নয়।

বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সঙ্গী বানানোর জন্য বিভিন্নভাবে ভাব-ভালোবাসা নিবেদন করে এরা। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাক্ষিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে পুরুষ বাবুই পাখি মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপূণভাবে বাসা তৈরির বাকী কাজ শেষ করে চারদিনে।

সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব রেজাউল করিম বলেন, বাবুই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসতো সুদূর সাইবেরিয়া থেকে। বাবুই পাখির বিলুপ্তির প্রধান কারণ হচ্ছে ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আর মামুন জনান, ১৯৮০’র দশকে ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে কীটনাশক যুক্ত ফসল এবং মৃত পোকামাকড় খেয়ে বাবুই পাখির প্রজাতির বিলুপ্তি প্রধান কারণ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গ্রামঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসছে প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি বাবুই পাখি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডা. শরীফ ফয়েজুল আলম জানান, মানুষ গাছ-পালা কেটে, বন উজার ও ফসলি কৃষি জমিতে মাটি ভরাট করে বাড়ি তৈরি করার কারণে এখন আর আগের মত বাবুই পাখি ও তার বাসা দেখা যায় না। তবে মাঠে ধান পাখলে কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় বাবুই পাখি ও তার বাসা। পাখিটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জানা গেছে- এক শ্রেণির মানুষ অর্থের লোভে বাবুই পাখির বাসা সংগ্রহ করে শহরে ধনীদের নিকট বিক্রি করছে। এই বাবুই পাখির বাসাগুলো এখন শুধুই শোভা পাচ্ছে ধনীদের ড্রইং রুমে।